#রাগী_টিচার_যখন_রোমান্টিক_হাসবেন্ড
#পর্ব_৫০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
–অফিসার নিয়ে যান এই খুনিকে।আবরাহাম চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল আয়ান।
–আয়ান তুমি এসব কি বলছো।আমি তোমার বাবা হই।বাবার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে।
–আমি জানি আমি একজন খুনির সাথে কথা বলছি।আর একজন খুনির সাথে,কিভাবে কথা বলতে হয় আমার ভালো করে জানা আছে।
–কি এমন হলো তোমার তুমি তোমার ভাইয়ের খুনির মেয়েকে শাস্তি না দিয়ে আমাকে শাস্তি দিতে চাচ্ছো।
–একদম শখের দিকে আঙুল তুলবে না বাবা।আমাকে কি তিন বছরের ছোট বাচ্চা পেয়েছো।আমাকে যা বুঝাবে আমি তা-ই শুনবো।সেদিন আমি তোমার কথা শুনে শখ-কে আঘাত করেছি।অবহেলা করেছি।যখন আমার শখের পাশে থাকা উচিৎ ছিলো তখন ওকে একা করে দিয়ে চলে গিয়েছি।কেনো জানো কারন আমার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলো না।আজ আমার কাছে সবকিছুর প্রমাণ আছে।আজ তুমি কোথায় যাবে আবরাহাম চৌধুরী।যে,খেলা তুমি শুরু করছিলে আমি সে,খেলা শেষ করে দিব এবার।
–আয়ান আমি তোমার বাবা হই।তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো।তোমার সাহসের তারিফ করতে হয়।
–আপনার’ও সাহসের তারিফ করতে হয় মিস্টার চৌধুরী।কি সুন্দর নিজের ছেলেকে মেরে ফেললেন নিজের স্বার্থের জন্য।শখের বাবা মাকে’ও তুমি খুন করেছো বাবা।আজ তোমার পালানোর জোনো জায়গা নেই।
আবরাহাম চৌধুরী পালাতে লাগলে আয়ান ধরে ফেলে বলল।
–কোথায় পালাচ্ছো বাবা।আমাকে যেমন বউয়ের থেকে দূরে করে দিয়েছিলে।এখন তুমি বউয়ের থেকে দূরে থেকো দেখো।কতটা কষ্ট হয়।আমি শশুর বাড়ি থেকে ঘুরে আসছি।তুৃমি কয়টা দিন ঘুরে আসো।আমাকে বউ হারা করিয়ে দিয়েছিলে।এখন নিজে বউ হারা হয়ে দেখো কেমন লাগে।কিছুটা ভাব নিয়ে বলল।
আবরাহাম চৌধুরী রেগে আয়ানের দিকে তাকালো।আমি জানতাম আয়ান তুমি এত সহজে সবকিছু মেনে নেওয়ার ছেলে না।কিন্তু এতকিছু করে ফেলবে।আমি কল্পনা’ও করতে পারি নাই।না হলে তোমার শখের সাথে তোমাকে’ও শেষ করে দিতাম
–তোমার কাছে কি প্রমাণ আছে আয়ান।
–কতগুলো প্রমাণ তুমি দেখতে চাও।তুমি আমার বাবা জন্য আমি এখনো চুপ আছি।আমি চাই তোমার শাস্তি আইন নিজে দিবে।
–প্রমাণ ছাড়া কথা বলছো আয়ান।
–আয়ান প্রমান ছাড়া কথা বলে না বাবা।বলে-ই আয়ানের বাবা সেদিন আয়না’কে যে,ভিডিও-টা দেখিয়ে ছিলো আয়ান অরিজিনাল ভিডিও-টা দেখিয়ে দিলো সবাই-কে।যেখানে, আফরান কে আবরাহাম চৌধুরী গুলি করছে।আয়ান আরো ভিডিও দেখালো।সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আবরাহাম চৌধুরী আহনাফ সাহেবর মাথায় গান ধরে ভয় দেখিয়ে বলিয়ে নিচ্ছে।
–আমি আমার ভাই-ভাবি কেও ছেড়ে দেই নাই।আমি এসব কিছু কার জন্য করছি।তোর জন্যই করছি।আমি না থাকলে তোর কি হবে।তোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে-ই এতকিছু করা।শখের খালি আঠারো বছর পূর্ণ হবার অপেক্ষা।পাশে জান্নাত আর তার স্বামী দাঁড়িয়ে আছে।
জন্নাতের স্বামী বলে উঠলো।
–আমি আর পারছি না অপেক্ষা করতে।আমি ঐ শখকে আজ-ই মেরে ফেলবো।আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
–আমার বারো বছরের ফল তুমি এভাবে নষ্ট করে দিতে পারো না।
তখনি রেগে জান্নাত আর তার স্বামী বেড়িয়ে যায়।
–খুব সুন্দর কাজ করেছো আহনাফ।এবার যদি মুখ খুলো তোমার সাথে তোমার পরিবারকেও শেষ করে দিব।বলেই উনি চলে গেলো।
–আরো প্রমাণ লাগবে।লাগলে বলো দিয়ে দিচ্ছি।
–এসব তুমি কোথায় পেলে।এসব তো।
–এসব আমি দিয়েছে বস।বলল
কলেজের সেই মেয়েটির বাবা যাকে আয়ান মাফ করে দিয়েছিলো।আগের থেকে কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে।পাশে মেয়েটিও আছে।আগের থেকে ভদ্র হয়ে গেছে।সুন্দর ভাবে চলাফেরা করে।
–তুমি এখানে,তোমাকে তো আমি আমেরিকার পাঠিয়ে দিয়ে ছিলাম।
–আমি তো তিন মাস বউ রেখে এমনি এমনি বাহিরে থাকি নাই।আমি পুরো তিন মাস ধরে ওনাকে খুঁজে বেড়েছি।তারপরে ওনাকে সাথে নিয়ে সবকিছু জোগার করেছি।এর জন্য ফিয়াজ ভাইয়া আমাকে অনেক সাহায্য করেছে।ভাইয়ার উপকার আমি কোনোদিন ভুলবো না।
–ফিয়াজ করেছে মানে,ওর তো।
–হ্যাঁ আমার কিছু মনে ছিলো না।তার সুযোগ নিয়ে আপনি আমাকে দিয়ে-ই আমার বোনকে মারতে চেয়েছিলেন।যেনো সাপ’ও না মরে আর লাঠিও না ভাঙে।এখন আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে।এখন আপনি কোথায় যাবেন আবরাহাম চৌধুরী।সেদিন আমার বাবা মা আপনার কল পেয়ে আপনার কাছে গিয়েছিল।তারপরে আর বাসায় আসে নাই।কেনো উত্তর দিন।আপনি তো আপনার সন্তানদের নিয়ে সুখেই আছেন।তাহলে আমাদের কেনো এতিম বানালেন।কি অন্যায় করেছিলাম।আপনারা খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।তাহলে কেনো এতটা শত্রু হয়ে উঠলেন একে ওপরের।
–ফিয়াজ ভাইয়া।তোমার সবকিছু মনে ছিলো।আয়াশ যে তোমাকে আঘাত করেছিলো সে জন্য তুমি সবকিছু ভুলে যাও নাই।বাবা তোমার স্মৃতি বছরের পরে বছর ইনজেকশনের মাধ্যমে নষ্ট করে ফেলেতে চেয়েছিলো।তুৃৃমি যেনো মুখ খুলতে না পারো।আমার কাছে প্রমাণ আছে।আমি ডক্টরের কাছে থেকে নিয়ে আসছি।তোমাকে নিজের ছেলের পরিচয় দিয়ে। আর পাগল বলে এই ইনজেকশন দেওয়া হতো।
–আল্লাহ ছাড় দেয়।কিন্তু ছেড়ে দেন না।আবরাহাম চৌধুরী।
নীলিমা চৌধুরী গিয়ে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আবরাহাম চৌধুরীর গালে।
–আমি তোমাকে কতটা ভরসা করে ছিলাম।আমি ভেবে ছিলাম তুমি ভালো হয়ে গেছো।তুমি এতটা জঘন্য মানুষ।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।তোমাকে মেরে ফেলা উচিৎ।
–হ্যাঁ,হ্যাঁ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ঐ নিহালের জন্য আমি আমার প্রিয় মানুষটাকে হারিয়েছি।নিহাল আমার সাথে বেইমানি করেছে।ওর জন্য আমি জান্নাতের মা’কে হারিয়েছি।দশ-টা হাজার টাকার জন্য জান্নাত এর মা মারা গিয়েছিল।আমার সেদিন কি অপরাধ ছিলো বলো তোমরা।নিহাল আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলো।আমার থেকে টাকা নিয়ে দু’জন একসাথে বিজনেস শুরু করি।ও সফল হয়ে যায়।আর আমি ব্যর্থ হয়ে যায়।আমার কাছে টাকা পয়টা কিছু ছিলো না।নিহাল আমার থেকে যে,টাকা নিয়েছিল সেখানে থেকে আমি দশ হাজার টাকা চেয়েছিলাম ও আমাকে দেই না।আমার জান্নাতের মা প্রসব যন্তনায় পাগলের মতো চিৎকার করছিলো।আমি আমার শরীরে রক্ত বিক্রি করে হসপিটালের টাকা দিয়েছিলাম কিছু’টা আর নীলিমা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলো।তার গলার স্বর্নের চেইন ছিলো।হাতে আংটি ছিলো আমাকে বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল।নীলিমারা বড়লোক বাড়ির মেয়ে ছিলো না।চাইলেই দশ হাজার টাকা দিয়ে দিতে পারবে।আমার অবস্থা খারাপ ছিলো।নিহালের অনেক টাকা ছিলো।চাইলেই আমাকে দিতে পারতো।আমি তো ওর টাকা চেয়ে ছিলাম না।আমি আমার টাকা চেয়েছি।সেটা দিতেও সে অস্বীকার করে।টাকা দিতে দেরি করে দেওয়ার জন্য জান্নাতকে পেলেও আমি জান্নাতের মাকে পেলাম না।তখনি ঠিক করে নিয়েছি।আমার সন্তান যেমন মা হারা হয়েছে।নিহালের সন্তানদের আমি তেমন বাবা-মা হারা করবো।তার জন্য আমাকে অনেক শক্তিশালী হতে হবে।দিনরাত পরিশ্রম করতে শুরু করলাম।কয়দিন পরে ফিয়াজ হলো।আমি বছেরর পরে কাজ করে গেছি।আমার জান্নাতের বয়স যখন দশ তখন আমি আমার বিজনেসে সফলতা অর্জন করি।অনেক ক্ষমতা পেয়ে যাই।সবাই আমাকে চিনতো।জানতো।সময় এসে গেছে।প্রতিশোধ নেওয়ার।আমি আবার নিহালের সাথে বন্ধুর মতো হয়ে যায়।ফিয়াজ তখন বড় হয়ে গিয়েছিল।শখ তখন ছোট তিন মাসের দুধের বাচ্চা।আমি চারজনকে-ই মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু নিহাল খুব চালাক ছিলো।কিছু বুঝতে পেরে ফিয়াজ আর শখকে লুকিয়ে রাখে।আমি সেদিন জরুরি কল করে ডাকি নিহালদের।বিশ্বাস করে ওরাও চলে আসে।
–কিন্তু আপনার ভুল হচ্ছে আংকেল।আব্বু আপনাকে টাকা দিতে চেয়েছিল।আব্বুর ব্যাংকে অনেক ঋন হয়ে গিয়েছিল।আমাদের সবকিছু নিলামে উঠে যেত,সেজন্য আব্বু পাগল হয়ে গিয়ে ছিলো।পরে সবকিছু জানতে পারলে আব্বু খুব অনুতপ্ত হয়।আপনার কাছে।মাফ চাইতে গিয়েছিলো।আপনাকে আব্বুর একটা কম্পানি দিয়ে দিতে চেয়েছিল।আজ আপনি সফল আপনার যে,এত বড় কম্পানির মালিক শুধু মাত্র আব্বুর জন্য।এতকিছু এত সহজে পেয়ে গেলেন।একবারো ভাবলেন না।পেছনে থেকে আব্বু আপনার মাথার ওপরে ছায়া হয়ে ছিলো।লজ্জায় সামনে আসতে পারে নাই।আব্বু তার অপরাধের জন্য তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।বলল ফিয়াজ।
–কিন্তু আমার ভাই কি করে ছিলো বাবা।তুমি ওকে কেনো মারলে।
–আমার সবকিছু জেনে গিয়েছিল ও।আর নিহালের কাছে সবকিছু বলে দিয়েছিলো।তাই নিহাল ওর বউ আর আফরানকে আমি মেরে ফেলেছিলাম।আমি আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ রাখতে চেয়ে ছিলাম না।
–এতকিছু করে তুমি কি পেলে।না পেলে বড় আপুকে আর না পেলে সুন্দর একটা জীবন।তুমি তো এমন ছিলে না।আমি তোমাকে একটা সহজ সরল মানুষ মনে করতাম।নিজের কথা চিন্তা না করে আপু মারা যাওয়ার পরে।তোমার আর জান্নাতের কথা চিন্তা করে তোমার সংসারে বউ হয়ে আসি।আমি তোমাদের জন্য আমার পুরো জীবনটা নষ্ট করে ফেলছি।আর তুমি আমার থেকে আমার ছেলেকে কেঁড়ে নিলে।তুমি খুনি।তোমার মতো খুনির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।আজ আমি তোমাকে নিজের হাতে খুন করে ফেলবো।
–তুমি কোনো দিন জান্নাতের মা হয়ে উঠতে পেরেছিলে নিলীমা।
–জান্নাতের জন্য আমি কি করি নাই।জন্নাত আমাকে দেখতে পারতো না।আমাকে কি বাজে বাজে কথা বলতো।বাসার কুকুরের সাথে’ও মানুষ ভালো ব্যবহার করতো যেটা জান্নাত আমার সাথে করতো না।তুমি দেখেও চুপ থাকতে।আর আজ বলছো।কি করেছি আমি।নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে তোমার আর জান্নাতের হাত ধরেছি।শেষ বয়সে এসে আমাকে এ কথা শুনতে হলো।
–তুৃমি বা তোমার ছেলে মেয়ে কারো কোনো গুরুত্ব আমার জীবনে নেই।আফরানের সাথে রুহি,আর আয়ানকে মেরে ফেললে এত ঝামেলা হতো না।শখকে যখনি মারতে চেয়েছি।তখনি আয়ান এসে বাঁচিয়ে নিয়েছে।আমার সাজানো খেলা সবকিছু আয়ান শেষ করে দিয়েছে।আয়াকে আমি শেষ করে ফেলবো।
–আমাদের একটু ভালোবাসলে কি হতো তোমার বাবা।আমাদের কেনো ভালোবাসলে না।আমরা কি জান্নাত আপুকে কম ভালোবাসি।জান্নাত আপু আমাদের কোনোদিন নিজরে মনে করে নাই।সারাদিন সৎ ভাই বোন বলে দূরে ঢেলে দিয়েছে।এতে আমাদের কি দোষ।
–তোর দোষ তুই আমার জান্নাতের মায়ের খুনির মেয়েকে সব সময় বাঁচিয়ে দিয়েছিস।আগলে রেখেছিস।এবার তুই’ও সন্তানের বাবা হবি।আমি’ও দেখবো শখ আর তোর সন্তানকে কি করে বাঁচাস।
–তুমি পাগল হয়ে গেছো বাবা।তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।অফিসার ওনাকে নিয়ে যান।ওনাকে আমি সয্য করতে পারছি না।
–মা দেখো আয়ান কেমন করছে।ওকে ধরো ও পড়ে যাবে তো।
বলতে বলতে-ই আয়ান জ্ঞান হারিয়ে ফেললো রুহি এসে আয়ানকে ধরে ফেললো।শখ পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে বা কি করা উচিৎ।তার মাথা কাজ করছে না।পুলিশ আবরাহাম চৌধুরীকে নিয়ে গেলো।রুহি ডক্টর কে ফোন করে আসতে বললো।শুভ আর ফিয়াজ মিলে আয়ানকে রুমে নিয়ে গেলো।একটু পড়ে ডক্টর আসলো।আয়ানকে দেখে বললো।
চলবে…..