অবুঝ প্রেম – পর্ব 02

0
558

#অবুঝ_প্রেম
২য় পর্ব
লেখিকা #Fabiha_busra_Borno
হঠাৎ করে দেখি সামনে আমাদের হেডস্যার দাঁড়িয়ে আছেন। ওরে বাবা রে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়। এখন কি করি,, পিছনে পুলিশ সামনে স্যার। পুরাই ভ্যাবাচ্যাকায় পড়ে গেলাম। চোখ মুখ কাচুমাচু করে স্যারের আমাদের দিকে এগিয়ে আসা দেখছি আর আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মিটিকে ল্যাং মেরে,দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁট নাড়িয়ে বললাম, উপায় বের কর একটা,,,,
ঠিক তখনই স্যারের ধমক,, আজ তোমরা ক্লাস ফাকি দিয়ে কোথায় গেছিলে? কাল সবাই তোমাদের বাবা কে স্কুলে আসতে বলবে। নয়তো আমি বিকল্প ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
স্যারের কথা শেষ হতে না হতেই মিটি বলে উঠে,, আসলে স্যার হয়েছে কি,, জামান স্যারের ক্লাসের আগের মুহূর্তে সারার (আমার নাম আদিবা জাহান সারা) খুব পেট ব্যাথা করতে শুরু করে। আর যেহেতু জামান স্যার এবং হাবিব স্যার নেই তাই ভাবলাম ফার্মেসী থেকে কিছু ঔষধ কিনে সারা কে খাইয়ে দিই।আর আমরা ফার্মেসিতে আসার সময় একটা পাগলা কুত্তা আমাদের তাড়িয়ে ধরে। ভয়ে আমরা সবাই দৌড় দিই। দৌড়াতে দৌড়াতে কে কোন দিকে গেছি বুঝতে পারি নি। পরে যখন বুঝতে পারছি আমাদের পিছনে এখন আর কুত্তা নেই তখন আমরা সবাই সবাইকে খুঁজতে থাকি। এঁকে অন্যকে খুঁজতে খুঁজতে সকাল গড়িয়ে দুপুর আর দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে। সরি স্যার!!
সাথে সাথে আমরা সবাই এক সাথে বলে উঠি,, সত্যিই এই ঘটনা স্যার,, প্লিজ স্যার ক্ষমা করে দিন,,
আমি একটু বেশি করে বাড়িয়ে বলি,,এর পরে পেট ব্যাথা তো দূরের কথা, মাথা ব্যাথা,হাতে ব্যাথা,কোমড়ে ব্যাথা,এমনকি বুকে ব্যাথা হলেও কখনো ফার্মেসীতে যাবো না। আপনার স্কুলের কসম আর কখনো এমন হবে না।
স্যার মনে হয় আমার বলা কথা গুলো শুনে পুরায় ফিদা হয়ে গেছে। তাই আর বিন্দুমাত্র দেরী না করে স্ব-স্ব করে চলে গেলো। আমি সবাইকে গর্বকরে বললাম, দেখলি সারা কি জিনিস, তোরা যা সারাবেলা বলে বুঝাতে পারলি না তা আমি এক নিমিষেই শেষ করে দিলাম।
উউফফ থুক্কুথুক্কুথুক্কু,,এমনই সবাই আমাকে সারা না বলে সারাবেলা বলে ডাকে। আর এখন মুখ ফসকে নিজেই সারাবেলা বলে ফেললাম, কি ব্যাক্কেল আমি।
তখনই রাহুল বলে, হয়চে সারা, তোর সারাবেলার গল্প বাদ দিয়ে বাসায় যা, আমরা ও যায়। নয়তো কপালে সারাদিনের মতো সারারাত ও কুত্তা দৌড়ানি খেতে হবে, এটা বলেই সবাই হেসে উঠে। সবাই যে যার মতো বাসায় চলে গেলাম।
বাসায় এসেই ঠাস করে ব্যাগ রেখে টান হয়ে সুয়ে পড়লাম।। ঊউ বাবাগো কি ব্যাথা করছে রে,, পা দুটো মনে হয় আজ থেকে অচল হয়ে যাবে গো। ওমাগো আর জীবনেও Dare নিবো না গো। এই দাঁত ছুয়ে কসম করলাম।
রাতে খাওয়ার সময় বাবাই বলে আগামীকাল রাতে নাকি বাবাই এর অফিসে কোন একটা পার্টি আছে। মামুনি কে রেডি হতে বলেন, সাথে আমাকেও। আহ্ পার্টি মানেই ঝাক্কাস খাওয়া। কখন যে আগামীকাল রাত হবে। মনে মনে প্ল্যান করতে থাকি কাল কিভাবে সাজুগুজু করবো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে স্কুলে গেলাম, সারাদিন ক্লাসের ভিতর দিয়ে কিভাবে কেটে গেছে টের পায়নি। বিকালে বাসায় এসে আবারও ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে শুরু করি। হালকা মেরুন কালার লেহেঙ্গাতে দারুণ লাগছে আমাকে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চোখেও হালকা মাসকারা আর চুল গুলো খোলা রাখলাম। উউফফ কি সুন্দর দেখতে আমি অথচ কেউ আমার উপর এখনো ক্র‍্যাশ খায় না। কি কপাল আমার।
বাবাই সন্ধ্যার দিকে বাসায় এসে মামনি এবং আমাকে নিয়ে যান। গেইটের সামনে গিয়েই চোখ জুড়িয়ে গেল। কি সুন্দর করে পুরো অফিস সাজিয়েছেন। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে মামুনির পিছু পিছু হাটছি। মাঝে মাঝে বাবাই অনেকের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আমি সবাইকে সালাম দিলাম শুধু।
পাশের বাম দিকে কি সুন্দর করে রঙবেরঙের বেলুন দিয়ে ডেকোরেশন করেছেন। আমার ছোট্ট চঞ্চল মন আর কোন ভাবেই মামুনির সাথে থাকার জন্য সায় দিচ্ছে না। চুপিচুপি আমি চলে আসছি বেলুনের কাছে। উউহহ বেলুন দেখলেই ইচ্ছে করে ফুটো করে দিতে। এদিক ওদিক তাকিয়ে ওড়না থেকে আলপিন খুলে দিলাম একটা ফুটো করে। অমনি কি সুন্দর ফুউউউউসসস শব্দ করে চুপসে গেছে। আমার ভিষণ ভালো লাগে এমন চুপসে যাওয়া দেখতে। সাথে সাথে আরো দুইতিন টা ফুটো করে দিলাম।
হঠাৎ পিছনে থেকে কেউ একজন বলে উঠে,,, are you mad??
আমি হকচকিয়ে পিছনে তাকাতেই চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেছে। সাথে সাথে বলে ফেলি, আরেএএ মহব্বত আলি!!!!
সাথে সাথে উনি রেগে গিয়ে বলেন,, এই ফকিন্নি মেয়ে, এখানে আবার কোন ধান্দায় এসেছো? মহব্বত আলি মানে কি? বেলুন গুলো ফুটো করছো কেন??
আমি উনার প্রশ্নের কি উত্তর দিবো ভেবে পাচ্ছি না,, পরশুদিনের চেয়ে আজ আরো বেশি স্মার্ট লাগছে। সাদা শার্টের উপরে ব্ল্যাক কালার ব্লেজার ব্ল্যাক প্যান্ট সাথে ব্ল্যাক সু,,,উউফ ছেলেটা কি আমাকে খুন না করা পর্যন্ত শান্তি পাবে না?? কল্পনায় নিজের বেলুন নিজে ফুটিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় উনি আবারও বললেন।
এই ফকিন্নি উত্তর দিচ্ছো না কেন??
দেখুন, উত্তর নেওয়ার আগে আপনি আপনার চোখের ডক্টর দেখান,,
তোমার কোন দিক দিয়ে মনে হলো আমি অন্ধ??দুধের দাঁত পড়েনি আর বড়দের সাথে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে!!
যদি অন্ধ না হোন তাহলে আমার মতো এতো দামী ড্রেস পড়া সুন্দরী মেয়েকে ফকিন্নি ভাবতে পারেন? আর কে বললো আমার দুধের দাঁত পড়েনি,, এই দেখুন আমার আঠাশ টা দাঁত রয়েছে, ইইইইইইইইই । মামুনি বলেছেন, বাঁকি চারটি দাঁত ষোল বছর পার হলে উঠবে।
আমার এমন লজিক্যাল কথা শুনে মহব্বত আলি বেলুনের মতো চুপসে গেছে। ইশ কি আনন্দ লাগছে রে,,কিন্তু আনন্দটা উপভোগ করার সময় না দিয়ে সে বলেন।
সিকিউরিটি! সিকিউরিটি! তোমরা এতো জন লোক থাকতে কিভাবে এমন পাগলছাগল ফকিন্নি ভিতরে আসতে পারে? answer me??
উনার ধমকে সিকিউরিটির সাথে সাথে আমিও চমকে উঠি। আশেপাশের দুইতিন জন আমাদের এইদিকে আসছে,, উনি উনার মতো বলেই যাচ্ছেন। দেখতে দেখতে বেশকিছু মানুষ জমে গেলো। লোকের ভীড় ঠেলে বাবাই এর কণ্ঠ শুনতে পায়,
সারা মামুনি, কি হয়েছে এখানে,, স্যার আমার মেয়েটা কি কোন ভুল করেছে?
এতোক্ষণ গলার ভেতর আটকে থাকা কান্না গুলো বাবাই এর কণ্ঠ শোনার সাথে সাথে ঝরে পড়তে আরম্ভ করে। ফুপিয়ে কান্না করতে করতে হ্যাচকি তুলে ফেললাম। বাবাই আমাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে,, মহব্বত আলি পরে কি করেছেন জানি না। কোন ভাবে কান্না থামাতে পারছি না। আর থামবেই বা কিভাবে, একটু পরপর কেউ না কেউ আদর করে কান্না থামাতে বলছে, আর তা শুনেই আমার কান্নার বেগ দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছে।
নাকের পানি পরিষ্কার করতে করতে নাক ব্যাথা হয়ে গেছে। আয়না থাকলে ঠিকই দেখতে পেতাম নাক লাল হয়ে গেছে এতোক্ষণে। কিছুক্ষণ পরে মহব্বত আলি আমাদের কাছে এসে বাবাই কে বলেন,
মিঃ শফিক সাহেব আমি একটু সারার সাথে কথা বলতে চাই। আমার জন্যই তো ও কান্না করছে, তাই আর-কি।
বাবাই মামুনি চলে যাওয়ার পরে উনি বলেন,, আসলে আমি বুঝতে পারিনি তুমি ফকিন্নি না, তুমি হচ্ছো সারাবেলা। I’m sorry,,
কি ব্যাপার, হঠাৎ আমার কান্না অফ হয়ে গেলো কিভাবে। চেষ্টা করেও আর কান্না বের হচ্ছে না। এতক্ষন কেউ থামতে বললেই ডাবল হলো আর যখন হওয়ার দরকার তখন নেই। উনি আমাকে বললেন,
ছোট্ট মেয়েদের এতো পাকনামি করতে হয় না বুঝছো? কোন ক্লাসে পড়ো তুমি, এইবার কি JSC দিবা?
উউফফ উনি মনে হয় সত্যিই কানা,আমাকে দেখে কি মনে হয় আমি JSC দিবো, গর্দভ একটা । আমি সুরেলা কণ্ঠে বলি,
আমি এতোটাও ছোট না হুহ্, আমি Old ten, আর কিছু দিন পরে SSC দিবো।
আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে, এবার কান্না থামিয়ে লক্ষি মেয়ের মতো মুল অনুষ্ঠানে আসো। এমন আনন্দের দিনে কেউ কান্না করবে তা তো হবে না।
উনি চলে গেছেন, ওমা ম্যাজিকের মতো কান্নাও বন্ধ। বাবাই মামুনির সাথে স্টেজের এক কোনায় বসলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আজ কি উপলক্ষে এই পার্টি বাবাই?
ওইযে যার সাথে তোমার miss understand হলো উনি আমাদের কোম্পানির মালিকের একমাত্র ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে আজ বাবার দ্বায়িত্ব হাতে নিচ্ছেন। তাই এই আয়োজন।
উনি এতো বড় মানুষ,, পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে তারমানে উনার বর্তমান বয়স ২৪/২৫ বছরের বেশি। অবশেষে এমন বুইড়া মহব্বত আলির ক্র‍্যাশ খেলাম আমি। আচ্ছা এটা ক্র‍্যাশ নাকি ছ্যাঁকা??
অনুষ্ঠানের বাকি আয়োজন গুলো মন খারাপ নিয়ে শেষ করে বাসায় আসছি। সারাদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলাম তাই বিছানায় যেতে না যেতেই দিলাম ঘুম।
ঘুম ভাঙলো সকালে মামুনির ডাকে। ফ্রেশ হয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। মামুনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে,, আমি খেতে খেতে মামুনি কে প্রশ্ন করি,,
আচ্ছা মামুনি, তোমার বয়স কত?
ছত্রিশ বছর!
বাবাই এর বয়স কত?
হবে হয়তো পঁয়তাল্লিশ বা তার থেকে দুই এক বছর বেশি, কেন, হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন??
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here