অবুঝ প্রেম – পর্ব 03

0
511

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৩
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?
না মায়ানে ইইয়ে, আমাদের গনিতে পিতা ও মাতার সমষ্টি একটা অংক আসছিলো তো তাই বাস্তব জীবন থেকে জ্ঞান নিচ্ছিলাম। আহ্ কি বুদ্ধি মাইরি, এতো ব্রেইন থাকতে ও সবাই আমাকে অবুঝ বলে কেন বুঝি না। মনে মনে ভাবছি আর তখনই মামুনি বলে, হয়েছে নে,এবার বেড়িয়ে পর। শুধু পাঁকা পাকা কথা।
স্কুলে আসছি আর ভাবছি, বাবাই আর মামুনির বয়স হিসাব করলে, আমার আর মহব্বত আলির বয়স ঠিকই আছে। কিন্তু ব্যাটা আমার ভালোবাসা গুলো বুঝে না কেন। মনে হয় কখনো কারো সাথে প্রেম করে নি তাই ভালোবাসা কি বুঝেও না। যাক ভালোই হয়েছে,, অন্তত পিওর সিঙ্গেল বয়ফ্রেন্ড আমার ভাগ্যে জুটেছে, হিহিহিহি।
সারাদিন ক্লাস শেষ করে আমি, তুতুল মিঠি, রাহুল, শিমুল সবাই এক সাথে রাস্তা দিয়ে হেটে বাসায় আসছিলাম। পিছনে থেকে একটা গাড়ি বারবার হর্ণ বাজিয়ে চলছে। আমি রাহুল কে বললাম,, পিছনে কি গরু গাড়ি চালিয়ে আসছে নাকি রে? এমন ফাঁকা রাস্তায় এতো হর্ণ বাজিয়ে দেশের জনগণকে জানান দিচ্ছে নাকি যে তার একার গাড়ি,,,,,
কথাটা বলতে বলতে পিছনে তাকিয়ে দেখি মহব্বত আলি এক হাত অন্য হাতের ভিতর গিট পাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উউফফ কেন বারবার ভুল সময় উনার এন্ট্রি নিতে হবে। উনার এমন হুটহাট এন্ট্রির ঠ্যালায় আমি ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
এএই ফকিন্নি কি বলছিলে তুমি??আমি গরু??
না মানে আপনি মহব্ব,,,অহ না না মিঃ তুর্জ।
তখনই গাড়ির ভেতর থেকে একটা সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে বলে উঠে। এই তুর্জ কি হলো,, ছোট মানুষ বুঝতে পারেনি, চলে এসো।
ওই মেয়েকে দেখেই রাগে দাঁত কিটমিট করতে শুরু করি তারউপর আবেদন বলে আমরা নাকি ছোট মানুষ। আরে ছ্যারি তুই কি এক লাফে বড় হইছিলি। মনে মনে একশোটা এমন কথা ভাবছিলাম। এইসব ভাবনার ফাঁকে কখন মহব্বত আলি চলে গেছে বুঝতেও পারি নি।
আমার কপাল টাই কুফা, ভালো কোন মুহূর্তে মহব্বত আলির দেখা মেলে না, আজ কতদিন পরে মামুনি আর বাবাই এর সাথে বাইরে ডিনার করতে এসেছি। সেই বিকাল থেকে এটা সেটা খেয়ে পেটে গ্যাস্টিক হয়েছে। ডিনার শেষে যে না উঠতে যাবো আর ওমনি গড়মড়িয়ে বমন উঠে আসে। আমি কোন কিছু না ভেবে দিলাম দৌড় ওয়াশরুমের দিকে। কিন্তু হঠাৎ কোন বিদ্যুৎ খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে, মুখের ভিতর জমে থাকা অতি জঘন্য বস্তু গুলো ওই খাম্বার উপরে ফেলে দিই।
এইসব বের হওয়া কোন মতেই থামছে না মামুনি পানির বোতল নিয়ে এসেই হা হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। আমি কোন রকম বললাম,, মামুনি প্লিজ পানি টা দাও।
সামনে তাকাতেই দেখি ভিষণ রাগি রক্ত বর্ন চোখ বের করে মহব্বত আলি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মামুনিকে সাথে সাথে বলি,,মামুনি আমাকে নিয়ে তারাতাড়ি ডক্টর এর কাছে চলো, আমি মনে হয় আর বাঁচবো না,আমার সমস্যা শুধু পেটে না, চোখেও আছে, আমি যেদিকে তাকাই সেদিকেই শুধু মহব্বত আলি কে দেখি।
মাঝে মাঝেই আমার এমন প্রব্লেম হতো। একটু খাবারের অনিয়ম হলেই সাথে সাথে বমন করতা। যেমনটা ঠিক আজও হলো। মামুনি আর বাবাই তুর্জকে এই অবস্থায় দেখে ভয় পেয়ে যায়। মামুনি আমাকে নিয়ে সামান্য ফ্রেশ করে দিলেন। একটু পরে তুর্জকেও ফ্রেশ হয়ে বেরুতে দেখলাম। পাশেই ওই শাকচুন্নিকে দেখছি। শাকচুন্নির হাতে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। তারমানে উনারা শপিং শেষে ডিনার করতে এসে এমন নাজেহাল অবস্থায়। ঠিকই হয়েছে,, নিজের কচিকাঁচা গার্লফ্রেন্ড রেখে এমন মেয়েদের সাথে ঘুরাঘুরি, আগে জানলে ওই শাকচুন্নির গায়েও দিতাম।
আমাকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে যায় এবং থেকে বেশ কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। ঔষধ হলো দুনিয়ার খাবারের মধ্যে সব চেয়ে অখাদ্য বস্তু। ইইয়ায়াক্কথুউ এটা কিভাবে খাবো আমি। বাসায় এসে মামুনি জোর করে ঔষধ খাইয়ে সুইয়ে দিলেন।
প্রতিদিন সকালে উঠে স্কুলে যাওয়া কোচিং করা বাসায় ফিরা এইসবের মধ্যে দিয়ে দিন পার হচ্ছিলো। একদিন আমরা সব বন্ধরা মিলে তুতুলের জন্মদিনের পার্টি থেকে বাসায় আসছিলাম। যদিও তুতুলের ফ্যামিলি মেম্বার রা এভাবে একা আসতে দিতে চান নি। কিন্তু আমরা চারজন আছি ভাবে উনারদের ব্যাস্ত সময় গুলো তে আরো ব্যাস্ততা বাড়াতে চাইনি। সবার বাসা একই রাস্তায় যেতে হয়। শুধু মাত্র ব্যাবধান হলো আমার বাসাটা সবার বাসা থেকদ বেশি দূরে। মাত্র ১০ মিনিট একা হাটলে বাসায় চলে যাবো, আর কেবলমাত্র রাত আটটা বাজে তাই গুনগুনিয়ে গান গায়তে গায়তে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দুটো ছেলে বাইকে করে এসে আমার সামনে ব্রেক করে, আর আমাকে জোর করে বাইকে তোলার চেষ্টা করে।
আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাদের কাছে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। এমন টানাটানির জন্য আমার কামিজের কিছু অংশ ছিড়ে যায়। আমি দৌড়ে কোন দিকে গেলাম জানি না। এমন ভাবে দৌড়াতে গিয়ে ওড়না টাও কোথায় যেন পড়ে গেছে। প্লিজ বাঁচান কেউ আছেন!! এইভাবে চিৎকার করছি। হঠাৎ পা মচকে পড়ে গেলাম আর ছেলে দুটো আমাকে ধরে ফেলে। একজন আমার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে ফেলে আর আরেকজন জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি শুধু উউউউউ শব্দ করে চলেছি।
খুব করে চাইছি এই মুহূর্তে কেউ আমাকে বাচানোর জন্য আসুক। আল্লাহ কে বারবার ডাকছি। সামান্য দুরে দাড়িয়ে কেউ একজন ফোনে কথা বলছে। আমি সেই অপরিচিত মানুষের উদ্দেশ্য করে উউউউ শব্দ করে চলেছি। এমন সময় আমার মুখে থাকা হাতে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম। সাথে সাথে হাত সরিয়ে উউহু বলে উঠে আর আমি,, প্লিজ কেউ আমাকে বাঁচান বলে চিৎকার দিলাম। সাথে সাথে আবারও আমার মুখ চেপে ধরে। হয়তো যাকে উদ্দেশ্যে চিৎকার দিয়েছিলাম সে আমার চিৎকার শুনতেই পায় নি। ওরা আমাকে টেনেহিঁচড়ে কোন একটা ব্রিজের নিচে নিয়ে এসেছে।
একজন আমাকে বলে,, উউহ কি দেমাগ, এমন দেমাগি মেয়েদের ভিষণ ভালো লাগে।
দোস্ত মালটাকে কিন্তু আমি আগে খাবো,,
ঠিক তখনই কেউ একজন এসে ওদের ডিসুম ডাসুম দেওয়া শুরু করে। আমি ভয়ে অন্ধকারে ব্রিজের কোথায় কিভাবে লুকিয়ে আছি জানি না। শুধু ব্রিজের উপরের লাইটের আবছা আলোয় মানবিয় দেহ দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরে কেউ একজন মোবাইল টর্চ জ্বালিয়ে এদিকে সেদিকে কিছু একটা খুঁজে চলছে। তারপর উনি বলেন, কোথায় আপনি, আর কোন ভয় নাই। দুষ্ট লোকেরা পালিয়ে গেছে। বেড়িয়ে আসুন এখন।
কিন্তু আমার বেরোনোর মতো অবস্থা নেই। পোশাক ছেড়া সাথে পা টা মচকে গেছে। আমি বললাম,, আমি এখানে, দাড়াতে পারছি না। উনি আমার কথার শব্দ অনুসরণ করে আমার কাছে আসেন। লজ্জায় হাত এবং হাটু দিয়ে নিজেকে ঢাকার চেষ্টা করছি। উনি আমার দিকে এক বার টর্চ জ্বালিয়ে দেখার সাথে সাথে উনার ব্যাজার টা আমাকে দিয়ে পড়তে বললেন। আমিও শান্ত মেয়ের মতো পড়ে নিলাম। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কে আপনি, বাসা কোথায়?
কণ্ঠটা কেমন চেনাচেনা মনে হচ্ছে। তবুও বললাম, আমি আদিবা জাহান সারা। ওমা!! নাম বলার সাথে সাথে উনি আমার মুখে আলো ধরেন। তারপর বলেন,,
ওওহ শিট তুমি! তুমি এখানে কিভাবে? নিশ্চয়ই আবারও পাকনামি করতে রাতে বাইরে বেড়িয়েছিলে?এবার বুঝো তোমার পাকনামির ফলাফল কতটা ভয়ানক?
এমনই তো ভয়ে আছি তার উপর উনার এমন ধমক শুনে কান্না করে দিলাম। আমার কান্না দেখে উনি কাছে এসে বলেন,, আচ্ছা আচ্ছা সরি, আর বলবো না, তাও প্লিজ কান্না টা অন্তত থামাও। আমি নাক টেনে হ্যাচকি তুলতে তুলতে বলি,, বিশ্বাস করেন কোন পাকনামি করিনি আজ। জানিনা কিভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেলো। তারপর পুরো ঘটনা খুলে বললাম উনাকে। সব কিছু শোনার পরে উনি বলেন, আচ্ছা হয়েছে আর বলতে হবে না, চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিই।
উনি আমার হাত ধরে উঠাতে চেষ্টা করেন। এই প্রথম আমার মনের রাজ্যের ক্র‍্যাশের স্পর্শ পেলাম। উনার হাত ধরে এক ধাপ এগুতেই ওমাগো বলে কোকিয়ে উঠে পড়ে যেতে লাগি। আর সাথে সাথে উনি শক্ত করে আমাকে ধরতে গিয়ে হাতের ফোন টা নিচে পরে যায়।যেহেতু ব্রিজের নিচে ঢালু যায়গা তাই ফোন টা সোজা গড়িয়ে গড়িয়ে পানিতে পড়ে।
এখন কি হবে? এই অন্ধকারে এতো উঁচু নিচু যায়গা থেকে কিভাবে বেরোবো?
ঠিক তখনই উনি আমাকে উনার কোলে তুলে নেন।এই মুহূর্তে আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে এভাবে কোলে নেওয়াতে আমার ডান হাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরি। এখন লজ্জায় হাত ছারাতেও পারছি না। আমার কান টা উনার বুকের খুব কাছে। উনার বুকের ভেতর হার্টবিট প্রতি সেকেন্ডে দুবার উঠানামা করছে তা আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আমার ও তো একই অবস্থা!! তাহলে কি উনিও আমার হার্টবিট শুনতে পাচ্ছেন??
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here