অবুঝ প্রেম – পর্ব 14

0
353

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১৪
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
তুর্জ আবারও রুমে ফিরে এসে রাকিবের সামনে এগিয়ে যায়। তারপর তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরে। আচ্ছা তুই আমার সামনে সারা কে নিয়ে কি কি যেন বলছিলি? আর একবার বলতো ওইসব কথা গুলো। কি হলো বল,,বলছিস না কেন?? ভয় পাচ্ছিস,, আগে কোথায় ছিলো এই ভয়?
আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি, এক বার শুধু একবার ক্ষমা করে দেন। আমি জীবন থাকতে আর কখনো কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবো না। শুধু একটা সুযোগ দেন।
উউহহুউউক তা তো হবে না। তুর্জ দুজন গার্ডকে ডেকে বলে শক্ত করে রাকিব কে ধরতে। রাকিব গার্ড আসার আগে থেকেই গগন ফাটানো চিৎকার দেওয়া শুরু করে। ছেলে মানুষ এতো ভিতু হয় এই প্রথম তুর্জ দেখলো। তুর্জ হাতের মুঠোয় থেকে একটা আলপিন নিয়ে রাকিবের বাম চোখের মনিতে পুষ করে, তারপর ডান চোখে। রাকিব কে ছেড়ে দেওয়ার পরে জবাই করা মুরগির মতো ছটফট করতে শুরু করে। তনিমা ব্যাথায় যন্ত্রণায় অনেক আগে থেকেই সেন্সলেস হয়ে আছে। ওদেরকে আবারও সাউন্ড প্রুফ রুমে রেখে বাইরে চলে আসে।
রাত অনেক হয়েছে,, তাই আপাতত এদেরকে আজ আর শাস্তি না দিয়ে তুর্জ বাসায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
সারা এক পাতিল পানিতে, ভিজিয়ে রাখা চাল গুলো দিয়ে একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখছে অনেকক্ষন আগে। মাংসের জন্য পালংশাক পরিষ্কার করতে করতে ভুলেই গেছে বিরিয়ানিতে বেটে রাখা মসলা দেওয়া হয় নি। পেয়াজ রসুন আদা জিরা সহ সব কিছু এক সাথে পেস্ট করে রাখছিলো, একটা মাঝারি ছোট খাটো গামলা ভর্তি করে পেস্ট করেছিল। মসলা যত বেশি হবে স্বাদটাও তত বেশি হবে। তাই গামলার অর্ধেক মসলা বিরিয়ানিতে দিয়ে বাকি অর্ধেক মাংসের জন্য রেখে দিলো। বিরিয়ানির ঢাকনা খুলে দেখে পানি গরম হয়ে ভাপ উঠছে। মশলা গুলো ঢেলে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে আবারও ঢেকে দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দেয়। তারপর গুনগুন করে গান গায়তে গায়তে মাংস পালংশাক এক সাথে ধুয়ে গামলায় রাখা অবশিষ্ট মসলা দিয়ে অন্য চুলায় তুলে দেয়।
আচ্ছা আমি কি মাংসে লবণ দিলাম,, না তো দিইনি। পাশেই চা পাতার কাছে লবনের বয়াম থেকে এক খামছি লবণ দিয়ে দিলো। চা পাতার পাশে আরেকটা বয়ামে গুড়ো দুধ ও আছে। সারা মাথায় আরেকটা ইউনিক বুদ্ধি এলো, গুড়ো দুধ গুলো সব সে মাংসের মধ্যে ঢেলে দিলে চুলার হিট বাড়িয়ে দিয়ে বিরিয়ানির অবস্থা দেখতে গেলো।
বিরিয়ানিতে পানির পরিমাণ বেশি হয়ে গেছে, কি করি এখন?? পানি ছেকে ফেলে দিলে তো মসলা গুলো চলে যাবে। ভাবতেই পাশের র‍্যাকে ময়দা দেখে সেখান থেকে কিছু ময়দা নিয়ে বিরিয়ানির মধ্যে ছিটিয়ে দিলো। এমন সময় কলিং বেল বাজলো। বাবা এসেছে ভেবে সারা ময়দার হাতের তারাহুরো করে ওড়না টা খুঁজতে থাকে। উউফ কোথায় রাখলাম, খুঁজে পেতে পেতে হাতে লেগে থাকা ময়দা গুলো মুখে এবং চুলে লেগে যায়। সারা অত্যন্ত তারাহুরো করে গেইট খুলে দিতেই তুর্জ কে দেখতে পাই। তুর্জ সারাকে জিজ্ঞেস করেন,,
কে আপনি, আর ময়না কোথায় গেছে?
সারাদিন যদি বাইরের এতো এতো সুন্দরী মেয়ে দেখেন তাহলে তো ঘরের বউকে না চিনতে পারাটাই স্বাভাবিক।
কি ব্যাপার, ভয়েস টা পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছে!!
একি তুতুমি!! এ কি হাল করেছো নিজের? নিজেকে ময়দা সুন্দরী করার প্রচেষ্টা করছে বুঝি?
বাজে কথা বলবেন না,, আমি কখনো এইসব আটা ময়দা মাখিনা হু,,এমনই আমি প্রচুর সুন্দরী।
তা তুমি হঠাৎ করে ময়দার ভিতর গড়াগড়ি করলা কেন??
তখনই কেমন একটা ছ্যাচড়া পোড়া ছ্যাচড়া পোড়া গন্ধে ঘর ভরে যায়। সারা রেগে তুর্জকে বলে,,
আপনার জন্য আমার স্পেশাল রেসিপির ১২টা বেজে গেছে,, বলেই দৌড় দিলো রান্না ঘরে।তুর্জও পিছনে পিছনে গেলো। সারা বিরিয়ানির ঢাকনা খোলার সাথে সাথে রান্না ঘরে কেমন বিশ্রী গন্ধ ভরে গেলো। তুর্জ আর সারা দুজনের উয়ায়াক উউয়ায়াক করা শুরু করেছে। তুর্জ তো এক দৌড়ে বাইরে চলে আসছে। সারা তারাহুরো করে গরম পাতিল নামাতে গিয়ে আয়ায়ায়াহহহহ শব্দ করে উঠে আর পাতিলের ঝনাত্ব শব্দ হয়। তুর্জ আবারও রান্না ঘরে এসে দেখে সারা পানির নিচে হাত দিয়ে আছে। ততোক্ষণে তুর্জ সকল চুলা অফ করে দিয়ে সারাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে।
কে তোমাকে রান্না ঘরে একা একা যেতে বলেছে?মা কোথায়?
মায়ের প্রেশার হাই ছিলো তাই মেডিসিন নিয়ে ঘুমিয়ে আছে। ময়না ও বাসায় চলে গেছে। ভাবলাম সুযোগ পেয়েছি তাই সবার জন্য স্পেশাল কিছু রেসিপি বানিয়ে ফেলি। সব কিছু কমপ্লিট ছিলো কিন্তু অসময়ে আপনার আগমন আমার রান্নার ফালুদা বানিয়ে দিয়েছে।
তুমি রান্নাও করতে পারো জানতাম না তো?? কি কি রান্নার করছিলে আজ? হাতে বার্নক্রিম লাগাতে লাগাতে বলে!
সারা রান্না করা বড়দের কাজ এসব তোমার মতো পুচকি মেয়ের কাজ না!
হু বললেই হলো?
আরে আমি তো অনেক কিছুই রাঁধতে পারি আমার রান্নাতো #সারা_বেলা_রান্না_ঘরে চ্যানেলে আপলোড দিবো হু.. তুর্জ মনেমনে হাসছে.. কিন্তু দেখেই লাগে আমার রান্না করা নিয়ে তাহার চিন্তার ভাঁজ! কিন্তু কেন সেটা তো বুঝতে পারছি না হয়তো আমার রান্নার জুড়ি মিলানো দায় তাই হিহিহিহি নাকি বাইরে থেকে আসা ওই চিন্তা! সে বাদ আগে তো খাবার খেতে হবে!
আচ্ছা তাই?? কে করলো এই রান্নার চ্যানেল?? #সারা_বেলা_রান্না_ঘর নাকি কি ভেজা বেড়ালের রান্না ঘর??
আর কে করবে এইতো আমি সেই রাঁধুনি!
তাতো দেখতেই পাচ্ছি কি আমার রান্নার ঢং! নিজেকে খাওয়াতে তিনজন লাগে সে করবে রান্না এইদিন ও আসবে আমাকে ও বিস্বাস করতে হবে হায় আল্লাহ!!
হয়েছে হয়েছে আপনাকে আর ঢংয়ের নামে অপমান করতে হবে না! যান ফ্রেশ হয়ে নিন! আমি আবার রান্না ছড়াচ্ছি। ওদিকে আবার মা বাবা দু-জনের খাবার দিতে হবে.!
সারাদিন তো ছিলোই না এখন আসছে কাজের বাগড়া দিতে!
না আর তোমাকে রাঁধতে হবে না আমিই বরং খাবার অর্ডার করি!
তুর্জ ফোন নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের ঘরে চলে গেলো হয়তো বাইরের খাবার খেয়েই আজকের রাত টা পার করতে হবে।
চলবে…….!
প্রিয় পাঠ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here