অবুঝ প্রেম – পর্ব 15

0
378

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১৫
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সারা দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে মাংসের পাতিলের ঢাকনাটা খোলা মাত্র বিশ্রী গন্ধে নাক বন্ধ করে ফেলে। স্পেশাল রান্না করতে গিয়ে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেলো। তুর্জ আসার পরে সারা আর দরজা বন্ধ করে নি। তুর্জের বাবা বাসার ভিতর এসেই এমন গন্ধে অবাক হয়ে রান্না ঘরে চলে যান। সারা এক কোনে নাক চেপে ধরে বসে আছে। উনি ভেবেছেন,, সারার হয়তো কিছু হয়েছে ভেবে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করেন।
এএএইই ময়য়নায়ায়া ময়নায়া এএএইইই ময়য়য়নায়ায়া,, তুর্জোওও তুর্জওও,, ময়য়নায়াহ, কি হলো তুর্জের মায়ায়া কইই তুউউমিই,,,,,,
বাবা সরি বাবা, আমি বুঝতে পারি নি রান্না টা এমন হবে। আমি চেষ্টা করছি ভিন্ন ধরনের কিছু রান্না করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে কিন্তু,,,,,, য়্যায়্যায়্যায়্যায়্যায়ায়া,,,,
তুর্জের বাবা টাসকি খেয়ে বলে,, কোথায় আমি ভাবছি রান্না ঘরে তোমার কোন প্রব্লেম হয়েছে, আই মিন,, তোমার হাত মুখ পুড়ে গেছে বা ডাকাত এসেছে, তাই এভাবে বসে আছো আর তুমি,,,,,,,
তুর্জ মাত্রই ওর মায়ের কাছে গিয়ে বসেছিলো, ওর বাবার এমন হাতির মতো হুংকার শুনে তুর্জ এবং ওর মা পড়ি কি মরি বলে দৌড়ে নিচে এসে দেখে সারা কান্না করছে আর তুর্জকে বাবা সারাকে থামানোর চেষ্টা করছে। তুর্জের মা ও কম যায় না, সেও সাথে সাথে বলে,,
কি গো তুমি কবে থেকে এমন হলে? কিভাবে পারলে এই ছোট্ট মিষ্টি মেয়েটাকে মারতে,,দিন দিন কি তোমার বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। দেখি তো মা কোথায় মেরেছে? চল এক্ষুনি তোকে নিয়ে থানায় যাবো,, কি ভেবে হুউ্।
সারার চোখ গুলো কটোর থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম। কাহিনি কতদূর গড়ায় দেখার জন্য সারা আরো জোরে জোরে ঢং করে কান্না করতে থাকে।
তুর্জের মা নাক টেনে টেনে গন্ধ শুকে বলেন,, কি ব্যাপার কিসের গন্ধ এমন,, তারপর চুলার কাছে গিয়ে দেখে, পুরো পাতিলে কালো হয়ে মাংস লেগে গেছে। খোসাসহ পেয়াজ রসুন আদা পেস্ট করার পরে সেগুলো আবারও পুড়ে গিয়ে এতো বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে।
ওওওও এইবার বুঝতে পারছি,, মেয়েটার রান্না খারাপ হয়েছে ভেবে তুমি মেয়েটাকে বকা দিছো,,,,
আরে তুমি কি তোমার এই ভাঙা ক্যাসেট বন্ধ করবে,, আমার কথা গুলো না শুনে একাই বকবক করেই চলেছো,,৷ আমাকে অন্তত কিছু বলতে দাও,৷ আমি বাসায় এসেই দরজা খোলা তারউপর এমন বিশ্রী গন্ধে পুরো বাড়ি ভরে আছে, কি থেকে কি হয়েছে ভেবে দৌড়ে এখানে এসে দেখি সারা নাক মুখ বন্ধ করে বসে আছে। ভাবছি ওর কোন প্রব্লেম হয়েছে তাই তোমাদের ডাকলাম। আর সেই তোমরা আমাকেই থানায় নিয়ে যাচ্ছো?? হায়রে কপাল আমার!!
তুর্জ ধমক দিয়ে বলে,, এই তোমার প্যানপ্যানানি থামাও?উনার ভুল ভাল ইউনিক রান্নার জন্য এখানে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে চলেছে আর উনি নাক-প্যান্দনি শুরু করেছেন,, কে বলেছিল তোমাকে এইসব রান্না করতে হুম।
উউউউউউউয়্যায়্যায়্যায়্যায়্যায়্যায়ায়াহুহুহুহুউউউউউ
কান্না ভলিউম আরো বাড়িয়ে দিলো সারা।
তুর্জের মা সারাকে রান্না ঘর থেকে বাইরে নিয়ে এসে,চুলা অফ করেন আর মনে মনে ভাবেন, এই পাতিলের কি যে অবস্থা হবে।
তুর্জ আগেই অনলাইনে খাবারের ওর্ডার দিয়ে রাখছিলো। সারার কান্না এখানো চলছেই। থামার কোন হেলদোল নেই। সোফার এক কোনে বসে উউউউউউউউ এএউউউউউউ উউউউউ য়্যায়্যায়্যায়্যা
এমন সুরে কান্না চলছে চলবেই!! তুর্জের মা বাবা অনেক বুঝিয়েছে, তারা কিছু মনে করেন নি তার এমন রান্নার জন্য,, কিন্তু আসলে সারার দুঃখ টা কোথায় তা কেউ বুঝতে পারছে না বা বুঝতে চাইছে না।
তুর্জ বুঝতে পারে এ কান্না এ-বেলা থামবে না। তাই তুর্জ ওর মা বাবাকে সাথে নিয়ে ডিনার শেষ করে সারার জন্য উপরে নিয়ে যায়। তারপর সারাকে বলে,, তুমি কি হেটে হেটে উপরে যেতে পারবা নাকি এম্বুলেন্স নিয়ে আসতে হবে। তুর্জের এমন কথা শোনা মাত্রই সারা মুখ ভেঞ্চি কেটে উঠে উপরে চলে যায়। তারপর টিস্যু বক্স হাতে নিয়ে বিছানায় বসে আবারও সেই একই সুর তুলে।
তুর্জ পরেছে মহা বিপদে, কানের কাছে এমন বীণ বাজলে কারো ভালো লাগে!! সারার কান্নার সুর শুনে মনে হচ্ছে কোন এক সাপুড়ে রানী বীণ বাজিয়ে গর্তে থেকে কালনাগ বের করার চেষ্টা করছে। এযাবৎ তুর্জ ৪/৫ বার ধমক দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু রেজাল্ট শুন্য। তাই এ বার সে বুদ্ধি করে সারার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলে,,
সারা এভাবে কান্না করে না, এতো সময় কান্না করলে তোমার ছোট্ট ব্রেনে চাপ পড়ে মাথা ব্যাথা করবে, তোমার এতো সুন্দর কোকিলা কণ্ঠ নষ্ট হয়ে যাবে। তারচেয়ে আমার সাথে তোমার সব দুঃখ গুলো শেয়ার করে মনের ফাফর গুলো বের করে দাও।
টিস্যুতে বাস্কেটটা প্রায় ভরা ভরা অবস্থা। সেগুলো তুর্জের হাতে দিয়ে বলে, সত্যিই আপনি আমার কষ্টের কাহিনি শুনবেন??
তুর্জ মনে মনে বলে,, আল্লাহ গো, না জানি এই কাহিনিটা আবারও সারারাত চলে নাকি,,তারপর মুখে ছোট্ট করে বলে,, হ্যাঁ শুনবো!!
জানেন কত খুশি নিয়ে রান্না করতে করতে ভাবলাম আমি রান্নার চ্যানেল করবো সেখানে আমার স্পেশাল ডিশ গুলো আপলোড করার সাথে সাথে হাজার হাজার বিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ আসবে। চারিদিকে সবাই আমার নাম বলবে,, ছেলেরা আমার সাথে সেলফি নিতে লাইন দিবে,, কত করে ভাবলাম, কেকার দিন শেষ সারার হাতে বাংলাদেশ। কিন্তু কিচ্ছুটি হলো না শুধু আপনার জন্য,, য়্যায়্যায়্যায়্যাএএএএয়্যায়্যায়্যাউউউ
আমার জন্য? আমি আবারও কি করলাম।
হুম আপনার জন্যই তো এইসব হলো,, অসময়ে আপনি আসলেন আমি দরজা খুললাম তারপর সব শেষ।
আচ্ছা সারা সরি,, আমি বুঝতে পারি নি,, আর কখনো তোমার রান্না বাসায় হলে আমি তিন দিন বাসায় আসবো না। প্রমিস করলাম আজ,, হয়েছে??প্লিজ এবার অন্তত কান্না বন্ধ করো।
আচ্ছা ঠিক আছে আর কান্না করবো না।
এই যে লক্ষি মেয়ে,, নাও এবার খেয়ে নাও।
জানেন, আমি যেদিন কান্না করতাম সেদিন আমি নিজের হাতে কখনো খেতাম না। মামুনি খাইয়ে দিতো। উউউউউউউহুহুহুহুউউমায়ামুউনিইইইইই
প্লিজ প্লিজ থামো থামো,, আমি খাইয়ে দিচ্ছি তাও প্লিজ তুমি আর উচ্চাঙ্গসংগীতের সুর তুলো না।
তুর্জ বিরিয়ানির সাথে একটু একটু করে রোস্ট ছিড়ে ছিড়ে সারার মুখের সামনে ধরছে আর সারা পাখির ছানার মতো ঠোঁট নাড়িয়ে নাড়িয়ে খাচ্ছে। কতটা বাচ্চামি ভিতরে থাকলে একটা মেয়ে এমন করতে পারে? ক্ষনিকের মধ্যে ভুলে গেছে সে একটু আগে কি করলো। তুর্জ এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে সারা পুরো প্লেট ফাঁকা করে ফেলেছে। ভিষণ খিদে পেয়েছিল মেয়েটার।
সারা!!
হু,,
এবার ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়ো!!
কিন্তু আমি যেদিন রাগ করে থাকি সেদিন মামুনি আমার সব কিছু করে দিতো। আমাকে ঘুমপাড়িয়েও দিতো!
ওহ্ তাই!!কিন্তু এখানে তো তোমার মামুনি নাই, তুমি একা একা করে নাও।
,,,,,,,,,,,,,,,
আচ্ছা আসো,,,
তুর্জ সারাকে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুঁয়ে দিয়ে, ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে ব্রাশ করিয়ে দিলো। এইসব করতে বেশ কয়েকবার সারার শরীরের বিভিন্ন স্থানে তুর্জের স্পর্শ লেগেছে। এতে তুর্জের ভিতর ইলেক্ট্রিকশক লাগলেও সারা স্বাভাবিক।
বাইরে আসার পরে তুর্জ সারাকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে বলে ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি একটু। সারা তুর্জের হাত চেপে ধরে বলে,, আমার মামুনি আমার পাশে সুইয়ে মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতো। এখন আপনি এভাবে যদি না দেন তাহলে আমি আবারও কান্না শুরু করে দিবো।
তুর্জ সম্পুর্ন নিরুপায়। তাই সে সারার পাশে সুয়ে বাম হাতের দুটো আঙুল দিয়ে সারার চোখ আলতো করে বন্ধ করে দেয়। তারপর কপালের চুল গুলো উপরে তুলে দিয়ে মাথায় বিলি কাটতে শুরু করে। সারা গুটিসুটি মেরে চোখ বন্ধ করে সুয়ে আছে। তুর্জ চোখ বন্ধ করে রাখা সারার মুখের দিকে তাকিয়ে আলাদা অনুভুতিতে ভুগছে। ঘুমের ঘোরে সারা ঠোঁট দুটো একটু নাড়িয়ে ঢোক গিলছে, চোখের পাপড়ি গুলো হালকা কাপছে, মোট কথায় এই মুহুর্তে তুর্জের সারার পাশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নিজের কন্ট্রোল হারানোর ভয়ে তুর্জ যে-ই না উঠে যেতে লাগে ঠিক তখনই সারার খোলা চুল গুলো তুর্জের শার্টের বোতামের ফাঁকে আটকে আছে দেখতে পাই।
সারার মাথায় একটু টান অনুভব করতেই সারা নড়ে উঠে আর তুর্জ আবারও সারার খুব কাছে সুয়ে পড়ে। যেন কোন ভাবে আবারও চুলে টান না লাগে। সারার উষ্ণ নিশ্বাস গুলো তুর্জের বুকে সিডরের চেয়েও জোরে জোরে আঘাত হানছে। ড্রিম লাইটের আলোয় অপরুপা অপ্সরীর মতো লাগছে সারাকে। এ কোন নেশায় আটকে গেছে তুর্জ??
তুর্জ অপলক দৃষ্টিতে সারাকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে সারা তার একটা পা তুর্জের পায়ের উপর দিয়ে কোল বালিশের মতন জরিয়ে ধরে তুর্জকে।
এতোক্ষণ তাও কোন রাতে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পেরেছে কিন্তু এবার বুঝি শেষ রক্ষা আর হবে না। এতোটা কাছে আর এতোটা ঘনিষ্ঠ ভাবে দুজন নর নারী এক সাথে থাকলে সেখানে অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ১০০% থাকে। আর তারা যদি স্বামী স্ত্রী হয় তাহলে তো কোন কথায় নেই।
তুর্জ নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সারার মাঝে। সে না চাইতেও তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে যাচ্ছে সারার গোলাপি রঙের ঠোঁটের দিকে।
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here