অবুঝ প্রেম – পর্ব 16

0
428

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১৬
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সে না চাইতেও তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে যাচ্ছে সারার গোলাপি রঙের ঠোঁটের দিকে। কিন্তু বিধাতা হয়তো এমন সময় এমন ভাবে তাদের মিলন লিখে রাখেন নি। তাই তাদের রোমান্টিক মুহূর্তে বাগড়া দেয় তুর্জের ফোনের রিংটোন। রিংটোন এর শব্দে তুর্জের ঘোর কাটে। সে অতি সাবধানে সারার সিলকি চুল গুলো তার শার্ট থেকে খুলে সেন্টার টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে বাইরে চলে যায়। সিক্রেট হাউজ থেকে গার্ড ফোন করে ওদের রাতের খাবার দিবে নাকি তা জিজ্ঞেস করলো। তুর্জ তাদের খাবার দিতে বলেন সাথে বাধন খুলে দিয়ে রুমে বন্ধ করে রাখতে বলেন।
সারা দীর্ঘ সময় ধরে কান্নার ফলে মাঝে মাঝে ঘুমের ঘোরেই জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। তুর্জ একটা রকিং চেয়ার নিয়ে সারার সামনে বসে আর ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় অপলক দৃষ্টিতে সারাকে দেখতে থাকে। এতো সুন্দর দুরন্ত চঞ্চল ফুটফুটে একটা বাচ্চা মেয়ে তার উপর ক্র‍্যাশ খেয়েছিলো তা ভাবতেই নিজেকে বলিউড হিরো মনে করে। তার চোখের সামনে এমন দিব্যা ভারতীর মতো হিরোইন ঘুরে বেড়ায় তা সে এতদিন খেয়াল করে নি।
সারাকে নিয়ে কল্পনা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে তুর্জ বুঝতেও পারে নি। সারা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, তুর্জ হাত পা ছেড়ে দিয়ে ষাড়ের মতো ঘওত ঘওত শব্দ করে ঘুমাচ্ছে। আসলে চেয়ারে ঘুমানোর জন্য তুর্জের কাঁধ বেকে নিচের দিকে ঝুলে গেছে তাই এমন বিদঘুটে শব্দ বের হচ্ছে। নয়তো তুর্জের এমন সাউন্ড বের হয় না।
আমি ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার জন্য ওয়াশরুমে যায়। নিজে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে চুল গুলো আঁচড়িয়ে নিলাম। উনি এখনো মরার মতো ঘুমাচ্ছেন। সক্কাল সক্কাল আমার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি হানা দিলো। আমি আমার কালার পেন্সিল নিয়ে তুর্জের নাকের দুই সাইডে পুরাতন যুগের রাজাদের মতো বাঁকানো গোঁফ বানিয়ে দিলাম। তারপর ভাবলাম আর কি করা যায়। তখনই মাথায় আসে ঠোঁট গুলো তে একটু লিপস্টিক দিলে কেমন লাগে দেখিতো। যেই ভাবা সেই কাজ। টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক ঠোঁটে লাগাতেই উনি নড়ে উঠেন আর উনার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে কিছুটা লিপস্টিক লেগে যায়। আমি ভয়ে এক লাফে উনার থেকে তিন হাত দূরে সরে গেলাম। একটু পরে দেখি উনি আবারও সেই শব্দ করে ঘুমাচ্ছেন।
আবারও সুযোগ,, বাকি কাজ টা সম্পুর্ন করতে হবে ভেবেই,যেই না উনার কাছে গেছি আর অমনি উনি আমাকে খপ করে ধরে উনার দাঁড়িতে লেগে থাকা সব লিপস্টিক আমার গালে ঘষে ঘষে লাগিয়ে দিলো। আমি ও কম যায় না,,আমার হাতে থাকা লিপস্টিক উনার মুখে লাগিয়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু উনার এমন জিরাফের মতো বডির শক্তির কাছে আমার শক্তি কিছুইনা।
উউ কি ভেবেছো হুহ্ (ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে তুর্জ)
,,,,,,,,,,
কি হলো এতো শান্ত হয়ে আছো? মনে মনে আবারও কোন ফন্দি আঁটতে শুরু করেছো নাকি।
আপনাকে নিয়ে ফন্দি করতে আমার বয়েই গেছে। এই বলে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে এসে মুখের লিপস্টিক পরিষ্কার করতে লাগে। তুর্জ বারবার সারাকে বাইরে যেতে বলছে কিন্তু সারা ইচ্ছে করে দেরি করতে শুরু করে। তাই বাধ্য হয়ে সারাকে কোলে করে নিয়ে বাইরে রেখে ভিতর থেকে আটকে দেয় তুর্জ। সারা রাগে দাঁত খিটমিট করে বাইরে থেকেও দরজা বন্ধ করে দিয়ে স্কুল ড্রেস পড়ে একদম রেডি হয়ে নিচে চলে যায়।
নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে মা বাবার সাথে কথা বলতে বলতে সারা ভুলেই গিয়েছিল যে তুর্জকে ওয়াশরুমে বন্ধ করে রেখেছে। সারা নাস্তা শেষ করে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। তুর্জের মা বাবা ভাবছে, যেহেতু তুর্জ প্রতিদিন সকালে জীমে যায় তাই হয়তো সে আজ বাসায় নেই। উপরে তেমন কারো প্রয়োজন পড়ে না বলে কেউ একটা উপরে যায় না। তুর্জ বারবার ভিতর থেকে নক করছে কিন্তু বাইরে থেকে কারো কোন রেসপন্স নেই। রাগে তুর্জ ওয়াশরুমের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলার উপক্রম করছে।
সকালে গার্ড তনিমা আর রাকিব কে খাবার দিতে যেতেই পেছনে থেকে একটা শক্ত কিছুর আঘাত পেয়ে সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়। তনিমা রাকিবের হাত ধরে চুপিচুপি বাইরে আসার চেষ্টা করে। সামনে আরো বেশ কিছু গার্ড ঘুমিয়ে আছে। হয়তো সারারাত পাহাড়া দেওয়ার পরে মাত্রই ঘুমিয়েছে ওরা। তনিমা খুবই সাবধানে গার্ডের পিছনে দিয়ে রাকিব কে নিয়ে বেরিয়ে আসে। কিন্তু প্রায় গেইটের সামনে আসতেই রাকিব কোন একটা কিছুর সাথে হচোট খেয়ে পরে যায়। গার্ডের চোখ দুটো খুলে যায় সাথে সাথে। ঠিক তখনই তনিমা আবারও রাকিব কে নিয়ে একটা ফুলের টবের পিছনে মাথা নিচু করে ঘাপটি মেরে বসে পড়ে।
গার্ড ঘুম ঘুম চোখে সামনে কিছু না দেখে আবারও ঘুমের সাগরে তলিয়ে যায়। তনিমা সুযোগ বুঝে পিছনের গেইট দিয়ে রাকিব কে নিয়ে পালিয়ে যায়। এই সিক্রেট হাউজে তনিমা এর আগেও বহুবার এসেছে। তাই কোথায় কোন দিকে কোন রাস্তা সব তনিমার জানা।
সারা স্কুলে যাওয়ার পরে মনে পরে সে তুর্জকে এভাবে ওয়াশরুমে বন্ধ করে রেখে চলে এসেছে। কিন্তু এখন কিভাবে কি করবে। ওই মহব্বত আলি তো এতোক্ষণে রেগে আগুন হয়ে আছে। নিশ্চয়ই খিদেও পেয়েছে। যেভাবেই হোক বাসায় জানাতে হবে, ওয়াশরুম খোলার কথা । কিন্তু কিভাবে জানাবে, সারার কাছে কোন ফোন নাই। স্যারের ফোন থেকে কল করবে তার উপায় নেই, কারণ নাম্বার মুখস্থ নেই। যেভাবেই হোক বাসায় যেতে হবে।
সারা, রাহুল কে বলে, আমাকে তারাতাড়ি ছুটি নিয়ে দে, নয়তো আজ আমার খবর আছে। তারপর সব কিছু খুলে বলে সবাইকে কে। কিন্তু এই কারণ দেখিয়ে তো স্কুল থেকে ছুটি নেওয়া যাবে না। তাই মিঠি বুদ্ধি দিলো,,
সারা তুই পেট ব্যাথা বলে কান্না শুরু করে দে আর আমরা স্যারের কাছে থেকে ছুটি নিয়ে দিচ্ছি।
সারা বেঞ্চের উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিৎকার করে বলছে,,,আয়ায়ায়াহহ ওওহবাবা ইইই কিই ব্যাথা রেএ, ওমাগোওঅঅ আয়ায়া মরেএএ গেলাম গোও। ডাক্তার কই গোওঅঅ। ওহ আল্লাহ কেউ আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা রেএ।
শিমুল আর রাহুল গেছে স্যারের অফিসে। স্যার ও তারাতাড়ি এসে দেখে সারা ছটফট করছে ব্যাথা। সারা তো বানিয়ে বানিয়ে হাজার রকম কথা বলে কান্না করছে। কিন্তু সারার চোখে বিন্দুমাত্র পানি নাই দেখে তুতুল তার ওয়াটার বোতল থেকে পানি নিয়ে সারার চোখে দিয়ে দেয়।
এই, হঠাৎ করে পেট ব্যাথা শুরু হলো কেন তোমার??
ওও স্যার রেএএ,,,,,,
পাশে থেকে গুতা মেরে মিঠি বলে সুন্দর সুর করে কান্না কর।
তখনই সারা আরো সুন্দর সুরে বলে,,ওওঅঅ আল্লায়াহহ রেএ আমায়ার পেটের মধ্যে কুউমিরের বাচ্চা দৌড়ায়াই রেএএ,,
এই চুপ করো??কি হয়েছে বলো।
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের ক্লাস টেনের একজন নিয়মিত ছাত্রী। হঠাৎ করে আমার পেটের ব্যাথার জন্য বাকি ক্লাস গুলো করা আমার অসুস্থ শরীরের পক্ষে সম্ভব না। স্যার আপনার হাতের ডাস্টার এর কসম আমার পেটে ওল্টপাল্ট হচ্ছে।
অতএব প্লিজ স্যার আমাকে ছুটি দিয়ে বাধিত করবেন।
ইতি
আদিবা জাহান সারা
আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েদের ছুটির দরখাস্ত দেওয়ার ধরন দেখে স্যার অবাক হয়ে দুই দিনের ছুটি মঞ্জুর করেন।
তুর্জের ফোনে বারবার কল আসছে। গার্ডরা একের পরে এক ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তুর্জের রেসপন্স পাচ্ছে না। তুর্জ ভিতর থেকে মা বাবা বলে চিৎকার করে চলেছে কিন্তু কেউ আসছে না। তুর্জের মা সকালের নাস্তা শেষের থালাবাসন পরিষ্কার করে রান্না ঘরে দুপুরের রান্নার আয়োজন করছে। ময়না নাই তাই সব কাজ উনাকে একা করতে হবে ভেবে সকাল থেকেই কাজে লেগে গেছেন। তুর্জের বাবাও সকালে নাস্তা শেষে বাইরে চলে গেছেন। তুর্জের এতো পরিমাণ রাগ হচ্ছে এই মুহূর্তে সারা কে কাছে পেলে মেরেই ফেলবে সে।
সারাকে তুতুল আর মিঠি নিয়ে গেটের বাইরে আসতেই জুতা খুলে দৌড় দিলো সারা। পিছনে থেকে মিঠি ডেকে বলে,, অন্তত একটা রিকশা নে, তোর পায়ের চেয়ে রিকশা জোরে যাবে। কিন্তু বিপদের সময় হাতের নাগালে কিছুই পাওয়া যায় না। অনেক খানি দৌড়ানোর পরে সারা কোন রকম একটা রিকশা ডেকে বাসায় এসে সোজা নিজেদের রুমে চলে যায়। গেইট থেকে দৌড়ে দৌড়ে বাসায় এসে আবারও সিড়ি দিয়ে দৌড়ে উপরে আসতেই হাপিয়ে গেছে সারা। ওয়াশরুমের দরজা খুলে দিয়েই সেখানে বসে পড়ে সারা, তুর্জের রাগ দীর্ঘক্ষণ চেপে রেখেছে। আর রাগেএ মুহুর্তে ই যার উপর এতো রাগ তাকে কাছে পেয়ে, ঠাসিয়ে দুটো থাপ্পড় মেরে দিলো। সারা খাটের ধারে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায়। তুর্জের রাগ যেন কমছেই না তাই আবারও সারার স্কুল ব্যাগ নিয়ে স্টিলের স্কেল বের করে সারার হাতে ইচ্ছে মতো মারতে শুরু করে।
এতো মারের পরে ও ঢংগী সারা কোন কান্না বা শব্দ করছে না। তাই তুর্জের রাগ ডাবল হয়ে যায়। সারাকে লাথি মেরে বলে কি ভাবো নিজেকে?? ফাজলামোর একটা লিমিট আছে?? কিভাবে পারলে এমন টা করতে।
সারার বলারমতো কোন ভাষা নাই, নাই চোখে পানি। তুর্জ রাগে ফোনের কাছে গিয়ে দেখে ১০০+ মিসডকল। সব গুলো, সিক্রেট হাউজ থেকে। সাথে সাথে তুর্জ ফোন ব্যাক করে। ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে তনিম আর রাকিব পালিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আগুনে ঘি ঢাললে যা হয় ঠিক সেই অবস্থা তুর্জের।
তুর্জ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সে সব কিছুর জন্য সারাকে দায়ী করছে। সে আবারও সারার কাছে যেতেই দেখে সারা ফ্লোরে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে।
চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here