#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১৭
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
সে আবারও সারার কাছে যেতেই দেখে সারা ফ্লোরে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। তুর্জ সারাকে রেখে আগে সিক্রেট হাউজে চলে আসে। গার্ডদের ইচ্ছে মতো বকাবকি করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করে। তারপর ভাবে কোথাও যেতে পারে ওরা,, খুঁজে বের করতেই হবে।
তুর্জের মা তুর্জকে এমন সময় তারাহুরো করে বের হওয়া দেখে উপরে যায়। আর দেখে সারা সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে। সাথে সাথে ডক্টর ডেকে আনেন। এমন ছোট্ট মেয়ের উপর এভাবে আঘাত করা হয়েছে আর তা বাড়ির বাইরের একজন ডক্টরও দেখে গেলেন। তুর্জের মায়ের আত্মসম্মানে আঘাত করে বিষয় টা। সে অপেক্ষা করতে থাকে তুর্জের বাড়ি ফেরার জন্য। সারার অনেকক্ষন আগেই জ্ঞান ফিরেছে। কিছু ফ্রুটস মুখের সামনে কেটে নিয়ে বসে আছে তুর্জের মা। সব গুলো শেষ করতে হবে সারাকে। কিন্তু সারার এইসব খাবারে নাক ছিটকে থাকে, ফুচকা চটপটি হলে এমন এক প্লেট কেন,, তিন চার প্লেট অনায়াসে সাবাড় করে দিতো।
সন্ধ্যা পরে তুর্জ ফোন হাতে রুমে ঢুকতেই স্বপাটে এক থাপ্পড় তুর্জের গালে বসিয়ে দিলো ওর মা। এতো বড় ছেলের গায়ে হাত তুলতে উনার কোন রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব বোধ হয় না। উনি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বিন্দুমাত্র সময় নেন না।
তুর্জ গা-লে হাত দিয়ে অবাক চোখে একবার মায়ের দিকে আর একবার সারার দিকে তাকিয়ে আছে।
তোমার প্রব্লেম কি??কেন বারবার এভাবে মেয়েটার সাথে এমন করো। লজ্জা করে না এমন ছোট মেয়ের শরীরে এভাবে আঘাত করতে। লিসেন তুর্জ,,,আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম হলে তার ফল ভালো হবে না। মনে রেখো!!
মা আসলে,,,, তুমি চুপ করো,, কোন কথা বলবে না। (সেই সকাল থেকে সারা পুরো ঘটনাটা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু প্রতিবার ই এমন করা নিষেধের জন্য পেটের কথা পেটেই থেকে যাচ্ছে)
উনি রাগে পাশের চেয়ারে লাথি মেরে, তনিমার কাছে থেকে নেওয়া ল্যাপটপে কি যেন করতে বসেন। আমিও অসুস্থ মানুষ তাই চুপচাপ কমলালেবু চুষে চুষে খাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,, ঠিকই করেছে আরো দুটো বোনাস থাপ্পড় দেওয়া দরকার ছিল।
তনিমা আর রাকিবের কোন খোঁজ নেই, সারার এক্সাম সামনে, তুর্জ অফিস নিয়ে সব সময় ব্যাস্ত। সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে যায় আর অনেক রাতে বাসায় ফিরে। সারা আপাতত ওর বাবার বাসা থেকে এক্সাম দিবে বলে সেখানে আছে। প্রথম দিন এক্সামে সবাই একটু নার্ভাস ফিল করে কিন্তু ফাজিলের গড প্যারেন্ট সারা এবং তার সঙ্গীদের মনে এখনো সেই আকাইম্মা বুদ্ধি কিলবিল করছে। তারা এই স্পেশাল দিন কে আরো স্পেশাল করতে একে অন্যের দিকে Dare ছুড়ে মারে, শিমুলের কাজ হবে প্রথম যে মেয়েকে সে গেইটের সামনে দেখবে তাকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে মারা। রাহুল কোন স্যারের পকেট থেকে পেন চুরি করে নিবে। তুতুল কোন ইয়াং হ্যান্ডসাম টিচার কে প্রোপজ করবে, মিঠি গেইটের সামনের যে কোন দোকান থেকে এক্সাম শেষে,যেভাবে পারুক ফ্রী ফুচকা খাওয়াবে সবাইকে। আর সারা গেইটের দাড়িয়ে থাকা পুলিশ গার্ডদের চোখ মারবে ।
সারা বলে,, আরে ধুর এটা আমার বাম হাতের খেল,,
সারা দূরে থেকে দেখে তাদের গেইটে বুড়া বুড়া পুলিশ ছাড়া হ্যান্ডসাম কোন পুলিশই নাই। ধুর আজ দিনটাই খারাপ,, অবশেষে এমন বুইড়া টাকলু কে চোখ মারতে হবে,,,,
তুর্জ ব্রেকফাস্ট করতে করতে ফেসবুক স্ক্রল করছিলো। এমন সময় সে দেখে সবাই এসএসসি পরিক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। তুর্জ ভাবে অন্তত আজকের দিনে সারাকে সামনাসামনি গিয়ে একটু উইশ করা দরকার। তুর্জ রেডি হয়ে সারার পরিক্ষা কেন্দ্রে আসতেই দেখে, সারা তার বন্ধুদের সাথে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তুর্জ সারার সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে কেবল নামতে যাবে তখনই দেখে,, সারা কেমন করে যেন উঁকিঝুঁকি মারছে। নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে দেখে তুর্জ গাড়িতে বসে থেকেই সারাকে ভালো করে লক্ষ্য করে আছে। সারার সাথে তার বিচ্চুবাহীনিরাও আছে। এমন সময় শিমুল কাউকে ফ্লাইং কিস করে। তুর্জ অবাক হয়ে দেখে সামনে তাদের সমবয়সী একজন পরিক্ষার্থী, সেও সাথে সাথে শিমুলের কিসের রিপ্লাই স্বরূপ দুই তিনটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়। শিমুল এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু সে ওই কিস গুলো নিজের হাতে খামচি দিয়ে ধরে নিজের বুকের ভেতর রেখে দেয়। মেয়েটি মুচকি হাসি দিয়ে ভিতরে চলে যায়।
কি আজিব ব্যাপার,, আগের যুগের ছেলেমেয়েদের পরিক্ষার কথা শুনলে ভয়ে হাটু কাপতো আর এখন,,,,,,
ভাবনা শেষ হতে না হতেই সারার দিকে চোখ পরে তুর্জের, সারা কি সুন্দর করে কাউকে চোখ টিপনি দিলো,, সামনে দেখে কেমন আধাবয়সী একজন কন্সট্রেবলকে। উনি তো রীতিমতো ভিম্রী খেয়ে গেছেন। তখনই তুতুল আর রাহুল বলে তারা দেখতে পাইনি সারার চোখ টিপনি,,আবারও দিতে হবে। কিন্তু তুর্জের গাড়িটা সাউন্ডপ্রভ হওয়ার জন্য বাইরের কথা গুলো তুর্জ শুনতে পায় নি।আবারও সারাকে সেইম কাজ করতে দেখে সাথে সাথে তুর্জ গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
এমন একটা কেলেঙ্কারি অবস্থায় এভাবে তুর্জকে সামনাসামনি দেখে সারার কলিজা শুকিয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে সারা পাশের বিচ্চুদের বলে,, দোস্ত কেউ একটু অরেঞ্জ জুস দে,, আমার গলাটা সাহারা মরুভূমি হয়ে গেছে,,,,,
আশেপাশে তাকিয়ে তার প্রাণের বন্ধুদের না দেখে সারা আমতা আমতা করে বলে,,,
ইইয়েএ মায়ানেএ আয়াসলে আপনি যা ভেবেছেন তা নয়।
আমি আবার কখন কি ভাবলাম,, আর তোমাকে নিয়ে ভাবা তো অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। এখানে আমার একটা কাজিন এক্সাম দিতে আসার কথা তাই তাকে উইশ করতে এসেছি।
তুর্জের কথা শুনে রাগে সারা ধমধম শব্দ করে ভিতরে চলে যায়। কিছুক্ষণের জন্য সে ভেবেছিল তার জন্য তুর্জ এখানে কিন্তু সে অন্যের জন্য এখানে শোনার পরে রাগ তুঙ্গে উঠছে। ভিতরে এসে দেখে ওরা সবাই ভিতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। সারা সেখানে গিয়ে সবাই কে স্কেল দিয়ে মারতে শুরু করে।
তুর্জ এখনো এখানে অপেক্ষা করছে সারার জন্য। এক সাথে ফিরবে ভেবে অপেক্ষা করছে। পরিক্ষা শেষ হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে কিন্তু পরিক্ষার্থীদের এতো ভির যে পিপড়াদের লাইনের মতো বের হচ্ছেই। তুর্জ মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে সারা আশেপাশে কোথাও আছে নাকি,সারা কোশ্চেন আর কলম নিয়ে বাইরে আসার চেষ্টা করছে দেখে তুর্জ হাত উঁচু করে নাড়িয়ে তার দিকে লক্ষ্য নিয়ে আসার চেষ্টা করে । ঠিক এমন সময় একজন মেয়ে তুর্জকে জরিয়ে ধরে বলে,
কি রে,, তুই এখানে?? কতদিন পরে দেখা,, কেমন আছিস??
আরেএ ইশু,,,,,,,, তুউই,আমারও তো সেইম প্রশ্ন, তুই এখানে কেন??
সারা বাইরে এসে এমন জড়াজড়ি অবস্থায় তুর্জকে দেখে, খুব মন খারাপ হলো। সে এগুলোকে পাত্তা না দিয়ে বড় বড় পা ফেলে সামনে এগিয়ে যায়। তুর্জ চেষ্টা করছে সারাকে ডাকার কিন্তু ইশুর এতো দিন পরের দেখা হওয়ার জন্য একের পরে এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে তাই সারাকে আর ডাকা হয় নি।
সারা একটু দূরে গিয়ে একটা দোকানের আড়ালে দাঁড়িয়ে তুর্জের এমন ঢলাঢলি দেখছে। তুর্জ কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। মেয়েটা এখনো তুর্জে হাত ধরে আছে। কিছুক্ষণ পরে ওরা পাশের ফুচকার দোকানে গিয়ে ফুচকা খাচ্ছে, মাঝে মাঝে মেয়েটি তুর্জের মুখে ফুচকা গুজে দিচ্ছে।
নাহ্ আর এইসব রঙলিলা দেখা যাবে না তাই,, সারা রাগে ফুসতে ফুসতে বাসায় চলে আসে। আর কখনো এই ফালতু মানুষের জন্য মন খারাপ করবো না হুহ্। এক শাকচুন্নি কে সরাতে না সরাতে আরেকটা হাজির। আর বইন তোদেরও কি খেয়ে কাজ নাই, দেখে দেখে শুধু আমার এই একটা মাত্র বরের দিকে নজর দিস কেন?? দেশে কি আর ছেলে নাই? নাকি সবাই করোনা ভাইরাসে ইহলোক ছেলেটা পরলোকে পাড়ি জমিয়েছে।
তুর্জ না চাইতেও আবারও সারার কাছে অপরাধী হয়ে গেছে। সে আসছে একটা ভেবে কিন্তু হয়ে গেছে অন্যটা। তুর্জ রাতে অফিস শেষে সারাদের বাসায় আসেন।
হঠাৎ করে বিনা নোটিশে জামাই বাসায় হাজির দেখে সারার মামুনি রান্নাঘরে পাতিল খুন্তির সাথে লড়াই করে চলেছে । সারার বাবাই বাজারে গিয়েছে। সারা এমন অসময়ে তুর্জকে এখানে আশা করে নি। তুর্জ আসার সময় অনেক গুলো চকলেট নিয়ে এসেছে। সেগুলো সারাকে দেখিয়ে দেখিয়ে টেবিলের উপর রেখে বেডে বসে ফোন টিপছে আর আড়চোখে সারার কান্ডুকলাপ দেখছে তুর্জ।
সারা তুর্জের দিকে না তাকালেও বারবার চকলেট বক্সের দিকে নজর চলে যাচ্ছে । না সারা না,,তুই এ-তোটাও ফকিন্নি না যে যারতার জিনিসের দিকে নজর দিবি। ওই চকলেট খাওয়া যাবে না,, ওটাতে ছোট্ট বাচ্চার পটি মেশানো আছে, পঁচা জিনিস দিয়ে চকলেট তৈরি করে। এইসব খাবার আমি খায় না। এগুলো ফালতু জিনিস। এমন হাজারো কথা বলে বলে নিজের মন কে নিজে সান্ত্বনা দিতে থাকছে সারা। কিন্তু চকলেট পিয়াসি মনকে কন্ট্রোল করা আর বহুদিন বন্দী থাকার পরে মুক্ত হওয়া বাঘ কে কন্ট্রোল করা একই কথা।
তুর্জ সারার অবস্থা বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসছে আর সারার লোভ আরো বাড়ানোর জন্য, খসমস শব্দ করে প্যাকেট খুলছে। সারা না চায়তেও কানে শব্দ গুলো হানা দিচ্ছে,, তুর্জ এবার একটা চকলেট বের করে লোভনীয় ভাবে চেটেপুটে খেতে শুরু করে,,,
চলবে,,,