বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব 08+09

0
642

গল্পঃ #বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ (০৮+৯)
#লেখনীঃ মনা হোসাইন
(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। এর স্থান কাল চরিত্র সবি কাল্পনিক)
-” আদিবা এই আদিবা কোথায় তুই কখন থেকে ডাকছি কথা কানে যায় না…?
আদিবা কাপড় বের করে দিয়ে ১ মিনিটও হয়নি নিচে এসেছে এর মধ্যেই আদির গলা ভেসে আসল।
আদির ডাকের ভংগিতে বাসার সবাই মোটামুটি অবাক হয়েছে আদিবা একটু বেশিই হয়েছে…সে একবার কাকিমনির দিকে তাকিয়ে আর কিছু না ভেবে হাতে থাকা বাটি নিয়েই ছুটল আদির ঘরে..
হাফাতে হাফাতে বলল,
-“ভাইয়া ডাকছিলেন..?
-“ডাকছিলাম যে সেটা তো এতক্ষনে পুরো শহর জেনে গিয়েছে প্রশ্ন করার কী আছে..? নিজেকে কি ভাবিস তুই..?
-“একটুও বদলান নি। একদম আগের মতই আছেন…
-“তাতে কী? তুই তো বদলেছিস
-“মানে..?
-“মানে কী সুন্দর আমার মুখের উপড় কথা বলে যাচ্ছিস…একটুও বুক কাঁপছে না যাইহোক আমাকে আপনি করে বলা শুরু করলি কবে থেকে…
আদিবা উত্তর দিল না।
-” বরপক্ষ কখন আসবে..?
-“বাসায় আসবে না রাতে রিসোর্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে…
-“তাই নাকি..? যাইহোক ওয়াশরুমে কাপড়গুলো ধুয়ে দে…
-“এখনী দিতে হবে…না মানে আসলে বাসায় অনেক লোকজন রান্নাটা শেষ করে এসে দেই।
-“তোর সাহস হয় কী করে আমার মুখে মুখে কথা বলার…? এখন থেকে আমার যাবতীয় কাজ তুই করবি…
আদিবা কথা না বাড়িয়ে হাতের বাটিটা টেবিলে রেখে ওয়াশরুমের দিকে গেল। ওয়াশরুমে যেতে না যেতেই কাঁচ ভাংগার শব্দে কেঁপে উঠল আদিবা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আদির গলা শোনা গেল।
-“মা…মা কোথায় তুমি…
আদিত্য ডাকতেই বাসার সবাই এসে জরো হয়েছে তার ঘরে।
-“ক ক কী হয়েছে বাবা.??
-“কী হয়নি সেটা বলো…সামান্য কাপড় ধোতে বলেছি বলে আদিবা নোংরা বাটিটা আমার উপড়ে ছুড়ে ফেলেছে…
-“কী আদিবার এত সাহস..?
আদিবা আদির এমন মিথ্যার জন্য প্রস্তুত ছিল না সে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
-“মা বাসায় আজ থেকে কোন কাজের লোক থাকবে না সবকাজ আদিবা নিজের হাতে করবে এটা আমার সিধান্ত। আর এই সিধান্তের উপড়ে যারা কথা বলবে হয়,তারা এই বাসায় থাকবে অথবা আমি থাকব এবার তোমাদের ইচ্ছে…!!
আদিবা এতক্ষন ওয়াশরুম থেকে সব শুনছিল এবার বেরিয়ে আসল এসে নিজেও অবাক হল আদির সারা গায়ে মসলা ছড়িয়ে আছে অথচ সে বাটি টা টেবিলে রেখে গিয়েছিল।
আদিবা বাইরে আসতেই আদির মা এগিয়ে গিয়ে বিরক্ত মুখে বলল,
-“ছেলেটা বাসায় পা দিতে না দিতেই মাথাটা চিবিয়ে খাচ্ছিস..?
আদিবা মুখ কালো করে জবাব দিল,
-“এসব তুমি কি বলছো কাকিমনি..?
-“যা বলেছি সেটা না বুঝার মত মেয়ে তুই না। একটা কথা কান খুলে শোনে নে তোর জন্য আদির যদি কোন অসুবিধা হয় আমি কিন্তু মেনে নিব না, কিছুতেই না।
-“আ আ আমি….
-“আদিবার বাচ্চা…একটাও কথা বলবি তো তোর কপালে দুঃখ আছে।
বলে চেঁচিয়ে উঠল আদি..আদিবা চোখ উল্টে আদির দিকে তাকাল। আদিত্যের মা ভিষন বিরক্তি নিয়ে বলল,
-“এমন ভাব নিচ্ছিস যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না?
আদিবা বুঝতে পারল এখানে কথা বলে কোন লাভ নেই তাই উত্তর না দিয়ে আবারো ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল।
আদির মা রাগ নিয়ে গিয়ে আদিবার মায়ের সামনে দাঁড়াল।
-“শাহানা লক্ষন ভাল দেখছি না তোমার মেয়েকে সামলাও আর কোন রকম ঝামেলা কিন্তু আমরা সহ্য করব না।
শাহানা বেগমের অসহায় জবাব,
-“ভাবি আদিবা হয়ত বুঝতে পারেনি। না বুঝে করে ফেলেছে।
-“হ্যা তোমার মেয়ে তো কোন দোষেই করে না সব দোষ আমার ছেলের…
-“আমি তা বলিনি ভাবী… আমি আদিবাকে বুঝিয়ে বলব ।এবারের মত ক্ষমা করে দাও.. আদি বাবা তুই শার্ট টা খুলে দে আমি ধোয়ে দিচ্ছি..
-“ছি ছি চাচীম্মা কিসব বলছো তোমার ধুতে হবে কেন? আর তুমি ক্ষমাই বা চাচ্ছ কেন? এখানে তোমাদের কারোর কোন দোষ নেই দোষ যে করেছে তাকেই বুঝতে দাও তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া আদিবার ব্যাপারে আগলা দরদ দেখিও না তাহলেই হবে। আমার সাথে ওর ঝামেলা আছে জানো তো আমাদের ঝামেলা আমাদেরকেই মিটাতে দাও প্লিজ তোমরা এখন যাও।


আদিবা ওয়াশরুমে বসে ছিল হুট করে সেখানে আদির আগমন ঘটল। আদিবা একরাশ বিরক্তি নিয়ে আদির দিয়ে তাকাল
-“কী হল…? সং এর মত তাকিয়ে আছিস কেন?
-“আমার নামে মিথ্যা বললেন কেন..?
-“ইচ্ছে হয়েছে তাই…
-“যখন যা ইচ্ছে হবে তাই করবেন? এখনো কী আগের মত ছোট আছেন?
-“তাহলে বলছিস বড়দের মত আচারন করা উচিত?
আদিবা উত্তর দেওয়ার সুযোগ পেল না তার আগেই আদি ওয়াশরুমের দরজা লক করে দিয়ে আদিবাকে আখড়ে ধরল আদিবা অবাক হল।
-“ক ক কী করছেন এসব..?
-“বড়দের মত আচারন বলেই আদি,আদিবার ঘাড়ে মুখ ডুবাল।
আদিবা এই অপমান টা নিতে পারল না কোন মতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে আদির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।
তাতে আদি কোন রকম রিয়েক্ট না করল না চুপচাপ গাল মুছে শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়াল তারপর শার্ট খুলতে খুলতে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবা ফুঁপাচ্ছিল আদির হাব ভাব তার মোটেও ভাল লাগল না তাই দরজা খোলার চেষ্টা করল কিন্তু তা সম্ভব হল না আদি তার আগেই আবারো আদিবার দখলদারি নিয়ে নিল।
নিজের খুব কাছে টেনে নিল আদিবাকে।
শাওয়ারের জল ধারায় দুজনেই ভিজে একাকার অবস্থা। আদি আদিবার স্পর্শকাতর জায়গা গুলোতেও হাত দিতে পিছপা হয় নি আদিবা এবার কেঁদেই ফেলল।
আদি শান্ত ভাবে আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-“কোন সমস্যা…?
-“লজ্জা করছে না নিজের বোনের সাথে এমন করতে?
-“নাহ তো.. তুই আমার প্রথম স্বপ্নদোষের কারন ছিলি তখন থেকেই আমি তোকে অন্যচোখে দেখি আর সত্যি বলতে আমার লজ্জা করে না।
-“আমি সবাইকে গিয়ে যদি এসব বলি কি হবে জানেন…
-“জানি…কিন্তু তুই জানিস না তুই আমার বিরুদ্ধে কিছু বললে আমি তোর সাথে রা/গ দেখাব আর বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার অভিনয় করব আর সেটা আমার বাবা মা মানবে না কারন বাবার বয়স হয়েছে এখন সংসারের হাল ধরার জন্য আমাকে দরকার যেকোন মুল্যে ওরা আমাকে আটকাবে আর সবটা দোষ হবে তোর…
-“ব্লে*ক*মে*ই*ল করছেন?
-” অনেকটাই তাই…
আদিবা চোখ মুছতে মুছতে বলল
-“আমি আর একমুহূর্ত এখানে থাকেব না এখনী গ্রামে চলে যাব…
-“চেষ্টা করে দেখতে পারিস কিন্তু সংসার চলবে কি করে.? তুই আমার কথামত না চললে সাদিয়ার পড়াশোনা থেকে শুরু করে চাচীম্মার চিকিৎসা সবি বন্ধ হয়ে যাবে…
-“ছিঃ এতটা নিচে নেমে গেছেন…
-“আমি সবসময় নিচেই ছিলাম।
-“আমার সাথে এমন কেন করছেন..?
-“কারন তুই আমার জীবন থেকে ৬ টা বছর কেড়ে নিয়েছিস…
-“আ আ আমি…
-“তুই সেদিন কি করেছিলি সেটা আর কেউ না জানলেও তুই জানিস আর আমিও জানি তাই এখন অস্বীকার করার অভিনয় করিস না।
-“সামান্য একটা কারনে আপনি এভাবে…
-“তোকে আমি ভালবাসতাম কিন্তু আমার বেপরোয়া ভালবাসার মূল্য তুই দিতে পারিস নি। তাই এখন এগুলো সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপাই নেই তোর কাছে…



গল্পঃ #বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ০৯
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন
(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প এর সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। এর স্থান কাল চরিত্র সবি কাল্পনিক)
-“আপনার মাথায় যে সমস্যা আছে সেটা কী আপনি জানেন..?
-“জানি কিন্তু সেই সমস্যা টা শুধু একজনকে ঘিরেই।
-“হাত ছাড়ুন যেতে দিন…
আদি বাধ্য ছেলের মত হাত ছেড়ে দিল। আদিবাও একমিনিট দেরি না করে বাইরে আসল।
কয়েকমিনিট পর আদি চেঞ্জ করে রুমে ঢুকল এসেই মুচকি হাসল কারন আদিবা এখনো ভেজা কাপড়ে তার ঘরেই দাঁড়িয়ে আছে…
-“কী ব্যাপার ম্যাডাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তারা গুনছেন নাকি…?
আদিবা রা/গে ফুসতে ফুসতে বলল,
-“আমি এই অবস্থায় বাইরে যাব কি করে…? সবাই কী বলবে? এভাবে ভিজে আপনার ঘর থেকে যাচ্ছি কেন জবাবে কি বলব..?
-“আমি যে উত্তর টা বলব তোর পছন্দ হবে না তাই না বলি। যাইহোক কোন রুমে থাকিস বল আমি জামা এনে দিচ্ছি।
-“আপনার আনতে হবে না সাদিয়া কিংবা অরিন আপুকে একটু ডেকে দিন।
আদি কোন উত্তর না দিয়ে বিছানায় বসে এসি চালিয়ে দিল।
-“কি হল এটা…?
-“দেখি কতক্ষন ভেজা কাপড়ে থাকতে পারিস…
-“মানে কী..?
-“মানেটা তো সহজ আমি হেল্প করতে চাইলাম তোর হেল্পের দরকার নেই। এখন হয় দাঁড়িয়ে থাক অথবা এভাবেই বাইরে যা…
-“ঠিক আছে এভাবেই যাব তবুও আপনার কাছে সাহায্য চাইব না…
-“এইটুকুনি মেয়ে অথচ রা/গ আছে ষোল আনা…দাঁড়া দাঁড়া এনে দিচ্ছি সবাইকে শ*রী*র দেখিয়ে বেড়াতে হবে না।
বলে আদি হন হন করে বেরিয়ে গেল…বাইরে এসে সাদিয়ার সাথে দেখা হল,
-“এই সাদিয়া শোন
-‘ভাইয়া তুমি এখানে? কিছু লাগবে…?
-“আদিবা কোন ঘরে থাকে রে…
-“কেন ভাইয়া..? ও তো ঘরে নেই ডেকে দিব..?
-“নাহ লাগবে না ও কী তোর সাথে ঘুমায়?
-“নাহ একা ঘুমায় । বারান্দার পাশের ঘরে।
-“আচ্ছা ঠিক আছে…
আদি আদিবার ঘরে ঢুকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল তারপর ড্রয়ার থেকে কাপড় নিয়ে নিজের ঘরে গেল।আদিত্য যেতে না যেতেই আদিবা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। বের হয়ে এদিক ওদিক কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা এক দৌড়
আদির মুখে শয়তানি হাসি ফুটে উঠল,
-“পালিয়ে যাবি কোথায়? আজকের রাত টা তোর জন্য স্বরনীয় হয়ে থাকবে শুধু আর একটু অপেক্ষা কর…




বেশ কিছুক্ষন পর নিচ থেকে সরগোলের আওয়াজ ভেসে আসল আদি তাতে বেশ বিরক্তই হল। ঘুম ঘুম চোখে নিচে নেমে আসল। আসতেই অবাক হল কারন তার ছোট চাচা ছোট চাচী আর চাচাত বোন জুঁই বিদেশ থেকে এসেছে
জুঁই আদিকে দেখেই ছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরল আদি কিছুটা হতভম্ব হল কিন্তু আদিবা রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে সেও জুঁইকে জরিয়ে নিল।
-“ভাইয়া কতবছর পর তুমি আসলে এতদিন কোথায় ছিলে..?
-“অস্ট্রেলিয়া…
-“ওমা তাই..? কিভাবে গেলে..?
-“লম্বা কাহিনী অন্য সময় বলব এখন বল তুই কেমন আছিস..?
-“ভাল আছি এখন একটু বেশিই ভাল আছি।
-“চাচা চাচী তোমরা কেমন আছো…
-“ভাল আছি বাবা তুই ফিরে এসেছিস জেনে আরও ভাল লাগছে…
-“জুঁই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তোদের জন্য গিফট আছে। নিয়ে নিস এখন ফ্রেশ হয়ে নে।
বলে আদি হাঁটতে হাঁটতে বলল আদিবা আমার সাথে ঘরে আয় তো…
আদিবা কথাটা শোনেও না শোনার ভান করল আদি ঘরে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল এবার আদিবা বাধ্য হয়েই উপড়ে গেল।
-“কী হয়েছে এভাবে ডাকছেন কেন?
-“কইফত দিতে হবে?
-“আপনি যে কয়ফত দিবেন না সেটা আমি ভাল করেই জানি কিন্তু বাসা ভর্তি লোকজন সবাই কী ভাবছে?
-“কী ভাবছে..?
-“ভাবছে আমি আপনার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছি
-“সেতো জন্মের পর থেকেই খাচ্ছিস এ আর নতুন কী?
-” আপনি ….
-“বেশি কথা ভাল লাগে না লাগেজে জিনিসপত্র আছে বের করে সবাইকে এক এক করে দিতে হবে।
-“গিফট আপনি এনেছেন আপনি দিবেন আমাকে বলছেন কেন?
-“আদিবার বাচ্চা তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি রকমের কথা শিখেছিস। আর একটাও কথা না বলে যা বল্লাম তাই কর।
আদিত্য একহাতে লাগেজ অন্য হাতে আদিবাকে ধরে নিচে গেল তারপর আদিবাকে হুকুম করল সবাইকে জিনিসপত্রগুলো দিতে আদিবা একে একে সবাই কে জিনিসপত্র দিচ্ছে।একফাঁকে আদিত্য বলল
-“মা অরিনের বিয়ে কবে..?
-“কেবল তো আংটি পরানো হবে তারপর ডেট ফিক্সট হবে
-” আমি বেশিদিন থাকব না তাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিতে হবে।
-“মানে কী তুই আবার চলে যাবি..?
-“আমি এখানে থাকতে আসিনি যেতে তো হবেই। যাইহোক আদিবা জুঁইকে ডেকে আনতো ওর জন্য কিছু স্পেশাল গিফট আছে।
জুইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো টা বোধ হয় আদিবার পছন্দ হয় নি তাই জিনিসপত্র ছেড়ে উঠে বলল,
-“নিজে ডেকে আনতে পারেন না?
-“চাচিম্মা দেখেছো ভাল কথা বললেও তোমার মেয়ে কেমন আচারন করে..?
-“আদিবা বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কেউ কথা বলে? যা এখনী জুই কে ডেকে আন।
-“থাক যেতে হবে না ওদিকে সাদিয়া আর জুঁইয়ের জন্য ড্রেস চকলেট কসমেটিক আছে সাদিয়ার গুলো দিয়ে বাকি গুলো জুই এর জন্য গুছিয়ে রাখ…ও ফ্রেশ হয়ে এসে নিয়ে যাবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিবা আদির কথা মত সব করল। কিন্তু অবাক করা বিষয় আদি সবার জন্য গিফট আনলেও আদিবার জন্যে আনেনি।আদিবার তাতে বেশ খারাপেই লেগেছে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারল না।





দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে সবাই রিসোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে যথারীতি আদিবাও রেডি হয়েছে। আদিত্য রেডি হয়ে নিচে নামতে নামতে আদিবার দিকে তাকাল। আদিবা হালকা গোলাপি শাড়ির সাথে সাদা ফুল হাতা ব্লাউজ পরেছে, কোমড় ছাড়িয়ে পড়া খোলা চুলে গুছিয়ে সাদা রজনী মালা, কানে দুল গোলাপি চুড়ি আর ঘন কাজলে সাজিয়ে চোখ দুটি। সব মিলে অপ্সরি লাগছে তাকে। যেন সদ্য ফুটে ওঠা বনফুল যার উপড় থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া কষ্টকর।
অন্যদিকে সাদামাটা একটা কালো টিশার্টে কি অপরুপ লাগছে আদিকে। যদিও সাজগোজের বাহার নেই কিন্তু তার নজর কারা হাসি,পরিপাটি পোশাক গোছানো চুল তার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে চলেছে। বাসার সবার দৃষ্টি এখন তার দিকেই।
আদিত্য নিচে আসতেই জুই বলে উঠল,
-“উফফ ভাইয়া তুমি কত হেন্ডসাম হয়ে গেছো তোমার উপড় থেকে চোখ সরানোই দায়।
আদিত্য মুচকি হাসল তারপর সবাইকে তাড়া দিতে লাগল..
-“মা এখনো বের হও নি তোমরা কখন যাবে বলতো..??
-এই তো বাবা এখনী যাচ্ছি। সবাই কোথায় গাড়িতে গিয়ে বসো…
সবাইকে তাড়া দিয়ে বাসার বাইরে পাঠিয়ে রুবিনা বেগম বাসায় তালা দিলেন। বাসার বড়রা একসাথে গাড়িতে যাবে আর ছোটরা একসাথে। আদিত্য বড় দের গাড়িতে তুলে দিয়ে পাঠিয়ে দিল। অন্য গাড়ি সে নিজেই ড্রাইভ করবে গাড়িতে অরিন,সাদিয়া,জুই সহ আরো কিছু আত্মিয় স্বজন আছে। সবার মাঝে আদিবাও আছে সে অরিনের পাশে বসেছে।
সব ঠিকঠাকেই ছিল কিন্তু আদি গাড়িতে উঠেই হুট করে রেগে গেল। হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে আদিবার পাশের দরজা স্বজোরে খুলে দিল। আদির কান্ডে উপস্থিত সবাই বিব্রত হয়েছে কিন্তু আদিবা একটু কিছুটা ভয় পেয়েছে..আদিবা প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই
-“তুই এখানে কী করছিস…? আদিবার দিকে তাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে প্রশ্নটা করেছে আদিত্য।
-“আ আ আমি মানে…
-“মানে টা তো আমিও জানতে যাচ্ছি তুই কোথায় যাচ্ছিস..?
আদির প্রশ্নে অবাক হল আদিবা…
কিন্তু কিছু বলতে পারল না।
আদিবার অবস্থা দেখে অরিন বলল,
-“ছোটরা সবাই একসাথে যাব তাই আদিবাও আমাদের সাথে এসেছে।
-“অরিন একটা কথা শুনে নে আদিবা যদি তোর সাথে যায় তাহলে আমি যাব না।
-“তুই এসব কি বলছিস ভাইয়া…?
-“সোজা কথা আমি সোজা ভাবেই বলি ড্রাইভার ডেকে দিচ্ছি তোরা চলে যা…
-“ভাইয়া তাই কখনো হয় নাকি তুই না গেলে…
বলেই আদিবার দিকে তাকাল সবাই। আদিবা বুঝতে পারল তার এখান থেকে চলে যাওয়া উচিত তাই প্রতিবাদ জানাল না নেমে দাঁড়াল আদিও কিছু বলল না গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
আদির এমন অদ্ভুত আচারনে আদিবা কষ্ট পেয়েছে নাকি অবাক হয়েছে সে বুঝার চেষ্টা করছিল। তখন মনে হল যত যাইহোক অরিনের বিয়েতে কোন রকম গন্ডগোল করা উচিত হবে না তাই ঘরে ফিরে যাবে ভাবছিল কিন্তু ফিরে এসে আরও একটা ধাক্কা খেল দরজার ঝুলছে মস্তবড় তালা। সে এখন ঘরে যাবে কি করে? কাউকে ফোন করে বলবে সেই উপায়ো নেই। কারন তার নিজস্ব কোন ফোন নেই চারদিকে শুনসান নিরবতা। দেখতে দেখতে রাত বাড়তে লাগল আদিবার বেশ ভয় লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই। আদিবা কোন উপায় না দেখে সে তার ছোট বেলার বান্ধবীর বাসায় চলে গেল কারন একা একা এই অন্ধকারে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব না।
আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে সবাই ফিরল। আদির পা দরজার তালা খুলছেন দেখে আদির মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
-“মা তুমি বাসায় তালা দিয়ে গিয়েছিলে..?
-“হ্যা কিন্তু কেন..
-” আদিবা…?? তাহলে আদিবা কোথায়?
-“তাই তো ও তো অনুষ্টানেও যায় নি।
আদি আর কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল, আশেপাশে খুঁজতে লাগল।
-“আজ একবার তোকে পাই তারপর বুঝাব মজা।
তখনী আদির ফোনে ফোন আসল আর তার মা বলল আদিবা ফোন করে বলেছে সে তার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে আজ ফিরবে না।
-“কীহ…?? কোন বান্ধবী…?
আদির মা নাম বললেন…
-“ঠিক আছে বাসার ফোন নাম্বার টা দাও তো মা ওর বাড়ির বাইরে থাকার মজা আমি দেখাচ্ছি।
ঘড়িতে ১২ টা বেজে ৩৪ মিনিট সশব্দে বেজে উঠল কলিং বেল। আদিবা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল কিন্তু তার বান্ধবী তার ঘুম ভেঙে বলল তাকে নিতে তার ভাই এসেছে। আদিবা ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্ন করল
-“ভাই কোন ভাই…?
-“আদিত্য…
নামটা শোনামাত্র আদিবার চোখের ঘুম উধাও হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি নিচে নামল।
আদি নিচে বসে আছে চোখে মুখে যেন আগুন ঝরছে..আদিবা এসে দাঁড়াতেই আদিত্য বলে উঠল -“আন্টি আমরা তাহলে যাই.
-“আদিবা আজ রাত টা থেকে গেলেই তো পারত শুধু শুধু কষ্ট করে আসলে।
-“আন্টি আসলে বাসায় বিয়ে তো অনেক লোকজন তাই রাতেই যেতে হবে।
-“আচ্ছা তাহলে নিয়ে যাও সাবধানে যেও।
আদিত্য সামনে সামনে হাঁটছে আদিবা তার পিছন পিছন…
-“এটা ফয়সালদের বাসা না..? তিন্নি মানে তোর বান্ধবী তো ফয়সালেরেই বোন তাই না?
আদিবা উত্তর দিল না।
-“সাহস কী করে হল অন্য বাড়িতে রাত কাটানোর সিধান্ত নেওয়ার? আমি যখন দেশে ছিলাম না তখন এসবেই করে বেরিয়েছিস তাই না?
আদি সারা রাস্তা আদিবাকে ধম**কাতে ধম**কাতে নিয়ে আসল আদিবার চোখ ফেঁটে কান্না পাচ্ছে কিন্তু মায়ের অসহায়তার কথা ভেবে কারো কাছে অভিযোগ করল না চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে জামা কাপড় চেঞ্জ করে নিল। তখনী কানে আসল তার মায়ের ডাক ভিতরটা ধ্বক করে উঠল,অনুষ্ঠানে কেন যায় নি মা প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে সে..?
কিন্তু মায়ের কাছে গিয়ে বুঝতে পারল সে অনুষ্ঠানে গিয়েছে কি যায় নি তাতে তার কিছু যায় আসেনি তিনি আদিবাকে অন্য কারনে ডেকেছেন।
-“মা ডাকছিলে…?
-“হুম আদিবা শোন জুঁই আজকে তোর সাথে ঘুমাবে।
আদিবা মাথা নেড়ে সায় জানাল কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারল ২ টি হি**স্র চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে এর কারন টা বুঝতে পারল না তাই তেমন গুরুত্ব দিল না।নিজের ঘরে গিয়ে বিছানা গুছিয়ে জুই কে শুতে বলল। তারপর নিজেও জুইয়ের পাশে শুয়ে পড়ল।
-“আচ্ছা আদিবাপু ভাইয়াকে তোমার কেমন লাগে..?
-“মানে..?
-“মানে ভাইয়ার মত এত হ্যান্ডসাম একটা ছেলে আশেপাশে থাকলে সবারেই ভাল লাগার কথা তাই না..?
জুইয়ের অবান্তর কথার উত্তর দিতে ইচ্ছে হল না আদিবার…তাই চুপ করে রইল।
-“আপু জানো পার্টিতে সবাই ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল।
-“আহ জুই রাতদুপুরে ভাইয়া ভাইয়া না করলেই কী নয় এবার ঘুমাও না?
-“আপু জানো আমার মনে হয় কি আমি ক্রাশ খেয়েছি…
-“ভাল করেছো সকালে চাচা চাচী কে বলে ক্রাশের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিব কিন্তু এখন ঘুমাও প্লিজ।
-“কিন্তু আপু আমার মনে হয় ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে…
-“জুই তুমি এত বাজে বকো কেন?
-“সত্যি বলছি আপু,পার্টিতে বড় চাচা বলেছেন ভাইয়ার বিয়ে দিবেন যাতে সে এখানেই থাকে। চলে যেতে না পারে।ভাইয়াকে যখন বিয়ের কথা বলল তখন ভাইয়া বলেছে তার নাকি মেয়ে পছন্দ করা আছে আর সে ছোটবেলা থেকেই তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে। যদিও ভাইয়া এখন তোমায় পছন্দ করে না কিন্তু ছোটবেলায় ও তোমার জন্য পাগল ছিল তাও না সবাই সেটা জানে…তারমানে ভাইয়া তোমাকেই বিয়ে করবে।
-“জুই তুমি প্লিজ ঘুমাও আমার এখন এসব শুনতে একদম ইচ্ছে করছে না।
-“হাউ আনরোমান্টিক…
মুখ ভেংচি দিয়ে জুই উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়ল।
বেশকিছুক্ষন পর আদিবা লক্ষ্য করল জুই তাকে আঁশটে পিশটে জরিয়ে ধরেছে।
-“জুই একটু সরো প্লিজ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না।
আদিবার কথায় জুইয়ের কোন পরিবর্তন ঘটল না বরং সে তাকে আরও জড়িয়ে নিল।
-“উফ আমি এভাবে ঘুমাতে পারি না… সরো প্লিজ।
“”” আর আমিও জড়িয়ে না ধরে ঘুমাতে পারি না”””
কন্ঠ টা শোনে আদিবার আত্মা উড়ে গেল..তাড়াতাড়ি উঠে বসল সে।
-“ভ ভ ভাইয়া আপনি এখানে…?
-“হিসস এত জোরে কথা বললে জুই জেগে যাবে…
-“এসবের মানে কী..?
-“মানে আমি তোর সাথে ঘুমাম
-“কিসব বলছেন…
-“যা বলার তাই বলেছি। যখন তোর জামা নিতে এসেছিলাম তখনী ভেবে নিয়েছি আমি তোর সাথে ঘুমাব কিন্তু এই জুই সবকিছুতে জল ঢেলে দিল।
-“এখনী এখান থেকে বেরিয়ে যান তাহলে আমি কিন্তু চেঁচাব।
-“সাহস থাকলে চেঁচা দেখি কেমন পারিস…
আমার বি*রু**দ্ধে কিছু বলা বা করার আগে আগাগোড়া ভেবে নিস।
-“এতকিছুর পরেও আপনার মুখে কথা বের হচ্ছে..?
-“আমি তো কোন অন্যা*য় করি নি যা করার তুই করেছিস বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিস তাও এত সেজেগুজে।এর শা**স্তি ত পেতেই হবে।
-” আমি আপনার পায়ে পড়ছি প্লিজ যান এখান থেকে জুই জেগে গেলে মানসম্মান থাকবে না।
-“তাহলে তুই আমার রুমে চল…
-“আ আ আমি আপনার ঘরে…?



চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here