মন পাথরে হঠাৎ ঝড় – পর্ব 23

0
271

#মন_পাথরে_হঠাৎ_ঝড়
#পর্ব_২৩
Tahrim Muntahana
অপারাহ্নের শেষ সময়। দ্রুতবেগে অতিবাহিত হয়ে গেছে পাঁচটি মিনিট। দরজার অপারে দাড়িয়ে অত্যন্ত সুশীল একজন নারী তাকিয়ে আছে অবাক চোখে। চোখ মুখে বিরাজ করছে বিষ্ময়। বিষ্ময়ের রেষ হয়তো একটু বেশীই; দুহাতে মুখ চেপে ধরে চোখ বড় বড় করে দেখছে হৃদানকে। বিষয়টি হৃদান চৌধুরীর কাছে বিরক্তির কারণ হলেও অপর পাশের মানুষটি হয়তো অবাকতায় এতই ডুবে আছে ; দরজা ছেড়ে দাড়ানোর বোধ টুকু্ তার হয়নি। পেছনে তীক্ষ্ম চোখে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করছে আদর। তার কাছে এই মুহূর্তে মেয়েটিকে রাজাকারের মতো লাগছে। যুদ্ধের কথা মনে হলেই তার যেমন রাজাকার দের ধরে ধরে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে; পিষিয়ে দিতে ইচ্ছে করে হাতযুগল তেমনি এখন তার সামনের মেয়েটির চোখ দুটো তুলে ফেলতে ইচ্ছে করছে। শুধু তুলেই কি ক্ষান্ত হবে? কয়েকটা মার্বেল কিনে চোখ দুটো দিয়ে মার্বেল খেলবে আর বলবে, ‘কেন এখন তাকা, মন ভরে দেখ আমার মানুষটিকে তোর চোখের অস্তিত্বই আর রাখবো না!’
নিজের ভাবনার উপর নিজেই অবাক হলো আদর। সে জেলাস? সত‍্যিই তো সে জেলাস না হলে হৃদানের দিকে তাকানোর অপরাধে মেয়েটিকে তার অসহ‍্য লাগবে কেন? কেন চোখ দুটো তুলে মার্বেল খেলার কথা মনে হবে? পরক্ষণেই নিজের মনকে সায় জানিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,
আদর তুই পাগল হইছিস? তোর কিছুটা দূরে অবস্থান করা পুরুষটি একমাত্র তোর! তার দিকে অন‍্যকেউ এভাবে তাকিয়ে থাকলে তোর রাগ হবে না? এটা স্বাভাবিক! ভালোবাসায় জেলাসি না থাকলে হয়!
মুচকি হৃসলো আদর। পাগল পাগল লাগছে। সামনে অবস্থান করা সুদর্শন পুরুষটির বুকটা লুফে নিতে ইচ্ছে করে। নিজের ভাবনাকে সংযত করে পান্চুর দিকে কড়া চোখে তাকালো আদর। ঢোক গিললো পান্চু। তার কি দোষ? মেয়েটাকি তার দিকে তাকিয়ে আছে? আদরের চাহনী বলে দিচ্ছে, ‘হ‍্যা তোর দোষ আছে! তুই তোর বসকে মেয়ে থেকে প্রটেক্ট করতে পারছিস না! তাও বলছিস তোর দোষ নেই। এ ঘোর অন‍্যায়!’ মাথা ঝেড়ে এগিয়ে গেলো পান্চু। কখন আবার তার টাক মাথাটাকে ঢোল বানিয়ে ফেলে কে জানে! বাঁচতে হলে বাঁচাতে হবে। বসকে মেয়ে থেকে রক্ষা করা তার নৈতিক দায়িত্ব! এগিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,
এক্সকিউজ মি ম‍্যাম, সাইড প্লিজ। ম‍্যাম আপনাকে বলছি সরে দাড়ান। ও হেলো? এই মেয়ে সরেন বলছি। ঘরে বাপ ভাই নাই তাইনা। আমার অবলা বসের দিকে কুনজর দিচ্ছেন। লজ্জা নাই?
পান্চুর কথায় চমকে উঠলো মেয়েটি। এতক্ষণ কি করছিলো ভেবেই নিজের মাথা নিজেই ফাটাতে ইচ্ছে হলো। এত সামনে থেকে হৃদান চৌধুরীকে দেখতে পাবে সেটা কি আশা করেছিলো? তাইতো শক পেয়ে গেছে। মেয়েটি নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত নরম কন্ঠে বলে উঠলো,
আমি খুবই দুঃখিত। কিন্তু আপনারা কে? কার কাছে এসেছেন?
মেয়েটির নরম কন্ঠে পান্চু আর কিছু বললো না। পেছনে সরে আসলো। সে মেয়ের অবস্থা বুঝতে পেরেছে। আদর গটগট পায়ে এগিয়ে গিয়ে এক টানে হৃদানকে নিজের পেছনে সরিয়ে দিয়ে মেয়েটির সম্মুখে দাড়ালো। তার রাগ হচ্ছে। হালকা ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো,
নাসির চৌধুরী আছেন?
মেয়েটি দরজা থেকে সরে দাড়ালো। মিষ্টি হেসে বললো,
হ‍্যাঁ বাবা বাড়িতেই আছে। আপনারা ভেতরে আসুন। আর আমার ব‍্যবহারের জন‍্য আমি সত‍্যিই দুঃখিত। আসলে স‍্যারকে কেই বা না চিনে বলুন। হঠাৎ সামনাসামনি দেখে বিষ্ময় কাটাতে পারিনি!
আদরের খারাপ লাগলো। প্রচন্ড খারাপ! কিসব ভাবছিলো সে। ভালোভাবে মেয়েটির দিকে তাকালো সে। অনেকটা মিষ্টি দেখতে। তার থেকে ছোটই হবে। বাবা বলায় বুঝতে অসুবিধা হলো না মেয়েটি হৃদানের কাজিন। ভালো লাগাকে পাত্তা দিলো না আদর। হৃদান কে সাবধানে চোখে চোখে রাখতে হবে! ভেতরে ঢুকে পড়লো ওরা। বিশাল এরিয়া জুড়ে চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িংরুম অত‍্যন্ত সুশীল ভাবে গোছানো। চোখ ধাঁধানো সুন্দর না হলেও মানানসই। হৃদান যত এগোচ্ছে তার হাত তত মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে। রাগ যেন তির তির করে বেড়ে যাচ্ছে। শিরা গুলো কেমন ফুলে যাচ্ছে। খপ করে হৃদানের মুষ্টিবদ্ধ হাতটি ধরলো আদর। স্বাভাবিক হলো হৃদান। মেয়েটির ছোঁয়ায় কি জাদু আছে নাকি? কেমন পাগল পাগল করে দেয়! মায়া মায়া চোখে পর্যবেক্ষণ করলো আদরের মুখশ্রী। ভেতরটা একদম শান্ত হয়ে গেলো। ভালোলাগায় ভরে গেলো মনটা। আদরের হাত ধরে দাড়িয়ে গেলো হৃদান। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলে উঠলো,
তোমরা এগোও আমরা আসছি। আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে!
হতভম্ব হয়ে তাকালো সবাই। আদর তো হতভম্ব হতেও ভুলে গেলেও। এই সময়ে হৃদানের কাছ থেকে এটা আশা করেনি কেউ। পান্চু তো ভয়ে ছিলো হৃদানের রাগের জন‍্য না প্ল‍্যান ফ্লপ হয়! সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার বস এখন পাগলা প্রেমিক হয়ে গেছে। হাইরে পান্চু তোর টাক মাথায় এত বুদ্ধি থাকতে তুই একটা প্রেমিকা জোগাড় করতে পারলি না? তোর তো এক কেজি চিনি খেয়ে মরে যাওয়া উচিত। টাক মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সামনের দিকে হাটা দিলো পান্চু। তার আফসোসের শেষ নেই। জীবনটা মনে হয় হতাশা দিয়ে ভরে গেছে! আতইয়াব ওরাও হাটা ধরলো। এই মুহূর্তে তারও প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
ওরা চলে যেতেই হৃদান একটানে আদর কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আদর শুধু ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাকিয়ে আছে। তার বোধগম্য হচ্ছে না কিছুই। আদরের নিষ্পাপ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো হৃদান। গুনে গুনে পনেরো টা চুমু খেলো গালে কপালে চোখে। ঠোঁটের দিকে যাওয়ার স্পর্ধা সে করেনি। নিয়ন্ত্রণ হারা হলে আবার সমস‍্যা। শেষমেষ আদর এক ভয়ানক কাজ করে ফেললো। হৃদানের চোখে হাত রেখে ঠোঁটের কোণ ঘেসে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়েই দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো। হৃদান এবার সেদিনের মতো স্ট‍্যাচু হয়নি। খুশি হয়েছে। বয়স তো কম হলো না। এবার বিয়েটা করা দরকার। তারপর চলবে আদর কে আদর!
নাসির চৌধুরীর সামনে বসে আছে হৃদানরা। হৃদানের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেলেও উপরে নিজেকে শান্ত রেখে বসে আছে। আদরের খটকা লাগছে নাসির চৌধুরীকে দেখে। লোকটা কে দেখে মনে হচ্ছে না লোকটা খারাপ। সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে কি সুন্দর করে বসে আছে। এসেই আগে সালাম দিলো! নিজের খটকা টা নিজের মধ‍্যেই রেখে দিলো সে। হয়তো তাদের সামনে ভালো মানুষ সাজার নাটক করছে। হৃদান কে কথা বলতে দিলো না আদর। নিজেই শান্ত স্বরে বলে উঠলো,
আংকেল আমরা এসেছিলাম গ্রাম টা ঘুরতে। এখানে এসে শুনলাম যারাই গ্রামে আসে আপনার কাছে পারমিশন নিতে হয়। তাই আসা!
চমকে উঠলো সবাই। নাহ এটা বলার তো কথা ছিলো না। সবচেয়ে অবাক হয়েছে তো হৃদান। কি বলছে আদর? তারা তো এসেছিলো আজকেই নাসির চৌধরীর গোমর ফাঁস করতে। হৃদানের হাতে চিমটি কাটলো আদরেই । দৃষ্টি স্বাভাবিক করে নিলো সে। তার মাথায় এতটুকু ঢুকেছে যে আদর অন‍্য প্ল‍্যান করেছে। কথা বাড়ালো না সে। আদরের কথা শুনে নাসির চৌধুরী অমায়িক এক হাসি দিলো। নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে বলে উঠলেন,
আসলে মা শহর থেকে অনেক ছেলে মেয়েই আসে। আগে এমনটা নিয়ম ছিলো না। কিছু বছর আগে গ্রামে ঘুরতে এসে একটা মেয়ের ইজ্জত হানি হয় তাই এই নিয়মটা করেছি। আপনারা অবশ‍্যই গ্রাম ঘুরে দেখতে পারেন। কিন্তু সন্ধ‍্যার পর বাইরে ঘুরতে পারবেন না। আর আমাদের লোক কে সাথে নিয়ে যেতে হবে। কার মনে কি আছে এই যুগে বোঝা যায় না মা। গ্রামের জমিদার হওয়ায় আমার গ্রামের সুরক্ষা ও সম্মান রক্ষা করা আমার দায়িত্ব।
অবাক হয়ে নাসির চৌধুরীর কথা শুনে যাচ্ছে ওরা। আহনাফের বলা নাসির চৌধুরীর সাথে তাদের দেখা নাসির চৌধুরীর কোন মিল নেই। একজন ধর্ষকের মুখে মেয়েদের সুরক্ষার কথাটা হৃদানের কাছে হাস‍্যকর মনে হলো। রিয়া হিমেলের হাত শক্ত করে ধরে আছে। তার মন চাইছে এখনই নাসির চৌধুরীর পাঞ্জাবীর কলার ধরে মুখ থেকে সব কথা বের করতে। তার বাবা কে কোথায় রেখে সব জানতে। কিন্তু উপায় নেই। তাই চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। হৃদান তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে নিজের বড়চাচার দিকে। নাহ চোখ তার সরল। অন‍্যকিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। ঝিম মেরে গেলো মাথা। হঠাৎ করেই বলে উঠলো,
এই গ্রামে কোনো হোটেল আছে স‍্যার? গ্রাম টা অনেক পছন্দ হয়েছে ভাবছি কিছুদিন থাকবো এখানে। আর একটা প্ল‍্যান ও আছে। গ্রামীণ এই পরিবেশে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি কাজ করতে চাইছি!
শেষের কথাটি আদরের দিকে তাকিয়ে বলল হৃদান। চোখে তার রহস‍্য! নাসির চৌধুরীর মুখে হাসি। এত হাসছে কেন লোকটা কেউ বুঝতে চাইছে না। মুখটা হাসি হাসি করেই বলে উঠলেন,
গ্রামটাই ওতটাও উন্নতি হয়নি বাবা। তোমরা চাইলে চৌধুরী বাড়িতে থাকতে পারো। তোমরা এই গ্রামের মেহমান। তোমাদের সম্মান করা আমার দায়িত্ব। এখান থেকেই কাজ করতে পারবে কোনো সমস‍্যা নেই। খুশি হবো বাবা!
হৃদান রহস‍্যময় হাসি দিলো। এটাই চাইছিলো সে। সে কি খবর না নিয়েই এসেছে যে এই গ্রামে কোনো হোটেল নেই! হৃদান আরো কে অবাক করে দিয়ে নাসির চৌধুরী বলে উঠলেন,
আমি তোমাকে চিনি হৃদান চৌধুরী। দেশের টপ বিজনেস ম‍্যান আমার বাড়িতে এসেছে তার অবহেলা কি করে করি বলো। আর তোমাকেও চিনি ডক্টর আতইয়াব। চৌধুরী বাড়িতে তোমাদের স্বাগতম! ছেলের মতো বলে তুমি করেই বললাম কিছু মনে করো না।
হৃদানের হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো। তাহলে এতক্ষণ জেনে শুনেই নাসির চৌধুরী ভালো ব‍্যবহার করছিলো। কিন্তু আদর ভাবছে অন‍্যকিছু। নাসির চৌধুরী লোকটাকে তার খুব ভালো লেগেছে। কেন লাগছে বুঝতে পারছে না। হৃদান কিছু বলতে নিবে তার আগেই উপস্থিত হলেন মিসেস রেহানা চৌধুরী। এক গাল হেসে শরবতের ট্রে টা রাখলো। দরকার ছিলো শরবত টা। যদিও গরম না তবুও খেলে ভালো লাগবে। মিসেস রেহানা কে দেখে নাসির চৌধুরী বলে উঠলেন,
তোমাকে যে বলেছি রান্নাঘরে যাবেনা। ফের আমার কথা অমান‍্য করেছো। শরীর খারাপ করলে কিন্তু কাছেও যাবো না!
কথাটাই মনে হলো অপরিসীম ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। আদর যত দেখছে তত অবাক হচ্ছে। নাসির চৌধুরীর কথা শুনে মিসেস রেহানা লাজুক হাসলো। কিন্তু পাত্তা দিলো না। মনক্ষুণ্ন হলো সে। মিসেস রেহানা একটি শরবতের গ্লাস তুলে নিয়ে হৃদানের সামনে ধরলো। চোখ তার ছলছল করছে। হাতটাও মৃদ কাঁপছে। হৃদান অবাক হয়ে তাকালো মিসেস রেহানার দিকে। শরবতের গ্লাস নিতে যেন ভুলেই গেছে। আদরের হাতের ধাক্কায় গ্লাসটি নিজের হাতে তুলে নিলো। মিসেস রেহানা অধির আগ্রহে চেয়ে আছে হৃদান কখন মুখ দিবে শরবতের গ্লাসে। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও এক চমুক দিয়ে চমকে উঠলো হৃদান। এই শরবত টা আলাদা। হ‍্যা তার মায়ের স্পেশাল শরবত! মা বলতো, এই শরবতটা মাত্র দুজন বানাতে পারে। তাহলে এই সেই আর একজন। মায়া মায়া চোখে তাকালো সে।‍ যেন নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিলো হৃদান। দুর্বল হলে চলবে না। সে প্রতিশোধ নিতে এসেছে। ভালোবাসতে না। ততক্ষণে সবার শরবত খাওয়া শেষ। মিসেস রেহানা আবদারের সুরে বলল,
তোমরা তো থাকবা এহানে, আইজ দুপুরের খাওন না খাইয়া বাইর হইতে পারবা না। আমি হগ্গল ব‍্যবস্থা করছি। একটুহানি অপেক্ষা করো।
বলেই ছুট লাগালেন মিসেস রেহানা। হয়তো রান্নাঘরে যাবে। নাসির চৌধুরী হতশার শ্বাস ফেললো। বলেও লাভ নেই। দেখেছে মেহমান এসেছে ওমনি নাচতে নাচতে রান্না ঘরের দিকে ছুট লাগিয়েছে। মিসেস রেহানা রান্না ঘরে গিয়েই দেখতে পেলেন তার মেয়ে রান্না প্রায় শেষ করে ফেলেছে। ঠেলেঠুলে বাইরে পাঠিয়ে দিলেন, বাকিটা সে করে নিবে। যত্ন করে রান্না করতে লাগলেন তিনি। নাসির চৌধুরী মেয়েকে দেখেই ডাক দিলেন,
নাহার, আম্মু এদিকে এসো। ওদের বাড়িটা ঘুরিয়ে নিয়ে এসো, সে পযর্ন্ত রান্না হয়ে যাবে।
নাসির চৌধুরীর মেয়ের নাম নাহার চৌধুরী। এইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার জন‍্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। নাহার খানিক টা ইতস্তত করলো। একটু আগের ঘটনার জন‍্য হয়তো। নাসির চৌধুরী উঠে চলে গেলেন নিজের ঘরে। সবাই উঠে দাড়ালো। বাড়িটা ঘুরে দেখা যাক।
আদর নাহার কে ইজি হতে সাহায‍্য করলো। মেয়েটা ছোট, তাকে নিয়ে ওমন চিন্তাধারা করার মানেই হয়না। আদরের ব‍্যবহারে নাহার একটু আগের ঘটনার কথা ভুলেই গেছে। এটা ওটা বলছে, আর সারাবাড়ি ঘুরাচ্ছে। নিচতলায় এসে হঠাৎ করেই নাহার থেমে গেলো। করিডরের পাশেই একটা জবা ফুল গাছ। যেখানে অসংখ‍্য জবাফুলের সমাহার। আদরের চোখ চকচক করে উঠলো। দৌড়ে গিয়ে একটা জবাফুল ধরতে নিবে চিৎকার করে উঠলো নাহার। আতকে উঠলো সবাই। নাহারের চোখে একরাশ ভয়। এক ছুটে আদরকে করিডর থেকে অন‍্যপাশে নিয়ে গেলো। হাপাচ্ছে নাহার, বুকটা টা উঠানামা করছে দ্রুতবেগে। সবাই প্রশ্নাত্মক চাহনীতে তাকিয়ে আছে। নাহার বলে উঠলো,
ওদিকে চলো। এইদিকে আসা বারণ। মা বাবা আর দাদি ছাড়া কেউ এইদিকটাই আসতে পারেনা। এমনকি আমিও না! বাবা দেখলে রেগে যাবে! আর জবা গাছটার আশেপাশে কাউকে দেখলে তার চৌধুরী বাড়ির শেষ দিন হয় সেদিনই।
সবাই অবাকতার চরম পর্যায়ে চলে গেছে। কি থাকতে পারে ঘর গুলোতে। আর জবা গাছটা ধরলেই বা কি হবে। হৃদান তো থেমে গেছে ওই দাদি তেই। দাদি! মানে হৃদানের দাদিও বেঁচে আছে! তারিম যেন বিশ্বাস ই করতে পারছে না সবকিছু। নাহারের হাত টা খপ করে ধরে নিলো তারিম। বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,
দাদি? তোমার দাদি আছে? নিয়ে যাবে তার কাছে?
নাহার সন্দেহ চোখে তাকালো। দাদিকে কেন দেখতে চায়ছে? খুব একটা আমলে নিলো না সে। মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে হাটা ধরলো। আদরের চোখ এখনো তালা দেওয়া ঘরগুলোতে। দেখে মনে হচ্ছে না কেউ থাকেনা। তালাটাও একদম নতুন। মনে মনে ছক কষে আদর হাটা ধরলো। আজকে রাতেই যা করার করতে হবে!
দুতালায় উঠে বাম সাইডের ঘরটাই ঢুকে পড়লো নাহার। তসবী হাতে নিয়ে আধ শোয়া হয়ে বিছানায় বসেছিলো সাহেলা আনসারী। দুপুরের দিকে নাহার কে নিজের ঘরে দেখে তসবীটা রেখে দিলো। বৃদ্ধ বয়সে গল্প করার ঝুঁক থাকে বেশী কিন্তু সাহেলা আনসারী গল্প পছন্দ করেন না। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকেন। নাহারের পর পরই ভেতরে ঢুকলো ওরা। এতজন মানুষ থেকে খানিকটা ভড়কালো সে। হৃদান তারিম বৃদ্ধাটির দিকে এগিয়ে গেলো। তারিমের চোখটা ছলছল করছে। ইনিই তাদের বাবার মা! তাদের দাদি! তাদের আপনজন! বৃদ্ধাটি পাশে রাখা টেবিল থেকে চশমা টা পড়ে ওদের দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই গর্জে উঠলো সে,
ওরা কেডা? আমার ঘরে কি করে? বাইর হো আমার ঘর থেইকা। বাইর হো কইছি। আমার ঘরে কেউ আসবিনা না!
দাদির ব‍্যবহারে নাহার চমকালো। এতদিন সে দাদিকে দেখে আসছে। কারো সাথেই এমন ব‍্যবহার করেনি। তাহলে আজ হঠাৎ ওদের দেখে এমন করলো কেন? হৃদান সাহেলা আনহারীর সামনে বসে পড়লো। মোলায়েম কন্ঠে বলে উঠলো,
দাদি! ভালো আছেন?
চমকে তাকালো বৃদ্ধাটি। মুখটা ততক্ষণে মলিন আকার ধারণ করেছে। হৃদানের ডাকে মায়া মায়া চোখে তাকালো তার দিকে। বলে উঠলো,
আমি তোমার দাদি না পোলা। তোমার মুখডা আমার চেনে চেনা লাগতাছে বাপ। কই থাহো তোমরা? এইহানে কি?
হৃদান কিছু বললো না। উঠেই ধপাধপ পা ফেলে বাইরে চলে গেলো। সে দুর্বল হয়ে পড়ছে কেন? এতবছর পর আপনজন পেয়ে সে প্রতিশোধ ভুলে যাচ্ছে? আদর পেছনে ছুটলো। না জানি কোথায় চলে যায়! নাহার দাদিকে বুঝিয়ে বলল সব। দাদি চোখ বন্ধ করে নিলো। পুরোনো ক্ষতটা জেগে উঠেছে নতুন করে। ক’দিন বা বাঁচবে সে!
ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা বেজে দশ মিনিট। শহরের কিছু মানুষ এখনো জেগে থাকলেও গ্রামের কেউ জেগে নেই। রাত নয়টার পরেই গ্রামে গভীর রাত মনে হয়। রিয়া-রোহানি, তারিম সুবাহ একসাথে ঘুমিয়েছে। আদর ঘুমিয়েছে নাহারের সাথে। ইচ্ছে করেই এমন করেছে সে। হৃদান-আতইয়াব দুইজন একরুমে। চোখে চোখে যুদ্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ‍্যে। দুজনে দুই দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। আতইয়াব তো রেগে ফেটে পড়ছে। নিশ্বাসের শব্দ শুনেই হৃদান বুঝতে পারছে। ভেতরে ভেতরে হেসে একদম খুন হয়ে যাচ্ছে সে। এবার হুট করে জোরে হেসে ফেললে বড় শালা তার গর্দান নিয়ে নিবে এটাতে তার কোনো সন্দেহ নেই। তাইতো ঘর কাঁপিয়ে হাসতে ইচ্ছে করলেও এই মুহূর্তে মুখে হাত চেপে নিজেকে সংযত করতে হচ্ছে!
আতইয়াব-তারিম যেহেতু স্বামী-স্ত্রী তাই ওদের জন‍্য একটা ঘর দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু হৃদান তা কি করে হতে দেয়। সে বউ ছাড়া রাত্রি যাপন করলে তার বড় শালা কেন করতে পারবে না? আগে বোনকে তার ঘরে পাঠাক; সেও নিজের বোনকে পাঠিয়ে দিবে। সমানে সমান! তার আগে আতইয়াব রোমান্স করবে আর সে ঘরে বসে প্রেম না করেও ছ‍্যাকা খেয়ে দেবদাস হয়ে উদাসীন জীবনযাপন করবে? এটা মানবতাবিরোধী!
নিজ কৌশলে বোনকে সুবাহ’র সাথে ঘুমাতে দিয়ে আতইয়াবকে তার সাথে থাকতে বাধ‍্য করেছে। কিছুক্ষণ কটমট চোখে তাকিয়ে ফালাহ ঘুমিয়েছে হিমেলের সাথে। পান্চু কে আলাদা ঘর দেওয়া হয়েছে। তার সাথে পিয়াস থাকবে। এ নিয়ে পান্চু ঘোর প্রতিবাদ করেছিলো। পিয়াস ওকে একলা পেলে হা-ডু-ডু বলে ক্ষেপানোর শোধ নিয়ে নিবে সে ঢের জানে। জেনেও সে বিপদ থেকে রক্ষা পেলো না। তাই নিয়ে কিছুক্ষণ নাকে কান্না করে ঘুমিয়ে গেছে।
এপাশওপাশ করছে আদর। কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না সে। মাথায় তার অনেককিছু ঘুরছে। নাহার এখনো এক মন পড়ে যাচ্ছে। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ তার সাথে গল্পও করেছে। আদর কিছু একটা ভেবে নাহার কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
আচ্ছা নাহার ওই জবাফুল গাছটা অনেক দিনের না?
আদরের কথায় নাহার বইটা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে বসলো। নাহার কে দেখেই আদর উঠে বসলো। নাহার চিন্তিত সুরে বলল,
হ‍্যা, আমার জন্মের পর থেকেই আমি ওই জবাফুল গাছটা দেখে আসছি। বুয়া আছিয়া খালার কাছে শুনেছি এটা আরো অনেকবছর আগের। কারো খুব প্রিয় ছিলো জবা ফুল। কিন্তু কার ছিলো জানিনা। আর ওই ঘর গুলোতেও থাকতো কেউ। বাবার সবচেয়ে প্রিয় কিছু মানুষ নাকি ওখানে থাকতো। তাদের আমি জীবনে দেখেনি। আর ঘরগুলোও ছোটবেলা থেকেই তালা দেওয়া দেখি।
আদরের সন্দেহ আরো গাঢ় হলো। ওই ঘর গুলোতে কিছু না কিছু তো আছেই। দেখতে হবে তাকে। নাহারের চিন্তিত মুখ দেখে আদর হালকা হাসলো। আজকের রাত টাকেই সে কাজে লাগাবে। বলে উঠলো,
তোমার জানতে ইচ্ছে করে না ওই ঘরে কি আছে? কিসের জন‍্য বন্ধ। এত যত্ন? কে থাকতো ওই ঘরে?
নাহার ভয় ভয় চোখে তাকালো। সে নিজ চোখে দেখেছে নতুন কাজের লোকটা ওই দিকে গিয়ে ছিলো বলে নাসির চৌধুরী কাজের লোকটাকে ঠাটিয়ে দুটো চড় মেরেছিলো। সেদিন ই ওই লোকটার শেষ দিন ছিলো চৌধুরী বাড়িতে। বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,
আদর আপু ভুলেও ওইদিকে যেয়ো না। আমি মরতে চাইনা। ঘুমাবো আমি, তুমিও ঘুমাও!
আদর হতাশ হলো। চুপচাপ শুয়ে পড়লো। নাহার ও পাশ ফিরে শুয়ে শুভরাত্রী জানালো আদরকে। সাড়ে এগারো টা বাজে। আদর চোখ বুঝে ঘুমের মতো পড়ে রইলো। কিছুক্ষণ পরেই টের পেলো নাহার গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো সে। দরজা খুলে বাইরে চলে গেলো। নিজের ফোনটা নিতেও ভুললো না। লাগতে পারে। আতইয়াব-হৃদানের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো। কিছুক্ষণ ভেবে আবার ফিরে গেলো। তার ঘরের তিনঘর পরে পান্চু ঘুমিয়েছে। সেদিকেই হাটা ধরলো। দরজায় নক করতেও ভয় লাগছে তার। যদিও কেউ চলে আসে। করিডরটা ভালো করে দেখে নিলো একবার। নাহ কেউ নেই। সব ঘরেই বাতি বন্ধ। দরজায় টোকা দিলো দু’তিনবার। নাহ খুলছে না। মরার মতো ঘুমাচ্ছে পান্চু।হাতের ফোনের দিকে তাকিয়েই ফোন দেওয়ার কথা ভাবলো সে। দু বার রিং হয়ে কেটে গেলো। রাগ হচ্ছে আদরের। আরেকবার ডায়াল করলো। এই বার না ধরলে পান্চুর আধা টাক মাথা সে পুরো টাক বানিয়ে দিবে। তিনবারের বেলায় ফোন ধরেই পান্চু বিরস মুখে বলে উঠলো,
মা-বাপ, ভাই-বোন যাই হোস তুই এত রাতে ফোন দিলি কেন? আমার ভালো কারো সহ‍্য হয়না? শান্তির ঘুমে ঠ‍্যাং না ঢুকালে কি হতো? একটু ঘুমাতে দে না বাপ।
ধমকে উঠলো আদর,
এই আধা টাকু পান্চু কাকু। দশ সেকেন্ড সময় বাইরে আসো। দাড়িয়ে আছি আমি।
বলেই ফোন কেটে দিলো। ধপ করে উঠে বসলো পান্চু। নম্বর টা চেক করেই এক লাফে দরজায় এসে দাড়াল। খট করে দরজা খুলেই চমকে চিৎকার করবে তার আগেই আদর ঘরে ঢুকে দরজা অফ করে দিলো। ফোনের লাইট অন করতেই পান্চু শান্ত হলো। পান্চু কে কিছু না বলতে দিয়েই আদর বলে উঠলো,
চুপচাপ আমার সাথে চলো। একটা কথাও বলবে না।
দরজা টা খুলে বেরিয়ে গেলো। পান্চু বুঝলো আজ আর তার ঘুমানো হবে না। বিছানার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো। হ‍্যাচকা টানে আদর পান্চুকে ঘরের বাইরে বের করলো। এই মুহূর্তে তার পান্চুর টাক মাথায় ঢোল বাজাতে ইচ্ছে করছে। সিক্রেট মিশনে যাচ্ছে বলে রক্ষা। টিপটিপ পা ফেলে এগোতে লাগলো। প্রথম করিডরের শেষ মাথায় যেতেই, একটা ঘরে আলো জ্বলতে দেখলো আদর। কৌতুহল হলো তার। পান্চুর হাত ধরে এগিয়ে গেলো। দরজার পাশে দাড়িয়ে দরজায় কান দিতেই নাসির চৌধুরীর কন্ঠ শুনতে পেলো তারা। বুঝে নিলো এটাই চৌধুরীর ঘর। ঘাপটি মেরে দাড়িয়ে রইলো। মিসেস রেহানা বলছে,
কত্ত বড় হইয়া গেছে আমার পোলাডা। আইজকাই প্রেত্তম দেখলাম। তুমি পরিচয় দিতাছো না কেন নাহার বাপ? আমাদের বংশের প্রেত্তম পোলা।
চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাসির চৌধুরী। মলিন মুখে বলে উঠলো,
পরিচয় দিয়ে কি বলবো নাহার মা। আমি যে ব‍্যর্থ। বড় ভাই হিসেবে ব‍্যর্থ, ভাসুর হিসেবে ব‍্যর্থ, বড় চাচা হিসেবেও ব‍্যর্থ। ছোট বেলায় যখন আমার ওদের দরকার ছিলো তখন তো ওদের পাশে থাকতে পারিনি। কোথায় ছিলো, কি খেতো, কি করতো কিছুই জানিনা। এখন মস্ত বড় বিজমেন হয়েছে। এখন কোনমুখে বলবো আমি ওর বড় চাচা হই!
এইল্লা কি কইতাছো নাহার বাপ। তুমি তো অপারগ ছিলা। কম খুঁজছো ওদের। কিন্ত পাওনাই। এইহানে তোমার দোষটা কোনহানে?
আমার দোষ নেই বলছো? কত পুলিশের কাছে দৌড়ালাম, কত জায়গায় কেইস করলাম। আমার ভাই, যাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি মৃত‍্যর পর একটাবারের জন‍্য মুখটা দেখতে পারিনি। ভাইয়ের খুনিদের খুঁজে বের করতে পারিনি। ভাইয়ের ছেলে মেয়েদের খুঁজে বের করতে পারিনি। সবাই টাকার কুমির গো নাহার মা। টাকা ছিলো না বলে কেইস টা তুলে নিতে হলো। এখানে আমার দোষ নেই?
মিসেস রেহান এবার রেগে গেলেন। হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলেন,
তুমি চুপ থাকো তো নাহার বাপ। তোমার হুদাই এক কথা। নিজেরে দোষী ভাইবো না কইবার কইছি। কাইলকে সকালডা আহুক আমিই বইলা দিমু।
চমকে উঠলেন নাসির চৌধুরী। মিসেস রেহানার হাত ধরে বলে উঠলেন,
আমাকে ছোট করো না রেহানা। আমি চাইনা এখন ও জেনে আমার দিকে আঙুল তুলে বলুক আগে কোথায় ছিলেন আপনি! এই বয়সে এসব সহ‍্য করতে পারবো না। শেষ বয়সে ভাইয়ের রক্তটাকে দেখে যেতে পারলাম এই অনেক।
রাগে হাত ছাড়িয়ে নিলেন মিসেস রেহানা। মানুষটার কষ্ট তার সহ‍্য হয়না। মানুষটা কি বুঝে?
দরজার অপর পাশে হতবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে আদর পান্চু। তাদের ভুল হয়েছে! একটা ভিডিও য়ের উপর ভিত্তি করে একজন কে দোষি ভাবা উচিত হয়নি। খুঁজ নেওয়া উচিত ছিলো নাসির চৌধুরীর ব‍্যাপারে। সরে আসলো ঘরের সামনে থেকে। পান্চুর ঘুম ততক্ষণে ভেঙে গেছে কথাগুলো শুনে। আদরের বুদ্ধিতে কথাগুলো তাও রেকর্ড করে নিয়েছিলো। কাজে লাগবে পরে। নিচতলায় এসে আদর জোরে জোরে হাটা ধরলো। এখানে কেউ নেই। ফোনের লাইট জ্বালিয়ে চারপাশটা দেখলো ভালো করে। ঘরগুলো সামনে ঝুলে রাখা তালার ছবি তুলে নিলো। জবাফুল গাছটার সামনে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকাতেই একটা অবয়ব দেখতে পেলো আদর। চাঁদের আলো স্পষ্ট দেখতে পেলো অবয়বটা তাকে দেখে জলদি করে লুকিয়ে গেলো ঝোঁপের আড়ালে। পিছিয়ে গেলো আদর। পান্চু কে নিয়ে দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। পান্চুকে নিজের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে নাহারের ঘরে ঢুকে পড়লো সে। নাহার ঘুমাচ্ছে। হাফ ছেড়ে বাঁচলো যেন। নাহারের পাশে শুয়ে জোরে শ্বাস নিলো আদর। এতক্ষণ মনে হচ্ছিলো জীবন হাতে নিয়ে ঘুরছিলো সে। চোখটা বন্ধ করে নিলো। যা করার কালকে করবে সে! দুইদিনের মধ‍্যেই সকল রহস‍্য বের করবে!
চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here