অবুঝ প্রেম – পর্ব 09

0
514

#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ৯
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
বেডশিটে দাগ দেখা যাচ্ছে,এখন কি করবো? যা হউ হোক আগে আমি ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুমে বসে আছি বেশ কিছুক্ষণ। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকা যায়। মা ও বাসায় নাই। ময়না কে বলবো? এটা কেমন দেখায়?নাহ্ বলবো না। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে কাচুমাচু হয়ে বসে আছি। থেকে থেকে ব্যাথা করছে পেটে। মামুনি প্রতি বার আমাকে গরম পানির ছ্যাঁকা দিয়ে দিতো। আমি কি এখন একা একা যাবো পানি গরম করতে? যদি রান্না ঘরে কোন রাক্ষস থাকে। শুনেছি রাক্ষসেরা নাকি অনেক বেশি করে খায় বলে তাদের নাম রাক্ষস। আর রান্না ঘরে সব সময় অনেক বেশি খাবার থাকে। তাই রান্নাঘরে রাক্ষস থাকতেই পারে।
আর যায়হোক সামান্য এইসব দাগছোপের ভয়ে নিজের জীবন ক্ষয়াতে পারবো না। দেখি আলমারিতে মহব্বত আলির পুরাতন কোন জামাকাপড় আছে নাকি। আপাতত এই দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে হবে। ওই ছ্যাচড়া লুচ্চা ব্যাটা এখনো ফোনে কুটুর কুটুর করেই যাচ্ছে। আচ্ছা ওর কানে কি ঝিঁঝি ধরে না?
আলমারি খুলে ভিতরে উনার অনেক গুলো শার্ট প্যান্ট দেখলাম সবই তো মনে হচ্ছে নতুন। কি করা যায়। হঠাৎ করে কোণার দিকে নেভী ব্লু কালার একটা শার্ট দেখলাম। দেখে মনে হচ্ছে,, বেশ পুরাতন,, যাক বাবা এটাই নিবো। উনি কি পাগল এমন আধা পুরাতন শার্ট কেউ এতো সুন্দর করে আলমারিতে রাখে।
আমি শার্ট নিয়ে আবারও ওয়াশরুমে দৌড় দিলাম। মনে হয় কিছু একটা নিচে পরে গেছে। কি পরে গেছে এতো দেখার টাইম নাই। নিজে বাঁচলে বাপের নাম।
আহ্ এখন একটু নিজেকে ফিরে ফ্রেশ লাগছে। মনের খুশিতে গুনগুনিয়ে গান গায়তে গায়তে বের হচ্ছিলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে ব্যাথার কারণে সুর গুলো কেমন হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে।
গানের তালে বিভোর হয়ে ফ্লোরে তাকিয়ে দেখি উল্টো এক জোরা পা ফ্লোরে। উল্টো পা তো ভুতের হয়। কেবল চিৎকার দিবো ঠিক তখনই মহব্বত আলি বলে,,
তুমি আমার আলমারিতে হাত দিয়েছো কেন?
কককই,,দিইনি তোওও।
তাহলে এগুলো কিভাবে এখানে এলো??
কি এগুলো? ওওমা, মরা ফুল আর নোংরা টিসুর সাথে ভাঙা সানগ্লাস!! কি এমন আহামরি জিনিস। আর এগুলো কিভাবে এলো আমি কেমনে জানবো??
তুমি জানো না? নাকি বলবে না?
উনি হনহন করে আলমারি খুলে ভিতরে দেখে বলে,, প্রব্লেম টা কি তোমার?? আমার ওই নেভী ব্লু শার্ট কোথায়। কে এইসব করার সাহস দিয়েছে তোমাকে?? Answer me??
ওরে বাবারে কি রাগা রেগেছে রে!!এমনই বাসায় কেউ নাই, উনি আমাকে যদি মেরে ফেলে বস্তায় ভরে ব্রিজের উপর থেকে নিচে ফেলে দেয় তাহলে দুনিয়ার কাকপক্ষীও টের পাবে না। তার চেয়ে বরং সত্যি টা বলে দিই।
দেখুন আসলে আমি একটা প্রব্লেমে পড়েছি, তাই আপনার ওই বাদ দেওয়া শার্ট নিয়েছি। আপনার তো অনেক শার্ট আছে। এই পুরনো শার্ট না হলে কি আপনি মরে যাবেন,বলুন?
মানে কি,, নিয়েছো মানে কি? কোথায় রেখেছো, আর কি এমন প্রব্লেম যার জন্য আমার শার্ট নিতে হবে??
আয়াসলে না, আপনি ওইসব কথা বুঝবেন না। এটা গোপন কথা, কাউকে বলতে নিষেধ করেছিলো মা।
দেখ সারা সারাক্ষণ তোমার এইসব পাগলামি কথা ভালো লাগে না। এখনো সময় আছে বলো, শার্ট কোথায় রাখছো?
আমি বুঝতে পারছি না সামান্য পুরাতন একটা শার্টের জন্য আপনি এমন ফকিরের মতো করছেন কেন?
সারা ভালো করে বলছি, শার্ট টা দাও, নয়তো ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
কি একটা ছ্যাড়া ফাঁটা ফালতু শার্টের জন্য আপনার এমন হ্যাংলামিপণা দেখবো ভাবতেও পারিনি,, হিহিহিহি।
অমনি ঠাস,,,,,,,
উনার শক্ত হাতের থাপ্পড়ে আমার ঠোঁট কেটে রক্ত বেরুচ্ছে। এই সামান্য শার্টের জন্য উনি এতো রিয়েক্ট করবে বুঝতে পারিনি। এতো জোরে কখনো কেউ আমাকে মারেনি। আমি ফ্লোরে বসে অনবরত চোখের পানি ফেলছি আর ফিকির তুলছি। তুর্জ পুরো ঘরে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে। আমি লজ্জায় কিছু বলতে পারছি না। কিভাবে বলি এইসব কথা।
উনি আরো বিরক্ত হয়ে গেছেন, এখন উনার রাগ ডাবল হয়ে গেছে। আমার কান্না উনার অসহ্য লাগছিলো তাই বারবার বলছে,, তোমার এইসব ন্যাকা কান্না বন্ধ করে, এখনো সময় আছে বলো, শার্ট কই রাখছো??
উনার ধমকে কান্নার গতি বেড়ে চলেছে। ইচ্ছে করেও থামাতে পারছি না। তারউপর পেট ব্যাথা করছে। খুব করে মামুনির কথা মনে হচ্ছে এখন। মামুনি কত যত্ন করে এমন সময় আমার পাশে থাকতো অথচ আজ এমন পরিস্থিতিতে আমার গায়ে হাত তুললো। জীবনে কখনো ক্ষমা করবো না আপনাকে, আপনার ওই পুরনো শার্টের কসম হুহ্।
উনি আবারও মারার জন্য তেড়ে আসেন আমার দিকে।মনে হচ্ছে পুরো উন্মাদ হয়ে গেছেন। ভয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। সাথে বিরবিরয়ে বললাম প্লিজ ক্ষমা করুন আমাকে। আর জীবনেও আপনার কোন কিছু তে হাত দিবো না। আমার না সত্যিই অনেক ব্যাথা করছে। ঠোঁট দিয়ে কত রক্ত বেরিয়েছে দেখুন। প্লিজ আর মারবেন না আমাকে। আমি কাল বাবাইকে বলে আপনাকে এমন একটা শার্ট কিনে দিবো।
তুর্জ হাত নামিয়ে নিয়ে বলে,, আচ্ছা ঠিক আছে, মারলাম না। এবার বলো শার্ট কোথায় রাখছো।
,,,,,,,,,,,
উনি রেগে সেন্টার টেবিলে লাথি মারে আর কিছু কাচ ছুটে এসে আমার বাম হাতের কুনুইয়ের নিচে লাগে। আমি উউউহহহ করে ককিয়ে উঠি। মনে হচ্ছে শরীরের চারিদিক দিয়ে রক্ত বেরুনোর পাল্লা দিচ্ছে। ফ্লোরে অনেক গুলো রক্ত লেগে গেছে। উনি এতটাই পাষণ্ড যে এখনো একবার ও আমার কাছে আসেন নি।
উনি দাড়িয়ে থেকে থেকে বিছানায় গিয়ে বসে পড়েন। আমি এখনো বসেই আছি। ঠোঁটের রক্ত গুলো আমার ওড়না দিয়ে মুছছি আর অন্য হাত দিয়ে কুনুই চেপে ধরে আছি।
কিছুক্ষণ পরে উনি আমাকে জিজ্ঞেস করে,, বিছানায় রক্তের দাগ কেন? আঘাত পাওয়ার পরে তো তুমি বিছানায় আসো নি? কি হয়েছে তোমার?
,,,,,,,,,,,
যদি উত্তর না দাও তাহলে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে দাঁত নড়িয়ে দিবো।
আ আয়াসলে আয়ামায়ার পিরিয়ড শুরু হয়েছে কিছুক্ষন আগে!!
তো তুমি আমাকে বললে না কেন? তুমি কি হুম?
,,,,,,,,
উনি উঠে বাইরে চলে গেছেন, আমি এখনো একই ভাবে একই সুরে কান্না করে যাচ্ছি। বেশ কিছুক্ষণ পরেই উনি এসে একটা ন্যাপকিন প্যাকেট আমাকে দিয়ে বলে যাও ফ্রেশ হয়ে আছো?
আর দেখি কোথায় কোথায় কেটেছে? উনি আমার কাছে আসতেই আমার রাগ বেড়ে গেছে। একা পেয়ে ইচ্ছে মতো মারার পরে এখন আসছে দরদ দেখাতে। লাগবে না উনার দরদ আমার। আমি ন্যাপকিন এর প্যাকেট দূরে ফেলে দিয়ে বলি,,
ন্যাপকিন কি করবো আমি?ন্যাপকিনের কাজ শার্ট দিয়ে করেছি বলেই তো এতো মাইর খেলাম।
বুঝলাম না উনি মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন নাকি এমনই ধপাস করে বসে পড়লেন। উনাকে দেখার আর কোন ইচ্ছে নেই আমার। সামান্য একটা শার্টের জন্য এভাবে আমাকে মারলো,!! উনার ওই মহামুল্য শার্টের কসম, মনে রাখবো সারাজীবন হুহ্।
তার মানে তুমি শার্ট দিয়ে ওইসব,,,,,,,, ছিহ্ঃ
,,,,,,,,
আচ্ছা যাও, এখন এইসব জামাকাপড় চেঞ্জ করে এসো। পুরো টা তো রক্তে ভিজে গেছে। উনি আমাকে উঠানোর জন্য আসছে দেখে আমি একাই উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। এই শার্টে কেমন যেন উসখুস লাগছিলো তাই ইচ্ছে না থাকলেও ন্যাপকিন টা নিলাম। সব কিছু চেঞ্জ করে একদম ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসি। উনাকে দেখলাম আগের বেডশিট চেঞ্জ করে নতুন বেডশিট বিছানায় পেতেছেন। আমি বাইরে আসার সাথে সাথে উনি ওই বেডশিট ওয়াশরুমে রেখে দিলেন।
আমাকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলেন,,নাও এখন এ-ই গুলো খেয়ে নাও,,
ইইই ইইয়ায়াক্ককথুউউ,,এগুলো কেউ খায়। এমনই গরম পানির ছ্যাঁকা দিলেই এই ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
তোমার ওই ব্যাথা জন্য এই মেডিসিন না,, হাত এবং মুখে আঘাত পেয়েছো তাই এটা খেতে হবে। নাও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নাও।
যদি না খায় তাহলে আবারও থাপ্পড় মারতে পারে তাই চোখ বন্ধ করে ঢক করে গিলে নিলাম। চোখ খুলতেই দেখি, হট ব্যাগ নিয়ে উনি বলছেন,, এবার লক্ষি মেয়ের মতো সুয়ে পড়ো।
কেন কি করবেন?
বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলবো,, খুশি??
আপনার মতো জল্লাদের পক্ষে সব সম্ভব,, বিড়বিড়িয়ে বলে চুপচাপ সুয়ে পড়লাম।
উনি হট ব্যাগটা আমার পেটে এবং উরুতে দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে দিচ্ছেন। দীর্ঘ সময় কান্নার পরে এমন আরামদায়ক ছ্যাঁকাতে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম জানিনা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, উনি রুমে নাই। আমি আবারও ফ্রেশ হতে গেলাম। ভুল করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে রেখেছি। হঠাৎ করে হুরমুরিয়ে তুর্জ ঢুকে পড়ে। আমার এমন অপ্রস্তুত অবস্থায় উনাকে দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে।
হয়তো উনার অবস্থাও তাই আর সে জন্য উনি সাথে সাথে বাইরে চলে গেছেন। আমি লজ্জায় এখন বাইরে যাবো কিভাবে। ছিঃ না জানি উনি কি কি সব দেখলেন। কেন যে দরজা টা না লাগিয়ে আসলাম।
ওয়াশরুমের দরজা ফাঁক হয়ে উঁকি মেরে দেখি উনি রুমে নাই। আমিও মনে সাহস সঞ্চয় করে বাইরে আসি। উনাকে প্রথমে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম আসলে ততটা খারাপ উনি নন। হয়তো শার্ট টা উনার খুব পছন্দের বা কারো গিফট এর ছিলো তাই, না জেনে এমন রিয়েক্ট করেছেন আমার সাথে।
ভাবছি উনার সাথে আর দেখা করবো না। কিন্তু তা তো সম্ভব না,, উনি এখনই এসে হাজির,, নাস্তা খেতে যাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছেন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে কিছুই হয় নি।
ঠোঁটের ব্যাথা নাই বললেই চলে। নাস্তা শেষে উনি বলেন, চলো তোমাকে তোমাদের বাসায় রেখে আমি অফিসে যাবো। আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম। তখনই মা হসপিটাল থেকে ফোন করে আগে হসপিটালে যেতে বলেন। সিরিয়াস কিছু ভেবে উনি সাথে সাথে রওনা দিলেন, সাথে আমাকেও নিলেন। আমরা এখন হসপিটালে, কিছু নতুন মেডিসিন লাগবে তাই মা হসপিটাল দিয়ে আসতে বলেছিলেন।
পেস্ক্রিপশন হাতে নিয়ে বাইরে যেতেই দেখি তনিমা এসেছেন। তখনই মনে হলো, আসার সময় তর্জ কাকে যেন হসপিটালের নাম বললো। তারমানে তখন, তনিমার সাথে কথা বলেছিলো।
তনিমা এসেই মা বাবাকে সালাম দিয়ে কেমন আছেন জিজ্ঞেস করেন। তনিমা কে দেখে মা বাবা কেউ ই যে খুশি নন। বাবা একদম চুপ সাথে মা ও। কেউ ই তনিমার সালামের জবাব দিলো না। আমার সামনে এমন আচরণ দেখে হয়তো তনিমা লজ্জা পেয়েছে। তুর্জ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বলে,,,
তনি,আমি একটু বাইরে যাবো ঔষধ আনতে,, চাইলে তুমিও আমার সাথে যেতে পারো?
হুম চলো,,,,
উনারা চলে যাওয়ার পরে মা আমার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে বসাতে চাই। কিন্তু উনি আমার কেটে যাও অংশটুকুতে ধরেছেন। আমি না চাইতেও উউহ শব্দ করে উঠলাম। মা আমার হাত দেখেই বলেন,,
কিভাবে কেটেছে? তুর্জ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কাল? উনি আমার মুখ থেকে মাক্স খুলে ফেলেন। ঠোঁটের উপরের কাটা দাগ দেখে উনি রাগে ফোসছেন।
আমি বারবার মা কে বলছি, আসলে মা, কাল রাতে একটা মিস আন্ডাস্ট্যান্ডিং হয়েছিল। এটা তেমন কিছুই না।
তুমি একদম চুপ থাকবে, বেশি পাঁকনামি করবা না।
অনেক গুলো মেডিসিন হাতে তুর্জ কেবিনে আসতেই মা স্ব জোরে একটা থাপ্পড় মারেন,,,
লজ্জা করে না, একা বাসায় এমন ছোট একটা মেয়ের গায়ে এভাবে হাত তুলতে? আমার ভাবতেও অবাক লাগছে তুমি আমার সন্তান। যে পরুষের হাত নারীর শরীরে আঘাতের জন্য উঠে, সে কখনো পুরুষ হতে পারে না। সে হয় কাপুরষ।
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here