#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ১১
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
আচ্ছা সারা!! তুমি কি টেনশন করছিলে??
আমি আর সেই আগের সারা নেই। আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান, আমি জানি আপনি যা করবেন ভেবে করবেন। আর টেনশন তো আপনজনকে নিয়ে করা যায়,,কিন্তু আপনি তো আমার আপন কেউ নন! তাই আপনাকে নিয়ে নতুন করে টেনশন করার কোন মানেই হয় না।
সারা উঠে গিয়ে লাইট অফ করে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সুয়ে পরে। যেহেতু তুর্জ অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে তাই সকালে উঠে জিম করতে পারে নি। জানালার পর্দা ভেদ করে সুর্য্যের আলো চোখে চিকচিক করে লেগেছে। বিরক্তি নিয়ে হালকা চোখ খুলতেই দেখে, কারো সাথে সারা কথা বলছে আর মুখ টিপে হাসছে।ঘটনা কি বুঝতে তুর্জ আবারও চোখ বন্ধ করে সুয়ে রইলো। সারা ফিসফিস করে বলছে,
আরে বাপ্পারাজ আঙ্কেল ফেইল , উনি উনার থেকেও বড় মাপের ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিক হিহিহিহি।
মিঠি- সালা কে জন্মের শিক্ষা দেওয়া উচিত। ওই হাফপ্যান্টয়ালীর জন্য তোকে সবার সামনে কি অপমান টা-ই না করেছিলো।
দোস্ত কাল রাতে পুরো দেবদাসের মতো মাতাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে রাত দুইটাই বাসায় ফিরে জিজ্ঞেস করে,, আচ্চচ্ছায়ায়া সায়ারায়া তুওমিওও কিইই আমার জন্য টেনশওওন করেছিলেএএ। আহহ মনে হচ্ছে উনার সাথে তখন আমি পিরিতে গদগদ হয়ে যাবো।
শিমুল – দোস্ত, এই মহা আনন্দের সংবাদ শুনে আজ স্কুল শেষে তোর জন্য একটা গিফট আছে।
আরে দোস্ত গিফট এর কথা বলাতে একটা কাহিনি মনে পড়লো,,, তোরা জানিস না, নিজের অজান্তেই একটা কাজ করেছিলাম আমি হিহিহিহি। ওই ব্যাটা পেয়ার আলি মহব্বতের ঠেলায়, হাফপ্যান্টয়ালীর দেওয়া ফাস্ট গিফট শার্ট ফুল টিসু সানগ্লাস আরো কি কি সব যত্ন করে গুছিয়ে রেখে দিয়েছিলো আর আমি উনার সেই পিরিতের শার্ট ন্যাপকিন বানাইছিলাম।
সবাই কথা শোনামাত্র অবাক হয়ে অট্টহাসিতে ফোন কাপিয়ে তোলে। তুতুলের হাসতে হাসতে কাশি চলে আসছে। তখনই রাহুল সান্ত্বনা দিয়ে বলে,,
এই তোরা কেউ তুতুলের জন্য একগ্লাস তুলসিপাতার জুস বানিয়ে নিয়ে আয় হাহাহায়ায়া।
তুর্জ তাকে নিয়ে এমন ইন্সাল্ট কথা গুলো শুনে নিজেকে ছোট ভাবতে শুরু করে। নিজের সম্মান এবং মুল্য সে নিজে থেকেই বিলিয়ে দিয়েছে বলেই সে আজ হাসির পাত্র সবার সামনে। সারা কথা শেষ করে বাইরে চলে গেছে। তুর্জ এখনো সুয়ে সুয়ে তনিমার কুকীর্তি গুলো মনে করছে। কিভাবে নিখুঁত ভাবে এতো গুলো বছর অভিনয় করে গেছে তার সাথে। বিন্দুমাত্র ও বুঝতে পারেনি তুর্জ। সে যদি সেদিন তনিমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তার বাসাটা না যেতো তাহলে না জানি আরো কত কিছু করতো। তুর্জের ভাবনায় হানা দিয়ে তার ফোন বেজে ওঠে।
আবারও ফোন করেছো কেন??
কি ভাবলে,, জানালে না বলেই তো আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি। তা এতো রেগে যাচ্ছো কেন জান।
চুপ, একদম চুপ। নিজের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু তুমি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা এভাবে দিবে বুঝিনি।
তখনই তনিমার husband ফোন নিয়ে বলে,, আরে রাখ তোর নীতি কথা,, ভালোই ভালো সিগনেচার করবি নয়তো তোর রোমান্টিক মোমেন্ট গুলো সবাই দেখবে আর মজা নিবে।
চুপ কুত্তার বাচ্চা, তোকে শুধু একবার হাতের নাগালে পাই, তারপর দেখ তোর কি অবস্থা করি!!
ওরেএএ আমি তো ভয় পাইছি রে,, তোকে আর মাত্র ছয় ঘন্টা সময় দিলাম,, তারপর ঘরে বসে দেখবি সব!!
ওপাশ থেকে কল কেটে দিলো। তুর্জ রাগে বিছানায় লাথি মেরে, বালিশ গুলো দূরে ফেলে দিলো। কি করবে এখন সে, বিশাল বড় বিপদে সে একা এক যাত্রী। তুর্জ কোন রকম ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে গেলো। কি করবে, কাকে বলবে,, তুর্জের বাবা মা অনেক আগে থেকেই তনিমার সাথে সম্পর্ক শেষ করার কথা বলেছিলো। কিন্তু তাদের অবাধ্য হয়ে সে মরিচিকার পিছনে বৃথা সময় পার করেছে।
সারা স্কুল শেষে বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরছিলো, ঠিক তখন দেখে তনিমা দুজন লোকের সাথে রাস্তার পাশে কি যেন বলছিল। সারার মনে কেমন যেন সন্দেহ হলো, এমন সময় শিমুল বললো,,,
সারা দেখ, এটা সেই মেয়ে না?
হ্যাঁ রে,, কিন্তু এরা কি বলছে জানতে হবে। তনিমা তো আমাকে চেনে কিন্তু তোদের তো চিনে না। তাই তোরা কেউ একজন ওদের কথা গুলো শুনে আয়।
সাথে সাথে, রাহুল বললো, আমি যায়, পাশের ডাবওয়ালার থেকে ডাবের পানি পান করতে করতে ওদের কথা শুনবো।
সারা শিমুল মিঠি তুতুল একটা দোকানের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। রাহুল বেশ কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে বলে,,,
সারা,, তুর্জের জন্য অনেক বড় ষড়যন্ত্র চলছে রে,, আজ রাতের মধ্যে যদি ওদের কথা তুর্জ কাজ না করে তাহলে তুর্জকে কিডনাপ করার প্ল্যান করছে।
তুর্জকে সারা যতই মুখে বলুক আর ভালোবাসে না কিন্তু তুর্জের বিপদের কথা শোনা মাত্র সারা অস্থির হয়ে গেছে। কি হয়েছে, কেন এমন করছে তা জানতে তারাতাড়ি বাসায় চলে গেছে। কিন্তু তুর্জ সেই সকাল থেকে এখনো বাসায় আসেনি। সারা রাহুল কে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, কোথায় মিট করার কথা হয়েছে,, কোন লোকেশনের নাম শুনেছিস কি না? দুঃখের বিষয় হলো এ সম্পর্কে তেমন কিছুই শুনতে পায় নি।
সারা বারবার তুর্জকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু তুর্জ ফোন পিক করছে না। বাধ্য হয়ে সারা টেক্সট করে,,
আপনি কোথায় আছেন?? প্লিজ একটু কথা বলুন আমার সাথে,, খুব প্রয়োজন আপনাকে!!
সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে কিন্তু তুর্জের কোন রেসপন্স নেই। সারা আবারও টেক্সট করে,,
আপনি কি বুঝেন না, আপনার জন্য আমারও টেনশন হয়??
সাথে সাথে তুর্জ ফোন করে,, হন্তদন্ত হয়ে ফোন পিক করেই, সারা বলে,, কি মনে করেন নিজেকে হুম?? বিশ্বপ্রেমিক?? দেবদাস? নাকি রোমিও?? বিকাল থেকে কতবার ফোন করছি দেখেন নি? কেন এতোক্ষন কথা বলেন নি?
আচ্ছা আমার পিচ্চি ফকিন্নি অবুঝ বউটাও কি তাহলে আমার জন্য টেনশন করে,, তা কাল রাতে কেন বলো নি?
বলার প্রয়োজন মনে করিনি তাই,, আর শুনুন আপনার সাথে প্রেম করার জন্য ফোন করিনি,, বাসায় আসুন এক্ষুনি। জরুরি কথা আছে।
ট্রেনের বিকট হর্ণের আওয়াজ কানের ভিতর কিটকিট করে ঢুকে যাচ্ছে। সারা ফোন টা দূরে সরিয়ে নেই। হর্ণের আওয়াজ বন্ধ হতেই তুর্জ বলে,, সারা ফোন টা রাখো, একটা প্রয়োজনীয় ফোন আসছে।
ফোন কাটার কিছুক্ষণ পর থেকেই অনবরত সারা তুর্জকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু তুর্জ ফোন পিক করছে না। নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা হয়েছে ভেবে সারা পাশের রেলস্টেশনে চলে আসে। কিন্তু এখানে এতো বড় যায়গা তে সারা কোন দিক থেকে কোন দিকে খুজবে। সারা তার বন্ধুদের ফোন করে রেলস্টেশনে আসার জন্য বলে। ১০ মিনিটের মধ্যে রাহুল শিমুল চলে এসেছে। তিন জন স্টেশনের তিন দিকে খোঁজা শুরু করে। রাত ১০ টা বাজতে চলছে কিন্তু তুর্জের কোন রেসপন্স নেই। এখন ফোন সুইচটপ বলছে। হঠাৎ শিমুল পাশের দোকান থেকে বিকালে তনিমার সাথে ছিলো ওই লোকটাকে পানির বোতল কিনতে দেখে সারা আর শিমুল কে ইনফ্রম করে। ওরা তিনজন মিলে ফলো করে লোকটাকে।
বেশ কিছুটা দূরে স্টেশনের পিছনে, যেখানে ভাঙা ট্রেনের মেরামত করা হয় এবং বিভিন্ন পরিত্যক্ত ট্রেনের অংশ রাখা হয় তার ভিতর দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে একটা পুরাতন টিকিট কাউন্টার রুমে চলে যায়। এটা হয়তো বহুবছর আগে টিকিট কাউন্টার ছিলো কিন্তু নতুন করে অন্য যায়গা তে তৈরি করাতে এখানে ঝোপঝাড় আর কেমন ভুতুড়ে যায়গার মতো লাগছে।
লোকটা আশেপাশে তাকিয়ে একটা রুমে ঢুকে গেছে। রাহুল কে সাথে নিয়ে সারা ভিতরে কি হচ্ছে দেখার জন্য অগ্রসর হয়। শিমুল বাইরে অপেক্ষা করছে,, যদি প্রয়োজন পড়ে তাহলে শিমুল কে সাহায্যে জন্য ডাকা হবে।
সারা ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে তুর্জকে রক্তাক্ত অবস্থায় একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখে কোন একটা পেপারে সাইন করতে বলছে। কিন্তু তুর্জ একদম চুপ। তুর্জের এমন চুপ থাকার জন্য,, তনিমা ভাঙা চেয়ারের পাঁয়া দিয়ে তুর্জের পিঠে আঘাত করছে। পেপার হাতে দাড়িয়ে থাকা লোক টা বলছে,,,
তওওনিইমা ডায়ারলিং,,এভাবে মেরো না,, ও আমাদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। মরে গেলে আমাদের এতো বছরের সব প্ল্যান বিফলে যাবে বেইইবি।
তনিমা তুর্জের সামনে পেপার টা ধরে বলে জায়ান, তুমি নায়া আমাকে অওনেএক লাভ করো তাহলে তোমার প্রোপার্টি গুলো আমার করে দিতে এতো সময় নিচ্ছো কেন?
তুর্জ এক গাঁদা থুথু নিক্ষেপ করে তনিমার মুখে, ঠিক তখনই পাশের লোকটা এক লাথি মেরে তুর্জকে ফেলে দেয়। রাহুল কে রেখেই সারা ছুটে যায় তুর্জের কাছে। জড়িয়ে ধরে বাধন খুলে দেওয়ার চেষ্টা করে।
আমি এসেছি, কিচ্ছু হবে না আপনার, এই ডাইনি, কি ভেবেছিস তুই, তুর্জকে রক্ষা করার কেউ নাই,, আমি আছি আমি,, তুর্জের বিবাহিত স্ত্রী। আমি থাকতে কিচ্ছু করতে পারবি না তুই।
(কোন কিছু না ভেবে আবেগের বশে চলে এসে সিনেমার ডায়লগ গুলো তো দিলাম, কিন্তু এখন কি করি। এমন পুঁটি মাছের মতো শরীর আর ছটফটানি নিয়ে এদের সাথে কিভাবে লড়াই করে প্রাণে পতি কে বাঁচাবো। মনে মনে)
এই পিচ্চি তুই এখানে কিভাবে এলি?? ও বুঝেছি মরণ তোকে এখানে টেনে এনেছে। আচ্ছা তোর বিবাহিত বরের সঙ্গে আজ তোকেও শেষ করে দিবো। তনিমা বললো।
বেইইবি,কচি মেয়ে, স্বাদ টা অনেক হট হবে। কচি ডাবের পানি অনেক মিঠা লাগে জানো?? একটু মজা নিই তারপর না হয় তোমার যা ইচ্ছে করো। তুর্জের প্রোপার্টি হাসিলের ধান্ধায় তোমাকে কতবার তুর্জের বেডে পাঠিয়েছি,, তুমি তো ঠিকই তুর্জের উত্তপ্ত বডি শান্ত করতা কিন্তু আজ আমাকেও একটু সুযোগ দাও অন্য ফুলের মধু নিতে ।
চলবে,,,