#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
৫
শ্রেয়সী উদাস হয়ে জানালার কাছে বসে আছে। শ্রেয়সীর সবকিছুই অসহ্য লাগছে। তার মানতে কষ্ট হচ্ছে যে অনুপম বিবাহিত। সে তো অনুপমকে ভালোবাসে না। তাহলে ক্যানো তার এতো কষ্ট হচ্ছে? তন্ময় শ্রেয়সীকে মৃদু স্বরে বলে,
তুই তো উনাকে ভালোবাসিস না। তাহলে এতো আপসেট কেনো?
শ্রেয়সী জবাব দেয় না। মুহিব শান্ত স্বরে বলে,
শ্রেয়সী তুই স্বীকার না করলেও, আমি বুঝতে পারছি উনার প্রতি তোর একটা ভালোবাসার ফিলিংস কাজ করে। উনি বিবাহিত এটা জানার পরও তুই যদি উনাকে নিয়ে ভাবিস সেটা অন্যায় না অপরাধ। আশা করি বুঝতে পেরেছিস আমার কথা।
মুহিবের কথা শেষ হতে না হতেই নিতু বলে ওঠে,
উনি কাজটা একদম ঠিক করেননি। এভাবে শ্রেয়সীর অনুভূতি নিয়ে খেলা উনার উচিত হয়নি। উনি বিবাহিত হওয়া সত্যেও শ্রেয়সীর সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি।
নিতুর সাথে তাল মিলিয়ে ইভাও বলে উঠে,
ঐ বেডা ম্যাজিস্ট্রেটকে পেলে আমি জুতা দিয়ে পিঠাইতাম। ঘরে বউ রেখে বাইরে ছোঁকছোঁক স্বভাব বের করে দিতাম।
মুহিব নিতু আর ইভাকে ধমক দিয়ে বলে উঠে,
তোর এতো বেশি বুঝস ক্যান? মানুষ ঠিকই বলে মাইয়া মানুষ ‘ক’ বলতে কলকাতা বুঝে। উনি কখনো বলেছেন উনি আমাদের শ্রেয়সীকে ভালোবাসেন? আকার ইঙ্গিতে কখনো বুঝিয়েছেন? আমার তো মনে হয় না। তেমন কিছু আমার চোখেও পড়ে নাই। উনি কোনোদিন শ্রেয়সীকে ফলোও করেননি। হুটহাট রাস্তায় দেখা হয়ে গেলে যাস্ট মজা করার জন্য ঐ নামে ডাকতো। উনি ম্যাজিস্ট্রেট হলেও কিন্তু অল্প বয়সের যুবক। আর ইভা তুই যে এতো পাট মারছিস। তোর বাপে কী করছিল? এই বয়সেই তো তোর মামার হাতে থাপ্পড় খেয়েছিলেন।
মিহান খ্যাক খ্যাক করে হেসে বলে,
থাক আর গভীরে না যাই।
দেখ আমি কিন্তু মুহিবের সাথে একমত। মুহিব একদম ঠিক বলেছে। শ্রেয়সী তুই উনার কথা ভুলে যা। এটা ভালোবাসা না আবেগ। উনার আচারণ তোর উপর একটা প্রভাব ফেলেছে যাস্ট। উনার কথা ভাবা বাদ দে। তোর একটা নতুন জীবন শুরু হতে চলেছে সেটা নিয়ে ভাব।
প্রিয়ন্তির কথায় তন্ময়ও সায় দেয়।
ভাই তোরা এতো সেন্টি খাস ক্যান? একটা গেছে তো কী হয়ছে? বাংলাদেশে কী ছেলের অভাব হইছে? না আমাদের শ্রেয়সীর জন্য ছেলের অভাব হবে? আমাদের শ্রেয়সী হচ্ছে আগুন সুন্দরী। একটা ইশারা দিলে হাজারটা ম্যাজিস্ট্রেট শ্রেয়সীর পিছনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। সেন্টি খাওয়া বাদ দিয়ে ভার্সিটি চল। শ্রেয়সী তুই মন খারাপ করিস না। ভার্সিটি গিয়ে ভার্সিটির সবচেয়ে হ্যান্ডসাম প্রফেসারের সাথে তোর প্রেম করিয়ে দিব।
____________
নিতু আর মুহিব কিছু বই কেনার জন্য বুকশপে গিয়েছিল। আসার সময় অটোতে উঠতেই লক্ষ্য করে একটা ছেলে আর মেয়েকে। মেয়েটাকে নিতু চিনে। ওদের কলেজেই পড়তো।
নিতু মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আপু এটা বুঝি তোমার প্রেমিক?
মেয়েটা মৃদু হেসে বলে, প্রেমিক না অপ্রেমিক। উনি বুঝি তোমার বয়ফ্রেন্ড?
নিতুও হাসি মুখে জবাব দেয়, বয়ফ্রেন্ড না আনবয়ফ্রেন্ড।
_____________
হলে এখন পর্যন্ত সিট না পাওয়ায় নিতু ইভাদের বাসায় থাকে আর প্রিয়ন্তি তার খালার বাসায়। নিতু আর ইভা ডিনার শেষ করে মাত্রই রুমে আসে। অনলাইনে আসতেই দুজনের ফোন একসাথে বেজে ওঠে। নিতু ফোন রিসিভ করেই বলে,
প্রিয়ন্তি এমন বোয়াল মাছের মতো ‘হা’ করে আছে কেনো?
মিহান অনেকটা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে,
দোস্ত আমরা সবাই মিলে ঠিক করছি কক্সবাজার ট্যুর দিমু।
নিতু ভ্রু কুঁচকে বলে,
কক্সবাজার যাব এটা তো ভালো কথা। কক্সবাজার যাওয়ার সাথে প্রিয়ন্তির ‘হা’ করে থাকার সম্পর্ক কী?
ইভা নিতুর মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,
বুঝস না ক্যান বাল? হেতির প্রফেসার বাপ হেতিরে যেতে দিবে না।
প্রিয়ন্তি নাক টেনে বলে,
তোরা কবে যাবি?
ওলে বাবুটা কাঁদে না। তোর যাওয়ার ব্যবস্থা মুহিব করে দিবে। একদম টেনশন নিবি না।
শ্রেয়সীর কথায় মুহিব আঁতকে উঠে।
আমি কীভাবে কী করবো?
শ্রেয়সী মুহিবের দিকে তাকিয়ে সবগুলো দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়। মুহিব চোখ বড় বড় করে বলে,
তোর হাসি সন্দেহজনক। আমাকে ফাঁসানোর ধান্দা করছিস।
দেখ মাথায় উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা আসলে ঝেড়ে ফেলে দে।
মামা আমরা সবাই জানি আমাদের বন্ধুমহলের সবার মাঝে তোকেই প্রিয়ন্তির বাবা একটু অন্যরকম চোখে দেখে। আমাদের সম্পর্কে প্রিয়ন্তির বাবার ধারণা হচ্ছে ফাজিল, ফাঁকিবাজ। দুনিয়ার সব থেকে অভদ্র আমরা। আর তোর সম্পর্কে ধারণা গুড বয়। তুই বললে আংকেল অবশ্যই প্রিয়ন্তিকে যেতে দিবে।
মুহিব আর্তনাদ করে বলে উঠে,
আমি পারব না। ভাই যেমনে তাকায় কলিজাসহ কাঁপায়া দেয়। বললে সবাই একসাথে বলবো।
তন্ময় একটু কেঁশে বলে,
আমি নিজের বাপকেও যতটা ভয় না পাই তার থেকেও বেশি প্রিয়ন্তির বাপ আর শ্রেয়সীর ভাইকে ভয় পাই। সালা দুইটা মাল।
তন্ময়ের কথায় প্রিয়ন্তি প্রতিবাদ করে বলে উঠে,
এই একদম আমার সামনে স্ল্যাং ইউজ করবিনা আর আমার বাবাকে তো কিছু বলবিই না।
আমার ভাইয়ের নামে কিছু বললে মাথা ফাটিয়ে দিব একদম। কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে প্লেন করছিস ঐটা কর। কীভাবে যাবি?
আব্বুকে বলে গাড়ি নিয়ে নিব। এক গাড়িতেই আমাদের সবার হয়ে যাবে। সাথে ড্রাইভার নিব না। সাতদিনের ট্যুর দিব।
কবে যাব সব ফাইনাল করে ফেলি। আমার আর নিতুর তো টিউশনি থেকে ছুটিও নিতে হবে।
মুহিবের কথায় শ্রেয়সী একটু ভেবে বলে,
বাসা থেকে আগে সবাই পারমিশন নেই। প্রিয়ন্তির বাবাকেও তো রাজি করাতে হবে।
_____________
এখন বাজে বিকেল পাঁচটা। মুহিব দ্রুত পায়ে হাঁটছে একটা প্রশস্ত গলি দিয়ে। এই এলাকায় হাই সোসাইটির লোকেরা বাস করে। রাস্তার দুই পাশে বড় বড় দালান। মাথার ওপরের সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। একটা তীক্ষ্ম আলো এসে পড়ছে মুহিবের চোখে।
মুহিব হাঁটতে হাঁটতে বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। প্রাইভেট পাঁচটায় আর মুহিবের রাস্তার মাঝেই পাঁচটা তিন বেজে গেছে। মিনিট দুয়েক পরেই ১৫৩ নাম্বার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। লিফটে করে পাঁচ তলায় উঠে। লিফটের বাম পাশের ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজালো। কলিংবেল বাজার সেকেন্ডের মাঝেই দরজা খুলে দিল ১৪-১৫ বছরের শ্যাম বর্ণের এক মেয়ে। মেয়েটা যেনো কলিংবেল বাজার অপেক্ষায় ছিল। মেয়েটা মুহিবকে দেখেই মৃদু স্বরে সালাম দেয়,
আসসালামু আলাইকুম স্যার।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মুহিব মেয়েটার দিকে এক পলক তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নেয়। নিজের বরাদ্দকৃত জায়গায় বসে পড়ে। মেয়েটাও মুহিবের পিছন পিছন এসে মুহিবের অপোজিট চেয়ারে বসে। মেয়েটা মুহিবকে প্রাণোচ্ছল কন্ঠে বলে,
স্যার আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
মুহিব মেয়েটার কথা এড়িয়ে যায়। অন্য প্রসঙ্গ টেনে বলে,
রিম তোমার কাল কেমিস্ট্রি এক্সাম না?
রিম মুহিবের দিকে তাকিয়ে আছে উত্তর শোনার জন্য। মুহিব রিমকে হালকা ধমক দিয়ে বলে,
এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? বই বের করো।
রিম মুহিবের দিকে ছলছল নয়নে তাকায়। আবারও মৃদু স্বরে বলে,
স্যার বললেন না তো আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
মুহিবের এতদিন এতটুকু ধারণা হয়ে গেছে যে রিম প্রচন্ড জেদি একটা মেয়ে। মুহিব শান্ত স্বরে বলে,
ভালো।
স্যার আপনার তো কক্সবাজার যাচ্ছেন। তাহলে তো কিছুদিন পড়াতে আসবেন না?
তোমাকে কে বললো আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি?
মিহান ভাইয়া বলছে।
মিহানের সাথে তোমার কোথায় দেখা হলো?
রিম মাথা নিচু করে জবাব দেয়,
ফেসবুকে কথা হয়েছে।
রিম তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো কিছুদিন পরেই তোমার এক্সাম? এরকম করলে কিন্তু আমি আর পড়াতে আসবো না। তোমার পড়াশোনা ছাড়া আর সবকিছুতেই মনোযোগ বেশি। আর তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার শিক্ষক। আমাদের মাঝে প্রফেশনাল সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে নাক গলানো বন্ধ করো। মিহান তোমার ফ্রেন্ড অথবা ক্লাসমেট কোনোটাই না। তাই ওর সাথে কথা বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করছি না।
সরি স্যার।
এখন পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।
চলবে…….