#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২৩
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
উনি অন্যমনস্ক হয়ে কথা বলতে বলতে তুর্জের পাশ দিয়ে যায়। কন্ঠটা বেশ পরিচিত,, তুর্জ মেয়েটাকে পিছনে থেকে “” হ্যালো মিস,শুনছেন “” বলে ডাক দিতেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে থাকা ব্ল্যাক কারে উঠে বসে। তুর্জ পিছনে থেকে বারবার ডেকে চলেছে, কাছে যেতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কার টা চলে যায়। ইশ সামান্য কয়েক সেকেন্ডে জন্য মেয়েটা কে বুঝতে পারলো না। তুর্জ কারের নাম্বার টা দেখতে গিয়েও ব্যার্থ হলো, কারণ পিছনে অন্য একটা গাড়ি চলে এসেছে।
রেস্টুরেন্টের ভিতরে থেকে পাঁচ বানর বাইরে চলে এসেছে,, তারা সবাই তুর্জের কাছে আবদার করে আজ পুরো বিকাল তারা একটু স্বাধীন ভাবে আড্ডা দিবে,, সারাকে তাদের সাথে রেখে যেতে অনুরোধ করে। তুর্জের ও এই মুহুর্তে এখান থেকে যেতে হবে তাই তাদের কথা সম্মতি দিয়ে চলে যায়।
তুর্জ অফিসে এসেই আগে নিজের ডেক্সে যায়,, সেই মায়াবী মহিনী রীতি একাই ধীরস্থির ভাবে নিজের কাজ করে যাচ্ছে।
রীতি?
ইয়েস স্যার!
কখন অফিসে এসেছো?
স্যার আমি তো অফিস টাইমেই আসছি,,
অহ্ আচ্ছা,, কাল যে ফাইল টা দিয়েছিলাম তা কি রেডি?
এইতো স্যার রেডি, আবারও চেক করছি কোথাও কোন ভুল আছে নাকি,,,
ওকে,, চেক করা শেষ হলে আমাকে দিয়ে দিও।
শিওর স্যার।
তুর্জ কিছুতেই নিজের কাজে মন দিতে পারছে না,, সে বারবার কালো নিকাবের ফাঁকের ফর্সা বনলতার চোখ দেখে যাচ্ছে। কি আছে এই চোখে? মিষ্টি কণ্ঠের কাছে বসন্তের কোকিল হার মানে। এমন মেয়েকে শুধু ভালোবাসা আর সম্মান করা যায়,, সন্দেহ না। তুর্জের ধ্যান ভাঙে রীতির কণ্ঠে,,
স্যার দেখুন, সব কিছু ঠিক আছে নাকি?
তুমি কি কোথায় কোন ভুল পেয়েছো??
না স্যার,,
আমি মনে করি, তাহলে আমার সময় নষ্ট করে লাভ নেই,, কারণ তোমার কাজে কোন ভুল থাকবে তা আমি বিশ্বাস করি না।
স্যার, মানুষ মাত্রই ভুল,,আমার দেখার মাঝেও ভুল থাকতে পারে, তাই আপনি একবার দেখে নিলে খুব ভালো হতো।
আচ্ছা তুমি এখন যাও,,
রীতি চলে যাওয়ার পরে তুর্জ আবারও সেই রেস্টুরেন্টের মেয়ের কথা মনে করে,, তুর্জ ভেবে পাচ্ছে না সে কেন বারবার এইসব আজগুবি চিন্তা করছে,,,
আজ পর্যন্ত সারাকে স্পেশালি কোন গিফট দেয় নি,, তাই তুর্জ রীতিকে সাথে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার কথা ভাবে,, ইচ্ছে করে শপিংয়ে দেরি করার পরে অনেক রাত হলে রীতিকে ডিনারের জন্য বলবে,, এতে সারাকে খুশি করা হবে আর রীতির সেই মায়াবী ফেস টাও দেখা হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ, তুর্জ রীতিকে বলে তার সাথে শপিংয়ে যেতে, কিন্তু প্রথমে রীতি যেতে রাজি হয় নি। তুর্জ হালকা রেগে গিয়ে বলে,
তুমি আমার PA, আর এখনো তোমার অফিস টাইম, সো আমি যা বলবো তা মানতে তুমি বাধ্য।
রীতি বাধ্য হয়ে তুর্জের সাথে শপিংয়ে যায়। তুর্জ বারবার এ দোকান থেকে ও দোকানে যাচ্ছে আর ইচ্ছে মতো যা চোখে পড়ছে তাই নিচ্ছে। অবশ্য সব কিছু রীতি চুজ করে দিচ্ছে,, একজন হিজাবী পর্দাশীল মেয়ের ওয়েস্টার্ন পোশাক সম্পর্কে এতো সুন্দর ধারণা থাকতে পারে তা তুর্জ কখনো ভাবে নি। তুর্জ শপিংয়ের এক ফাঁকে রীতির সাথে বিকালে করা খারাপ আচরণের জন্য সরি বলে নেয়।
তারপর তুর্জ রীতিকে ডিনারের জন্য অফার করে। তুর্জ ভেবেছিলো, রীতি তার অফার এক্সেপ্ট করবে না। কিন্তু তুর্জকে অবাক করে দিয়ে রীতি এক্সেপ্ট করে নেয়। তুর্জ এতো দিন এই সুযোগ টা-ই খুজছিলো। আজকের দিনটা সত্যিই তুর্জের কাছে স্পেশাল মনে হচ্ছে।
সারা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যার একটু পরে বাসায় আসে। আজ বাসাতেও স্পেশাল রান্না হয়েছে। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে সারার। আজ সবার কাছে থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছে।
রাত প্রায় ১টা বাজতে চলেছে, কিন্তু তুর্জ এখনো বাসায় আসেনি। সারাদিনের সমস্ত আনন্দ এখন বৃথা লাগছে। কেন যেন সারার মনে হচ্ছে তুর্জ তাকে এখনো মেনে নিতে পারে নি। শুধু শুধু ওইদিন রাতে ভালোবাসার কথা বলেছিলো। সারা আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে সে কি আসলেই খুব ছোট? নাহ্ সে মোটেও এতটা ছোট না। তাহলে কিসের এতো দ্বিধা তুর্জের ভিতর। কেন সে অন্যদের মতো সারার কাছে আসে না?
এদিকে ক্যান্ডেল লাইটের আবছা আলোয় মুখোমুখি তুর্জ রীতি। বহুদিনের প্রচেষ্টায় আজ নিজের উদ্দেশ্য হাসিল হতে চলেছে। রীতির পছন্দ মতো খাবারের ওর্ডার করতে বলে কিন্তু শালীনতার খাতিরে রীতি চুপটি করে বলে, আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী দিন।
টাস্কান চিকেন,চিকেন মার্সালা,টার্কি স্টির-ফ্রাই,গরুর মাংসের রাগু,চিংড়ি স্ক্যাম্পি সহ আরো অনেক কিছু ওর্ডার করে। তারপর তুর্জ রীতিকে তার পারসোনাল লাইফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। যেমন সে কাউকে পছন্দ করে নাকি,ফ্যামিলিতে কে কে আছেন,গ্রামের বাড়ি কোথায় ইত্যাদি। রীতিও নিজের ফোন চাপতে চাপতে ময়না পাখির মতো প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে,সাথে আরো বলেছে, সে কাউকে পছন্দ করে না, ফ্যামিলির সম্মতিতে যার সাথে বিয়ে ঠিক হবে তাকে বিয়ে করবে। খাবার গুলো খাবার গুলো টেবিলে দিতেই রীতির ফোন বেজে ওঠে। ফোন টা পিক করতেই ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠে তার মায়ের এক্সিডেন হয়েছে। তাই সে হন্তদন্ত হয়ে চলে যায়। ভাগ্য হয়তো তুর্জের সহায়ক না তাই তীরে এসে তরী ডুবে গেছে। রীতি চলে যাওয়ার পরে তুর্জ চিন্তা করে,, যে মেয়ে এতো পর্দা করে, প্রয়োজন সারা কারো সাথে কথা বলে না সেই মেয়ে কিভাবে বিকাল থেকে এখন পর্যন্ত একবারও নামাজ কাযা হচ্ছে বা নামাজ পড়বে এমন কিছু না এটা থাকে। একবারও তো আফসোস করতে শুনলাম না। আর সারাক্ষণ ফোনের মধ্যে ডুবে ছিলো,, আর তার নাকি নিজের মা নেই তাহলে কোন মায়ের এক্সিডেন??
অবশেষে তুর্জ হাজারো প্রশ্ন মনে নিয়ে সাথে একগাদা ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসায় আসে। এতো গুলো শপিং ব্যাগ দেখে সারা খুশিতে মনে মনে নাগিন ড্যান্স শুরু করে দেয়। কিন্তু মুখ হফ করে বসে থাকে।
কি ব্যাপার? বানরের মতো লাফালাফি না করে চুপচাপ আছো দেখছি,,কাহিনি কি? নাকি পুর্ব অভ্যাস ভুলে গেছো?
গেলো সারার মন আরো খারাপ হয়ে,, সারা তখনই পুরো বডি কম্বল দিয়ে ঢেকে সুয়ে পড়ে।
তুর্জ বুঝতে পারে সারার মন খুব খারাপ। তাই প্যাকেট গুলো সোফায় রেখে, ড্রেস চেঞ্জ না করে সারার কম্বলের নিচে সেও ঢুকে পড়ে। কম্বলের নিচের হালকা অন্ধকারেও সারার চোখের পানি সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।
সারা কি হয়েছে কান্না করছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?কেন মন খারাপ বলো আমাকে?
সারা মনে মনে ঠিক করেছে আজ এই খুশির দিনে তুর্জের খুব কাছে যাবে। কিন্তু কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তবুও সারা বলে,,
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পবিত্র সম্পর্ক। এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে সত্যি কারের ভালোবাসা। স্বামী হচ্ছে অর্ধাঙ্গিনী এবং স্ত্রী হচ্ছে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী। একজন আরেকজনকে ছাড়া অপরিপূর্ণ। এই স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসাকে অটুট রাখার জন্য আজকে আমরা একে অপরের খুব কাছে এসে সম্পর্কটার পরিপূর্ণতা দিতে পারিনা?
চলবে,,,,