মধ্যবিত্ত – Part 1

0
465

মামা যাবেন?
রিকশাওয়ালা : যামু মামা, কই যাইবেন?
[রাফি রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা বুঝিয়ে বলে রিকশায় উঠলো]
রাফি পুরো নাম মো. রাফায়েল শাহরিয়ার। মাস্টার্স শেষ করেছে গতবছর। চাকরির জন্য কম চেষ্টা করেনি। কোন ভাবেই কিছু হচ্ছে না। টিউশনি করে পকেট খরচ আর পরিবারে সামান্য কন্ট্রিবিউট করাই হয়তো এখন রাফির একমাত্র কাজ। পরিবারের সদস্য সংখা ৪ জন৷ বাবা, মা, রাফি আর তার ছোট বোন রিমি।
সাধারন টিউশনি শেষে রাফি হেটেই বাড়ি ফেরে কিন্তু আজ মনটা ভালো তাই রিকশায় উঠলো। মোরের মাথার দোকান থেকে এক প্যাকেট নুডলস নিয়ে যাবে ভেবে রেখেছে। কাল সকালে সবাই নুডলস দিয়ে সকালের নাস্তা করবে ভাবতেই রাফির খুশি খুশি লাগছে। রিমি নুডলস বলতে পাগল। কিন্তু টানাটানির সংসার সবসময় সব কিছু সম্ভব হয় না। কিন্তু রাফির হাতে টাকা হলেই ও রিমির জন নুডলস নেয় রাফি। যদিও চকলেট নিলেও খুশি হয়ে যায় রিমি কিন্তু তবুও ও নুডলসই বেশি নেয়। তাহলে বাবা মাও একটু খেতে পারে তাই।
অল্প সময়ের মধ্যেই রাফি বাড়ি পৌছে গেলো। গিয়ে দেখে সামনের রুমে বেতের চেয়ারে বসে বাবা খবর দেখছে। বাবাকে সালাম দিয়ে তার সামনে বসলো রাফি। বাবা মো. জামান শাহরিয়ার তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো রাফির দিকে। তারপর দরাজ কন্ঠে বললো,
বাবা: কিছু বলবে?
ততক্ষণে মা রেনু বেগমও এসে পাশে বসেছে।
রাফি: হ্যা বাবা। একটা কথা ছিলো। আমার ছাত্র আছেনা রবিন নাম! ওর মা বললো ওর খালাতো বোনের জন্য টিচার খুজছে তারা। সাইন্সের স্টুডেন্ট নাকি মেয়েটা। অনেক জায়গায় পড়তে হয়। তাই আমি যদি ৯.৩০ টার দিকে ফ্রী থাকি তাহলে তখন যদি ওকে রসায়ন আর পদার্থ বিজ্ঞানটা পড়াই তাহলে মাসে ৫০০০ হাজার টাকা দিবে। আপনি কি বলেন? হ্যা বলে দিবো?
একটু নিগুঢ় চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন ছেলেকে জামান সাহেব। তিনি বুঝতে পারছেন ছেলে কতোটা উত্তেজনা চাপিয়ে রেখে কথাটা বলেছে। টানাটানির সংসারে ৫ হাজার টাকা অনেক। যদিও বেশি রাত হয়ে যায় কিন্তু কি আর করার।
বাবা: তোমার কি মত? সারাদিনের ক্লান্তির পর তুমি কি পারবে?
রাফি: আমার আর ক্লান্তি কই বাবা। গতমাসে একটা টিউশনি হারালাম ছাত্রের বাবার ট্রান্সফার এর জন্য। এটা হলে ভালো হতো।
মা: কিন্তু তা তো অনেক রাত হয়ে গেলো। ওতো রাতে এসে তুই কখন খাবি আর কখন ঘুমাবি? কতক্ষণ পড়াতে হবে কিছু বলেছে ওরা?
রাফি: তা কিছু বলেনি কিন্তু দের ঘন্টা তো পড়ানো লাগবেই। যাওয়া আসা মিলে ২ ঘন্টা হাতে রাখতে হবে।
বাবা: তুমি আজ রাতটা ভেবে দেখো পারবে কিনা। যদি মনে হয় পারবে তাহলে হ্যা বলে দিও।
রাফি মনে হয় এতোক্ষণ এটা শোনার জন্যি অপেক্ষা করছিলো। উত্তেজনা চাপিয়ে রাফি বললো,
“আচ্ছা বাবা, আমি কাল সকালে তাহলে সিদ্ধান্ত তাদের জানিয়ে দিবো। ” ও এর মধ্যে মনে মনে ভেবেফেলেছে কাল সকালে ও ফোন করে হ্যা বলে দিবে।
মা: আচ্ছা ঠিকাছে এখন হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়।
রাফি উঠে গেলো। রেনু বেগম মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে নিলেন ততক্ষণে। তারপর হাক দিয়ে ডাকলেন রিমি কে। রিমি তখন কেবল একটা অংক শেষ করে আরমোরা দিচ্ছিলো। বসার ঘরের কোন কথাই এতোক্ষণ তার কানে আসেনি। মায়ের ডাকাডাকি শুনে বসার ঘরে গিয়ে দেখে টেবিলের উপর তার পছন্দের নুডলস রাখা। মনে মনে খুব খুশি হলেও উচ্ছ্বাস চেপে মাকে বললো,
“ডাকছো কেনো মা?”
মা: টেবিলে খাবার আন। তোর ভাইয়া এসে পরেছে।
বসার ঘরের এক পাশেই ডায়নিং টেবিল সেট করেছেন রানু বেগম। আর তার চারপাশে তিনটা রুম। একটা রুম বড় তার সাথে আছে এটাস্ট বাথরুম। এই রুমে বাবা মা থাকে। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকে। রাত-বিরেতে বাথরুমে যাওয়া লাগে তাই রাফি আর রিমি জোর করেই তাদের এই রুমে রেখেছে। আর দুম দুইটা ছোট। সেগুলোর একটায় রিমি থাকে অন্যটায় রাফি। রান্নাঘর – বেলকনি আর একটা বাথরুম দখল করে দিয়েছে বাসাটার উত্তর দিক। ছিমছাম একটা ভাড়া বাসায় থাকে রাফিদের পরিবার। বেলকনিরা মূলত কাপড় শুকাতেই ব্যাবহার করা হয়। তবুও রিমি কয়টা বেগিন, টমেটো আর পুইগাছ লাগিয়েছে।
খাওয়ার টেবিলে খুব একটা কথা হলো না।
আজ মনটা ভালো থাকায় বেশ খানিকটা খেয়ে নিয়েছে রাফি। ডিম ভাজা আর ডাল একসাথে পেলে রাফি-রিমি নাকি এমনিও বেশি ভাত খায় বলে ধারনা রেনু বেগমের। সবজির আশেপাশেও যায়নি দু ভাইবোন। ডিম আর ডাল দিয়ে খেয়ে রাফি রিমির পড়াশোনার বিষয়ে টুকটাক খোজ খবর নিয়েই শুতে গেলো।
কালের দিনটার জন্য অনেক খুশি রাফি। রবিন বাদেও আরো দুইটা স্টুডেন্ট পড়ায় রাফি। সব মিলিয়ে ৮ হাজারের মতো আয় ছিলো। এইটা হলে ১৩ হাজার টাকা আসবে প্রতিমাসে। পকেট খরচ আর ভাড়ার জন্য ৩০০০ টাকা রাখলেও প্রতিমাসে বাবার হাতে ১০ হাজার টাকা দিতে পারবে ভেবেই খুব খুশি রাফি। কাল সকালে একটা ইন্টারভিউ আছে। তাই ভাবাভাবি বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে রাফি।
মধ্যবিত্ত
নুসরাত রিতু
পর্ব ১
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here