শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক – Part 17(1)

0
310

#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
১৭ (একাংশ)
প্রিয় ফুয়াদ,
আমি আপনাকে ভালোবাসি। ফুচকাকেও ততটা ভালোবাসি না যতটা আপনাকে বাসি। আপনি ছাড়া নিজেকে চিনি ছাড়া চায়ের মতো মনে হয়। আপনি কী আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবেন? আপনি যদি আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করেন তবে আমার পাকস্থলী আন্দোলন শুরু করবে।
ইতি
আমি।
বেশ আওয়াজ করেই চিঠিটা পড়ে ফুয়াদ। ফুয়াদ চিঠি পড়া শেষ করেই ভ্রু বাঁকিয়ে নিতুর দিকে তাকায়। ফুয়াদ আর তার বন্ধুরা
ক্যান্টিনের একটা টেবিল জুড়ে বসে আছে। তাদের ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে নিতু আর শ্রেয়সী। নিতু দাঁড়িয়ে আছে আর শ্রেয়সী টেবিলের ওপর বসে আছে। ফুয়াদ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
এই মেয়ে এসবের মানে কী?
নিতু না বোঝার ভান করে বলে,
আমাকে বলছেন?
তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছো। তোমাকে না বলে আমি পাশের বাসার ভাবিকে বলছি?
বলতেই পারেন। আপনি বললে তো আর আমি আটকাতে পারবো না। আমি বুঝবো কী করে আপনি আমাকে বলছেন? আমার নাম তো এই মেয়ে না। আমার নাম নিতু।
তুমি আমার সাথে ফাজলামো করছো?
আপনার সাথে আমি ফাজলামো কেনো করবো? আপনি আমার জামাই লাগেন নাকি যে ফাজলামো করবো?
তুমি কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করছো? তোমার সাহস কী করে হয় আমাকে চিঠি দেওয়ার? ঠিক করে তো চিঠি লিখতেও পার না। যেটা পার না সেটা করতে যাও কেনো? নেক্সট টাইম আমাকে চিঠি দেওয়ার সাহস দেখালে এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।
শ্রেয়সী বিরক্ত হয়ে বলে,
আপনার এসব বকবক অসহ্য লাগছে। আপনি নিজেকে কী মনে করেন? প্রিন্স ফুয়াদ? সব মেয়েরা আপনাকে চিঠি দেওয়ার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? আমার বান্ধবীর ঠেকা পড়ে নাই আপনাকে চিঠি দেওয়ার জন্য। চিঠিটা যদি আপনার পাশের জন্যকে দিতো তাহলে আমি বিশ্বাস করতাম।
এই বেয়াদব মেয়ে চুপ করো। তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। তুমি সিনিয়রদের সামনে টেবিলের ওপর বসে চিপস খাচ্ছো?
সিনিয়রদের সম্মান করতে জানো না আবার উঁচু গলায় কথা বলো।
সিনিয়রদের কী পায়ে ধরে সালাম করে সম্মান করতে হবে? ফুয়াদ বাবা আপনার পা দুটো বাড়িয়ে দিন আমি সালাম করে একটু ধন্য হই।
ফুয়াদ কটমট করে শ্রেয়সীর দিকে তাকায়। শ্রেয়সী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে।
নিতুর ফোন বাজছে। নিতু ফোন রিসিভ করতে গেলে ফুয়াদ ফোনটা টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে আসে।
বয়ফ্রেন্ড ফোন দিচ্ছে বুঝি?
ফুয়াদ নিজেই ফোন রিসিভ করে।
নিতু আমি শ্রেয়সীর জেঠু হেলাল সরকার। শ্রেয়সীকে নিয়ে এখনি একটু হসপিটালে আসো। নাহিন এক্সিডেন্ট করেছে। নাহিন এক্সিডেন্ট করেছে এটা শ্রেয়সীকে বলো না। অন্য কিছু বলে নিয়ে আসো। সাবধানে আসবো।
ফোন স্পিকারে দেওয়া থাকায় শ্রেয়সী স্পষ্ট হেলাল সরকারের কথাগুলো শুনতে পেয়েছে। শ্রেয়সীর মাথা ঘুরছে। চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। হাত থেকে চিপসের প্যাকেটটা পড়ে গেলো। সবাই কিছু বুঝে উঠার আগেই শ্রেয়সী জ্ঞান হারিয়ে টেবিল থেকে পড়ে যায়। হুট করে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবাই আতকে ওঠে। শ্রেয়সীর হাতে লেগে একটা কাঁচের বোতল পড়ে গিয়েছিল। সেই বোতলে লেগে হাত কেটে রক্তের ছড়াছড়ির অবস্থা।
____________
হসপিটালের ফিনাইলের তীব্র ঘ্রাণে অনুপমের গা ঘুলিয়ে আসছে। সে ফিনাইলের ঘ্রাণ একদম সহ্য করতে পারে না। ঠিক এই কারণে সে হসপিটাল জিনিসটাকে এভয়েড করে। জীবনে দুই থেকে তিন বার হসপিটালে এসেছিল। মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে অনুপমের। অনুপমের মনে হচ্ছে সে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে দম বন্ধ হয়ে মরেই যাবে।
নাহিনের এক্সিডেন্ট অনুপমের সামনেই ঘটে। অনুপমই নাহিনকে হসপিটালে নিয়ে আসে। অনুপম নাহিনকে হসপিটালে ভর্তি করে বাসার সবাইকে ইনফর্ম করে। বাসার সবাই চলে আসতেই অনুপম হসপিটালে থেকে বের হয়ে যেতো। কিন্তু অনুপমের যাওয়া হয়নি শ্রেয়সীর জন্য। অনুপম যখনি বের হবে ঠিক তখনি শ্রেয়সীকে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। শ্রেয়সীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে অনুপম চমকে ওঠেছিল। শ্রেয়সীকে ফুয়াদরাই নিয়ে আসে।
তিন ঘন্টা হতে চললে শ্রেয়সীর এখনো জ্ঞান আসেনি। উপর থেকে পড়ায় মাথায় খানিকটা আঘাত পেয়েছে। অনুপমের পাশেই রূপম বসে আছে। অনুপম হসপিটালের দেয়ালে মাথা এলিয়ে দেয়।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here