মধ্যবিত্ত – Part 11

0
166

#মধ্যবিত্ত
#নুসরাত_রিতু
#পর্ব_১১
ডাক্তার এসে জাফর সাহেবের চেকআপ করলেন। বড় কোন ক্ষতি হয়নি জাফর সাহেবের। এতোক্ষণ জ্ঞান না ফেরায় বড় কোন সমস্যার সন্দেহ করছিলেন তিনি।
নার্স এসে ড্রেসিং করে দিলো। শরীরের বেশ কিছু অংশ ছুড়ে গিয়েছে। ডান হাত আর ডান পা ফ্র্যাকচার হয়েছে। ড্রেসিল শেষে নার্স চলে গেলো।
রাহি: তুমি এখন কেমন আছো বাবা?
জাফর সাহেব: হয়তো অনেক বছর পর এই প্রথম আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো।
রাহি: ভালো নেই বাবা। তুমি কিভাবে এক্সিডেন্ট করলে? তুমিতো কখনো ড্রিংক করো না তাহলে হঠাৎ কেন এতো ড্রিংক করলে?
সেলিনা চৌধুরী : এখন এতো কিছু জিজ্ঞেসের সময় না রাহি। তাকে বিশ্রাম নিতে দেও পরে যা জানার জেনো।
জাফর সাহেব সেলিনার দিকে তাকিয়ে আছে। “সেলির কি কিছু জানতে ইচ্ছে করছে না? নাকি সে তার ভালোর জন্যই তাকে বিশ্রাম নিতে বললো? সেলি তাকে কেন জিজ্ঞেস করছে না কিছু? তার দিকে তাকাচ্ছে না কেন?” আজ এতো বছর পর তার বুড়ো মন সেলিনা চৌধুরীর আকর্ষণ চাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।
ন্যান্সি এটা কি করলো? কেনো করলো? চার বছর আগে ন্যান্সি জাফর সাহেবের পিএ হিসেবে জয়েন করে। প্রথম বছরেই তার আর ন্যান্সির মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। বা বলতে গেলে বন্ধুত্বের থেকেও বেশি কিছু। সেলিকে তখন তার দু চোখে দেখতে ইচ্ছে করতো না। তখন মনে হতো পৃথিবীর সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাক্তি হচ্ছে সেলি। শুধুমাত্র রাহির টানে সে বাসায় ফিরতো। রাত একটা দেরটা পর্যন্ত সে অফিসে থাকতো। কখনোবা রাতে ন্যান্সির সাথে ডিনার করে তাকে বাড়ি নামিয়ে নিজে বাড়ি ফিরতো। বহুবার ভেবেছে সে ন্যান্সিকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে কিন্তু পারেনি। কারন বিয়ের প্রস্তাব দিতে হলে তার আর স্যালির বিচ্ছেদ প্রয়োজন। কোন একটা বিষয় তাকে আটকাচ্ছিল। কি সেটা?
শাখাওয়াত সাহেব মৃত্যুর পূর্বে তার সকল সম্পত্তি সেলির নামে লিখে দিয়েছিলো।
গতকাল রাতের কথা মনে পরলো তার। প্রায় প্রতিদিনই ন্যান্সির সাথে বাইরে ডিনার করতো জাফর সাহেব। গতকালও তেমনই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন তারা। খাওয়া শুরু করার আগেই ন্যান্সি বললো সে অরেঞ্জ জুস খাবে। আর তাকেও জোর করলো খেতে। সে প্রথমে না করলেও পরে ন্যান্সির জোরাজুরিতে রাজি হলো। ঐ জুসের মধ্যেই কিছু মিশিয়েছিলো ন্যান্সি। কয়েকচুমুক খাওয়ার পরই তার কেমন কেমন লাগছিলো। ন্যান্সি জোড় করে তাকে পুরোটা খাওয়ালো। আরেকটু খেতেই একজন লোক এসে ন্যান্সিকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর জোর করে কতোগুলো কাগজে তার সাক্ষর সংগ্রহ করলো তারা। অনেক চেচিয়েছিলো সে কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি।
ন্যান্সি বললো, “চেচিয়ে লাভ নেই সোনা। কেউ সাহায্য করতে আসবে না। চারটা বছর অপেক্ষা করেছি। না পেরেছো বউকে ছাড়তে আর না পেরেছো আমাকে বিয়ের কথা বলতে। আর ঐদিন যখন তোর সামনে তোর মেয়ে আমায় অপমান করলো তখন কি করলি তুই? তোদের কেউকে ছাড়বো না আমি। পরে থাক তুই এখানে তোর ঘরের সবাইকে ঘার ধরে বের করবো আমি”
পাশের ছেলেটি: চিন্তা করবেন না আপনার মেয়ে কোলে টেনে নেয়ার দায়িত্ব আমার।
ন্যান্সি: ঐ মেয়ের জন্য এটাই উচিৎ শিক্ষা হবে।
এই বলে তারা রেস্টুরেন্টে থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর ঐরকম অবস্থায় জাফর সাহেবও দৌড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলো। তার মেয়ের গায়ে কেউ হাত দিবে সেটা সে কল্পনায়ও ভাবতে পারে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরি বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো সে আর সাথে সাথেই প্রবলভাবে গাড়িটা আছড়ে পরলো রাস্তার পাশে। গাড়িটা উল্টে গিয়েছিলো। এতোটুকুই মনে আছে তার।
তার স্ত্রী কন্যা কি জানে তাদের উপর কি বিপদ আসতে যাচ্ছিলো? ন্যান্সি যা কেড়ে নিয়েছে পুরোটাই বেয়াইনি কারন যেই সম্পত্তির কাগজে সে জাফর সাহেবের সিগনেচার নিয়েছে সেই সম্পত্তি মূলত সেলিনা চৌধুরীর।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here