মধ্যবিত্ত – Part 17

0
170

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_১৭
#নুসরাত_রিতু
রাফির চাকরি হয়েছে আট মাস হয়ে গেলো। এই আট মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। রাহি আর রিমির পরীক্ষা শেষ গত সপ্তাহে। তারা দুজনেই এখন ফ্রী সময় কাটাচ্ছে। সেলিনা চৌধুরী আর ঐ বাসায় ফিরে যায়নি। এই বাসাটা তার বেশি পছন্দ হওয়ায় এখানেই থেকে গেছে। রেনু বেগম আর তিনি এখন দুই বোন হয়ে গেছে। রাহি আর রিমির বন্ধুত্বও চোখে পরার মতো। জাফর সাহেব অফিসে জয়েন করেছেন অনেকদিন আগে। রাফি এখন তার বিশ্বস্ত কর্মচারীদের একজন। রাফি নিজ যোগ্যতায় প্রোমোশন পেয়েছে গতমাসে। অফিসে রাফির খুব ভালো একজন বন্ধু হয়েছে। যাকে রাফি কলিগ বা বন্ধুর থেকে ভাই বেশি মনে করে। ছেলেটার নাম সাদ ইবনে আবদুল্লাহ। রাফি আর সাদ সমবয়সী হলেও আমলে আখলাকে সাদ রাফির থেকে অনেক আগানো।
রাহি এখন আর কারো সামনে যায় না। খাশ পর্দা শুরু করেছে সে। এখন এই অবসরে রাহি রিমি দুজনে মিলে ছোটখাটো সুরা গুলো হিফজ শুরু করেছে। রাহি, রিমি, সেলিনা চৌধুরী আর রেনু বেগম প্রায়ই একত্রে বসে দ্বীনি আলোচনা করে। রিমির জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করেছে। জামান শাহরিয়ার আর রেনু বেগমের ইচ্ছে মেয়েকে তুলে দিবেন কোন প্রাক্টিসিং মুসলিমের হাতে।
_______________________________
প্রতিদিনের মতোই রাফি আর সাদ একত্রে লান্স করছিলো। হঠাৎ সাদ বললো, “বিয়ের বেপারে তোমার চিন্তা কি ভাই? চাকরি তো হলো অনেকদিন এবার তো বিয়ের কথা ভাবা উচিৎ।”
রাফি মুচকি হেসে বললো, “একই প্রশ্ন তো তোমাকেও করতে পারি ভায়া! তুমি বিয়ে করছো কবে?”
সাদ: বাহ, আমার প্রশ্ন আমাকেই? যদিও মা পাত্রী খুজতে শুরু করে দিয়েছেন। আমিও না করিনি। চরিত্র হেফাজতের জন্য বিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেখি আমি কবে আমার অর্ধেক দ্বিন পাই!”
রাফি: উত্তম সিদ্ধান্ত। তুমি তো জানোই আমার ছোট বোন আছে৷ ওর জন্য পাত্র খুজছি। আগে ওকে বিয়ে দেই তারপর নিজেকে নিয়ে ভাবা যাবে ইনশাআল্লাহ।
কথাটা বলে একই সাথে দুজন দুজনের দিকে তাকালো। সাদ ভাবছে সেও তো পাত্রী খুজছে আবার রাফি ভাবছে রিমির জন্য সাদতো পার্ফেক্ট।
দুজনেই একটু শব্দ করে হেসে ফেললো। রাফি বললো “তুমি কি সেটাই ভাবছো যা আমি ভাবছি?”
সাদ: আমি তো জানি না তুমি কি ভাবছো কিন্তু আমি কি ভাবছি সেটা এখনি বলবো না। [একটু চুপ থেকে আবার বললো]
এতোদিন হলো তুমি তো আমাকে এখনো চায়ের দাওয়াত দিলে না ভাই। একদিন তো চা খেতেও ডাকতে পারো!
রাফি: এবার তো মনে হচ্ছে খুব দ্রুত ডাকতে হবে। তাহলে বলে ফেলো কবে ফ্রী তুমি! তারপর আন্টিকে নিয়ে চলে আসো চা খেতে। চিন্তা করো না চায়ের সাথে টা ও খাওয়াবো।
দুজনে আবার হেসে দিলো। সিদ্ধান্ত হলো শুক্রবার বিকেলে সাদ তার মা কে নিয়ে যাবে রাফিদের বাসায়। মা এমনি গিয়ে রিমিকি দেখবে, মায়ের পছন্দ হলে সাদ দেখবে।
____________________________
সেলিনা চৌধুরী রাফিদের বাড়ি গিয়েছে৷ রেনু বেগম আর তিনি এখন গল্পে মেতেছেন। জাফর সাহেব আর রাফি অফিসে। রাহিদের বাসায় এখন শুধু রাহি, রিমি আর খুশি আছে। খুশি ভাতঘুম দিয়েছে দের ঘন্টার বেশি হয়েছে। এখনো ওঠার নাম নেই। রাহি আর রিমি একসাথে রেসিপি দেখে দেখে কোল্ড কফি বানানোর ট্রাই করছে। আজ শুধু দুজনের জন্য বানাচ্ছে। ভালো হলে পরে সবার জন্য বানাবে।
রাহি হঠাৎই রিমিকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা রিমি তুই কেমন পাত্র চাও?”
রিমি লাজে রাঙা মুখ নিয়ে বললো, “এমন কেউকে যে আল্লাহর জন্য আমাকে ভালোবাসবে। যার প্রতিটা কাজে আমি নবীর (স.) সুন্নত খুজে পাবো। যে আমার জন্য কল্যানকর হবে আর আমি যার জন্য কল্যানকর হবো তেমন কেউকে চাই।”
রাহি: ওহহো মনে মনে তার ছবি আঁকা শেষ!
রিমি: ইশ তুই বুঝি আল্লাহকে তোর পছন্দের কথা জানাসনি?
রাহির হাসি মুখটা একটু অন্ধকার হয়ে গেলো। সে বললো, “আমি জানিনা আমি কি করেছি রে! ”
রিমি: তুই কি এখনে সেই ছেলেটাকে পছন্দ করো?
[রাহি অনেকদিন আগেই রিমিকে বলেছে সে একজনকে পছন্দ করে। তবে রাহিকে অনেক জোর করার পরও রাহি তাকে নাম বলেনি]
রাহি: হ্যা, কিন্তু আমি কোনদিন তাকে জানাতে পারবে না এ কথা।
রিমি: তার নামটা অন্তত আমাকে বল। সে যদি ভালো হয় তাহলে আন্টিকে বলি তার বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে।
রাহি: আল্লাহর কাছে তো নির্দিষ্ট করে কেউকে চাইতে হয় না তাইনা? তবুও আমি কেন তাকে এতো চাই রে? আমি কেন তাকে ভুলতে পারি না?
রিমি: এটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা রাহি। সব ঠিক হয়ে যাবে রে। তুই কাঁদিস না। আল্লাহ যার সাথে তোকে লিখে রেখেছেন তার সাথেই বিয়ে হবে।
রাহি: হুম জানি। কিন্তু আমি তাকে খুব বেশি ভালোবাসি রে। তাকে ছাড়া অন্য কেউকে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
এবার রিমি একটু রেগে গেলো। কারন রাহি প্রায়ই এমন কাঁদে। ও নিজেও বলবে না ও কাকে ভালোবাসে আবার তাকে ছাড়া অন্য কেউকে বিয়েও করবে না। এটা কেমন কথা। না খেয়ে না ঘুমিয়ে চেহারার কি হাল করেছে দিন দিন।
রিমি বললো, “দেখ তুই যদি নাই বলিস সে কে তাহলে আমি বুঝবো কি করে? আর সে ই বা বুঝবে কি করে তুই যে তাকে ভালোবাসিস? ”
রাহি: জানিনা রে। আমি কিছুই জানিনা।
এটা বলে সে রান্নাঘর থেকে চলে গেলো। তাদের কোল্ডকফি বানানে শেষ। এবার শুধু বরফ কিউব দিয়ে খাওয়া শুরু করলেই হবে। কিন্তু তাদের দুজনের কারোই খাওয়ার মুড নেই। তাই রিমি কফিটা ফ্রিজে রেখে রাহির রুমের দিকে গেলো। মেয়েটাকে এখন অন্য কোন কথায় ব্যাস্ত রেখে এখন মন ভালো করতে হবে। আগের রাহি ঠিক যতোটা চঞ্চল ছিলো এখনকার রাহি ঠিক ততটাই গুটিয়ে গিয়েছে। রাহি শুনেছে রাফির বিয়ের কথা হচ্ছে। রিমির বিয়ের পরই রাফিকে বিয়ে করানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেনু বেগম। এটা শোনার পর থেকেই রাহি এমন হয়ে গেছে। যদিও এই কারনটা রিমি জানেনা।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here