মধ্যবিত্ত – Part 18

0
178

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_১৮
#নুসরাত রিতু
শুক্রবার বিকেল
রাফি আগেই জামান সাহেব আর রেনু বেগমকে বুঝিয়ে বলেছে সাদ আর তার মায়ের বাসায় আসার কারন। তারাও সম্মতি দিয়েছেন। কারন এর পূর্বে সাদের অনেক প্রশংসাই তারা রাফির মুখে শুনেছে।
সাদ আর তার মা আসলো আসরের পর। স্বাভাবিক ভাবেই রেনু বেগম আপ্যায়নে ত্রুটি রাখলেন না। সাদ এর মা আয়শা রহমান পর্দানশীন মহিলা। তাই তাকে ড্রয়িং রুমে না বসিয়ে সরাসরি রিমির রুমপ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রিমি তখন নামাজ শেষ করে কেবল দাড়িয়েছে৷
আয়শা: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু মা। কেমন আছো?
রিমি: ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন আন্টি?
আয়শা : আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
রেনু বেগম আয়শা রহমানকে রিমির রুমে বসিয়ে আবার গিয়েছে রান্নাঘরে। আয়শা বেগম আর রিমি টুকটাক গল্প করছিলো। আয়শা বেগম বুদ্ধিমতী মহিলা। সে সরাসরি কিছু জিজ্ঞেস না করেও বুঝে ফেললেন এই মেয়েই তার ছেলের উপযুক্ত।
ড্রয়িং রুমে জামান সাহেব সাদ এর সাথে কথা বলছেন। রাফি মা কে সাহায্য করতে রান্নাঘরে আছে। যেহেতু রেনু বেগম সামনে যাবে না তাই গেস্টদের আপ্যায়ন এর দায়িত্ব সবসময়ই রাফির।
জামান সাহেব : বাড়িয়ে কে কে আছে তোমার?
সাদ: আপাতত আমি আর আমার মাই আছি। ছোটবেলায় বাবা মারা গিয়েছে।
জামান সাহেব : তোমার কোন ভাই বোন নেই?
সাদ: জি না। এক বোন ছিলো যে ছোটবেলা পানিতে পরে মারা গেছে।
জামান সাহেব: ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
এমন আরো টুকটাক কথা হলো সবার মধ্যে। মোটামুটি সবার পছন্দ হয়েছে একে অপরকে। আয়েশা রহমান ছেলেকে ফোন করে তার পছন্দের কথা জানিয়েছেন। এবার তিনি চান সাদ আর রিমি যেনো দেখার পর্ব সাড়ে। এই কথা তিনি রেনু বেগমকে জানাতেই তিনি রাফিকে ডেকে ব্যাবস্থা করতে বললেন।
রাফি প্রথমে রিমির রুমে গিয়ে পুরো বিষয়টা রিমিকে খুলে বললো। রিমি লজ্জা আর সংকোচে মাথা নিচু করে ছিলো। রাফি রিমিকে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বললো, “আমি তোর উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। সাদকে আমি এতোদিনে বেশ ভালো করে চিনেছি। ও খুব ভালো ছেলে। ও ওর স্ত্রী কে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারবে। তবুও যদি তোর ওকে অপছন্দ হয় তাহলে আমি তোকে জোর করবো না। তুই খিমারটা পরে রেডি হয়ে নে। শুধু মুখ আর হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখবি। তোর যা যা প্রশ্ন আছে সব করবি, ঠিকাছে?”
রিমি এতোক্ষণ শুধু মাথা নিচু করে হু হু করছিলো
আয়শা রহমান আর রেনু বেগম তখন রেনু বেগমের ঘরে বসে গল্প করছিলো। তারা চায় ছেলেমেয়েরা যেন নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নেয়। তারা সামনে থাকলে সংকোচ হতে পারে তাই সেখা থেকে দূরে চলে এলো তারা।
রাফি সাদকে নিয়ে রিমির দরজার সামনে এসে অনুমতি নিয়ে সাদকে রুমে পাঠালো আর নিজে দরজার বাইরে দাড়িয়ে ছিলো।
সাদকে দেখেই দাড়িয়ে গিয়েছে রিমি। সাদ রুমপ ঢুকে প্রথমেই সালাম দিলো।
সাদ: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
রিমি মৃদু আওয়াজে বললো, “ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু ”
যদিও পুরো কথাটা সাদের কানে যায়নি তবুও সে বুঝে নিলো রিমি সালামের জবাব দিয়েছে। মৃদু হেসে বললো, “কেমন আছেন? ”
রিমি: আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
সাদ : আলহামদুলিল্লাহ।
রিমিকে চুপ করে থাকতে দেখে সাদ নিজে আবার বললো, “বসতে পারি?”
রিমি লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। এটা যে তার আগেই বলা উচিৎ ছিলো সে বুঝতে পারলো।
রিমি দ্রুত হাতে চেয়ার এগিয়ে দিলো। যদিও দুটো চেয়ার মুখোমুখি করে রাফি আগেই রেখে গেছিলো রিমি শুধু তাই দেখিয়ে দিলো।
সাদ নিজে বসে রিমি দিকে তাকিয়ে তাকেও বসতে বললো।
সাদ: এবার কেন ক্লাসে পড়েন আপনি?
রিমি: এইচ এস সি পরীক্ষা দিয়েছি।
সাদ: দেখতে আরো ছোট লাগে। সামনে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রাখেন?
রিমি: সিদ্ধান্ত নেইনি এখনো। হিফজ করতে ইচ্ছুক।
সাদ: মাশাআল্লাহ। ইনশাআল্লাহ সহপাঠী হবো।
রিমি:…………………….
সাদ আরো কিছু প্রশ্ন করলো কিছুটা দ্বীনি কিছুটা দুনিয়াবি। ধীরে ধীরে রিমিও ফ্রী হয়ে উত্তর দিচ্ছিলো। কিন্তু নিজে থেকে খুব একটা প্রশ্ন করতে পারেনি।
সাদ বিদায় নিয়ে বাইরে গিয়ে দেখে রাফি দরজার বেশ খানিকটা দূরে দাড়িয়ে আছে। সাদ গিয়ে মুচকি হেসে বুঝিয়ে দিলো তার মনোভাব। পাশের রুম থেকে আয়েশা রহমান ছেলের হাসি দেখে যা বোঝার বুঝে গেলো।
রেনু বেগম তাদেরকে রাতের খাবার না খায়িয়ে ছাড়েনি। সিদ্ধান্ত হলো আগামীপরশু অফিস ছুটির পর রাফি আর তার বাবা যাবে সাদদের বাড়ি যাবে। সব ঠিক থাকলে কথা পাকাপোক্ত করে আসবে।
————————————————
সারা বিকেল আর সন্ধ্যার পরও রিমি বাসায় না আসায় রাত দশটার দিকে রাহি রিমিকে ফোন করে পুরো ঘটনা জানলো।
রাহিও খুব খুশি হলো এই খবর শুনে।
তবুও স্পষ্ট করে জানতে চাইলো রিমির ছেলেকে পছন্দ হয়েছে কিনা। রিমি সলজ্জে হ্যা বোধক উত্তর দিলো। রাতেই রাহি সে খবর সেলিনা চৌধুরীকে বললো।
সব শুনে সেলিনা চৌধুরী বলেন, “এবার তে তাহলে আমাদেরও ছেলে খোজার সময় হয়ে গেলো।” বলেই মুচকি হাসলেন।
রাহির মনটা তৎক্ষনাৎ খারাপ হয়ে গেলো। সে চোখের পানি লুকাতে দ্রুত রুম ত্যাগ করলো কিন্তু সেলিনা চৌধুরী ভাবলেন লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে।
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here