মধ্যবিত্ত – Part 19

0
184

#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_১৯
#নুসরাত_রিতু
রাফি বাবার মায়ের সাথে কথা শেষ করে রুমে এসে দেখে তার ফোনে তিনটা মিসকল। সবগুলো কলই সাদ করেছে। মুচকি হেসে কল ব্যাক করলো সে।
একটা রিং হতে না হতেই ফোন রিসিভ করে কথা শুরু করে দিয়েছে সাদ।
সাদ: আসসালামুআলাইকুম ভাই, থাকো কই তুমি? কতোবার কল করলাম অথচ তোমার কোন খোজ নেই।
রাফি: ওয়াআলাইকুমুসসালাম। আস্তে আস্তে। একটু দম নেও সাদ। হঠাৎ কি মনে করে এতো রাতে খোজ নিচ্ছো? কাহিনী কি?
সাদ: কাহিনি তো কতোই আছে কি থেকে শুরু করি বলো তো।
রাফি: একটা দিয়ে শুরু করলেই হয়। আমি ভাই সিংগল মানুষ পুরো রাত ফ্রী।
সাদ: এখন তো আমিও ফ্রী। কিন্তু খুব বেশি দিন ফ্রী থাকতে চাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি এবার বিয়েটা সেড়ে ফেলবো ইনশাআল্লাহ।
রাফি: হা হা। এতো তাড়া কিসের ভাই। সবুর করো। সবুরে মেওয়া ফলে।
সাদ: সবুর তো অনেক করলাম এখন তুমি করো। আমি তো ভাবছি বিয়ের পর আহলিয়াকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবো। কই যাওয়া যায় বলো তো। তোমার বোনের কি বেশি পছন্দ সমুদ্র নাকি পাহাড়?
রাফি: বাপরে। এতোদূর ভেবে ফেলেছো। রিমি যদি রাজি না হয় তাহলে তো তুমি ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে যাবা ভাই। তখন তোমার জন্য বউ খুজে পাওয়া মুশকিল হবে।
সাদ: বউ তো খুজে পেয়েছিই। এবার ঘরে তোলা বাকি। তাও খুব দ্রুত করে ফেলবো ইনশাআল্লাহ। আচ্ছা তুমি কি তার সাথে কথা বলেছো?
রাফি: কার সাথে?
সাদ: আরে বাবা তার সাথে। কি বলেছে সে? পছন্দ হয়েছে আমাকে?
রাফি: সে টা কে তা তো আগে বলবা!
সাদ: আরে তোমার বোন। তারকি আমাকে পছন্দ হয়েছে?
রাফি: ওরে বাবা! এর মধ্যে এতো। এখনো কথা বলিনি। তোমরা গেলেই তো কিছুক্ষণ আগে। তারপর আর ও রুম থেকে বের হয়নি। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। তাই আজ আর ওর সাথে কথা বলিনি। কাল বলবো ইনশাআল্লাহ।
সাদ: কাল বলতে হবে না আজই বলো। যাও এখনি বলো।
রাফি: আরেকটু পর বারোটা বাজবে। এতোরাতে ওকে ঘুম থেকে তুলে আমি বিয়ের কথা বলবো! পাগল হয়ে গেছো ভায়া?
সাদ: আরে তোমাদের বাসায় যাওয়ার আগে আমি ইস্তেখারা করেছিলাম। ফিরে এসে আবার করলাম। রেজাল্ট পজিটিভ মনে হচ্ছে। তুমি একবার কথা বলেই দেখো না। তাহলে আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো।
রাফি: ও তো ঘুমিয়ে গেছে। আর ওকেও একটু ইস্তেখারা করতে সময় দেও। ইস্তেখারা না করে তো এমনিও জবাব দিবে না।
সাদ: ও ইস্তেখারা করছে?
রাফি: ও বড় কোন সিদ্ধান্ত ইস্তেখারা ছাড়া নেয় না। তাই তুমি শিওর থাকো ও ইস্তেখারা করেছে।
সাদ: আচ্ছা।
রাফি: তোমার এক্সাইটমেন্ট দেখে আমি খুব মজা পাচ্ছি।
সাদ: নেও নেও। তোমারি সময় এখন। আমারো সময় আসবে। আমার বিয়ের পর তোমার জন্য বউ খোজা শুরু করতে বলবো। তখন মজা আমিও নিবো।
রাফি একটু থমকে গেলো। সে জানে তার পরিবারও তার বিয়ের কথা ভাবছে৷ রিমিকে বিয়ে না দিয়ে তারা রাফির বিয়ের কথা আগাতে পারবে না তাই এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। কিন্তু সে তো অন্য কেউকে পছন্দ করে ফেলেছে। যার কথা সে কোন দিন পরিবারের কাছে বলতে পারবে না। সবাই তাকে লোভী ভাববে। সবাই বলবে সে লোভে পরে এমন কাজ করেছে। কিন্তু তা তো সত্যি না। সে তো তার মন হারিয়েছে বছর খানেক আগেই ঘর্মাক্ত মেয়েকে দেখে। সেই মেয়ে যখন তাকে কথার ছলে অপদস্ত করেছিলো তখনই তো সে তার মন হারিয়েছে। কি করে বুঝাবে সবাইকে এই কথা।
ওদিকে সাদ হ্যালো হ্যালো করছে। রাফি কথা না বলায় ফোন কেটে পুনরায় কল করেছে। আর ফোনের আওয়াজে ধ্যান থেকে বেড়িয়ে এসেছে রাফি। কল রিসিভ করেও চুপ করে আছে সে।
সাদ: কি হলো ভাই বিয়ের কথা শুনেই ভাবনায় ডুব দিলে?
রাফি: তোমার বিয়ে পাগলামো দেখে আমি অবাক হচ্ছি আর মজা নিচ্ছি চুপচাপ। এখন অনেক রাত হলো চলো ঘুমাই। কাল অফিস আছে।
সাদ: এতো রাত পর্যন্ত যখন জেগে থাকলেই তখন আরেকটু জাগো। একটু পর তাহাজ্জুদ পড়ে তারপর ঘুমাও।
রাফি: ইনশাআল্লাহ। তুমিও পড়ো।
সাদ: ইনশাআল্লাহ।
রাফি: আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
সাদ: ওয়াআলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু।
ফোন কেটে আবারো ভাবনায় ডুব দিলো রাফি। কিছুক্ষণ পর উঠে নামাজ পড়ে নিলো। তারপর পড়ার টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা চাবি বের করলো। তারপর আলমারির তালাবদ্ধ ড্রয়ারটা খুলে দু মুট চুড়ি বের করলো সে।
চুড়ি গুলো নিয়ে আবার বিছানায় বসে তাকিয়ে রইলো চুড়িগুলোর দিকে। একমুট বেবি পিংক রঙ এর অন্য মুট কুচকুচে কালো।
দু মুটের সাথে কোন মিল নেই। একেবারে ভিন্ন দুটো রঙ। প্রথম মাসে রাফি যখন বেতন পেলো তখন সবার জন্য কিছু না কিছু কিনেছিলো। ছাত্রদের জন্য কিনেছিলো কিছু চকলেট।
রিমির চুড়ি খুব পছন্দ। তাই জামার সাথে মিলিশে হালকা আকাশী রঙ এর একমুট চুড়ি খুজছিলো রিমির জন্য। তখনই চোখ আটকে গেলো কালো চুড়িগুলোর দিকে। মনে হলো এই চুড়িগুলো রাহির হাতে খুব মানাবে। পরক্ষনেই ভাবলো রাহির পুরো রুমেই তো বেবি পিংক এর ছড়াছড়ি তাই একমুট বেবি পিংক চুড়িও নিয়ে নিলো। বাসায় সবাইকে যখন উপহার গুলো দিলো তখন খুব সাবধানে চুড়িগুলো আলাদা করে রেখেছিলো সে।
ঐদিন পড়াতে গিয়ে কিছু জরুরি কাগজে জাফর সাহেবের সাক্ষর নেয়ার কথা ছিলো তাই অফিস ব্যাগও নিয়ে গিয়েছিলো সে। আর সেই ব্যাগেই লুকিয়ে নিয়েছিলো চুড়ি আর চকলেট।
পড়ানোর ফাঁকে চকলেট গুলো যখন রাহির সামনে রাখলো তখন হাসোজ্জল রাহি অবাক চোখে তাকিয়ে বলেছিলো, “হঠাৎ চকলেট কেনো স্যার? ঘুস টুস নাতো? আপনি যে কিপ্টা শুধু শুধু তো কিছুই দিবেননা।”
রাফি: প্রথম মাসের বেতন পেয়েছি সব বাচ্চাদের চকলেট দিয়েছি। এটা তোমার।
রাহি: প্রথমত আমি বাচ্চা না আর দ্বিতীয়ত আপনি চাকরি পেয়েছেন বলে পুরো এলাকায় চকলেট বিলি করেছেন? আগে জানতাম মানুষ খুশির খবর শুনলে মিষ্টি বিলি করে।
রাফি: পুরো এলাকায় চলকেট বিলি করবো কেন? আমি শুধু সেই বাচ্চাদের দিয়েছি যাদেরকে এতোদিন আমি পড়িয়েছি।
রাহি: ওহ, তাই বলুন। তারমানে আপনি এতোদিন শুধু বাচ্চাদের পড়িয়েছেন? আমিই একমাত্র বড়?
রাফি: না, তোমার থেকে বড় বাচ্চাও আমি পড়িয়েছি।
রাহি: সে আমার থেকে কতোটুকু বড়?
রাফি: এক ব্যাচ সিনিয়র।
রাহি: তার মানে আপনি তাকেও চকলেট দিয়েছেন?
রাফি: হ্যা।
রাহি মন খারাপ করে বললো, ” আমি আরো ভেবেছিলাম আমি স্পেশাল কেউ তাই শুধু আমাকেই দিয়েছেন। ”
রাফি মুচকি হেসে পুনরায় পড়ানে শুরু করেছিলো। হাজার চেয়েও সে বলতে পারেনি রাহি তার কাছে ঠিক কতোটা স্পেশাল। আর চুড়িগুলো দেয়ার সাহসও তার হয়নি। সংকোচ কাটিয়ে চকলেট দিতেই তার বেশ কষ্ট হয়েছে।
সত্যি সে রাহির থেকে বড়একজনকে পড়িয়েছিলো। এলাকারই এক ছোট ভাই। পথে দেখা হওয়ায় তাকেও চকলেট দিয়েছিলো সে। ওদিকে রাহি ভেবেছে রাফি অন্য কোন মেয়েকে চকলেট দিয়েছে।
পুরোনো দিনের স্মৃতি ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ছে রাফি। বালিশের পাশেই পরে আছে চুড়িগুলো। সাদের সাথে কথা বলা তারপর পুরোনো স্মৃতিতে ডুব মারা এসবে সে এলার্ম দিতেই ভূলে গেছে।
ভোরবেলা রিমি ঘুম থেকে উঠে বাবা মাকে তুলে দেখে ভাই এখনো ওঠেনি। এদিকে আর দেরি হলে জামাত মিস করবে তাই ভাইকে দরজার বাইরে থেকেই ডাকলো। তারপরও কোন জবাব না পেয়ে ভিতরে গিয়ে ড্রিম লাইট আলোতে দেখে ভাই ঘুমিয়ে আছে আর তারপাশে জ্বলজ্বল করছে কিছু একটা। কাছে গিয়ে দেখে দু মুট চুড়ি।
চুড়িগুলো দেখে বেশ অবাক হলো রিমি। তার মানেকি তার ভাই গোপনে কেউকে পছন্দ করে? কে সে? আবারও ভাবলো এমনও তো হতে পারে এগুলো তার জন্য এনেছে। তাই ভাবাভাবি বন্ধ করে ঘুম থেকে তুললো ভাইকে। রাফি উঠে রিমিকে দেখে চমকে গেলো।
রিমি: আসসালামুআলাইকুম ভাইয়া। সকাল হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ওঠো নাহয় ফজর মিস করবে।
রাফি: ওয়াআলাইকুমুসসালাম। হুম উঠেছি।
তারপর দ্রুত কাথা দিয়ে চুড়িগুলো ঢেকে উঠে বসলো। পুরো বিষয়টা রিমি আড়চোখে খেয়াল করলো৷ কিন্তু কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।
রাফিও উঠে চুড়িগুলো ড্রয়ারে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here