বাস চলাকালীন শ্রেয়সী তার পাশে বসা সুদর্শন যুবকটার শরীরে বমি করে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কাজ করে বসল। বমি করে দেওয়ার মতো ভয়াবহ কাজ করেও থেমে থাকেনি শ্রেয়সী লজ্জায়, ভয়ে ঙ্গান হারিয়ে পাশে বসা সুদর্শন যুবকটার গায়েই ঢলে পড়ল। যুবকটি চমকে ওঠে। মেয়েটির শরীরের উত্তাপ যেনো তার শরীরও পুড়িয়ে দিচ্ছে।
হুট করে পিছন থেকে একটা রোগা পাতলা টাইপ ছেলে এসে মেয়েটাকে আগলে নেয়। যুবকটির দিকে তাকিয়ে বিনয়ী স্বরে বলে,
সরি ভাইয়া। কিছু মনে করবেন না। এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছে। তাই শরীর প্রচন্ড দুর্বল। বাসে চড়তে পারে না। বাসে চড়লেই বমি করে। এক্সট্রেমলি সরি ভাইয়া। ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ। ভাইয়া শার্টটা একটু পরিষ্কার করে নিন।
ছেলেটি যুবকটির দিকে এক বোতল পানি এগিয়ে দেয়। ছেলেটি শ্রেয়সী মুখের ওপর অল্প পানি ছিটিয়ে দেয়। শ্রেয়সী আধো আধো চোখে ছেলেটার দিকে তাকাই।
ছেলেটি পড়ের বাস স্ট্যান্ডেই মেয়েটাকে নিয়ে নেমে যায়। যুবকটি মনে মনে ভীষণ বিরক্তবোধ করলেও সেটা প্রকাশ করলো।
শ্রেয়সী চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চটাই বসে আছে। ছেলেটা এক হাতে শ্রেয়সীকে জড়িয়ে ধরে অনবরত কাউকে ফোন করে যাচ্ছে। শ্রেয়সী মৃদু স্বরে বলে,
নাহিন ভাইয়া আমার মাথা ব্যথা করছে।
নাহিন শ্রেয়সীর বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
মারব টেনে এক চড়। বৃষ্টিতে ভেঁজার আগে মনে ছিল না যে, মাথা ব্যথা করবে। মাত্র এক মাস পর পরীক্ষা এর মাঝে তুই জ্বর-টর বাঁধিয়ে বিশ্রী কান্ড ঘটিয়ে বসেছিস। এখন তোর জেদের জন্য গ্রামে যেতে হচ্ছে বিয়ে খাওয়া জন্য।
শ্রেয়সী আবার মৃদু স্বরে বলে,
পড়াশোনা ছাড়া তোমার লাইফে আর কিছু নেই। আমার তো মনে হয় তুমি বাসর রাতেও তোমার বউকে পড়তে বসিয়ে দিবে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার ভবিষ্যত বউয়ের জীবন অন্ধকার। তার জীবন কাটবে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে।
তোকে কিন্তু আমি সত্যিই সত্যিই থাপ্পড় মারব।
কিছুক্ষণের মাঝেই সাদা পায়জামা আর পাঞ্জাবি পড়া একজন মধ্যবয়স্ক লোক এগিয়ে আসে। লোকটা শ্রেয়সী আর নাহিনের জেঠু হেলাল সরকার। শ্রেয়সী নাহিনের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে। নাহিন হেলাল সরকারকে দেখেই সালাম দেয়,
আসসালামু আলাইকুম জেঠু। ভালো আছেন?
গম্ভীর কন্ঠে জবাব দেয়,
ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ।
হেলাল সরকার শ্রেয়সীকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। হেলাল সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে বলে,
নাহিন আমার আম্মার কী হয়েছে? আমার আম্মাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
দুইদিন আগে বৃষ্টিতে ভিজেছিল, তারপর থেকেই জ্বর। জ্বরের জন্যই তো আব্বু-আম্মু বিয়েতে নিয়ে আসেননি। আমিও ওর সাথেই থেকে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনার আম্মা জেদ করেছে বিয়েতে না নিয়ে এলে কিছু মুখে দিবে না। তাই বাধ্য হয়ে নিয়ে এলাম। জ্বরের মাঝে এতোটা পথ জার্নি করে এসে কাহিল হয়ে পড়েছে।
হেলাল সরকার শ্রেয়সীর মাথায় হাত রেখে বলে,
আম্মা আপনার কী বেশি খারাপ লাগছে? আপনার ছেলে চলে এসেছে না, দেখবেন একদম সুস্থ হয়ে গেছেন।
হেলাল সরকারের কথা শুনে শ্রেয়সী আলতো হাসে। হেলাল সরকার শ্রেয়সীর সাথে উনার মৃত মায়ের চেহারা, চলাফেরা এবং কথা-বার্তায় মিল পান বলে শ্রেয়সীকে আম্মা বলে ডাকেন। সবার কাছে একজন কঠোর মানুষ হলেও শ্রেয়সীর কাছে একজন বাচ্চার ন্যায়। সবার কাছে উনার কথা শেষ কথা হলেও, উনার কাছে শ্রেয়সীর কথায় শেষ কথা।
হেলাল সরকার দুইটা খালি রিকশা দাঁড় করান। একটাই নাহিন ওঠে, আরেকটায় উনি আর শ্রেয়সী বসেন।
____________
শান্তা বিয়ের আগের দিন হুট করে বেঁকে বসলো, সে বিয়ে করবে না। বিয়ে বাড়িতে মুহূর্তের মাঝেই হইচই পড়ে গেলো। সেই খবর পৌছে গেল শান্তার প্রেমিক মহাশয়ের কানে। কথা শুনেই প্রেমিক মহাশয়ের ঙ্গান হারানোর উপক্রম। বেচারা অস্থির হয়ে লাজ-লজ্জার কথা ভুলে বিয়ের আগের দিন ছুটে এসেছে হবু শ্বশুর বাড়ি।
শান্তার প্রেমিক মহাশয় যখন হবু শ্বশুর বাড়ি পৌছায় তখন রাত দশটা বাজে। সারা বাড়ি নিস্তব্ধ। দুই একটা কুকুরের ডাক ব্যতীত আর কোনো শব্দ নেই।
বিয়ে বাড়ি সাধারণত কোলাহলপূর্ণ হয়। কিন্তু এখানে ভিন্ন পরিবেশ দেখে মাথা ঘুরে ওঠে আয়ানের। বিয়েটা কী তাহলে সত্যি সত্যিই ক্যান্সেল হয়ে গেলো? এটা ভেবে দ্রুত পায়ে
বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। শ্রেয়সী রুমের সামনে লম্বা বারান্দায় বসে ছিল। আয়ান একটা নারী অবয়ব দেখতে পায়। শ্রেয়সী শরীরে চাদর মুড়ি দিয়ে ফোন স্ক্রল করছিল। আয়ান শ্রেয়সীকে দেখতে পেয়ে ব্যাকুল হয়ে বলে,
শ্রেয়সী তোমার আপু কী সত্যিই বিয়ে করবে না?
আয়ানের ব্যাকুলতা দেখে শ্রেয়সী হেসে ফেলে। আয়ানের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জিঙ্গেস করে,
বিয়ে কেনো করবে না?
এই তো ঘন্টা চারেক আগে আমাকে ফোন করে বলল, শুনো তোমার আর আমার বিয়ে হবে না। আমি বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছি। আমি কারণ জিঙ্গেস করলাম। তখন তার স্পষ্ট উত্তর, তার বিয়ে করার মুড নাই। কী সাংঘাতিক ব্যাপার বুঝতে পারছো?
বিয়ে তো হবে। এইতো কিছুক্ষণ আগে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো। জেঠুর নির্দেশ রাত দশটার মাঝে সবকিছু শেষ করতে হবে। রাত দশটার পর যেনো কোনো হইচই না হয়।
তোমার আপু কেনো বললো বিয়ে করবে না?
সেটা তো আপনাকে বিয়ের আগেই হবু শ্বশুর বাড়ি আনার জন্য। আপনি গতকাল রাতে আপুর ফোন ধরেননি। তাই আপু রাতে ঘুমাতে পারেনি। সেই শাস্তি স্বরূপ আপনি এখানে। আজকে সারা রাত আপনি সজাগ থাকবেন আর আপু ঘুমাবে। আপনি নিজের বাসায় পৌছাতে পৌছাতে মধ্যরাত। আবার আপনার বাসা থেকে বরযাত্রী রওনা দিবে ভোর রাত।
মহারানির শাস্তি আমি মাথা পেতে নিলাম। বিয়ে ভাঙেনি এটাই অনেক।
আপনার রাগ হয়নি ভাইয়া? অন্য কেউ হলে তো এখানে আসা তো দূরে থাক উল্টো নিজেই বিয়ে ভেঙে দিত। অন্য কাউকে বিয়ে করে দেখিয়ে দিত।
কী করবো বলোতো? ভালবাসি তো। এক নারীতে আমার বাস, সেই নারীতেই আমার সর্বনাশ। আচ্ছা আমি আসি। কাউকে বলার দরকার নেই যে, আমি এসেছিলাম। ব্যাপারটা খারাপ দিকে চলে যাবে।
আপনি চিন্তা করবেন না আমি কাউকে বলবো না। আপনি যে আসবেন সেটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। কিন্তু আপুর বিশ্বাস ছিল আপনি আসবেন।
আয়ান কিছু না বলে মুচকি হেসে চলে যায়।
_______________
আজকে শ্রেয়সীর প্রথম পরীক্ষা। শ্রেয়সী এইচএসসি পরীক্ষার্থী। প্রথম পরীক্ষা বাংলা। পরীক্ষার মাঝে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হলো ম্যাজিসেট্রট আসছে। সবাই একদম সতর্ক হয়ে যায়। শ্রেয়সী ভয়ে একদম তটস্থ। শ্রেয়সী নিজের ক্লাস টিচারকেই অনেক ভয় পায়। সেখানে যিনি আসছেন তিনি তো ম্যাজিসেট্রট।
শ্রেয়সী একদম খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। ডানে বামে কোথাও তাকাচ্ছে না। লিখতে লিখতে দরজার দিকে তাকাতেই চমকে ওঠে শ্রেয়সী। এই তো সেই চোখ জোড়া। চশমার আড়ালে থাকা সেই গম্ভীর চোখ জোড়া। এই চোখ জোড়া চিনতে শ্রেয়সীর একদম ভুল হয়নি।
উনিই তো সেই লোক যার গায়ে আমি বমি করে দিয়েছিলাম। উনার গায়ে বমি করে দিয়েছিলাম তার জন্য প্রতিশোধ নিতে আমার খাতা জমা নিয়ে নিবেন না তো। না উনি তো আমাকে চিনতেই পারবেন না। আজকে তো মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকা।
শ্রেয়সী মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিলেও, ম্যাজিসেট্রটকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রেয়সীর অন্তর আত্মা কেঁপে ওঠে। তার দিকেই যে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। শ্রেয়সীর ঙ্গান হারানোর উপক্রম। সত্যি সত্যিই শ্রেয়সী ঙ্গান হারিয়ে ফেলল। সবার দৃষ্টি এখন শ্রেয়সীর দিকে। শ্রেয়সীর বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
চলবে ….
#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#সূচনা পর্