#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
৬
ক্যাম্পাসে সবাই মিহানকে ঘিরে বসে আছে। মিহান বিরক্ত হয়ে বলে,
বাল সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেনো? আমাকে কী আজকে দেখতে সুন্দর লাগছে? আমাকে দেখেই দুই তিনটা মেয়ে পটে যাবে?
শ্রেয়সী ভ্রু নাচিয়ে বলে,
মুহিবের ছাত্রীর সাথে তোর কী চলে?
রিমের কথা বলছিস? রিম তো আমার এক্সের ছোট বোন।
তোরে একটা লাথি দিয়ে একদম ক্যাম্পাসের বাইরে ফেলে দিব। দুনিয়ার সব মাইয়াই তোমার এক্স লাগে? আমার লগে ফাজলামো করস? রিমের বড় কোনো বোন নেই। রিম তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান। মিহান তুই ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না। আজকে না এখনি রিমকে ব্লক করবি।
ক্যান মামা তোমার জ্বলে নাকি? তোমার ছাত্রীর সাথে আমি কথা বলি বলে।
একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবি না। সত্যিটা তুইও জানিস আর আমিও। ওকে আমি স্টুডেন্টের বাইরে অন্য কোনো চোখে দেখি না।
সে তো তোমাকে স্যারের চোখে দেখে না, জামাইয়ের চোখে দেখে।
পাঁচ জোড়া চোখ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। দুজনের কোনো কথায় তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। মুহিব বিরক্ত হয়ে বলে,
এটা ওর আবেগ। এই বয়সের মেয়েদের সাথে যারাই একটু ভালো ব্যবহার করে তাদেরই ওদের ভালো লেগে যায়। এই ভালো লাগাটাকে ওরা ভালোবাসা মনে করে। বয়সের সাথে সাথে এই আমার প্রতি ওর মোহ কেটে যাবে। আমার থেকে বেটার কাউকে পেলে আমাকে আর ভালো লাগবে না।
ভালোবাসা যুক্তি দিয়ে হয় না মুহিব। ওর হয়তো বয়স কম কিন্তু ও তোকে সত্যিই ভালোবাসে। তোর প্রতি ওর ভালোবাসার গভীরতা আমি দেখেছি। তুই একটু অসুস্থ হলে ও কতটা ব্যাকুল হয়ে পড়ে সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি।
আমি ওর যোগ্য নেই। আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। আমার মাথার ওপর বাবা নামক ছায়া নেই, কাঁধে অনেক দায়িত্ব। আমাদের মতো ছেলেদের জন্য ভালোবাসাটা যে অন্যায়। কিন্তু সেই অন্যায়টা আমি করে বসেছি।একজনকে আমি খুব ভালোবাসতাম। উহু এখনো বাসি, ভবিষ্যতেও তাকেই ভালোবাসবো। জানি তাকে ভালোবাসার মতো যোগ্যতা আমার নেই। তাকে নিজের করে পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবু তাকেই ভালোবাসি। আমি অপারগ নাহলে ঐ টিউশনিটা ছেড়ে দিতাম। আমি চাই না আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক। তাই ওকে ইগ্নোর করে চলি। তুই ওর সাথে আর যোগাযোগ করিস না।
মুহিব মৃদু পায়ে হেঁটে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যায়। মিহান আর তন্ময় মুহিবের পিছন ছুটে।
এই ইভা আমাকে একটু লাইব্রেরিতে যেতে হবে। যাবি?
ইভা অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দেয়, হু।
নিতু আর ইভা লাইব্রেরিতে চলে যায় আর প্রিয়ন্তি আর শ্রেয়সী বাসায় চলে যায়। লাইব্রেরিতে এসেই ইভা ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। নিতু বই খুঁজতে মনোযোগী হয়। নিতু কাঙ্ক্ষিত বই খুঁজে পেতেই বই ধরে টান দেয়। কিন্তু বই আসছে না। নিতু বুঝতে পারে অন্য দিকে একই বই অন্য কেউ নিতে চাচ্ছে। নিতো শরীরটা একটু হেলিয়ে অপর দিকের ব্যাক্তিটাকে দেখার চেষ্টা করে। নিতুর নজরে আসে থমথমে এক মুখশ্রী। অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির সাথে চোখাচোখি হতেই ঐ লোকটা বই ছেড়ে দেয়। নিতুর হাতটা একটু আলগা হতেই ঐ লোকটা এক টানে বইটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ভুলক্রমেও আর নিতুর দিকে তাকায় না। দীপ্ত পায়ে হেঁটে একটা টেবিলে বসে পড়ে।
অদ্ভুত লোক তো বাবা। এমন ভাব করলো যেনো আমাকে দেখেইনি। আমার হাত থেকে বইটাও কেড়ে নিল।
নিতু একটা ভেংচি কেটে ইভার কাছে চলে আসে।
____________
একটা চায়ের দোকানে বসে আছে মিহান, মুহিব আর তন্ময়। মিহান আর মুহিবের ঠোঁটের ভাঁজে সিগারেট। মুহিব সবসময় সিগারেট খায় না। যখন খুব বেশি মন খারাপ থাকে তখন সিগারেটে সুখ টান দেয়। তন্ময় মুহিবের পিটে চাপড়ে বলে,
অর কতদিন নিজের ভালোবাসা লুকিয়ে রাখবি? বলে দে ওকে তুই ভালোবাসিস।
এটা হয় না।
কেনো হয় না? তুই প্রতিদিন একটু একটু করে কষ্ট পাচ্ছিস সেটা আমরা কীভাবে মেনে নিব?
তুই না বললে আমি আর মিহান বলে দিব। লাস্ট বারের মতো বলছি তুই বলবি নাকি বলবি না?
ওকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে আমার ভয় হয়। ও হচ্ছে দূরের ঐ আকাশ আর আমি বামুন। ওকে ছুঁতে গেলেও আমার হাত জ্বলসে যাবে। তোরা থাক আমি গেলাম। আমার একটা টিউশনি আছে।
____________
শ্রেয়সী ছাদে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল। হুট করে নিজের পিছনে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারে শ্রেয়সী। পরমুহূর্তেই নিজের কানের কাছে গরম নিশ্বাস অনুভব করে।
এই যে জ্ঞান হারানোর মেয়ে এখানে কী করছো?
কথাটা বলেই আগন্তুক দুই পা পিছিয়ে যায়।
শ্রেয়সী তড়িৎগতিতে পিছন ঘুরে তাকায়। শ্রেয়সীর সামনে অ্যাশ রঙের টি-শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অনুপম। মাত্রই হয়তো শাওয়ার নিয়েছে। চুল থেকে এখনো চুইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ছে। অনুপমকে দেখা মাত্রই শ্রেয়সী রাগে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। অনুপম আরেকটু কাছে আসতেই শ্রেয়সী হাত দিয়ে বাধা প্রদান করে।
একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। আপনাকে দেখলে আমার নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে। নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।
এসব কী বলছো তুমি?
একদম এগোবেন না। আপনি যদি জোর করে আমার কাছে আসার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু আমি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবো।
আচ্ছা আমি তোমার কাছে আসছি না। তুমি আমার সাথে এমন কেনো করছো?
তুমি যা বলার পরিষ্কার করে বল।
আমি কী বলবো? আপনি বলার আর কী বাকি রেখেছেন? আপনি আমার সাথে এমনটা কেনো করলেন? আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে আপনি আমার এতো বড় ক্ষতি কেনো করলেন? আমার ফিলিংস নিয়ে আপনি কেনো খেললেন?
আমি তোমার ফিলিংস নিয়ে খেলিনি। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। তাকাও আমার দিকে। কী হয়েছে আমাকে বলো? তুমি না বললে আমি বুঝবো কী করে কী হয়েছে?
আপনার দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আপনাকে এতোদিন বুল বুঝেছিলাম আজকে একদম ঠিক বুঝেছি। ঘরে বউ রেখে বাইরে ছোঁকছোঁক করতে লজ্জা করে না? চরিত্রহীন পুরুষ।
এসব কী বলছো? কার বউ? কীসের বউ?
শ্রেয়সী রেগে অনুপমের কলার ধরে ফেল। অনুপম শ্রেয়সীর হাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে শ্রেয়সী উদ্দেশ্য করে মৃদু স্বরে বলে,
কলারটা ছাড় শ্রেয়সী।
শ্রেয়সী চিৎকার করে বলে,
না ছাড়বো না। এখন কার বউ হয়ে গেছে? আপনি মেয়েদের কী মনে করেন? খেলার পুতুল? যখন যাকে ইচ্ছে নিয়ে খেলবেন, খেলা শেষে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন? আপনার মতো চরিত্রহীন লোক আমি জীবনে দেখিনি। লজ্জা করছে না আপনার আমার সামনে এসে উঁচু গলায় কথা বলতে? চলে যান আমার সামনে থেকে আপনি। আপনার মুখটা আমার আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। আপনাকে দেখে আমার ঘৃণা হচ্ছে ঘৃণা।
অনুপম শ্রেয়সীর হাত থেকে নিজের টি-শার্টের কলার ছাড়িয়ে নেয়। অনুপম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
খুব বড় ভুল করলে তুমি। এর জন্য তুমি পস্তাবে। অনুপম ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।
অনুপম হনহন করে চলে যায়। শ্রেয়সী ধপ ছাদের রেলিং ঘেষে বসে পড়ে। হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠে। হুট করে ছাদে বসে পড়ায় রেলিংয়ে আঘাত লেগে কাঁচের চুড়ি ভেঙে হাতে ঢুকে গেছে। সেখান থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে। শ্রেয়সী বিড়বিড় করে বলে,
আমাকে একটু ভালোবাসলে কী হতো? আপনি অন্য কারো ব্যক্তিগত পুরুষ না হয়ে আমার ব্যক্তিগত পুরুষ হলে খুব বেশি অন্যায় হয়ে যেতে?
চলবে..