#মধ্যবিত্ত
#পর্ব_২৬
#নুসরাত_রিতু
সাদ রুমে প্রবেশ করতে করতে বারোটার বেশি হয়েছে। রিমি তখনো জেগে ছিলো কারন সবাই তেমনটাই করতে বলেছে তাকে। সাদ রুমে ঢুকে নিজেই বললো, “আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু। ”
রিমি খুব আস্তে করে জবাবা নিলো।
সাদ দরজা বন্ধ করে বললো, “ওজু আছে?”
রিমি, “হ্যা”
সাদ: আচ্ছা। চলুন দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেই।
রিমি মনে মনে এটাই চাচ্ছিলো। সাদ প্রস্তাবটা দেয়ায় সে খুশিই হলো। খুশিটা ঘোমটার আড়ালে থাকা মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।
সাদ আস্তে করে বললো, “ঘোমটা কি আমার তুলতে হবে?”
রিমি না চাইতেও ফিক করে হাসি দিলো। সাদ একটু গলা পরিস্কার করে বললো, “আচ্ছা ঘোমটা নামাজের পর তুললে হয় না? আপনি তো সতর ঢাকাই আছেন, এমন ভাবেই নাহয় নামাজটা পড়ে নিন। নামাজ শেষ হলে ঘোমটা তুলি?”
রিমি মাথা কাত করে সহমত জানালো। সাদ দ্রুত হাতে দুটো জায়নামাজ বিছিয়ে নিজে সামনেরটায় দাড়ালো। রিমিও চুপচাপ পেছনেরটায় দাড়িয়ে পরলো।
নামাজ শেষ করে সাদ পেছনে তাকিয়ে দেখে রিমির মোনাজাত তখনও শেষ হয়নি। তাই সে পুনরায় কিছু দোয়া করে পেছনে ঘুরে দেখে রিমি জায়নামাজ হাতে দাড়িয়ে আছে।
সাদ: হয়ে গেছে?
রিমি মাথা দুলিয়ে হ্যা বললো।
সাদ রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে বললো, “জায়নামাজটা!”
রিমি জায়নামাজ টা বাড়িয়ে দিতেই সাদ গুছিয়ে জায়গামতো রেখে রিমির দিকে তাকিয়ে বললো, “এবার ঘোমটা খুলি?”
রিমির তখন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। সাদ বললো, “দাড়িয়ে কেনো! বসুননা।”
রিমি খাটের পাশেই বসে পরলো। সাদ হেসে বলে, “আপনি কি ভয় পাচ্ছেন রিমি? নাকি লজ্জা?” সাদের চোখে মুখে দুষ্টুমি।
রিমি আরো গুটিয়ে গেলো লজ্জায়।
সাদ পকেট থেকে একটা খাম বের করে করে রিমির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “দেনমোহর”
রিমি সাদের চোখের দিকে তাকালো সরাসরি। যদিও সময়টা ছিলো খুবই কম। দ্রুত চোখ সড়িয়ে নিয়ে পুনরায় নিচের দিকে তাকালো সে। সাদ বললো, “এটা আপনার অধিকার রিমি। এটা পরিশোধ না করলে আপনি আমার জন্য হালাল হবেন না।” একটু থেমে পুনরায় বললো, “নিন”
রিমি হাত বাড়িয়ে খামটা নিলো। সাদের ইসলামের সবকিছুর প্রতি এতোটা খেয়াল রিমিকে মুগ্ধ করছে বারংবার।
সাদ রিমির পাশে বসে ঘোমটা খুলে বললো, “মাশাআল্লাহ। ”
রিমির দিকে তাকিয়ে বললো, “কপালে হাত দেয়ার অনুমতি পাওয়া যাবে কি?” রিমি মাথাটাকে আরো নিচু করে নিলো। লজ্জায় তখন তার বেহাল দশা।
সাদ কপালে হাত দিয়ে বললো, “আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা; ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি; ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা; ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।’ (আবু দাউদ)অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।’
আজকে নাহয় এতোটুকুই পড়ি। অন্য কোন বিশেষ দোয়া থাকলে পরে পড়া যাবে। ”
রিমি সাদের এই কথা শুনে একনজর সাদের দিকে তাকিয়ে দ্রুত চোখ ঘুরিয়ে নিলো। সাদ মুচকি হেসে বললো, “কাপড় বদলে হালকা কিছু পরে নিন। আজ অনেক ধকল গিয়েছে। কালও অনেক মানুষ আসবে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যান।”
রিমি শ্রদ্ধা ভরা দৃষ্টিতে একবার সাদের দিকে তাকালো। তারপর লাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রিমি যেতেই সাদ পোশাক বদলে শুয়ে পরেছে।
________________________________
সকাল সকাল ঘুম ভাঙলো রাহির। বাইরে তখন ফজরের আজান হচ্ছে। রাতে কখন ঘুমিয়ে পরেছে কিছুই মনে নেই তার। ঘুম থেকে উঠে জায়গাটাকে অচেনা লাগলেও খুব দ্রুত বুঝতে পারলো সে কোথায়। পাশে তাকিয়ে দেখে রাফি অন্য দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ ঝিম দিয়ে বসে রইলো সে। রাফির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে রাফির সাথে প্রথম দেখা থেকে শুরু করে পুরোনো দিনের কথা গুলো।
কিছুক্ষণ পেছন দিকে তাকিয়ে থেকে রাহির মন চাইলো একটু সামনে থেকে দেখতে। কিন্তু পরক্ষনেই নিজের মত পাল্টে ফেললো সে। আগে তার জানতে হবে রাফি সত্যি অন্য কেউকে পছন্দ করে কিনা। যদি সত্যি রাফির জীবনে কেউ থেকে থাকে তাহলে নিজের অনুভুতিতে লাগাম টানতে হবে তার। তৃতীয় পক্ষ হয়ে থাকতে চায় না সে। গতকাল এতো হট্টগোলে মাথা ঘুরে এসেছিলো তার। ঠান্ডা মাথায় কিছু ভাবতে পারেনি। কিন্তু এখন সে ভাবছে রাফির সাথে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা পরিষ্কার করতে হবে তাকে।
আস্তে করে খাট থেকে নেমে ভালো করে ওড়না পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে গেলো রাহি। রাফির ঘরে লাগোয়া কোন ওয়াশরুম নেই। তাই ডায়নিং এ যেতে হলো তাকে। ডায়নিং এ গিয়ে সে রেনু বেগমের সম্মুখীন হলো। দূর থেকে দেখে বেশ চমকে গিয়েছিলো রাহি। রেনু বেগম ফিসফিসিয়ে বললো, “ঘুম কেমন হলো মা? মাথা ব্যাথা আছে আর?”
রাহি: আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি এতো তাড়াতাড়ি উঠে এখানে দাড়িয়ে আছেন যে? ওয়াশরুমে যাচ্ছিলেন আন্টি?
রেনু বেগম: না না। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছু মনে করো না মা। কাল রাতে বিষয়টা আমি একদম খেয়াল করিনি। আজকেই আমরা রুম বদলাবো। তোমার শশুরও বিষয়টা নিয়ে খুব লজ্জায় পরেছে।
রাহি: কোন বিষয় আন্টি?
রেনু বেগম : তোমাদের রুমে যে বাধরুম নেই বিষয়টা আমাদের একদম খেয়াল ছিলো না। ঘরের বউ বাইরে বের হবে বাথরুমে যাওয়ার জন্য এটা ভালো দেখায় না।
রাহি: না না আন্টি আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না।
রেনু বেগম: আরে আমার কাছে লজ্জা করতে হবে না। যাও তুমি আমাদের বাথরুমে গিয়ে গোসলটা সেরে নেও। আমার নামাজ পরা শেষ তোমার শশুরও মসজিদে চলে গেছে। ওহ যাওয়ার আগে রাফিকে উঠিয়ে বলো তাড়াতাড়ি গোসল করে নামাজে যেতে।
রাহি লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। মিনমিন করে কি বললো ঠিক শুনতে পেলেন না রেনু বেগম। তিনি দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে গেলেন সকালের নাস্তা তৈরি করতে। গতোকাল সেলিনা চৌধুরী সাহায্য করেছলেন তাকে। আজ একা হাতে করতে হবে তাই দ্রুত কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
_____________________
রাহি বাইরের ওয়াশরুম থেকেই ফ্রেশ হয়ে ওজু করে রুমে এসেছে। রাফি তখনো ঘুমাচ্ছে।
রাহি রাফির সামনে দাড়িয়ে ভাবছে কিভাবে ডাকবে। এমন সময় রাফির এলার্ম বেজে উঠল।
রাফি চোখ খুলে দেখে রাহি সামনে দাড়ানো। দ্রুত উঠে বসে এলার্ম বন্ধ করলো সে। রাহির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো, “আসসালামুআলাইকুম, ঘুম ভালো হয়েছে?”
রাহি: ওয়াআলাইকুমুসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ।
একটু থেমে পুনরায় বললো, “আন্টি আপনাকে তৈরি হয়ে মসজিদে যেতে বলেছেন। আংকেল আজ তাড়াতাড়ি গিয়েছে।”
রাফি: আচ্ছা।
রাফি রুম থেকে বের হতেই নামাজে দাড়িয়ে গেলো রাহি। রাফি ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে রাহি তখনো নামাজ পড়ছে। রাফি পানজাবি পরে মসজিদের দিকে রওয়ানা করলো।
নামাজ শেষ করে জামা বদলে নিয়েছে রাহি। রেনু বেগম পুনরায় গোসলের কথা যেনো জিজ্ঞেস না করেন তাই এই চেষ্টা। জামা বদলে ওড়নার বদলে খিমার পরে রান্না ঘরে গেলো রাহি। রান্নাঘরে রেনু বেগমকে না পেয়ে তাদের রুমে গিয়ে দেখে শুয়ে আছে রেনু বেগম।
রাহি: আন্টি! আসবো?
রেনু বেগম: হ্যা হ্যা আসোনা।
রাহি: আজ সকালে কি রান্না হবে? আমিও আপনাকে সাহায্য করি!
রেনু বেগম: আমিও তো রান্না করতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার আম্মু কল করে বললো আজ খাবার তিনি পাঠাবেন। এতো বাড়ন করলাম শুনলোই না।
রাহি: ওহ, আচ্ছা। আম্মু কখন আসবে?
রেনু বেগম: তা তো ঠিক জানি না। হয়তো চলে আসবে কিছুক্ষণ এর মধ্যেই। তুমি গিয়ে আরেকটু ঘুমিয়ে নেও। রাফি আর তোমার শশুর হয়তো এখনি এসে পরবে।
রাহি: আচ্ছা।
নিজের রুমে এসে কিছুক্ষণ বসে থাকলো রাহি। সময় কাটছে না তাই ভাবলো রিমিকে একটা ফোন করবে।
ভাবতে না ভাবতেই রিমি নিজেই কল করলো রাহিকে।
চলবে………..