আজও বৃষ্টি নামুক – Part 1

0
839

‘ বুবু, চাঁচি সামান্য কিছু টাকার জন্য আমায় এইভাবে ৬০ বছরের এক বুড়োর সাথে কি করে বিয়ে দিতে রাজি হলো। চাঁচির কি একটুও মায়া হলো না বুবু?’
প্রচন্ড কান্না মাখা মুখশ্রী নিয়ে আয়নার সামনে বধূরূপে বসে থাকা ‘প্রিয়তা’ কথাটা বলে উঠল তাঁর বড় বোন প্রেমাকে। আর প্রিয়তার কথা শুনে প্রেমাও কান্না ভেজা মুখশ্রী নিয়ে ছোট বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
‘ এভাবে কাঁদিস না বোন? তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না।’
প্রেমার কথা শুনে প্রিয়তাও দুহাতে বোনের কোমড় জড়িয়ে ধরে আরো উচ্চ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ আমি এই বিয়ে করবো না বুবু, তুই কিছু একটা কর। চাঁচি তো তোর জীবনটাও এইভাবে নষ্ট করে দিয়েছে এখন আমার জীবনটাও নষ্ট করে দিতে চাইছে।’
বোনের কথা শুনে প্রিয়তার মুখে হাত দিয়ে বলে উঠল প্রেমা,
‘ চুপ কর বোন চাঁচি শুনে ফেলবে।’
‘ শুনলে শুনুক বুবু আমাদের মা বাবা নেই বলে এইভাবে আমাদের সাথে অন্যায় করতে পারে না। আমাদের বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স সব তো নিজেদের নামে করে নিয়েছে। এখন আমাদের সাথেও অন্যায় করছে। চাঁচির এত টাকা কিসে লাগে বুবু।’
বোনের কথার উওর দিতে পারে না প্রেমা। প্রেমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠল প্রিয়তা,
‘ তুই শুধু বল আমরা আজ রাতেই এখান থেকে পালিয়ে যাবো বুবু,
বোনের কথা শুনে হতাশ হলো প্রেমা। ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো সে। প্রেমা ছোট বেলা থেকেই একটু ভিতু টাইপের তবে প্রিয়তা এমন নয়। খালি পরিস্থিতির চাপে পড়ে মাঝে মাঝে চুপ থাকে সে। অবশ্য চুপ থাকে বললে একটু ভুল হবে প্রেমা কিছু বলতে দেয় না তাঁকে। প্রেমাকে চুপ থাকতে আবারও বললো প্রিয়তা,
‘ কি হলো বুবু তুই কথা বলছিস না কেন?’
‘ তোর মাথা ঠিক আছে বোন কি বলছিস কোথায় যাবি পালিয়ে?’
‘ কেন ঢাকা যাবো বুবু, তুই তো জানিস আমি ঢাকার এক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি চাঁচিকে লুকিয়েই পরিক্ষা দিয়েছিলাম। আমি এতদিন টিউশনি পড়িয়ে কিছু টাকা জমিয়েছি সেই টাকা দিয়ে আমাদের আগামী একমাস ভালোভাবে কেটে যাবে তারপর আমি আবার টিউশনি পড়াবো লাগলে জব করবো কোনো সমস্যা হবে না বুবু চল না যাই।’
‘ চুপ কর বোন তুই যতটা সহজ ভাবছিস বিষয়টা ততটাও সোজা নয়।’
‘ জীবনে কোনোকিছুই সহজ হয় না বুবু।’
প্রতি উওরে প্রেমা কিছু বলতে পারলো না চুপ হয়ে গেল আবার। প্রেমাকে আবার চুপ হতে দেখে নিরাশ কন্ঠে বললো প্রিয়তা,
‘ তুই আবার চুপ হয়ে গেলি বুবু?’
এমন সময় দরজা খোলার খট খট আওয়াজ আসলো। দরজার আওয়াজ আসতেই প্রেমা নিজের চোখ মুখ মুছে বোনের মাথার ঘোমটা টা ঠিক করতে করতে বলে উঠল,
‘ চুপ কর বোন আর কথা না কেউ আসছে মনে হয়।’
বোনের কথা শুনে ভয়ংকর ভাবে আহত হলো প্রিয়তা। নিশ্চুপে চোখ বেয়ে অশ্রু গড়ালো তাঁর। এরই মাঝে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো চাঁচি। তারপর কর্কশ কন্ঠে বললো,
‘ এই যে নবাবের বেটিরা আপনাদের হলো বাহিরে তো বর যাত্রীরা এসে পড়েছে,
চাঁচির কথা শুনে গা পিত্তি যেন জ্বলে উঠলো প্রিয়তার। লজ্জাও কি করছে না এইভাবে বলতে। প্রিয়তা চাঁচির মুখের ওপর কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই প্রিয়তার হাত চেপে ধরলো প্রেমা। চোখের ইশারায় বুঝালো চুপ থাকতে। প্রেমা আর প্রিয়তার চোখের ইশারাটা যেন দেখলো চাঁচি। সঙ্গে সঙ্গে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে কর্কশ কন্ঠে বললো,
‘ কি নিয়ে চোখাচোখি করছিস দুজন, শুনে রাখ আজ এই মুহূর্তেই প্রিয়তার বিয়ে হবে যদি উল্টো পাল্টা কিছু করিস তাহলে তো বুঝতেই পারছিস গাঁয়ের চামড়া আর আস্তো থাকবে না।’
এবার প্রেমা মুখ খুললো নিজেকে স্বাভাবিক রেখে ধীর স্বরে বললো,
‘ তুমি চিন্তা করো না চাঁচি আমরা কিছুই করবো না তুমি যা চাইবে তাই হবে।’
চাঁচি যেন খুশি হলো প্রেমার কথা শুনে পরক্ষণেই প্রিয়তার দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘ ভালো হলেই ভালো তোর ডিঙ্গি বোনকেও বুঝিয়ে বলিস বিয়েটা হলে ওরও ভালোই হবে। মানছি জামাইর বয়সটা একটু বেশি এর আগেও তিনটে বিয়ে করেছে কিন্তু বাড়ি গাড়ি টাকা পয়সা জমি জমার কোনো অভাব নেই। তোর বোন ভালোই থাকবে। জমিদার বাড়ির বউ হবে কিনা।’
বলেই হেসে উঠলো চাঁচি। এবার আর প্রিয়তা চুপ থাকতে পারলো না মুখ ফসকে বলেই উঠলো,
‘ এতই যখন ওই বুড়া লোকটাকে তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে তুমি নিজে কেন বিয়ে করছো না।’
সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল চাঁচি। ধমকের স্বরে বলে উঠলেন,
‘ মুখ সামলা প্রিয়তা।’
চাঁচির কাজে ছল ছল দৃষ্টিতে চাঁচির দিকে তাকিয়ে বললো প্রিয়তা,
‘ হুম মারো মারো মারতে মারতে মেরে ফেলো আমায় তরপরও এই বিয়ে আমি করবো না।’
প্রিয়তার কথা শুনে চাঁচি আর একটা থাপ্পড় দিতে যাবে এরই মাঝে প্রিয়তার সামনে এসে দাঁড়ালো প্রেমা। তারপর চাঁচির সামনে দাঁড়িয়ে নিচু কন্ঠে বললো,
‘ ওঁকে এভাবে মেরো না চাঁচি।’
প্রেমার কথা শুনে থেমে গেলেন চাঁচি জোড়ালো গলায় বলে উঠলেন আবার,
‘ বোনকে সামলা প্রেমা। আজ যদি কোনো নাটক হয় তাহলে কিন্তু তোদের একদিন কি আমার একদিন। লাখ লাখ টাকা জুড়ে আছে এই বিয়ের সাথে এতো সহজে হাত ছাড়া করবো নাকি। আর বিয়ে যদি ভেঙে যায় তাহলে তোদের দুটোকেও আর জীবিত রাখবো না আমি। তাই সময় বোনকে সাবধান কর বুঝলি,
বলতে বলতে রাগে হন হন করে চলে গেল চাঁচি। আর প্রিয়তা রাগে দুঃখে কেঁদে চললো নীরবে। তবে মনে মনে ভেবে নিয়েছে মরে গেলেও এই বিয়ে কিছুতেই করবে না সে।’
প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখে ওর হাত ধরতে নিলো প্রেমা। সঙ্গে সঙ্গে ছিঁটকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো প্রিয়তা,
‘ তুই আমায় ধরবি না বুবু, তোর জন্যই আজ এমনটা হয়েছে তুই যদি সেই শুরু থেকেই চাঁচির কথায় না উঠতি না বসতি তাহলে এমনটা হতো না। আমাদের নিজেদের বাবার বাড়িটাও এইভাবে চাঁচি বিক্রি করতে পারতো না। আমাদের সব থেকেও আজ কিছু নেই।’
বলতে বলতে ঠুকরে কেঁদে উঠলো প্রিয়তা। বাবা মায়ের কথা বড্ড মনে পড়ছে তাঁর। এমন সময় সেই ঘরে ঢুকলো প্রিয়তার চাচা। খানিকটা হতভম্ব গলায় বললেন উনি,
‘ প্রিয়তা মা,
সঙ্গে সঙ্গে পিছন ঘুরে তাকালো প্রিয়তা। সামনে তাঁর হতভাগা চাচাকে দেখে দৌড়ে জড়িয়ে ধরলো ওনাকে। বললো,
‘ ছোট আব্বুু তুমি এসেছো?’
উওরে প্রিয়তার চাচাও বলে উঠল,
‘ হা মা এসেছি নিজেকে খুব অসহায় লাগে জানিস তোদের এই অবস্থার জন্য নিজেকেই বড্ড অপরাধী মনে হয়।’
বলেই কেঁদে উঠলো প্রিয়তার চাচা। চাচাকে কাঁদতে দেখে হতাশ হলো প্রিয়তা নীরব কন্ঠে বললো,
‘ তুমি কেঁদো না ছোট আব্বু।’
প্রতি উওরে চাচা কিছু বলবে এরই মাঝে ডাক পড়লো ওনার। মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছেন খুব। নিচের ডাকাডাকি শুনে ছল ছল চোখে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো চাচা,
‘ চল মা নিচে যাই,
উওরে ছলছল দৃষ্টিতে একবার চাচা আর একবার বোনের দিকে তাকালো প্রিয়তা, দুজনেই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। প্রিয়তা কিছু একটা ভাবলো তারপর নিশ্চুপ স্বরে বললো,
‘ আমি যাবো তোমরা যাও আমি আসছি।’
উওরে প্রেমা বললো,
‘ তুই আসছিস মানে,
বিরক্ত হলো প্রিয়তা স্তব্ধ হয়ে ভাড়ি কন্ঠে বললো,
‘ বললাম তো আসছি আমি।’
প্রিয়তার কথা শুনে চাচা প্রেমা কেউ আর জোর করলো না প্রিয়তাকে। তক্ষৎনাত বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ওঁরা বের হতেই রুম আঁটকে দিলো প্রিয়তা। মাথায় তাঁর কিছু একটা চলছে।’
____
রাতের আকাশে অন্ধকার তখন। খুলনা ছেড়ে ঢাকা যাওয়ার বাসে বসে আছে ‘অপূর্ব’। পুরো নাম তাহসান আহমেদ অপূর্ব। ছোট করে সবাই অপূর্ব বলেই ডাকে তাকে।’
হাতের বাম দিকের বাসের একদম শেষ প্রান্তের আগের দুই সারি ছেড়ে তিন নাম্বার সারির দুই সিট ওয়ালা সিটের জানালার ধারে বসে আছে সে। চোখে মুখে প্রখর বিরক্তিটা সাথে ক্লান্তির ছাপ। কপাল জুড়ে থাকা অবাধ্য চুলগুলোতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তাঁর।’
এমন সময় বিকটও শব্দে অপূর্বের ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের স্কিনে আবারও বিরক্তকর সেই নাম্বার দেখে আরো বিরক্ত হলো অপূর্ব। তবে ফোন ছাড়লো না। কারন সে জানে এই ফোন না তোলা পর্যন্ত ফোন আসতেই থাকবে তাঁর। তাই বিরক্ত নিয়েই ফোন তুললো অপূর্ব। তবে অপূর্ব কিছু বলার আগেই অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি বলে উঠল,
‘ কেমন আছেন অপূর্ব সাহেব?’
জবাব দিলো না অপূর্ব। যা দেখে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি বেশি না বলে উঠল আবার,
‘ আপনার মনে হয় না আপনার এই চুপ থাকাটা ঠিক কতটা বিরক্ত করে আমায়।’
এবার মুখ খুললো অপূর্ব। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
‘ কথা না প্যাচিয়ে কিসের জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন?’
‘ আপনি কি জানেন না আমি কি কারনে ফোন দিয়েছি। আমার আপনাকে চাই অপূর্ব।’
‘ আপনাকে এর আগেও অনেকবার বলেছি অপূর্ব ন্যায়ের পথে কাজ করে কোনো বেআইনি কাজ নয়। আর যে কাজ করলে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে সে কাজ তো অপূর্ব মরে গেলেও করবে না। এর আগেও অনেকবার বলেছি আরও একবার বলছি মুখার্জি মশাই আমাকে পাবার আশা ছেড়ে দিন। আর পারলে নিজেকে বদলান না হলে এই অপূর্ব যে ঠিক কি কি করতে পারে সে বিষয়ে আপনার কোনো ধারনা নেই। তাই এখনও বলছি সময় থাকতে নিজেকে বদলান। ভালো থাকবেন। আর নেক্সট টাইম এই এক বিষয় নিয়ে বক বক করার জন্য ফোন দিবেন না আমায়।’
বলেই অপর প্রান্তের লোকটিকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলো অপূর্ব। ফোন বন্ধ করে দিলো নিমিষেই। রাগ হচ্ছে তার চরম রাগ। এই লোকটাকে এক কথা বার বার বোঝাতে বোঝাতে মুখ তিতা হয়ে গেছে অপূর্বের তারপরও কেন শুনতে চায় না বুঝতে পারে না অপূর্ব। অপূর্ব জানে এই লোক আবার তাঁকে ফোন করবে। তাই তো ফোন বন্ধ করে দেয়া। বাসের সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝিয়ে নিলো অপূর্ব। চোখে মুখে চরম বিরক্তির আর রাগের ছাপ তাঁর। জোরে জোরে নিশ্বাস ছাড়লো অপূর্ব। রাগ কমানোর প্রচেষ্টা। জরুরি কিছু কাজের জন্য খুলনা এসেছিল অপূর্ব নিজের গাড়ি নিয়েই এসেছিল সে কিন্তু মাঝপথে গাড়িটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাসে চড়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাঁকে। তারওপর উটকো লোকের ঝামেলা!’
রাতের আকাশে মেঘ ডাকছে হয়তো বৃষ্টি নামবে কিছুক্ষনের মাঝে। অপূর্বের কানে মেঘের শব্দ আসছে ঠিকই তবে আপাতত সে চোখ খুলতে চাইছে না তাই চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এমন সময় হতভম্ব হয়ে গাড়ির ভিতর উঠলো কালো বোরকা পরিধিত একটা মেয়ে। পুরো বাসে চোখ বুলিয়ে, হঠাৎই চোখ গেল তাঁর শেষের দিকের তিন নাম্বার সারির একটা ছেলের পাশের খালি সিটটার দিকে, এখনই বাস ছাড়বে কনডাক্টর সবাইকে যার যার সিটে বসার জন্য তারা দিচ্ছে খুব। প্রিয়তাও বেশি কিছু না ভেবে চটজলদি গিয়ে বসে অপূর্বের পাশের সিটটায়। ভয়ে বুক ধড়ফড় করছে তাঁর।’
আচমকাই পাশে কারো উপস্থিতি টের পেতেই চোখ খুলে পাশ ফিরে তাকালো অপূর্ব। তাঁর পাশেই কালো বোরকা পরিধিত একটা মেয়েকে দেখলো সে। বাসের আশেপাশের সিটগুলোতে চোখ বুলালো অপূর্ব সব ভর্তি হয়ে গেছে। অতঃপর আর বেশি ভাবলো না অপূর্ব জানালার দিকে আর একটু ঘেঁষে বসলো সে।’
বাস চলতে শুরু করলো তাঁর আপন গতিতে বাস যত এগোচ্ছে প্রিয়তার বুকের ভিতর ততই থমকাচ্ছে। এই প্রথম বাড়ির কাউকে কিছু না বলে এক অজানা গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলছে প্রিয়তা। সে জানে না সামনের দিনগুলো তার কেমন কাটবে কিন্তু তাঁরপরও চাঁচির টাকার লোভের কাছে হার মানবে না সে। ভেবেছিল বোনটাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে কিন্তু তাঁর অবুঝ বোন রাজি হলো না তাই শেষমেশ তাঁকে একাই বাড়ি ছেড়ে পালানোর মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে হলো। প্রিয়তা মিন মিন কন্ঠে বলে উঠল,
‘ পারলে আমায় ক্ষমা করিস বুবু!’
বুকের ভিতর যন্ত্রনা হচ্ছে প্রিয়তার। বোনকে ছেড়ে চলে যেতে সত্যি কষ্ট হচ্ছে তাঁর। ভিতর থেকে কান্না পাচ্ছে খুব। কিন্তু প্রিয়তা এখন কাঁদবে না কোনোভাবেই কাঁদবে না। যতই হোক এই বাস ভর্তি অপরিচিত মানুষদের ভিড়ে কিছুতেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে রাজি নয় সে। প্রিয়তা এক পলক তাঁর পাশের সিটে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকালো। চোখ মুখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে ছেলেটি। আচমকা কি হলো ছেলেটা চোখ খুলে তাকালো তাঁর দিকে। সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তা ঘাবড়ে গিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো দ্রুত। যদিও কালো বোরকার ভিড়ে তাঁর চোখ ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ছেলেটি। তারপরও খানিকটা আনিজি ফিল হলো প্রিয়তার।’
এরই মাঝে ঝিরিঝিরি শব্দে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল ধরনী জুড়ে। প্রিয়তা অপূর্ব দুজনেই এক বার চোখ বুলালো বাহিরের পরিবেশটার দিকে। অপূর্ব তক্ষৎনাত বাসের জানালা বন্ধ করে একমনে বসে রইলো চুপচাপ। আর প্রিয়তা সেও বেশি ভাবলো না নিজের মতো করে এক রাশ অস্থিরতা নিয়ে বসে রইলো একভাবে। এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই জেনে গেছে সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।’

রাত ১টার কাটায় ছুঁই ছুঁই বাস তখনও চলছিল আপন গতিতে। বৃষ্টি পড়া থেমে গেছে অনেক আগেই। তবে থমথমে চারপাশ। প্রিয়তার চোখে ঘুম নেই, টেনশনে মাথা চিন চিন করছে তাঁর সাথে অজানা ভয়ও বেয়ে আসছে বারে বারে। এরই মাঝে আচমকাই মাঝরাস্তায় বাস থেমে গেল, অবশ্য থেমেছে বললে ভুল হবে কিছু সন্ত্রাসী টাইপের লোক থামিয়ে দিয়েছে বাস। বাস থামতেই ভয়ে আরো যেন কুঁকড়ে উঠলো প্রিয়তা।’
এরই মাঝে বাসের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো তিনজন লোক। হাতে ছুরি জাতীয় কিছু একটা। লোকগুলো সমস্ত যাত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ কেউ নিজেদের সিট ছেড়ে উঠবেন না, আমরা একটা মেয়েকে খোঁজার জন্য বাসে উঠেছি মেয়েটা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছে তাঁকে পেলেই নিয়ে চলে যাবো। আমরা কোনো ঝামেলা করতে আসি নি,
বলেই সঙ্গে থাকা ছেলে দুটোকে উদ্দেশ্য করে বললো লোকটি,
‘ করিম, শিহাব দেখ মেয়েটা বাসে আছে কি না।’
‘ আচ্ছা বস।’
বলেই পুরো বাসে লোকদের চোখ বুলিয়ে খুঁজতে লাগলো মেয়েটিকে।’
এদিকে,
প্রিয়তার হাত পা কাঁপছে সে বুঝতে পেরেছে এঁরা তাঁকেই খুজতে এসেছে। সামনের ছেলেগুলো আশেপাশে সিটগুলোতে খুঁজতে খুঁজতে যত তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে ততই আরো ঘাবড়ে যাচ্ছে প্রিয়তা। আচমকাই কি হলো প্রিয়তার, তাঁর পাশে বসা ছেলেটার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো সে। সাথে বিরবির করে কিছু একটা বলতে লাগলো প্রিয়তা। সাথে ভাবতে লাগলো,
‘ তবে কি শেষ মুহূর্তে এসেও চাঁচির হাত থেকে রক্ষা পেল না প্রিয়তা?’
#চলবে….
#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here