আজও বৃষ্টি নামুক-পর্বঃ১২+১৩

0
452

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২
_________________
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে অয়ন। চোখে মুখে প্রখর রাগ আর বিরক্তির ছাঁপ তার। এত সুন্দর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সময় যে তার ভাই তাকে কফি বানানোর হুকুম দিবে এটা সত্যি ভাবে নি অয়ন। এখনও বুকটার ধ্যাত করে ওঠার ভাবটা যায় নি অয়নের। অয়নের ইচ্ছে করছে কফির বদলে তার ভাইটাকে ১০ চামচ চা পাতা দিয়ে কড়া করে লিকার চা খাইয়ে দিতে। মানুষ কতটা ত্যাড়া হলে সিরিয়াস মুহূর্তেও কফি বানানোর কথা বলতে পারে। মাঝে মাঝে অয়ন নিজেও বুঝে পায় না তার ভাইটা এমন ত্যারা কেন? তপ্ত নিশ্বাস ফেললো অয়ন। রাগ তো হচ্ছে ঠিকই তারপরও মেয়েটা কে ছিল জিনিসটা না জানা পর্যন্ত মনটায় শান্তি মিলছে না অয়নের। প্রায় আধঘন্টার মতো সময় নিয়ে ভাইয়ের জন্য কফি বানালো অয়ন। তারপর দুইটা কাপে কফি ঢেলে আলতো পায়ে এগিয়ে গেল ভাইয়ের রুমটার দিকে। অয়নকে জানতেই হবে মেয়েটা কি হয় অপূর্ব ভাইয়ের। গুরুত্বপূর্ণ কেউই হবে হয়তো নয়তো তাদের গুপ্তজায়গায় কখনোই নিয়ে যেত না।’
এইরকম নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে গেল অয়ন তার ভাইয়ের রুমের উদ্দেশ্যে। দরজায় নক করলো অয়ন। বললো,
‘ ভাই আসবো কফি এনেছি।’
অপূর্ব তখন তার রুমের বিছানার পাশে থাকা জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল। হাতে ছিল প্রিয়তার রেখে যাওয়া কানের দুলটা। অয়নের আওয়াজ কানে আসতেই সর্বপ্রথম কানের দুলটা পকেটে পুড়লো অপূর্ব তারপর বললো,
‘ হুম আয়।’
অয়ন ঢুকে পড়লো তারপর ঝটপট ভাইয়ের দিকে এককাপ কফি এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ভাই এবার কিন্তু সব বলতে হবে আমায়।’
অপূর্ব জবাব দিলো না। অয়নের থেকে কফির কাপটা নিয়ে বিছানায় বসে শান্ত গলায় বললো,
‘ কি শুনতে চাস তুই একটু বলবি আমায়।’
ভাইয়ের কথা শুনতেই দ্রুত পায়ে ভাইয়ের সামনাসামনি বসলো অয়ন। নিজের হাতের কফির কাপটা রাখলো বিছানার উপর। তারপর উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ ভাই হেয়ালি করলে কিন্তু চলবে না।’
অপূর্ব কফির কাপে চুমুক দিলো। কিছুক্ষন কফির সাধটা পর্যবেক্ষণ করে বললো,
‘ আরটু চিনি দিবি না।’
‘ কম হয়েছে খুব। আমি চিনির বোয়াম নিয়ে আসবো ভাই?’
‘ না তার দরকার নেই। এখন বল কি জানার আছে তোর রাত তো কম হয় নি, ঘুমাবি না?’
অয়নের আগ্রহ বাড়লো, চোখে মুখে হাসির রেখা ফুটলো। বললো,
‘ ঘুমাবো পরে। আগে বল ভাই মেয়েটা কে ছিল? তোর সাথে পরিচয় কি করে হলো? নাম কি? আমাদের গুপ্তস্থানে কেন নিয়ে গেলি?’ মেয়েটা কি হয় তোর?’
অয়নের পর পর করা সব প্রশ্নগুলোই মন দিয়ে শুনলো অপূর্ব। কফির কাপে লম্বা চুমুক দিলো একটা তারপর কিছুক্ষন সময় নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
‘ মেয়েটা আমার কেউ হয় না ছোট ভাই আর তুই যেটা ভাবছিস সেটা তো একদমই নয়।’
অয়নের আশার আলো নিভে গেল এক মুহূর্তেই। ছ্যাকা খাওয়ার মতো বুকটা দক করে উঠলো। গরম পানি পড়ার মতো ছ্যাত করে উঠলো শরীর তার ভাইটা কি পাষাণ এতগুলো প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এটা কি জবাব দিলো এমনটা আশা করে নি অয়ন। শুধু শুধু এত কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে ভাইয়ের জন্য কফি বানালো। যদিও এমনি বললেও বানাতো কফি। অয়নের চোখে মুখে হতাশার ছোঁয়া। অপূর্ব দেখলো সেটা সাথে খুবই নীরব ভাবে বললো,
‘ এজন্যই বলে আগে ভাগে বেশি ভাবতে নেই।’
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অয়ন ভাইয়ের দিকে। বিছানার উপর থেকে কফির কাপটা নিলো সে। তারপর এক চুমুক দিয়ে বললো,
‘ তুই খুব খারাপ ভাই।’
হাসলো অপূর্ব। বললো,
‘ যাহ বাবা আমি কি করলাম। তুই ভুলভাল ভেবে নিলে দোষটা কি আমার।’
‘ মিথ্যেও তো বলা যায় নাকি।’
‘ তোর ভাবি লাগবে এটা আগে বলবি তো।’
ভাইয়ের কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে খুশি মাখা মুখ নিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ তুই আমার ভাবি আনবি ভাই?’
‘ ভাবি যদি বাজারে কিনতে পাওয়া যেত তাহলে ঠিক নিয়ে আসতাম।’
চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো অয়ন। বললো,
‘ মজা নিচ্ছিস ভাই।’
‘ তোর মতো ভাই থাকলে মজা নিতে হয় আমার। মজা তো এমনি হয়ে যায়।’
জবাব দিলো না অয়ন। হয়তো সত্যি বেশি বেশি ভাবা৷ ঠিক হয় নি তার। অয়ন প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো,
‘ যাক গে ওসব বাদ দে আগে বল মেয়েটা কে ছিল আমাদের গোপনীয় জায়গায় কেন নিলি ভাই তুই তো জানিস ওই জায়গাটা তুই, আমি, আকিব তিনজন ব্যতীত অন্য কেউ জানে না।’
অপূর্ব পুনরায় কফির কাপে চুমুক দিলো। তারপর তার সাথে হয়ে যাওয়া প্রিয়তার সাথে ঘটা কাহিনির পুরোটাই বললো সে অয়নকে। অয়ন সব শুনে অবাক হলো, চমকালোও খুব। সাথে বললো,
‘ সবই ঠিক আছে ভাই। কিন্তু মেয়েটার নামটার কি ছিল?’
অয়নের এবারের কথা শুনে বেশ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ কি জানি কি ছিলো। কিছু একটা হবে হয়তো।’
অয়ন বেশ অবাক হলো ভাইয়ের কথা শুনে। মেয়েটাকে এত সাহায্য করলো অথচ মেয়েটার নামটাই জানলো না। অবশ্য তার ভাই তো, হেল্প করার পর আর থোড়াই কিছু জিজ্ঞেস করে। অয়ন উঠে দাঁড়ালো তার কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে আর খাওয়া যাবে না। অয়ন দাঁড়াতেই অপূর্ব বললো,
‘ এখন গিয়ে ঘুমা মাথার কিলবিল কমেছে তো।’
উওর দেয় না অয়ন। উল্টো বলে,
‘ বিয়েটা করে নে না ভাই।’
উওরে স্ট্রিট জবাব অপূর্বের,
‘ যাতে তুই অহনাকে খুব দ্রুত বিয়ে করতে পারিস।’
অপূর্বের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় অয়নের। অহনার কথা অপূর্ব ভাই জানলো কি করে? অয়ন ভয়ানক চমকানোর চাহনীর নিয়ে বললো,
‘ তুই অহনার কথা জানিস ভাই?’
উওরে কফির কাপটা অয়নের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে বাকি কথা পরে বলবো।’
অয়নও আর জোর করে নি। ভাইয়ের হাত থেকে খালি কফির কাপটা নিয়ে কিছুক্ষন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে সেও চলে যায় তার রুমের দিকে। অয়ন বুঝেছে এখন আর তার ভাইকে দিয়ে কিছু বলানো যাবে না।’
অয়ন বের হতেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অপূর্ব। আচ্ছা বেঁচে থাকার জন্য অয়নের ভাবি আনা কি খুব জরুরি। একদমই নয়। ভেবেই বিছানায় শুতে নিলো অপূর্ব পরক্ষণেই পকেট থেকে প্রিয়তার কানের দুলটা বের করে গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
‘ আজ শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার ভাইটা আমায় নিয়ে ভুলভাল ভাবলো। এই অলংকার ফেলে যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল। দিলে তো মেয়ে আবার এক ঝামেলায় ফেলে। এখন এটা দিতে হলেও তো তোমার কাছে যেতে হবে। আচ্ছা আমাকেই কি যেতে হবে নাকি আকিবকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো। অভিমান হবে তোমার, রাগ করবে কি এতে।’
হেঁসে ফেলে অপূর্ব। নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজে মাথা গেছে তার নয়তো এইরকম ভুলভাল কথা বলার মানুষ তো অপূর্ব নয়। অপূর্ব আর ভাবলো না দুলটা তার রুমের ডান দিকের ড্রয়ারটার ভিতর থেকে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এবার তার ঘুম দরকার, বড্ড ক্লান্ত লাগছে এখন। জীবনটা একদিন ক্লান্তিতে ক্লান্তিতেই শেষ নিশ্বাস ফেলে চলে যাবে দুনিয়া ছেড়ে। এই দু’দিনের দুনিয়ায় কতই না ক্লান্তি আসে সত্যি অদ্ভুত এই জীবন আর অদ্ভুত তার কাহিনি।’
____
মাঝপথে কাটলো দু’দিন। এই দু’দিন অনেকটা ব্যস্ত থাকায় প্রিয়তার খোঁজ খবরটা ঠিক নিতে পারে নি অপূর্ব। ব্যস্ত জীবনটা বড্ড প্যারা দেয় অপূর্বকে।’
দুপুর দুটো। রোদ্দুরে ঘেরা চারপাশ গরমের তোলপাড় চলছিল খুব। অপূর্ব তার ক্লান্ত মাখা শরীরটা নিয়ে এসে বসলো গাড়িতে। আকিব বসা ছিল ড্রাইভার সিটে। অপূর্ব বসতেই তার দিকে পানির বোতলটা এগিয়ে দিল আকিব। বললো,
‘ খুব ক্লান্ত লাগছে ভাই?’
অপূর্ব জবাব দেয় না। চোখ বন্ধ করে থাকে কতক্ষণ তারপর বলে,
‘ ছেলেদের কি ক্লান্ত হলে চলে আকিব।’
আকিব থমকে যায়। কথাটা সহজ লাগলেও এর মাঝে লুকিয়ে আছে এক রক্তিম বাস্তবতা। আকিব চুপ থাকে কিছু বলতে পারে না। উল্টো প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
‘ বাড়ি যাবেন ভাই?’
‘ আজ কি আর কোথাও যাওয়ার আছে আকিব? মিটিং সিটিং আচ্ছা মুখার্জি মশাই তোমায় কি কোনো ফোন করেছিল।’
‘ না ভাই তিনদিন আগে আপনি ঢাকা আসার পর করেছিল আমি ধরি নি।’
‘ কেন?’
‘ ধরে কি করতাম ভাই ফোনটা আমায় করলেও চাইতো আপনায় আর সেদিন আপনি ছিলেনও না আমার সাথে।’
‘ ওহ,
‘ ভাই আজকের পত্রিকা দেখে ছিলেন?’
‘ না তো কেন?’
‘ শুনেছি আবু তালেব মানে আশকোনার ছাত্রদলীয় নেতা নাকি পদত্যাগ করে ওনার ছেলেকে সেই আসনে বসাতে চাচ্ছেন। মানে সামনের ইলেকশনে আবু তালেব দাঁড়াবে না তার বদলে ওনার ছেলে দাঁড়াবে।’
‘ ভালো তো বয়স তো কম হয় নি। কতদিন আর থাকবে।’
‘ একটা সিকরেন্ট কথা কি ভাই আবু তালেবের ছেলে নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে বেআইনি পদে লিপ্ত আছেন। আপনার উপরও নাকি কড়া নজর রাখছেন।’
‘ সেটা কেন?’
‘ হয়তো আপনি রাজনীতিতে আছেন এটা মানতে চাইছে না ওই ছেলে। আপনার জায়গাটা নিতে চায় ভাই।’
উওরে অপূর্ব কিছু বলে না। গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকে। হঠাৎই বলে অপূর্ব,
‘ গাড়ি ঘোরাও আকিব তোমার গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি যাবো?’
আকিবের বুকটা কেঁপে ওঠে। এই এক জ্বালা না আজই আরোহীর সাথে ব্রেকাপ করবে আকিব। এইসব কাঁপাকাঁপি একদমই সহ্য হয় না আকিবের। কচুর পিরিতি এইসব মানসে করে। এর চেয়ে অপূর্ব ভাইয়ের মতো সিঙ্গেল থাকাই ভালো। আকিব নিজেকে শান্ত করলো। বললো,
‘ এখনই যাবেন ভাই?’
‘ হুম চলো কুইক একজনের ফেলে যাওয়া জিনিস ফেরত দিতে হবে।’
আকিব আর কিছু বলে না। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে তার গার্লফ্রেন্ডের বাড়ির উদ্দেশ্যে।’
____
কলিংবেল বাজতেই আরোহী এসে দরজা খোলে। সামনেই আকিবকে দেখে খানিকটা অবাক স্বরে বলে,
‘ তুমি?’
‘ হুম আমি সরো জলদি অপূর্ব ভাই এসেছে?’
এরই মাঝে অপূর্ব হাজির। আরোহীর সামনে এগিয়ে এসে বলে,
‘ কেমন আছো আরোহী?’
উওরে মুচকি হাসলো আরোহী। বলে,
‘ ভালো। আপনি ভালো আছেন তো ভাইয়া?’
‘ হুম ভালো মেয়েটাকে ডাকো আরোহী আমি ভিতরে ঢুকবো না দুটো কথা বলেই চলে যাবো।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখে মুখে কালো ছায়া নেমে আসে আরোহীর মাঝে। আরোহীর চেহারা দেখে অপূর্ব বেশ হতাশা নিয়ে বলে,
‘ কি হয়েছে আরোহী?’
অপূর্বের কথা শুনে আরোহী বেশ নিরাশ হয়ে বলে,
‘ ওহ তো নেই।’
আরোহীর কথা শুনে এবার আকিব বলে,
‘ নেই মানে কোথায় গেছে?’
‘ ও তো চলে গেছে। আজ সকালেই গেছে।’
আরোহীর কথা শুনে অপূর্বের অবস্থা বোঝা গেল না। সে চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে অপূর্ব,
‘ তুমি না বলেই চলে গেলে মেয়ে।’
___
‘তন্দ্রা বিলাস’ নামের এক আলিশান একতলা ছাঁদ বিশিষ্ট বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা।’
#চলবে…..

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৩
_________________
সোফায় চুপ করে বসে আছে অপূর্ব। সে সত্যিভাবে নি প্রিয়তা এইভাবে না বলে চলে যাবে। অপূর্বের কোনো রাগ নেই প্রিয়তা চলে গেছে বলে। তবে কোথাও একটা খারাপ লাগা কাজ করছে তার মাঝে। না বলে চলে যাওয়াটা কি খুব দরকার ছিল, অপূর্বের ভাবনার মাঝেই আকিব একটা চিঠির কাগজ অপূর্বের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ভাই মেয়েটা আপনায় দিতে বলেছিল আরোহীকে?’
অপূর্ব শুনলো হাত থেকে চিঠিটাও নিলো তবে খুললো না। এরই মাঝে আরোহী বলে উঠল,
‘ আমি থাকতে বলেছিলাম ভাইয়া কিন্তু ও থাকে নি একটু জ্বর কমেছিল বলেই চলে গেছে। মায়েরাও আর কিছুক্ষনের মাঝেই চলে আসবে। আমি বলেছিলাম মা আসলেও সমস্যা হবে না কিন্তু ও শুনতে চায় নি। বলেছে ‘আমি চাই না আমার জন্য তোমাদের কোনো সমস্যা হোক। মেয়েটা এমনিতে খুব ভালো। শান্তসৃষ্ট ভদ্র স্বভাবের। যাওয়ার আগে ওই চিঠিটা আপনায় দিতে বলেছিল ভাইয়া তাই দিলাম আমি পড়ে দেখেনি কিন্তু।’
অপূর্ব মন দিয়ে আরোহীর সব কথা শুনলো তবে উওরে কিছু বলে নি। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বললো,
‘ ভালো হয়েছে চলে গেছে। আচ্ছা আজ তবে উঠি ভিতরে ঢুকবো না বলেও ঢুকেছি।’
‘ সে তো আমি বলেছিলাম বলে (আরোহী)
উওরে অপূর্ব কিছু বলবে এরই মাঝে অপূর্বের ফোনটা বেজে উঠলো। উপরে তুহিনের নাম্বার দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অপর্ব তারপর আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি বাহিরে আছি তুমিও আসো আকিব।’
বলেই ফোনটা তুলে ‘হ্যালো তুহিন বলো’ বলতে বলতে চলে গেল অপূর্ব। আর আকিব বসে রইলো সোফায়। অপূর্ব যেতেই আরোহী আকিবের দিকে তাকিয়ে শয়তানী হাসি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আকিবের দিকে। আকিব উঠে দাঁড়ালো বুক কাঁপছে তার থরথর করে। আকিব কিছুটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
‘ আমি এখন যাই বুঝলে পরে আবার আসবো।’
আরোহী শোনে না একটুু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে আকিবের দিকে সাথে বলে,
‘ আজ একটা কিসসি দিয়েই যাবে আকিব।’
আরোহীর কথা শুনে আকিব থমকে উঠলো বুকের ভিতর হাতুড়ি প্যাটার মতো শব্দ করে উঠলো যেন। আকিব কিছুটা তোতলানো স্বরে বললো,
‘ এসব কি বলছো তুমি, মাথায় কোনো কমন সেন্স নেই।’
আরোহী খানিকটা জড়ালো গলায় বললো,
‘ তুমি কেন বুঝো না জানেমন তোমার একটা কিসসি পাওয়ার জন্য মনটা আমার আনচান করে।’
বলেই আকিবের গলা জড়িয়ে ধরতে নিবে আরোহী। এর আগেই আকিব সরে এসে বললো,
‘ ছিঃ ছিঃ আরোহী তোমায় আমি ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম আর তুমি কি না।’
হাসলো আরোহী বললো,
‘ ভালোবাসায় ছিঃ ছিঃ করলে জানেমন এত ছিঃ ছিঃ করতে বিয়েটা কেমনে করবে।’
আকিব ধমকায়, ভড়কায় চমকালো গলায় রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলে,
‘ লজ্জা করে না ফাঁকা ঘরে ছেলেটার ছিঃ ছিঃ করতে সরো সামনে থেকে।’
বলেই রাগী রাগী ভাব নিয়ে আরোহীকে সরিয়ে যেতে লাগলো আকিব সঙ্গে সঙ্গে সোফার কনায় উস্টা গেল আকিব। ব্যাথা পেল ঠিকই তবে সহ্য করে নিলো। তারপর আর একপলক আরোহীর দিকে তাকিয়ে হন হন করে বেরিয়ে গেল আকিব।’
আকিবের কান্ডে হেঁসে ফেললো আরোহী। এই আকিব এত অবুঝ কেন কিছুই বোঝে না। বোকা হাদারাম একটা। তবে বিয়েটা হোক তারপর তোমার হাঁদারাম গিরি আমি বের করছি আকিব। ইডিয়েট একটা।’
‘আসলে আরোহী তখন আকিবের সাথে একটু মজা করার জন্যই ওসব বলেছিল সত্যি সত্যি করার জন্য নয়। কিন্তু অবুঝ আকিব বুঝলো না রাগ দেখিয়ে চলে গেল। আবারও হাসলো আরোহী।’
___
গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল অপূর্ব। হঠাৎই অপরপ্রান্তে থাকা তুহিন বলে উঠল,
‘ ভাই ছেলেটাকে অনেক মেরেছি কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলছে না। কার ইশারায় কাজটা করেছে তাও বলছে না এখন কি করবো আর মারলে মরেই যাবে ভাই।’
তুহিনের কথা শুনে খানিকক্ষন শান্ত থাকলো অপূর্ব। কপালে ভাজ ফেলে নীরব কন্ঠে বললো,
‘ ডাক্তার ডাকো তুহিন আমি আসছি।’
উওরে তুহিনও বললো,
‘ ঠিক আছে ভাই।’
ফোন কাটলো তুহিন। তুহিন ফোন কাটতেই অপূর্ব ফোনটা পকেটে পুড়লো এরই মাঝে আকিব হন্তদন্ত হয়ে অপূর্বের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ ভাই আমি আরোহীর লগে ব্রেকআপ করমু নয়তো এই মাইয়া আমারে কাঁপাইতে কাঁপাইতেই মাইরা দিবো।’
অপূর্ব পিছন ফিরলো কপাল জুড়ে থাকা সামনের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে বললো,
‘ কেন আকিব কি হলো আবার?’
‘ কি হইনি তাই বলুন ভাই। মাইয়াডা কেমন যেন সামনে আসলেই আমার বুুক কাঁপে।’
অপূর্ব না চাইতেও আকিবের কথা শুনে হেঁসে ফেলে। প্রাণ খোলা কি হাসি তার। অপূর্ব হাসতে হাসতেই জবাব দেয়,
‘ বিয়েটা করে নেও আকিব কাঁপাকাঁপি সব বন্ধ হয়ে যাবে।’
আকিব ড্রাইভার সিটে বসলো। অপূর্বও বসে পড়লো পাশের সিটে। আকিব গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
‘ আপনি বিয়ে না করলে আমি কিভাবে করি ভাই।’
উওরে শান্ত জবাব অপূর্বের,
‘ সময় হোক সব হবে। তবে তুমি আগে করতে চাইলে করে ফেলতে পারো। আমার তো বহুদূর।’
আকিব কিছু বলে না। তবে প্রশ্ন করে আরেকটা,
‘ ভাই বাড়ি যাবেন?’
‘ না আকিব পুরনো বাংলোতে চলো একজনের সেবা করতে হবে।’
আকিব বুঝলো অপূর্বের এই শান্তসৃষ্ট কথার মাঝে কতটা ভয়ানক পরিস্থিতি লুকিয়ে আছে। আকিব গাড়ি চালিয়ে ছুটলো গহিন দূরে।’
____
‘তন্দ্রা বিলাস’ নামটাতে একটু ভুতুড়ে ভুতুরে গন্ধ থাকলেও বাড়িটা মটেও তেমন নয়। তবে নির্জীব আর নিরিবিলি পরিবশ। গাছপালা দিয়ে ঘেরা বেশ ছাউনি পরিবেশের মাঝে ছোট্ট একটা একতালা ছাঁদ বিশিষ্ট বাড়ি। তবে ছাঁদটা বাড়ির উপরে নয় দরজার পাশে অল্প কিছু সিঁড়ির দৌলতে বানানো। খুব বেশি উঁচুও নয়। ছাঁদে উঠলে বাড়ি ছাউনিতে ওঠা যায়। ছাঁদের ওই মাথাতে একটা বিশাল আম গাছ আছে। আম গাছটার খানিকটা ডাল পালা পড়েছে ছাঁদের কিনারায়। এছাড়া আরো অনেক গাছ আছে। কেঁচি গেটের পাশেই একটা লিচু গাছ। মাটির উঠোন। প্রিয়তা পুরো জায়গাটায় একবার চোখ বুলালো পুরো নির্জন আর শান্ত পরিবেশ। প্রিয়তা জোরে নিশ্বাস ফেলে কলিংবেলে চাপ লাগালো। পর পর দু’বার বাজাতেই গ্র্যান্ডমা টাইপের একজন বয়স্ক দাদিমা এসে দরজা খুলতে নিলো। ওনার নামই হলো তন্দ্রা। আর সেখান থেকেই তন্দ্রা বিলাস। এই জায়গাটার কথা প্রিয়তার চাচা দিয়েছেন প্রিয়তাকে। হ্যাঁ প্রিয়তার চাচা মানে ছোট আব্বু জানতো প্রিয়তা পালাবে। অনেক সাহায্যও করেছে প্রিয়তাকে পালাতে। কিছু টাকাও গুঁজে দিয়েছে সঙ্গে, সাথে ঠিকানাও দিয়েছে এখানের। প্রিয়তার এখানে থাকার বন্দবস্তটাও দিয়েছেন প্রিয়তার চাচা। সাথে তন্দ্রাকেও ফোন করে বলেছে সবটা।’
ধরতে গেলে প্রিয়তা আজ পুরো দিনটা লাগলো এখানে আসতে আসতে। প্রিয়তা গ্র্যান্ডমাকে দেখেই মুচকি হেঁসে বললো,
‘ আপনার নামই তন্দ্রা তাই না দাদিমা।’
হুট করেই একটা ছোরির মুখে নিজের নাম শুনে মুচকি হাসলেন গ্র্যান্ডমা। কিছুক্ষন ভেবে বললো,
‘ হুম তুমি কে?’
‘ আমি প্রিয়তা দাদিমা। খুলনা থেকে এসেছি।’
গ্র্যান্ডমা কতক্ষণ ভাবলো তারপর বললো,
‘ হুম মনে পড়েছে কিন্তু আসতে দুদিন দেরি করলে কেন?’
‘ সব বলবো দাদিমা আমায় একটু ফ্রেশ হতে হবে একটু।’
গ্র্যান্ডমা শুনলেন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে দিলেন প্রিয়তা। প্রিয়তা হুড়মুড় করে নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে ঢুকলো রুমে।’
বাড়িটার মাঝখানে অনেকটা জায়গা ফাঁকা রেখে দুইদিকে কয়েকটা রুমে আছে। বামদিকটায় গ্র্যান্ডমা থাকে আর ডানদিকটা প্রিয়তা থাকার ব্যবস্থা করে হয়েছে। ডানদিকের ঘরটায় ঢুকতেই একটা রুম চোখে পড়লো প্রিয়তার। রুমের ঢুকে হাতের ডানদিকে একটা রান্নাঘর এদিকে একটা বেলকনি প্লাস বাহিরে যাওয়ার দরজারও আছে। প্রিয়তা চাইলে ওই রাস্তা দিয়েও আসা যাওয়া করতে পারবে সামনে দরজা ইউস না করলেও চলবে।’
প্রথম রুমটায় একটা খাট, আলমারী আর ছোট্ট একটা টেবিল আছে। রুমটা বেশ পছন্দ হয়েছে প্রিয়তার। প্রিয়তা নিজের ব্যাগটা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়লো ফাইনালি চাচির খপ্পল ছেড়ে একা পথে পারি জমাতে সক্ষম হলো প্রিয়তা। জিনিসটা ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে প্রিয়তার। কিন্তু কোথাও একটা খারাপ লাগাও কাজ করছে প্রিয়তার মাঝে। প্রিয়তা চোখ বন্ধ করেই বিড় বিড় করে বললো,
‘ আপনি আমার চিঠিটা পড়বেন তো অপূর্ব? কে জানে আপনি আধও আমার চিঠিটা পাবেন কি না।’
___
‘পুরনো বাংলো’ একটা ভাঙাচোরা বাড়ি বলা যায় যাকে। শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে এমনকি অপূর্বের গুপ্তস্থান থেকেও অনেক দূরে।
‘ তো বাংলোর একটা বড় ঘরের চারদিকটায় লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এদের মাঝখানে, ছাই কালারের নরমাল ফলুয়া পড়া চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে অপূর্বের গাড়িতে বম লাগানো লোকটি অবশ্য লোক বললে ভুল হবে একটা মধ্যম বয়সের ছেলে। চোখ মুখ বেয়ে রক্ত ঝরছে, গায়ের জামাটাতেও রক্তে চিপ চিপ করছে। চুলগুলো অগোছালোতে টুইটুম্বর। বিগত দু’দিন যাবৎ নির্মমভাবে মারা হয়েছে ছেলেটিকে শুধু মাত্র একটা নাম জানা জন্য কিন্তু ছেলেটা বলে নি। এত মার খেয়েও মুখ খোলে নি।
এমন সময় সামনের দরজা খুলে ভিতরে আসলো অপূর্ব। এদিক ওদিক কোনোদিকেই না তাকিয়ে সোজা এগিয়ে গেল কালপিটের দিকে। অপূর্বকে দেখেই তুহিন এগিয়ে এসে বললো,
‘ ভাই ছেলেটা কিছুতেই মুখ খুলছে না অনেক মেরেছি তাও বলছে না।’
অপূর্ব শুনলো সাথে বললো,
‘ ডাক্তার এনেছো তুহিন?’
‘ জ্বী ভাই ওই যে দাঁড়িয়ে।’
তুহিনের কথা শুনে একঝলক তাকালো অপূর্ব ডাক্তারের দিকে। তারপর বেশি না ভেবেই হন হন এগিয়ে গেল সামনে।’
চেয়ার ঠেলে বসলো আসিফ নামের ছেলেটির সামনে। ছেলেটি মাথা নুইয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। কারো পদধ্বনি আলাপ পেতেই টল টল চোখে তাকালো অপূর্বের দিকে। অপূর্ব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ছেলেটার দিকে। অপূর্বের চাহনি দেখেই ভয়ে কাঁপলো ছেলেটি। আসিফের চাহনি দেখেই ভাড়ি কন্ঠে বলে উঠল অপূর্ব,
‘ মরার কি খুব সখ জেগেছে তোর এত সাহস আসলো কোথা থেকে যে অপূর্বের গাড়িতে বম লাগাস।’
উওর দেয় না ছেলেটা। মিনিট দুয়ের মাঝেই অপূর্বের মস্তিষ্কে দাউ দাউ করে জ্বালার মতো জ্বলে উঠলো। হুট করেই সামনের ছেলেটিকে বসিয়ে রাখা চেয়ারটায় লাথি মারলো অপূর্ব। ছেলেটার কলার চেপে ধরলো সঙ্গে সঙ্গে সাথে হুংকার দিয়ে বললো,
‘ নাম বল কার হুকুমে এই কাজ করার সাহস পেয়েছিস। নাম বল আমার মাথা কিন্তু গরম হচ্ছে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে নাম বল জলদি,
অপূর্বের হুংকারে উপস্থিত সবাই পুরো আঁতকে উঠলো। আকিব তো পারুক দৌড়ে পালাক।’
অপূর্ব তার প্যান্টের পিছনে গুজিয়ে রাখা রিভলভারটা ধরলো আসিফের মুখে ভিতর। তারপর বললো,
‘ নাম বলবি নাকি,
সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি ঘাবড়ে গিয়ে বললো বলছি ভাই সব বলছি আপনায়। ছেলেটির কথা শুনে রহস্যময়ী হাসি দিলো অপূর্ব। কি সাংঘাতিক সেই হাসি। সেই হাসি দেখে কেউ বলবে না কতক্ষণ আগেও অপূর্ব একটা ছেলেকে মারার জন্য রিভলভার হাতে নিয়েছিল। অপূর্ব বেশ আয়েসি বঙ্গিতে বসলো তার পিছনের চেয়ারটায় তারপর গম্ভীর আওয়াজেই বললো,
‘ এবার বল,
#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here