আজও বৃষ্টি নামুক – Part 5

0
317

#আজও_বৃষ্টি_নামুক❤️
তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ০৫
_________________
আকিব তাকিয়ে আছে খুব অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সে অপূর্বের মুখের দিকে। অপূর্বের কতক্ষণ আগে বলা কথাটা ‘আমার কি হয় মানে কেউই হয় না।’– কথাটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আকিবের। আকিব তাঁর ভ্রু-জোড়া জটিলভাবে কুঁচকে বললো,
‘ কেউ হয় না ভাই। সত্যি কেউ হয় না?’
প্রতি উওরে একই জবাব অপূর্বের,
‘ না।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব বেশ সন্দেহের দৃষ্টিতে অপূর্বের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ সত্যি বলছেন ভাই। মেয়েটা কেউ হয় না আপনার মেয়েটা সত্যি কেউ না হলে এই মেয়েকে আপনার এই গোপনীয় জায়গায় কেন আনলেন ভাই?’ এত সেবাযত্ন কেন করলেন। যে গুপ্তস্থানে আমি আপনি আর অয়ন ভাই ছাড়া কেউ জানে না সেই গুপ্তস্থানে এই অচেনা মেয়ে কেন ভাই।’
আকিবের পর পর করা প্রশ্নগুলোর সবই মন দিয়ে শুনলো অপূর্ব। তবে উওর দিতে পারলো না, তাঁর কাছে সত্যি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই। তাঁর মন বলেছে মেয়েটাকে এখানে নিয়ে আসছে তাই নিয়ে এসেছে অপূর্ব। সকালে বোরকার আড়ালে অচেতন অবস্থায় থাকা মেয়েটাকে ওভাবে বাসে রেখে আসতে একদমই মন সায় দিচ্ছিল না অপূর্বের। তাই তো নিয়ে এলো এছাড়া এমন তো নয় অপূর্ব এই প্রথম কোনো মানুষকে সাহায্য করছে। এর আগেও তো বহু মানুষের হেল্প করেছে অপূর্ব। এই মেয়েটার ক্ষেত্রেও সেইম। অপূর্ব মন চেয়েছে সাহায্য করতে তাই করেছে। একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে উদারতার খাতিরে যে হেল্প করে সেই হেল্পটাই করেছে অপূর্ব। এর বেশি কিছু নয় আর তাছাড়া অপূর্ব তো এখন পর্যন্ত মেয়েটার নামটাই জানলো না। তাহলে অপূর্বের কি করে কেউ হলো মেয়েটি। মেয়েটি কিছুই হয় না অপূর্বের কিছুই না। অপূর্বের ভাবনাগুলোর মাঝেই আবারও বলে উঠল আকিব,
‘ কি হলো ভাই কথা বলছেন না কেন? বলুন না মেয়েটা কে?’
আকিবের দিকে তাকালো অপূর্ব, শান্ত চোখ সাথে গভীর ভাবনা মাথায় নিয়েই তাকালো সে। পরক্ষণেই নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো অপূর্ব। তারপর বেশি না ভেবেই কাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত হয়ে যাওয়া তাঁর আর প্রিয়তার মাঝে সম্পূর্ণ ঘটনাই খুলে বললো অপূর্ব আকিবকে। আর আকিব সব শুনে চোখ বড় বড় করে বললো,
‘ ইস কি সাংঘাতিক মেয়ে বস। বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এলো সাহস আছে বলতে হবে। আইথিংক আপনার সাথে যাবে ভাই,,
বলেই নিজের মুখ চেপে ধরলো আঁকিব আয় হায় মুখ ফসকে এ কি বলে ফেললো সে। এখন অপূর্ব না তাঁর কানের নিচে দু গা বসিয়ে দেয়। কিন্তু না অপূর্ব তেমন কিছুই করলো না উল্টো নিজ মনে কিছু একটা ভেবে বললো,
‘ আমায় বাড়ি যেতে হবে আকিব তোমার বড় সাহেব তাঁর বউকে সামলাতে পারছে না।’
সঙ্গে সঙ্গে চোখ বড় বড় করে বললো আকিব,
‘ কি ভাই?’
‘ তোমার মাথা। ওসব বাদ দেও আগে বলো মেয়েটাকে কোথায় রাখা যায় দিনটুকু এখানে রাখতে পারলেও রাতে এখানে রাখা ঠিক হবে না। আর একটা মেয়ে দরকার আকিব। তুমি আমি ছেলে জিনিসটা ভালো দেখায় না যতই আমরা আমাদের গুপ্তস্থানে থাকি না কেন। আইথিংক তুমি বুঝচ্ছো আমার কথা।’
অপূর্বের কথা শুনে আকিব ভাবতে লাগলো, গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো সে। অতঃপর কিছুক্ষন ভেবেই বলে উঠল আকিব,
‘ ভাই আমার গার্লফ্রেন্ডের বেডরুমটা ফাঁকা আছে?’
আকিবের কথা শুনে চোখ মুখ কুঁচকে বললো অপূর্ব,
‘ হোয়াট,
বুকে হাত দিলো আকিব হতভম্ব গলায় বললো,
‘ আইমিন আমার গার্লফ্রেন্ডের বাড়িটা ফাঁকা আছে ভাই ওর বাবা মা দু’দিনের জন্য চিটাগং গেছে আপনি চাইলে দু’দিনের জন্য মেয়েটাকে আমার গার্লফ্রেন্ডের বাড়িতে রাখতে পারেন।’
আকিবের কথা শেষ হতেই অপূর্ব খানিকটা উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ That’s a good idea.
সঙ্গে সঙ্গে কেঁপে উঠলো আকিব। বুকের হৃদপিণ্ডটা যেন এখনই বেরিয়ে আসতো তাঁর। কিছুটা ভিতু স্বরে বললো,
‘ ভাই আপনি কি আমার সাথে শান্ত গলায় কথা বলতে পারেন না। আপনার কথা শুনলে মাঝেমধ্যে আমি ভয় পেয়ে যাই।’
আকিবের কথা শুনে হাসলো অপূর্ব। ইস কি সুন্দর হাসি তাঁর। অপূর্বের এই হাসিটা আকিবের খুব ফেভারিট। অপূর্ব সচরাচর খুব একটা হাঁসে না কিন্তু হুটহাট হেঁসে দিলে বেশ লাগে আকিবের। অপূর্ব রাগী, ভয়ংকর রাগী তবে তাঁকে দেখে বোঝা বড় দায় অপূর্ব সিরিয়াস মুহূর্তের সময়ও এমনভাবে শান্ত থাকে যে তাঁকে দেখে বোঝা মুশকিল সে টেনশন করছে। আকিব তো মাঝে মাঝে ভেবে পায় না তাঁর ভাইর মাথায় আসলে কি চলে।’
এসবের মাঝেও অপূর্বের রাগের আড়ালে লুকিয়ে আছে তাঁর একটা বিশাল বড় মন। যে মনটার হতিস যদি কেউ ভালোভাবে বুঝতে পারে সে হলো আকিব। আকিব অপূর্বের বাবার ড্রাইভারের ছেলে। ছোট বেলা থেকেই তাঁরা দুজন একসাথে থাকে। এক স্কুল, এক কলেজ এক ভার্সিটিতে পড়েছে তাঁরা। অপূর্ব সেই ছোট বেলা থেকেই আকিবকে বলেছে তাঁকে তুই করে বলতে কিন্তু আকিব কখনো বলে নি। অপূর্বকে কেন যেন আপনি ছাড়া অন্যকিছু বলাটা ঠিক আসে না আকিবের। তুই তো অনেক দূরের বিষয় আজ পর্যন্ত তুমি করে কখনো বলেছে কি না জানা নেই আকিবের। আকিব ছোট বেলা থেকেই একটু ভীতু টাইপের। তবে সে চেষ্টা করে অপূর্বের সামনে সাহসিকতার পরিচয় দিতে কিন্তু পারে না। বর্তমানে আকিব অপূর্বের বন্ধুর পাশাপাশি একজন এসিস্ট্যান্টের জবও করছে বলতে গেলে।’
আকিব অপূর্বকে তুই করে না বলার ফলে অপূর্বও তুইতে যেতে পারে নি তুমিতেই আঁটকে আছে সেই ছোট বেলা থেকে। তবে অপূর্ব জানে এই আকিব তাঁর জন্য নিজের জীবনটাও বিসর্জন দিতে রাজি। কিন্তু তার প্রতি আকিবের শ্রদ্ধার পাশাপাশি ভয়টা আজও শেষ করতে পারলো না অপূর্ব। সেই ছোট বেলা থেকেই অপূর্ব খানিকটা উচ্চ স্বরে কথা বললেই আকিবের হাত পা কেঁপে উঠে। অপূর্ব তো মাঝে মাঝে ভেবে পায় না এই রকম ভীতু মার্কা ছেলের সাথে তাঁর এমন বিশ্বস্ততার বন্ধুত্ব হলো কি করে?’
অপূর্বের এসব ভাবনার মাঝে চট করে ফোন বেজে উঠলো অপূর্বের। মোবাইল স্কিনের নাম্বারটা দেখেই বিরক্ত হলো অপূর্ব তক্ষৎনাত ফোনটা সাইলেন্ট করে আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ এবার আমায় যেতেই হবে আকিব তোমার বড় সাহেব সত্যি পাগল হয়ে যাবে নয়তো।’
‘ তা নয় বুঝলাম কিন্তু মেয়েটার কি করবো ভাই?’
‘ আপাতত এখানেই থাকুক বিকেলে না হয় তোমার গার্লফ্রেন্ডের বাড়ি নিয়ে যাবো। তোমার গার্লফ্রেন্ডকে ফোন করে জানিও দিও,
‘ আচ্ছা ভাই।’
‘ হুম তুমি এখন থাকো এখানে আমি না আসা পর্যন্ত ওঁকে একা রেখে যাবে না।’
‘ আচ্ছা ভাই।’
অপূর্ব শুকনো হাসলো তারপর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক ঝলক প্রিয়তার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে নিলো অপূর্ব। কেন যেন মেয়েটাকে একা রেখে যেতে মন চাইছে না অপূর্বের কিন্তু অপূর্ব যাবে আজ চার’দিন হলো অপূর্ব বাড়ি যায় না এবার তাঁকে যেতেই হবে। অপূর্ব তপ্ত নিশ্বাস ফেলে পিছন ফিরে আকিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ আমি যাচ্ছি আকিব নিজের এবং মেয়েটার দুজনেরই খেয়াল রেখো।’
মুকচি হাসলো আকিব। বললো,
‘ টেনশন নিয়েন না ভাই সাবধানে যাবেন।’
‘ হুম।’
বলেই চললো অপূর্ব এরই মাঝে ফোন বাজলো আবার। আবারও একই নাম্বারে ফোন আসায় বিরক্তির চরম লেভেলে চলে গেল অপূর্ব। এই লোকটা কি তাঁর বাংলা ভাষা বোঝে না। কাল রাতে এত কড়া করে কথা বললো তাও শুনলো না। অপূর্বের চেহারায় বিরক্তির রেখা দেখে প্রশ্ন করলো আকিব,
‘ কোনো সমস্যায় আছেন ভাই?’
অপূর্ব কিছু একটা ভাবলো তারপর বললো,
‘ আপাতত সমস্যা একটাই আকিব সেটা হলো তোমার বড়সাহেব আর তার বউ।’
‘ তাহলে আপনি আর দেরি কইরেন না ভাই তাড়াতাড়ি যান।’
‘ হুম থাকো তুমি,
বলেই আর এক পলক প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে তক্ষৎনাত চলে গেল অপূর্ব।’
অপূর্ব যেতেই আকিব এগিয়ে আসলো কুটির ঘরের দরজার সামনে। তারপর প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আপনি কি সত্যি অপূর্ব ভাইয়ের কিছু হন না আফা? কি জানি কেমন যেন।’
বলেই দরজা আঁটকে দিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে রইলো আকিব। কে জানি আজ তাঁর পা দুটো ঠিক কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। রাতে ব্যাথায় টন টন না করে?’
___
কলিং বেল বাজার শব্দ আসতেই মুখে গোল পাউরুটি সাথে দু’হাতের একহাতে জ্যামের বোওম আর অন্যহাতে টিভির রিমোট নিয়ে এগিয়ে গেল অয়ন দরজার সামনে। কিন্তু কিভাবে দরজা খুলবে তাই বুঝচ্ছে না। আসলে টিভি দেখতে ছিল অয়ন হঠাৎই জ্যাম আর পাউরুটি খেতে মন চাইলো তাঁর তাই রান্না ঘরের উদ্দেশ্য গিয়েছিল সে। রিমোটও ছিল হাতে আর আসার পথেই কলিংবেল বাজা তাই এভাবেই আসা। অয়ন আসতে আসতে আরো দু-তিনবার কলিংবেল বাজানো হয়ে গেছে দরজার ওপাশে থাকা ব্যক্তিটির। কলিংবেল বাজানোর স্টাইল দেখেই অয়ন বুঝেছে টানা চারদিন পর তাঁর গুনোধর বড় ভাই খুলনা থেকে এসেছে। অয়ন মুখে পাউরুটি নিয়েই দরজা খুললো। দরজা খুলতেই ভয়ানক রাগ নিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ এতক্ষণ সময় লাগে দরজা খুলতে,
প্রতি উওরে মুখে গোল পাউরুটি রেখেই বললো অয়ন,
‘ আ…ত..তি..তি…ত,,
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ কুঁচকে অয়নের অবস্থা দেখে বললো অপূর্ব,
‘ কি বললি?’
অয়ন আবারও কিছু বললো কিন্তু পাউরুটির চক্করে সবই অগোছালো শোনালো। অপূর্বের রাগ উঠছে হুট করেই অয়নের মুখ থেকে পাউরুটিটা টেনে বের করে বললো,
‘ এবার বল,
অয়ন জোরে শ্বাস টানলো তারপর বললো,
‘ বলছি আইছে আমার গুনোধর বড় ভাই তোর জন্য দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম নাকি যে দেরি হবে না।’
অয়নের কথা শুনে অপূর্ব কঠিন গলায় অয়নকে কিছু বলার জন্য ঠোঁট চালাতে নিয়েও থেমে গেল। তারপর শান্ত গলায় বললো,
‘ আমার হাতের চর খাস না চারদিন হলো তাই হয়তো চরের টেস্টটা নিতে চাইছিস আবার।’
‘ মার না চর এখন বাবা বাড়ি,
‘ তো তোর বাবাকে ভয় পাই নাকি।’
‘ ভাই তুই কিন্তু আবার ত্যাড়া কথা বলছিস।’
খানিকটা বিরক্তিতা নিয়ে বললো অপূর্ব,
‘ অয়ন মাথা এমনিতেও গরম আছে আর গরম করিস না। সর তো সামনে থেকে হাঁদারাম একটা।’
‘ ভাই, তুই আমায় হাঁদারাম বললি,
‘ হুম বললাম এখন ধর তোর পাউরুটি আমি তোর বাবার বউকে দেখে আসি।’
বলেই হাতের পাউরুটিটা অয়নের হাতে দিয়ে চললো অপূর্ব। অপূর্বের যাওয়া পানে তাকিয়ে থেকে বললো অয়ন,
‘ ভাই, আমার বাবার বউ থুড়ি মায়ের কাছে যাবি এটা তো সহজভাবেও বলা যায়। তুই সবসময় এমন ঠোঁট কাটা কেন, আমি আজও বুঝলাম না তুই সহজ কথাগুলোও এমন ত্যাড়া করে বলিস কেন।’
অয়নের কথা অপূর্ব শুনলো ঠিকই তবে জবাব দিলো না তাঁর মতো সে এগিয়ে চললো তাঁর বাবার বউ থুড়ি তাঁর মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে।’
আর অয়ন জোরে নিশ্বাস ফেলে দরজা আঁটকে চললো টিভির সামনে। ভাইয়ের সাথে কথা বলতে বলতে সে তাঁর টিভির কথাই ভুলে গিয়েছিল। থ্রিলার মুভির কাহিনী অর্ধেক শেষ হয়তো।’
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here