কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:৬০

3
381

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:৬০
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন

আত্মহ/ত্যা মহাপাপ। প্রাকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষ নিজ ইচ্ছায় প্রা/ণ দিয়ে নিজের পথির্ব কষ্ট ভুলতে আত্মহ/ত্যা করে কিন্তু আসলেই কি তা পারে? কখনও পারেনা। মানুষের শরীরের মৃ/ত্যু হলেও আত্মার মৃ/ত্যু হয়না। সাময়িক কষ্ট ভুলতে গিয়ে মানুষ অসীম দুঃখের সমুদ্রে নোঙর ফেলে বুঝতেও পারেনা। ক/বরের শাস্তির কাছে পথির্ব কষ্ট কিছুই না। ঢুলুঢুলু চোখে কথাগুলো ভাবছিলো পাথর। আবছা আলোতে ডাইনিং রুমের মাঝখানে চন্দ্রের নৃত্য দেখতে দেখতে ও বিরক্ত হয়ে গেছে। গত তিন ঘন্টা ধরে চলছে অবিরামভাবে এই উদ্দাম নৃত্য। পাথরের কাছে যেটা জঘন্য লেগেছে তবুও চোখেমুখে তৃপ্তিকর হাসি ফুটিয়ে রাখতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে শাস্তিতে আছে। এই চন্দ্র আত্মহ/ত্যা করে যতটা না কষ্ট পেয়েছে তার চাইতে ও অধিক কষ্টে আছে। নাচানাচি করে মানুষ কিসের এতো আনন্দ পাই ওর জানা নেই। হুদাই দাপাদাপি ছাড়া কিছুই না। পাথর মনে মনে কহিনুরকে স্মরণ করছে। বউ থাকলে এই চন্দ্র বুঝতো এভাবে দাপাদাপি করার মজা। পাথর বিড়বিড় করতে করতে আনমনেই কপালে হাত রাখলো। ভ্রু কুচকে গেলো কপালে ভাজ পড়েছে। ভেতরে থাকা পশু সত্তা হঠাৎ বেরিয়ে আসার আগাম জানান দিচ্ছে। এখন শুধু একটু মেজাজ হারানো বাকি তাহলেই ষোলো কলা পূর্ণ হবে। পাথরের ধ্যান ভাঙলো হঠাৎ নৃত্য থামানো দেখে। চন্দ্রের পরণে আজ সবুজ শাড়ি নেই। টকটকে গোলামি রঙের সিঙ্কের শাড়ি। কোমর অবধি খোলা চুলগুলো শরীরের সঙ্গে ঢেউ খেলে চলেছে। কিছু চুল মুখের উপরে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে। গায়ে ভারি গহনা। এক পায়ে সোনালী নুপুর অন্যপায়ে ঘুঙুর। মহিলার রাঙা ওষ্ঠের হাসিতে যেকোনো পুরুষের হৃদয় ঘায়েল হবে নিশ্চিত। বোঝাই যাচ্ছে আগেকার দিনের গণিকারা এমনিই ছিলো। কথায় বলে জাতের মেয়ে কালোও ভালো। সামান্য একজন গণিকা হয়ে জমিদারের স্ত্রী হওয়া সোজা ছিল না। জমিদারেরা যতই রূপের কাঙ্গাল হোক না কেনো কেউ ভুল করেও কোনো গণিকাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে না। চন্দ্র সব জেনে বুঝেই কালো জাদুর সাহায্যে জমিদারকে ফাঁসিয়ে সুলতান পরিবারের বউ হয়েছিলো। একজনের পাপের ফল প্রজন্ম ধরে চলে আসছে। কতকাল চলবে তারও ঠিক নেই। নীরবতা ভেঙে চন্দ্র পাথরের সামনে তালি বাজিয়ে মৃদু কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,

> জমিদার মশাই কেমন লাগলো চন্দ্রের নৃত্য? জানি আমি চমৎকার নৃত্য করি তবুও আপনার থেকে শুনতে আমার ভীষণ ভালোলাগে। চন্দ্রের হৃদয় মন জুড়ে শুধু আপনার নাম জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আপনার ভালোবাসা ধাবিত হতে থাকে।

চন্দ্র কথাগুলো বলে চমৎকার হাসলো। বিনিময়ে পাথরও হাসলো। মনে মনে একগাল গালি দিলো চন্দ্রের নামে। নৃত্য দেখিয়ে অত্যাচার করেছে বলে। তবুও কিছু বলা উচিত ভেবে ও উত্তর দিলো,

> তুমি মেয়েটাই রহস্যময় আর চমৎকার। তোমার প্রেমে আমি অজস্রবার পড়েছি আর পড়বো। হৃদয় নদীর বাকে তোমাকে দেখেই থামবো। কেনো থামালে তোমার অসাধারন নৃত্যকলা? চলতে থাক অবিরামভাবে, ঘড়ির কাটা থমকে যাক ধরণী নিপাত যাক তবুও চলুক তোমার নৃত্য। আমি নেত্রজুগল স্বার্থক করি। একরাশ মুগ্ধতা আমাকে গ্রাস করে নিক। আমি উন্মাদগ্রস্ত হয়ে নেত্রপল্লব গুচ্ছের ক্ষুধা নিবারণ করি। অনন্ত অসীম এই প্রেম মৃ/ত্যুর পরেও চলতে থাকবে। শেষ হবে না। হতেও দিবো না যতক্ষণ অবধি আমার হৃদয় অক্ষত থাকবে।
চন্দ্র তন্ময় হয়ে শুনলো সবটা। লোকটাকে ভালোবাসে কোনো ভুল করেনি ভেবে তৃপ্তি পাচ্ছে। জীবন মৃ/ত্যুর মাঝামাঝিতে অবস্থান করছে, অভিশপ্ত হয়েছে তবুও কোনো আক্ষেপ নেই। পৃথিবীর নিয়ম ভেঙে এভাবেই যুগযুগ ধরে পৃথিবীতে নিজের রূপের উষ্ণতা ছড়িয়ে প্রেমিকের হৃদয় জয় করতে চন্দ্র সদা প্রস্তুত। চন্দ্রকে ভাবতে দেখে পাথর ভ্রু কুচকে বিড়বিড় করলো,বেশি বলে ফলেছি নাকি? পাথর এটা নূর জানলে তোকে আস্ত রাখবে না। কোথায় কোন পেত্নির জন্য একগাদা মিথ্যা বলে দিলি এই তোর সাহস? বউ ছেড়ে শেষমেশ পেত্নি আহা কি কপাল “পাথরকে আনমনা দেখে চন্দ্র আবারও শব্দ করে তালি দিলো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,

> প্রিয় এই ঘোর আমাবস্যার রাতে উষ্ণ রক্তিম তরলে আপনার নিজ হস্তে আমি গোসল দিতে চাই। আপনি ছাড়া কে করবে বলুন? সব আয়োজন শেষ, দেরি করবেননা চলুন আমার সঙ্গে।

চন্দ্রের কথা শুনে পাথরের মাথায় বজ্রপাতের ন্যায় বাড়ি পড়লো। বলে কি এই চন্দ্র? ওকে গোসল করাতে হবে কি ভয়ঙ্কর কথাবার্তা। অবস্থা বেগতিক দেখলে পাথর পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। এখানে আসার কারণ ছিল চন্দ্রের রহস্য উৎঘাটন করা সেটাইতো হলো না। পাথর কথাগুলো ভেবে চন্দ্রের পিছু পিছু হেটে চললো। চন্দ্র বেশ খুশী সেটা ওর চলনে বলনে প্রকাশ পাচ্ছে। কি হবে এরপর?
*************
গহীন অরণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য। ওর থেকে খানিকটা দূরে রহস্যময় হাসি নিয়ে গাছের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে চুলে গোছা হাতের সঙ্গে পেচিয়ে গুন গুন করে মৃদু শব্দে গান গাইছে চন্দ্র। ঐশ্বর্যের চোখেমুখে বিস্ময় খেলা করছে। এসেছিলো বৃদ্ধ দাদুকে খুঁজতে কিন্তু তার বদলে চন্দ্রকে দেখে অবাক হয়েছে। এর আগে একবার এই মহিলার সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিলো আজ দ্বিতীয়বারের মতো দেখা হলো। চন্দ্রের শরীর ভর্তি গহনা আবছা আলোতে তা ঝিকমক করছে। চুড়ি থেকে ছমছম করে আওয়াজ তুলে বনময় ঝঙ্কার তুলছে। ঐশ্বর্য বিড়বিড় করলো,ভয়ঙ্কর সুন্দর এই চন্দ্র তার চাইতে ভয়ঙ্কর এর কাজকর্ম। কিন্তু ও এখানে কি করছে? আজ কি উৎসব হবে না? ঐশ্বর্যকে চমকে দিতে চন্দ্র মুখ খুললো। চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,
> আমাকে দেখতে কেমন?
ঐশ্বর্য ভ্রু কুচকে ফেলল। ভদ্রমহিলা নিজের প্রংশসা শুনতে চাইছে ভেবে দাঁত বের করে উত্তর দিলো,
> দারুণ আপনার সৌন্দর্য আর আপনার অলংকার। আপনার গায়ের অলঙ্কারের বর্তমান বাজার মূল্য কতো হবে?
ঐশ্বর্যের কথা শুনে চন্দ্র বিস্তৃত হাসলো। মজা পাচ্ছে বেশ। ঐশ্বর্যের থেকে এমন উত্তর পাবে এটা আগে থেকেই ওর জানা ছিল। তাই বলল,
> এ আর এমনকি। আমার নিকট অজস্র কোটি টাকার ঐশ্বর্য আছে। আমি বড্ড ভালোবাসি অলঙ্কার পরতে। জমিদার মশাই আমাকে এভাবে দেখতেই পছন্দ করে। তুমি সাজবে আমার মতো করে?
ঐশ্বর্য কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,
> না আমি শাড়ি পরিনা। কেমন অস্বস্তিকর বিষয়। তবে অলঙ্কার আমার বেশ পছন্দ। আপনি কি আমাকে আপনার অলঙ্কার দিবেন?

> নিশ্চয়ই দিবো। কিন্তু চন্দ্র যে এমনি এমনি কাউকে কিছু দেয়না। আমার থেকে কিছু নিতে হলে বিনিময় করতে হবে। তুমি কি রাজি বিনিময় করতে? তবে এসো আমার সঙ্গে।
চন্দ্র সামনের দিকে এগিয়ে চললো। ঐশ্বর্য দৌড়ে গিয়ে চন্দ্রের পিছু নিলো। এমন সুযোগ বারবার আসবে না তাই হাতছাড়া করার কোনো মানে নেই। কিছুদূরে গিয়ে ঐশ্বর্য ক্লান্ত হয়ে গেলো। নিজের শক্তি কাজে লাগাবে ভাবলো তার আগেই চন্দ্র থেমে গেলো। ঐশ্বর্য থমকে গিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> আর পারছি না। এই রাস্তায় কিছু একটা আছে যেটা আমাকে ক্লান্ত করতে দিচ্ছে। আমার শক্তির প্রয়োজন।
চন্দ্র ওর কথাশুনে হাসলো। হাত বাড়িয়ে কিছু একটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর সামনে তুলে ধরলো। ইশারা করে বলল,
> এটা গ্রহণ করো সব ক্লান্তি চলে যাবে। তোমার প্রতি পদচারনাতে এই অরণ্যের বৃক্ষরাজি তোমার শক্তি শুষে নিতে থাকবে। তুমি ক্লান্ত হয়ে মা/রাও যেতে পারো। তাই অপেক্ষা করোনা অলঙ্কার নিতে চাইলে দ্রুত গ্রহণ করো। উৎসব শুরু হয়ে গেছে আমাদের যেতে হবে।
চন্দ্র বেশ সিরিয়াস সেটা ওর কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। ঐশ্বর্য না করলো না। গ্রহণ করলো সেই ঔষধি। ভেতর থেকে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে তবুও পাত্তা দিলো না। লোভ ওকে অন্ধ করে দিয়েছে। চন্দ্রের ওষ্ঠে বাঁকা হাসি ফুঠে উঠলো যেটা ওর দৃষ্টির অগোচরেই থেকে গেলো। ওরা আবারও চলতে শুরু করলো। কিছুটা দূরে এসে ওরা একটা পুরাতন প্রাসাদ দেখতে পেলো। ঐশ্বর্য ঘুরে ঘুরে সেটা দেখলো কিন্তু হঠাৎ সামনে তাঁকিয়ে হতভম্ভ হলো কারণ সেখানে চন্দ্র নেই। মেয়েটা কোথায় গেলো? ভাবলো ভেতরে চলে গেছে হয়তো। পেত্মীদের এই একটা সুবিধা। শরীর নেই যেখানে খুশী চলে যায় কোনো ঝামেলা হয়না। কথাটা ভেবে ও প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করলো। বিশাল বাগান পেরিয়ে দোতালা বিল্ডিংটা বেশ পুরাতন। আশেপাশে কাউকে নজরে আসছে না। ঐশ্বর্য দ্রুতগামী হেটে মূল দরজায় গিয়ে হাত রাখলো। ভেতরে কি আছে কে জানে।অজানা আতঙ্কে শরীর মৃদু কাঁপছে। ওর হাতের ছোঁয়া লাগার আগেই দরজা শব্দ করে খুঁলে গেলো। ঐশ্বর্য একপা দুপা করে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো সিঁড়ির মাঝামাঝিতে চন্দ্র দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে ঘুরে আছে বিধায় ওর মুখটা দেখা যাচ্ছে না। চন্দ্রকে দেখে ওর রাগ হলো। ভদ্রমহিলা ওকে না নিয়ে চলে এসেছে। ভাবতেই ও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলোনা। কঠিন স্বরে বলল,
> প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে মিথ্যা বলেছেন? আপনি কি ভেবেছেন আমি বোকা কিছুই বুঝতে পারবো না? আপনি ভুলে যাবেন না ঐশ্বর্য কোনো সাধারণ মেয়ে না। অর্ধমানবী আমি।

ঐশ্বর্যের বলতে দেরি হলো কিন্তু উপর থেকে অলঙ্কারের বর্ষণ হতে দেরি হলো না।চন্দ্র নিজের গায়ের গহনা খুলে ছুড়ে দিচ্ছে উপর থেকে। ঐশ্বর্য কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। চোখ গোলগোল হয়ে গেলো। ওর সামনে কোথায় চন্দ্র? সেখানে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। ঠিক চন্দ্রের মতো নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে কিন্তু কেনো? কিসের লাভ এতে? ঐশ্বর্য ঢোক গিলে প্রশ্ন করতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কহিনুর ঝঙ্কার তুলে বলে উঠলো,
> এতোই যখন ক্ষমতা তখন কহিনুরের খোলসের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখো কেনো? এক মূহুর্তে তোমার ক্ষমতার দম্ভ আমি চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারি।শুধুমাত্র আমার বাবার ভালোবাসা জন্য আমি তোমাকে ছাড় দিয়েছি কিন্তু আর না। যেই লোকটা তোমাকে ছোট থেকে বড় করলো এতো ভালোবাসা দিলো আর তুমি সেই মানুষটাকেও ছাড়লে না? অকৃতজ্ঞ বেইমান। আর অলঙ্কার নিয়ে ভেবোনা,তোমার মতো ভিক্ষুকদের আমরা অহরহ ভিক্ষা দিয়ে থাকি। তবে আফসোস শরীর না থাকলে গহনা দিয়ে কি করবে?

কহিনুরের কথাশুনে ঐশ্বর্য ভড়কে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো। এগিয়ে এসে উত্তর দিলো,
> যা করেছি বেশ করছি আবারও করবো। নিজেকে কি ভাবো তুমি? আমার বাবাকে তুমি হ/ত্যা করেছো আমি সব জানি। কঠিন প্রতিশোধ নিবো আমি।
> ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই নিবে কে আটকাবে তোমাকে? তবে আঁধারের সঙ্গে যেটা করছো আপাতত সেটা আর হচ্ছে না। তুমি নিজের রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা হারিয়েছো। গেম পূরণ করবে কিভাবে এখন?
কহিনুরের কথা শুনে ঐশ্বর্য থমকে গেলো। কিছুক্ষণ আগে যেটা খেয়েছে সেটা সাধারণ কোনো ঔষধি ছিল না তবেকি ওটার জন্যই কহিনুর এমন বলছে? ওর মাথায় কাজ করছে না। নিজের বোকামির জন্য নিজেকে গালি দিতে মন চাইলো। রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

> তুমি আমার সঙ্গে ছলনা করেছো ছাড়বো না তোমাকে আমি। এখুনি খু/ন করবো তোমাকে।

ঐশ্বর্য চোখ বন্ধ করে ভেতরের পশু সত্তাকে ডেকে নিলো। কহিনুর দেখলো ওর পরিবর্তনটাকে তবে ভয় পাচ্ছে না। ওষ্ঠে হাসি রেখে হাতের খঞ্জ/রটা ছুড়ে দিলো ঐশ্বর্যের দিকে। সেটা সোজা গিয়ে ঐশ্বর্যের বাম গালে লম্বা করে আচড় দিয়ে পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেলো। ফিনকি দিয়ে র/ক্ত চারদিকে ছড়িয়ে গেলো। ঐশ্বর্য মুখে হাত রেখে ফ্লরে বসে পড়লো। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ও ছটফট করতে করতে কহিনুরের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। কহিনুর শব্দ করে হেসে উঠে বলল,
> পারলে এই ক্ষতস্থানটা ঠিক করে দেখাও। খুব না তোমার রূপের বড়াই? মিররে যতবার নিজেকে দেখবে আমার কথা মনে পরবে। আপাতত আমার কাজ শেষ এখন যেতে হবে। তোমাকে প্রাণে না বলে মে/রে দিয়েছি। বাকীটা পরে দেখবো।

কহিনুর অপেক্ষা করলোনা। তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলো। পাথরের কাছে যাওয়াটা অতি জরুরি। লোকটা বিপদে আছে। ঐশ্বর্যের রূপ পরিবর্তনের ক্ষমতা কেড়ে না নিলে মেয়েটা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।সেই সঙ্গে আরও একটা ক্ষমতা ওর চলে গেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এখন পাথরের দেখা পাওয়ার অপেক্ষা।
************
আমি চন্দ্রিমা,ভালোবেসে আম্মা আমাকে চন্দ্র বলে ডাকতেন। আমার জন্ম হয়েছিল এক নামকরা গণিকার ঘরে। যেখানে সমাজের উঁচুঘরের পুরুষেরা অনায়াসে যাতায়াত করতে পারত । আমার পিতৃপুরুষের পরিচয় আমার মায়েও অজানা ছিল। ছোট থেকে আম্মা আমাকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেন। আম্মাকে নিয়ে আমার ছোট্ট পৃথিবী। ভীষণ ভালোবাসতাম উনাকে। আম্মা চেয়েছিলেন আমি যেনো উনার মতো না হই। তাই নিজের অনৈতিক কাজকর্ম সর্বদা আমার থেকে লুকিয়ে যেতেন। কিন্তু মানুষ যা চাই তা সব সময় পাইনা। বড় হতে না হতেই মানুষের খারাপ দৃষ্টি পড়লো আমার উপরে। আম্মা দুর্বল মানুষ পারলেন না আমাকে রক্ষা করতে। ফলাফল হিসেবে আমাকে বাধ্য হয়ে গণিকাদের ভিড়ে নাম লেখাতে হলো। আম্মা মানতে পারলেন না। আত্মহ/ত্যা করে বসলেন। আমার মুখে হাত রেখে বললেন,
> মারে খুব স্বাদ ছিল তোর সংসার দেখবো কিন্তু পূরণ হলো না। পারলাম না তোকে এই পাপের দুনিয়া থেকে রক্ষা করতে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।
সেটাই ছিল মায়ের শেষ কথা। আমার দুনিয়া আমার হাতের তালুতে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল কিছুই করতে পারলাম না। কষ্টে আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হলো। মায়ের চাওয়া পূরণ করার প্রতিজ্ঞা করলাম। কিন্তু তখন আমি নিরুপায় ছিলাম। সামান্য একজন গণিকাকে কে বিয়ে করবে? করবে না কেউ। তাছাড়া মাথার উপরে আমার কোনো ছায়া ছিল না। আগে নিজেকে গুছিয়ে নিতে হবে তারজন্য সময় দরকার ছিল। আমি সময় নিলাম। নাচ গানে আসর জমিয়ে প্রচুর অর্থ সঞ্চয় করলাম কিন্তু আম্মার কথাটা ভুলে যায়নি। ঘটনাক্রমে হঠাৎ এক প্রভাতে ভ্রমণের ক্ষণে সুলতান ফারাবি ফারুকীর সঙ্গে আমার দেখা। জানিনা কিসের তাড়া ছিল তার। লাঠিয়াল নিয়ে ছুটে চলেছে কোন এক গঞ্জে। ওকে দেখে আমার দৃষ্টি কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো। মস্তিষ্ক শূন্য হলো। অনাকাঙ্খিত সেই মূহুর্তটাকে ভুলতে পারলাম না। কিভাবে হাছিল করবো এই যুবকের হৃদয় বারবার শুধু সেটাই ভেবে চলেছি। আমার ঘৃহে এক জমিদারের নায়েব নিয়মিত আসা যাওয়া করতো। সেই আমাকে বুদ্ধি দিলো সামান্য একটুখানি তপস্যার ফলে আমি পেতে পারি ওই সুদর্শন যুবকের হৃদয়। আমি লোভী হয়ে উঠলাম। তবে তাই হোক। করবো আমি সেই কঠিন তপস্যা। শুরু হলো আমার কালো জাদুর চর্চা।
চন্দ্র এতটুকু বলে থামলো। ওর সামনে পাথর দাঁড়িয়ে আছে। কিছুটা দূরে মাথা নিচু করে বসে আছে এক যুবতী। খোলা কফিনে চন্দ্রের লা/শ অনাবৃত রাখা হয়েছে। পাথর চোখ বন্ধ করে মৃদু কণ্ঠে বলল,
> থামলে কেনো বলো?
চন্দ্র সামান্য হাসলো। আঙুল দিয়ে সামনে ইশারা করলো। পাথর সেদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে চমকে উঠলো।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

3 COMMENTS

  1. Novel ta valo hosse kisu kisu jaygay chondo bihin mone hoyese. Tobe character gulur Naam gormil koray onek birokto legeche bishesh kore pathor r adhar chorittro ta next part e ektu kheyal rakhben please. Ovaroll Novel er theme ta very interesting

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here