#শহর_জুড়ে_সন্ধ্যা_নামুক
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
১৭ (বর্ধিতাংশ)
নাহিনের বাম পায়ের ওপর আঘাত লাগার কারণে হাড় ফেটে গেছে। যাকে সাধারণত ফ্যাকচার বলা হয়। ডান গাল অনেকটা কেটে গেছে। সাতটার মতো সেলাই লেগেছে। আজকে দুইদিন হয়েছে নাহিনকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই দুইদিন নাহিনের সমস্ত খেয়াল রেখেছে শ্রেয়সী। নাহিনকে খাইয়ে দেওয়া। খাওয়ার পর ঔষধ খাওয়ানো। শরীর মুছিয়ে দেওয়া। সমস্ত করেছে নিজের কাটা হাত নিয়ে। অন্য কাউকে নাহিনের একটা কাজও করতে দেয়নি।
সকাল নয়টা বাজে। শ্রেয়সী নাহিনকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে দিয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। নাহিনের ফোনটা নাহিনের দিকে এগিয়ে দেয়।
ফোন দিচ্ছিস কেনো?
প্রিয়ন্তি কল করছে।
প্রিয়ন্তি নামটা শুনেই নাহিন চমকে ওঠে। অপ্রস্তুত হয়ে শ্রেয়সীর দিকে তাকায়। কিন্তু শ্রেয়সী নাহিনের আশানুরূপ রিয়েক্ট করে না। কোনো রকম রিয়েক্টই করে না।
শ্রেয়সী? কোথায় যাচ্ছিস?
ভার্সিটি যাচ্ছি।
তুই তো অসুস্থ। এখনি ভার্সিটি যাওয়া কী খুব বেশি দরকার? দুদিন পর থেকে যা।
শ্রেয়সী নাহিনের কথার কোনো জবাব দেয় না। বরং নাহিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিয়ৎক্ষণ পরেই নাহিন শ্রেয়সীর গলার আওয়াজ শুনতে পায়।
আম্মু আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।
_______________
একটা কফি শপে বসে আছে অনুপম আর শ্রেয়সী। অনুপম শ্রেয়সীর কাটা হাতটা উল্টে পাল্টে দেখে জিঙ্গেস করে,
মেডিসিন নিয়েছো?
শ্রেয়সী আনমনা হয়ে জবাব দেয়, হু।
টেবিলের ওপর রাখা শ্রেয়সীর হাতটা আলতো করে ধরে অনুপম। শ্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে জিঙ্গেস করে।
আপসেট?
আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।
কী?
শ্রেয়সী মাথা নিচু করে বলে,
আপনি ঐদিন ছাদে শুনেছিলেন না জেঠু আমার বিয়ের কথা বলেছিলেন। ঐদিন আমি জেঠুকে বলেছিলাম আমি একজনকে পছন্দ করি। জেঠু মেনে নেয়। জেঠু বলেছিলেন আমি যাকে পছন্দ করি তার সাথেই আমার বিয়ে হবে। কিন্তু পরে আপনার ওপর রাগ করে বলেছিলাম আমি জেঠুর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি। আমার কোনো পছন্দ নেই। তখন বিয়ে করতে ইচ্ছে হচ্ছিল না বলে বলেছিলাম আমার একজন পছন্দের মানুষ আছে। জেঠু গতকাল বলেছে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ে দিয়ে দিতে চায়। এখন আমি কী করবো?
অনুপম মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে,
কী করবে আবার? নাচতে নাচতে ঐ প্রফেসারকে বিয়ে করো। তোমার তো আবার ঐ প্রফেসারকে চুমু খাওয়ার খুব সখ। সেই চুমুর সাক্ষী হিসেবে তো আবার আমাকেও রাখতে চাও। তোমার সখ খুব তাড়াতাড়ি মেটানোর ব্যবস্থা করছেন তোমার জেঠু। এখানে বসে না থেকে বাসায় যাও। বিয়ের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করো।
রাগ করবেন না প্লিজ। আমার কথাটা শুনুন একবার।
অনুপম শ্রেয়সীর কোনো কথা না শুনে বিল দিয়ে কফি শপ থেকে বেরিয়ে যায়। শ্রেয়সী টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ভাবতে শুরু করে কী করবে? তার পক্ষে সম্ভব না প্রফেসারকে বিয়ে করা। সে হেলাল সরকারকেও বলতে পারবে না যে সে ঐ প্রফেসারকে বিয়ে করবে না। হেলাল সরকারের কথা শুনে সে বুঝতে পেরেছে কথা-বার্তা বহুদূর এগিয়ে গেছে। এখন পিছিয়ে আসা সম্ভব না। হেলাল সরকার শ্রেয়সী কথা শুনে এখন বিয়ে ভাঙতে রাজি হলে ঐ পরিবারের সামনে হেলাল সরকারের মাথা নিচু হয়ে যাবে।
শ্রেয়সীকে অতিরিক্ত ভালোবাসে। সেই অতিরিক্ত ভালোবাসার সুযোগ সে এভাবে নিতে পারবে না।
শ্রেয়সী আর কফি শপে বসে না থাকে হলে চলে আসে। হলে ফিরেই বিছানায় শুয়ে পড়ে। মাথার ওপর ফ্যানটা তার নিজস্ব গতিতে ঘুরছে। সেই ঘূর্ণায়মান ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজস্ব ভাবনাতে ব্যস্ত শ্রেয়সী। টেবিলের ফোনটা একাধারে বেজে চলছে। কিন্তু ফোনের রিংটোন শ্রেয়সীর কর্ণগোচর হয় না। শ্রেয়সী ঘন্টা খানিক শুয়ে থাকে। বিছানা থেকে উঠতে গেলেই ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে কাঠের চেয়ারটা শক্ত করে ধরে। শ্রেয়সী অনুভব করছে মাথা কেমন ঝিমঝিম লাগছে। শরীরটাও খানিকটা দূর্বল লাগছে।
শ্রেয়সী আস্তে ধীরে হেঁটে ওয়াশরুমে যায়। বেশ সময় নিয়ে গোসল করে। ওয়াশরুম থেকে বের হয় ফোনটা চার্জ দেয়। কিন্তু ফোন আর চেক করে না। বারান্দায় টাওয়ালটা মেলে দিতে গেলে আবার মাথা ঘুরে ওঠে শ্রেয়সীর। বারান্দার রেলিংটা শক্ত করে খামছে ধরে। এখন দুপুর একটা বাজে। কিন্তু এখন পর্যন্ত শ্রেয়সী পেটে এক মগ কফি ছাড়া আর কিছু পড়েনি। শ্রেয়সীর অনেক পানি পিপাসা পাচ্ছে। কিন্তু বারান্দা থেকে রুমে যাওয়ার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না। নিস্তব্ধ পরিবেশে খট করে দরজা খোলার আওয়াজটা শ্রেয়সীর কানে বিশ্রী রকম ঠেকে। শ্রেয়সী বুঝতে পারে নিতু আর প্রিয়ন্তি এসেছে। নিতু শ্রেয়সীকে দেখেই দৌড়ে এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। শ্রেয়সী খুব কষ্ট করে নিজের ভারসাম্য বজায় রাখে। নিতু শ্রেয়সীর গালে চুমু দিয়ে বলে,
তোকে এই কয়দিন কতোটা মিস করেছি তুই আন্দাজও করতে পারবি না। বিশ্বাস হচ্ছে না? তুই আমার বুকে মাথা রেখে দেখ। আমার প্রতিটা হার্টবিট শুধু তোর নাম নিচ্ছে। চুপ করে আছিস কেনো? কথা না বলার ব্রত করেছিস নাকি?
শ্রেয়সীর শরীর ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে আসছে। চোখের সামনে সব ঘোলা দেখছে। নিতু শ্রেয়সীকে ছেড়ে দেয়। প্রিয়ন্তি মৃদু স্বরে ডাকে,
শ্রেয়সী?
শ্রেয়সী সামেনর দিকে ঝুঁকে পড়ে যেতে নিলেই নিতু ধরে ফেল। নিতু আর প্রিয়ন্তি উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে,
এই শ্রেয়সী তোর কী হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?
শ্রেয়সী কিছু বলার আগেই শ্রেয়সীর চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায়। জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলেই নিতু আর প্রিয়ন্তি ধরে ফেলে। ক্রমশ শ্রেয়সীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
চলবে…….