গোধূলি লগ্নে সেই তুমি – পর্ব 21

0
498

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_একুশ
একটা ছু”ড়ি আচমকা কাকনের হাতে বসিয়ে দিতেই কাকন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। ফারদিনের চোখের ইশারায় গার্ড’দের মধ্যে একজন আঘাতের স্থানে মরিচের গুড়ো ঢেলে দিয়ে ওর মুখে আবারো টেপ লাগিয়ে দিলো। এতে যেনো যন্ত্রনা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কাকন যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু চিৎকার করতে পারছেনা। চোখ গুলো দিয়ে বাঁচার জন আতৎনাদ করছে। কিন্তু সেই আতৎনাদ কেউ শুনতে পারছে না। তখন ফাইজার সাথে কথা শেষ হতেই ফারদিন ওদের দুজনের সামনে এসে বসে প্রথমে কাকনের মুখ খুলতেই কাকন রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠেছিলো…..
—সেদিন রাতে তোর মায়ের সাথে তোকে শেষ করে দিলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না আমাকে……
কথা বলে আর বলার সুযোগ পায়’নি তৎক্ষনাৎ ফারদিন সামনে থাকা ছু’ড়ি’টা কাকনের হাতে বসিয়ে দেয়। রেজওয়ান ভয়ার্ত চোখে সব’টা দেখছে আর ঢোক গিলছে। ফারদিনের এই রুপ’টা দেখে ফাইজা ভয়াবহ চাহনী নিক্ষেপ করে আছে। ফারদিন কাকনের বদ্ধ ছটফটানি দেখে হালকা হেসে বলে উঠলো……
–সেদিন আমার মা এর থেকেও বেশি ছটফট করছিলো। আপনার ছোট হয়েও আপনার পায়ে ধরেছিলো। আপনি সেদিন আমার মায়ের সংসার ভিক্ষা না দিয়ে আমার মা’কেই মে’রে ফেললেন…..
বলেই দুই হাতে দুটো ছু/ড়ি নিয়ে কাকনের দুই পায়ে গেঁথে দিয়ে বলে উঠলো…..
–এই পা দুটো দিয়ে আপনি আমার মা’কে আ’ঘাতের পর আ’ঘাত করেছিলেন…..
বলেই একটু শব্দ করে হাসলো। আর কাকন চোখ দিয়ে বাঁচার মিনতি করছে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। পা আর হাত দিয়ে গলগল করে র’ক্ত বের হচ্ছে। রেজওয়ানের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ওর চোখে ভয় ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে। এইবার ফারদিন রেজওয়ানের দিকে তাঁকিয়ে মলিন হেসে বলে উঠলো….
–আপনার মুখ আমি খুলব না। আপনার বাঁচার আকুতি-মিনতি আমি শুনতে চাইনা। যতই হোক আপনি আমার বাবা আমার শরীরে আপনার রক্ত বইছে। তাই চাইলেও আপনাকে ভয়ংকর’ মৃ/ত্যু দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি তো আর আপনার মতো নির্দয় হার্টলেস নই……….
বলেই সময়ের অপেক্ষা না করে গান’টা নিয়ে সোজা রেজওয়ানের কপালে সু’ট করে দিতেই। রেজওয়ান বাঁধা অবস্থায় চেয়ার নিয়ে ধপ করে নিচে পড়ে গেলো। চোখ দুটো খোলা রেখেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে সে শান্ত হয়ে গেলো। রেজওয়ানের দিকে কয়েক সেকেন্ড অসহায় চোখে তাঁকিয়ে থাকলো ফারদিন। ওর চোখ থেকে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। যতই হোক এই লোক’টা তো ওর বাবা। আর বাবা’কে নিজের হাতে মা/রার মতো তীব্র যন্ত্রনা ভোগ করতে হচ্ছে। ফারদিন নিঃশব্দে চোখ জোড়া বন্ধ রেখে কাতর স্বরে বললো…..
–আমাকে ক্ষমা করো মা। এই পাষাণ, নির্দয় লোক’টাকে আমি নির্মম মৃ’ত্যু দিতে পারি’নি। যেই লোক’টা তোমাকে হাজার যন্ত্রনা দিয়েছে আমি তাকে খুব অল্প যন্ত্রনা দিলাম। আমাকে ক্ষমা করো……
বলেই মুখ’টা দুই হাতে চেপে ধরলো। ফারদিনের কষ্ট’টা বুঝে উঠতে’ই ফাইজা মুখ চেপে ধরলো। কান্না গুলো বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে আসতে চাইলো। ফাইজার কাকনের দিকে তাঁকাতেই ভয়ে হাত পা কাপছে। মুখে যদি টেপ লাগানো না থাকতো তাহলে কাকনের আতৎনাদের হয়তো পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠতো৷ ফাইজা দেয়াল ঘেষে দাড়িয়ে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। আর ফারদিন মাথা নিঁচু করে চোখের পানি ফেলছে। ওর কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। তীব্র যন্ত্রনা হচ্ছে। বুকের ভেতরের জমানো কষ্ট গুলো আজ ভীষন করে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। এই দম বন্ধকর পপরিস্থিতি থেকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছে বার বার। নিজেকে সামলে চোখের পানি গুলো মুছে নিয়ে কাকনের দিকে তাঁকালো। কাকন চোখের ইশারায় ফারদিন’কে বাঁচার আবেদন জানাচ্ছে। ফারদিন তা দেখে একটু হেসে গার্ড’দের বলে উঠলো…..
–এই মহিলা’কে প্রানে মে/রে ফেলবে না। ওর পা দুটো হাটু থেকে কে’টে ক্ষত স্থানে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দিবে। জিভ কেটে নিবে যেনো ও আর কোনো দিন কথা বলতে না পারে। তারপর ও’কে একটা ভরা বাজারে রাতের অন্ধকারে রেখে আসবে আর হ্যাঁ, অবশ্যই সামনে একটা ভাঙা থালা দিয়ে আসবে…….
ফারদিনের কথা শুনতেই কাকন, গার্ড আর ফাইজা কেঁপে উঠলো। কাকন মাথা নাড়িয়ে বার বার মুক্তি চাইছে। ফারদিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবারো বললো…..
–আর অবশ্যই ভিডিও করে আমাকে পাঠিয়ে দিবে। যদি কাজ’টা ঠিক ভাবে না হয় তাহলে তোমাদের অবস্থা’টা এর থেকেও খারাপ হবে। গট ইট……
বলেই ফাইজার দিকে কয়েক পা বাড়িয়ে আবারো পেছনে ফিরে বলে উঠলো….
–আর এই (রেজওয়ান) আবর্জনা’টাকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করো। ফাস্ট……
গার্ড গুলো কথা মতো মা নাড়িয়ে সায় দিলো। ফাইজা ভয়ে কাঁপছে। ফারদিন গিয়ে ফাইজার কাঁধে হাত রাখতেই ফাইজা ভয়ে কেঁপে উঠলো। তা দেখে ফারদিন মুখে মুচকি হাসি টেনে বলে উঠলো….
–ভয় পেও না। আমি আছি তো। আর তুমি বলো এদের মতো মানুষ’কে শাস্তি দিয়ে কি আমি ভুল করেছি?
ফারদিনের কথায় ফাইজা চোখের পানি টুকু ওড়না দিয়ে মুছে নিয়ে মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বললো…..
–একদম না। পাপের শাস্তি সবাই’কে পেতে হবে। ওরা ওদের পাপের শাস্তি পেয়েছে। এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলুন প্লিজ। আমার এখানে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে।
ফাইজার করুন স্বরে শেষের কথা গুলো শুনে ফারদিন ওর গালে হাত রেখে বলে উঠলো….
–একদম নার্ভাস হবে না। আমি আছি তো….
প্রতি উওরে ফাইজা হাসলো শুধু। মনে মনে ভাবছে বাসার সবাই নিশ্চয়ই চিন্তায় পা’গল পা’গল অবস্থা? ফারদিন বোধহয় ফাইজার মনের কথা বুঝতে পারলো তাই সে শান্ত কন্ঠেই বললো….
–চিন্তা করো না। বাসার সবাই জানে তুমি আমার সাথে আছো…..
বলেই ফাইজার হাত’টা শক্ত করে আকড়ে ধরে কাকনের সামনে দিয়ে বেড়িয়ে আসলো। দরজার সামনে এসে পেছনে ফিরে একবার মাটি’তে পড়ন্ত নিজের বাবার লা’শ’টার দিকে তাঁকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাকনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাঁকিয়ে হেসে বেড়িয়ে এলো।
____________________________________________
সারা রাস্তা গাড়ি’তে ফারদিনের বুকে লেপ্টে ছিলো ফাইজা। ফাইজা’দের বাসার নিচে এসে গাড়ি থাম’তেই ফারদিন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…..
–এখনো ভয় লাগছে?
ফাইজা মাথা নাড়িয়ে ক্ষীন আওয়াজে জবাব দিলো….
–উহু ভয় লাগছে না। আপনি আছেন তো…..
বলেই আরেক’টু শক্ত করে ধরলো ফারদিন’কে। ফারদিন নিজে মুখ’টা ফাইজার চুলের মধ্যে ডুবিয়ে দিলো। হঠাৎ কিছু একটা মনে করে ফাইজা শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…..
–একটা প্রশ্ন করব মিস্টার অভদ্র?
ফারদিন মুখ ডুবিয়েই উওর দিলো…..
–আবার পারমিশন নিতে হয় নাকি…..
ফাইজা পূর্নরায় শান্ত হয়েই বললো…..
–আমি যদি কোনো দিন আপনাকে ছেড়ে যাই তাহলে কি আমাকে ভুল বুঝবেন?
ফাইজার প্রশ্নে ফারদিন আলগা হয়ে বসলো। ফাইজা’কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ওর দিকে ভয়ংকর চাহনী দিতেই ফাইজা করুন চোখে তাঁকিয়ে বললো….
–আমি যদি কখনো আপনার থেকে দূরে যাই তাহলে বুঝে নিবেন যে,আপনার ভালোর জন্য’ই আমি আপনার থেকে দূরে গিয়েছি……
ফারদিন ফাইজার কথা শুনে মুখ’টা ঘুরিয়ে নিলো। বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে থমথমে কন্ঠে বললো…..
–বাড়ি যাও……
ফাইজা কোনো কথা না বলে ছলছল চোখে ফারদিনের দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে থেকে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো ফারদিন আগের মতোই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। তা দেখে ফাইজা চোখের পানি টুকু মুছতে মুছতে ভেতরে ঢুকে গেলো। আর মনে মনে ভাবতে লাগলো…..
“কালকেই আমাকে তনুজা আন্টির কাছে যেতে হবে। একমাত্র সেই আমার প্রশ্নের উওর দিতে পারবে”
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here