হৃদয়ের সুখ আপনি – অন্তিম পর্ব

0
525

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-অন্তিম পর্ব
#Nishi_khatun
দাইয়ান রিমশা কে নিজেদের রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর রিমশা কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। পুরুষ মানুষদের না কি কাঁদতে মানা আছে!
এ কথা কে বলেছে? তারাও মানুষ।
তাদেরও কষ্ট অনুভব হয়।
রিমশা দাইয়ানের মাথায় হাত বু্লিয়ে দিয়ে বলে,
–“দেখেন আমাদের ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!
আমরা যাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নিজেদের সাজানো
জীবন কতোটা এলোমেলো করেছি। তবে আজ জানতে পারছি আমাদের কাছের মানুষেরা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিয়েছি। পরিস্থিতি আজ আমাদের এমন স্থানে দাঁড় করিয়েছে! যেখানে থেকে আমাদের যা করতে হবে ভেবে চিন্তে করতে হবে! হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যার প্রভাব আমাদের আশেপাশের সকলের উপরে পড়বে। ”
দাইয়ান বলে,
–“এসব সত্যি জানার পর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।
মেরিনা ছোট থেকে আমাকে দান ভাই বলে ডাকে।
আজ সেই মেরিনা আমার স্ত্রী’র জন্য বিপদ হয়ে গেছে। সে তোমাকে খুন করতে এসেছিল। এই কথা মনে পড়তেই আমার কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠে।”
রিমশা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে বলে,
—“আমার মনে হয়না মেরিনা আর ভাইয়া মিলে এসব খুন করেছে। আমার মনে হয় ভাইয়ার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে। আবার এমনটাও হতে পারে সে এসবের সাথে জড়িত নাই। আসল খুনি কে বাঁচানোর জন্য আমাদের সামনে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলছে। নয়তো তুমি ভাবো ভাইয়া এতো অপেক্ষা কেন করবে? মেরিনা আমার উপর হামলা করবে তার জন্য?”
দাইয়ান বলে,
—“তোমার কথায় কিন্তু লজিক আছে।
তবে আমাদের কি করা উচিৎ বলে তোমার মনে হয় বলবে? আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।”
রিমশা তখন বলে,
–“আসামী রুপে আজকে যারা সামনে এসেছে,
তারা সকলে আমাদের আপন মানুষ।
ইচ্ছা করলেই তাদের শাস্তি দিতে পারবোনা।
হ্যা! মানছি, তাদের রাস্তা ভুল ছিল।
তবে ঐ সমস্ত জানোয়ারদের প্রাপ্য শাস্তি তাদের দিয়েছে। তাছাড়া দেখো আমরা তাদের আইনের হাতে তুলে দিলে ঠিকি তারা একদিন মুক্ত হয়ে যেত।
তাছাড়া তারা কোন সৎ ব্যাক্তি ছিলো না।
যে তাদের খুন হয়েছে বলে আমরা ঐ ভুক্তভোগী মেয়ে হারা বাবা কে পুলিশের হাতে তুলে দিব।
যেখানে পুলিশ নিজে হার মেনেছে!
সেখানে আমরা কেনো নাক গলাতে যাব?
সব কিছু যে ভাবে চলছে, সে ভাবে চলতে দাও না।
হয়তো দেখা যাবে এসবের পেছনে ইলমা অথবা ঝর্ণা’র হাত আছে! আবার হয়তো ভাবী, বাবা- মা, তারা জড়িত থাকতে পারো। এসব যদি সত্যি হয় তাহলে সকলের জীবন নষ্ট হবে। তাছাড়া আমার মনে হয়।
যদি ভাইয়া এসবের মাস্টার মাইন্ড হয়ে থাকে,
তাহলে উনি খারাপ কোন কিছু করে নাই।
সমাজের ঐ বিষাক্ত কীট গুলোকে উপড়ে গ্রামটা কে নতুন জীবন দান করেছে। ওদের এমনিতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার ছিলো না। তাছাড়া এতো জলঘোলা করে কোন লাভ নাই। যারা যেভাবে আছে তাদের সেভাবে থাকতে দেওয়া উচিৎ। ”
রিমশা’র সমস্ত কথা শুনে দাইয়ান মাথা নিচু করে বসে থাকে।
রিমশা দাইয়ান কে উদ্দেশ্য করে আর কিছুই বলে না ।
থাক না কিছু সময় মানুষটা একটু নিরবে।
নিজের সাথে নিজেই একটু যুদ্ধ করুক।
তারপর তা যা ইচ্ছে হয় সিদ্ধান্ত নিবে।
সে রাতে দুজনে আর খাবার খেতে রুমের বাহিরে যায়নি। সকলের থেকে দূরে একটু নিজেদের সময় দিয়েছে।
*
*
পরেরদিন সকালে রিমশা তার সমস্ত প্রয়োজনী সামগ্রী গুছিয়ে প্যাকিং করে রাখে। দুজনে রেডি হয়ে বাড়ির উঠানের এসে দাঁড়ায়। দিরহাম ভাবে হয়তো দাইয়ান সকলের উদ্দেশ্যে তার আর মেরিনার কথা বলবে।
তবে দিরহাম কে অবাক করে দাইয়ান সকলের উদ্দেশ্যে
বলে ওঠে,
“আমি রিমশা কে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে এসেছি।
তোমাদের রিমশা’র চিন্তা করতে হবে না।
শহরে ওর দেখাশোনা করার জন্য ব্যবস্থা করা আছে।
তা-ই তোমরা আমাদের দুজনকে যাওয়ার অনুমিত দাও।”
হুট কে ছেলের এমন ব্যবহারে বাড়ির সকলে বিচলিত হয়।
তবে তারা কোন প্রতিক্রিয়া করে না।
স্বামী -স্ত্রী একসাথে থাকবে সেখানে দ্বিমত করার কোন মানে হয় না।
তাই সকলে তাদের দু জনকে যাওয়ার অনুমিত দিয়ে দেয়।
আসার সময় দাইয়ান আর দিরহামের চোখাচোখি হতেই দিরহাম নিজের দৃষ্টি নত করে রাখে।
দাইয়ান কোন প্রতিক্রিয়া করে না।
রিমশা সকলের কাছ থেকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরে তাদের স্বপ্নিল এক দুনিয়ার উদ্দেশ্য।
আসার পথে যখন দাইয়ান নিলুফার কে তাদের সাথে নিয়ে আসে তখন রিমশা একটু ঘাবড়ে যায়।
মায়ের কাছে সন্তান কখনো খারাপ হতে পারে না।
সেখানে ইফার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে উনি যদি তাদের কোন ক্ষতি করে বসে?
দাইয়ান রিমশা’র মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তাকে বলে,
–“দেখো উনি মানুষটা অনেক ভালো।
তাছাড়া যে মা, মেয়ের কুকর্মের কথা জানতে পেরে মৃত মেয়ের লাশটা কে বেওয়ারিশ বলে গণ্য করে।
সেই জনমদুখিনী মা কখনো কারো সাথে খারাপ কিছু করতে পারে না। তোমার বাবা- মা তাকে বিশ্বাস করে পাঠিয়েছে। বাবা- মা’র বিশ্বাসের উপর আমাদের একটু ভরসা রাখা উচিৎ।”
এরপর মনে আর কোন সংশয় না রেখে দাইয়ানের হাত ধরে নতুন সংসারের যাত্রা শুরু করে।
সকালে দাইয়ান বেড়িয়ে যায় বিকালে বাসায় ফিরে আসে। সন্ধ্যায় দুজনে একটু বাহিরে ঘুরাঘুরি করে রাতে বাসায় ফিরে আসে।
এদিকে বাচ্চা প্রসবের সময় যতো ঘনিয়ে আসছে রিমশা’র শরীরটা খারাপ হচ্ছে। নিলুফার রিমশা’র এমন অবস্থার কথা শাওন শেখ কে অবগত করতেই, তারা দুজনে মেয়ে জামাই- এর কাছে চলে আসে।
তাদের আসার কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন ভোরে রিমশা’র প্রসব বেদনা শুরু হয়। দাইয়ান দ্রুত রিমশা কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে যাবার কিছুসময় পর রিমশা নরমাল ডেলিভারির মধ্যমে ফুটফুটে এক রাজপুত্রের জন্ম দেয়।
নার্স যখন বাবুকে এনে দাইয়ানের কোলে তুলে দেয়।
ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে পরম সুখে চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয়। সে বাবা হয়েছে! তার সন্তান সুস্থ আছে এটাই অনেক।
নার্স বলে,”আপনার স্ত্রী সুস্থ আছে!
বিকালের দিকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। ”
বিকালে দাইয়ান রিমশা কে হাসপাতালে থেকে বাসায় নিয়ে চলে আসে।
গ্রামে খবর যেতেই দিরহাম আর রাইসা বাদে সকলে এসে রিমশা কে দেখে যায়।
এদিকে বাবুর সকল দেখাশোনা নিলুফার নিজেই করে।
বাবুর কোন কাজ রিমশা কে করতে দেয় না।
এই জন্য বার বার রিমশা দাইয়ানের কাছে বিচার দিতে থাকে।
দাইয়ানের কথা বাবুর দেখাশোনা করার জন্য যখন নানিমা আছে। তখন তোমার এতো চিন্তা কিসের?
বাচ্চা বড় হচ্ছে তুমি বাচ্চার চিন্তা ছেড়ে বাচ্চার
বাবার চিন্তা করা শুরু করে দাও।
রিমশা বলে,
–“এক ছেলের বাবা হয়ে গেছেন তবুও কথার গতি ঠিক হলো না। বাচ্চার বাবার এতো রোমান্টিক হতে নাই।”
দাইয়ান বলে,
–“যাহ বাবা! রোমান্টিক না হলে আমার আরো ছেলে-মেয়ের জন্ম হবে কি করে? তুমি নিরামিষ হতে পারো, আমি নিরামিষ না বুঝলেন মিসেস?”
রিমশা দাইয়ানের পিঠে কিল ঘুশি দিয়ে বলে,
“ধুর আপনি জীবনে বদলাবেন না। ”
দাইয়ান রিমশা’র হাত ধরে সামনে এসে আলিঙ্গন করে বলে,
–“আরে জীবনে সব থেকে বড় পাওয়াটা কি জানো?
স্বামী স্ত্রী’র মধ্যে সম্মান আর বিশ্বাস থাকতে হবে দুজনের প্রতি। যতো- সমস্যা হোক তৃতীয় কাউকে মাঝে আনা যাবে না।
যদি কখনো সম্পর্ক থেকে মনের শান্তি না পাও!
তাহলে দুজনে একটু সময় নিয়ে আবারো নতুন ভাবে শুরু করা দরকার । সব থেকে বড় কথা হচ্ছে সারাজীবন একসাথে থাকবে এমন মানুষিকতা রাখতে হবে। তাহলে দেখবে দুজনের মাঝে কখনো কোন সমস্যা হলেও তার সমাধান ঠিক বেড়িয়ে আসবে। আজকাল সকলে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সম্পর্কে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে সম্পর্ক ভাঙ্গতে তৎপর হয়ে যায়। এভাবে কখনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না। তাই বিয়ের সময় মন-মানুষিকতা একদম দৃঢ় রাখবে! যার সাথে পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছি! তার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক বজায় রেখে সারাজীবন চলতে হবে।”
রিমশা মুগ্ধ নয়নে দাইয়ানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, “এই লোকটাকে যতো দেখি ততোই মুগ্ধ হতে থাকি।
আর বারংবার তার প্রেমে পরতে বাধ্য হচ্ছি।
একজনের প্রেমে বারবার পড়াতে মজা আছে।
এটাই আসল ভালোবাস। এখানে মনের তৃপ্তি। ”
*
*
এদিকে নিলুফার খালা বাবুর দেখাশোনা করে।
আর আমরা দুজনে এখন চুটিয়ে প্রেম করছি।
কে বলে বিয়ের পর বাচ্চা হলে প্রেম পালিয়ে যাই?
সব কিছু নিজেদের উপর ডিপেন্ড করে।
রোজ সকালে নাস্তা রেডি করে তাকে নিজ হাতে খাওনো। দুপুরবেলা সে আসে না। তাকে অবগত করে একসাথে লাঞ্চ করি। রাতের বেলাতে সে নিজের খারাবের অর্ধেকটা আমাকে খাওয়াই দেয়।
সম্পর্কে ভালোবাস ধরে রাখার জন্য আর কি চাই?
প্রতিদিন রাতে রাত তার বুকে মাথে রেখে ঘুমানোর মাঝে এক প্রশান্তি আছে। বাচ্চার জন্য রাত জাগতে হলে দু জনে একসাথে জেগে থাকি।
এইভাবে আমাদের টোনাটুনির সুখের সংসার কেটে যাচ্ছে।
আমরা আর কখনো গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাইনি।
তবে তারা মাঝেমধ্যে চলে আসে আমাদের সাথে দেখা করতে।
এরপর আর কখনো মেরিনার খবর নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি নাই। সে থেকে গেছে লোক চক্ষুর আড়ালে।
দিরহাম ভাইয়ার সাথে আমাদের কথা না হলেও ভাবীর সাথে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
ছেলেটা আমাদের বড় হয়েগেছে। আমি আজকাল নানারকম নারীদের উন্নয়নমুখী কাজ করছি। নানারকম সংস্থার সাথে জড়িত। গ্রামের গরীব দুঃখী নারীদের উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করি।
আমার জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তির নাম দাইয়ান।
ঐ লোকটাকে ছাড়া আমার পুরো জীবন বৃথা।
আমার তাকে দিনের শুরুতে আর শেষে লাগবেই।
আমি আর সে আলাদাভাবে কখনো সুখে থাকতে পারবো না।
প্রেম ভালোবাসা একটা সময় কমে আসে। দায়িত্ব বোধ,
কাজের চাপ, নানারকম ভবিষ্যৎ চিন্তা মানুষকে একটা সময় গ্রাশ করে নেয়।
তখন ভালোবাসা টা বেস্বাদ লাগতে থাকে।
তবে একটা জিনিশ যা কোনদিন বেস্বাদ হবে না।
তা হচ্ছে আপনি যেখানে মনের তৃপ্তি খুঁজে পাবেন।
আমার মানুষিক শান্তির স্থান, আমার হৃদয়ের সুখ আমার স্বামীর নিকটে। কী যে এক প্রশান্তি তার সান্নিধ্যে তা অনুভব করা যায় ভাষাতে প্রকাশ করা সম্ভব না।
সব সময় রোমান্টিক আর রোমান্সে ভরপুর ব্যক্তিগত জীবন নাও হতে পারে। রোমান্টিক আর রোমান্সে ভরপুর পুরুষ অথবা নারী সবসময় হৃদয়ের সুখ আপনি হতে পারে না।
যে মানুষকে মানুষিক শান্তির ভাণ্ডার, বিশ্বাসের অপর নাম, মনের তৃপ্তি দান কারী মনে হয়। সেই আসলে #হৃদয়ের_সুখ_আপনি হওয়ার যোগ্যতা রাখে।
আর আমার হৃদয়ের সুখ আপনি সারাজীবন আমার স্বামী থাকবে। এটা কখনো তার নিকটে ব্যক্ত করা হয় না।
এভাবে আমরা জীবনে অনেক গুলো বছর অতিবাহিত করেছি। হয়তো শেষ সময়টা ঘনিয়ে আসবে এভাবে।
ভালো থাকুক ঐ ভালোবাসা গুলো যেগুলো কখনো ধুমধাম করে প্রকাশিত হয় না। নিরবে দুটি মানুষের চোখের ভাষাতে থাকে। দুজনের পাশাপাশি হাত ধরে থাকার মাঝে থাকে।
জীবনটা সব সময় সাজানো গোছানো থাকে না।
তাকে দুটি ব্যক্তির সম্মতিক্রমে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে হয়।
~~~~~~~~সমাপ্ত ~~~~~~~
(ধন্যবাদ সবাইকে এতোদিন ধরে গল্পটা কে এভাবে ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। আসলে শুরু থেকে অনেকেই নালিশ করেছেন গল্পটা তার নামের সাথে ঠিক যাচ্ছে না। আসলে আমি গল্পের প্লট এভাবে সাজিয়েছি। সেখানে গল্পের নাম পড়ে অনেকেই রোমান্টিক ভেবেছেন। তবে গল্পের নামটি আমি রোমান্টিক হিসাবে চিন্তা করি নাই। হৃদয়ের সুখ বলতে মানুষিক তৃপ্তির কথা বোঝাতে চেয়েছি। জানি না কতোটা সফল হতে পেরেছি।
আশা করি আপনারা আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য করবেন।
শেষ পর্ব হিসাবে আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here