#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-১৮
#Nishi_khatun
আমার সামনে কয়েকটা অপরিচিত ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যাদের মুখটা কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা। শুধু মাত্র তাদের চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। আমি তাদের এভাবে দেখে একটু ভয় পেয়েছি।
আমি মনে মনে ভাবছি,” আজকে ইফাকে বিশ্বাস করে এমন পরিস্থিতিতেপড়বো কখনো কল্পনা করি নাই। তবে এখন আফসোস হচ্ছে! তখন কেনো যে বাবার কথায় সম্মতি জানায়নি। এখন এতো গুলো পুরুষেরা কি আমাকে ছেড়ে দিবে? উঁহু কখনোই না! এরা আমাকে খুবলে খাবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে খারাপ কোন কাজ হয়।
আল্লাহ আজ বুঝি আমার মানসম্মানের শেষ রক্ষা হবে না।”
তখন আমার সামনে উপস্থিত থাকা ছেলেদের মধ্যে একজন কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে,
-“এই মেয়ে কে তুমি? আর এখানে কার সাথে এসেছো? ”
রিমশা কান্না মাখা কন্ঠে বলে,
-“আমি রিমশা! ইফার সাথে ওর বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। তবে সে আমাকে ভেতরে আসতে বলে বাড়ির অনেকটা দূরে অবস্থান করে। কিন্তু আমি ভেতরে প্রবেশ করে বুঝতে পারছি আমি খুব বড় ভুল করেছি।”
তখন ঐপাশের রুম থেকে কেউ একজন চিৎকার করে বলল- আমি আগেই বলেছিলাম ঐ ইফা চালাক মেয়ে। ডায়নী সহজে অন্যের জালে আটকা পড়বে না। তবে অন্যদের ঠিকি তার পাতা ফাঁদে আটক করতে জানে। ”
ঐ লোকটাকে আশ্বস্ত করতে আরেকজন নমনী কন্ঠে বলে,
“চিন্তা করতে হবে না। আজ না হয় কাল ইফা কে একদিন ওর মরণ ফাঁদে আটকা পড়তেই হবে। আমি দরকার হলে ওর জন্য মরণফাঁদ তৈরি করবো।”
তখন প্রথম ব্যক্তি বলে,
“ইফা যে আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়েছে ঐ মেয়েটাকে পাঠিয়ে তার কি হবে?”
দ্বিতীয় জন বলল-,” তোমাদের খবর কেউ জানে না আমি ব্যতীত। এখানে মাঝেমধ্যে আমার আসা হয়। তা-ই তোমরা সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করো। আমি দেখছি ঐ মেয়েটার সাথে কি করা যায়।”
প্রথম ব্যক্তি বলে,” যা ইচ্ছা হয় করো! তবে খারাপ কিছু করবে না। কারণ আমরা এখানে খারাপ উদ্দেশ্যে কেউ একত্রিত হয়নি। আমাদের উদ্দেশ্য সৎ এবং সঠিক।”
তখন আমার সামনে থাকা একটা ছেলে বলে ওঠে,”আরে ভাই এই মেয়েটাকে আগে কখনো গ্রামে দেখি নাই। তবে কিছুদিন যাবৎ মেয়েটাকে শাওন শেখের বাড়িতে দেখা যাচ্ছে। ”
রিমশা নিজ থেকে বলে ওঠে,”আমি শাওন শেখের কন্যা।”
তখন ছেলেটার পেছনে থেকে একজন মহিলা বলে,
“ওহ তুমি সেই মেয়ে যে রতন স্যারের মাথা ফাঁটিয়ে গ্রাম ছাড়া হয়েছিলে?”
রিমশা প্রতিবাদী কন্ঠো বলে,” আমি একজন দুশ্চরিত্র লোককে তার পাপের শাস্তি দিয়েছিলাম। যদি যে ভালো চরিত্রের লোক হতো তাহলে কখনোই তাকে আঘাত করার দরকার হতো না। তাছাড়া প্রতিটা নারীর কাছে তার সম্মান খুব মূল্যবান। আর আমি কেনো এই মূল্যবান সম্পদ ঐ লম্পট লোকের কাছে বিষর্জন দিতাম? আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কোন ভুল কিছু করি নাই। যতবার দরকার হবে আমি ততবার নিজের সম্মান বাঁচাতে লড়াই করবো।”
মেয়েটা বলে,”আজকে এরা যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করে তখন তুমি কি করবে? ”
রিমশা বলে,”নিজের সর্বচ্চ শক্তি দিয়ে আব্রু রক্ষার চেষ্টা করবো। তবুও ওদের সামনে সহজেই মাথা নত করবো না।”
তখন পাশের রুম থেকে দুজন পুরুষ বেড়িয়ে এসে বলল-, “সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করো। ঐ ইফাকে বিশ্বাস নেই।”
মহিলা বলে ওঠে,”এই মেয়ের কি হবে?”
রিমশা’র দিকে না তাকিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে যাবার সময় বলে,
“এই মেয়ের চিন্তা তোমাদের না করলেও চলবে। আশাকরি মেয়েটা আমাদের জন্য সমস্যা হবে না। তবুও বাকিটা না হয় সে এসে সমাধান করবে।”
এরপর সবাই দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। আমাকে রুমের ভেতরে রেখে বাহিরে থেকে লক করে তারা চলে যায়। আমি অনেকটা সময় ধরে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি শুরু করি তবে সাহায্যের জন্য আশেপাশে কেউ এগিয়ে সে না।
এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর কেউ একজন দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে জোড়ে চিৎকার করে বললাম -,”আমার সাথে খারাপ কিছু করার চিন্তা যদি করেন তাহলে ভালো হবে না। ভালোই ভালোই আমাকে এখানে থেকে যেতে দিন বলছি।”
-আপনার হাতে পায়ে কেউ শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে? তাহলে এইভাবে কথা বলার মানেটা কি?
এই শীতল কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই আমি তার দিকে ফিরতেই চমকে উঠি। আমার অতি পরিচিত আপন মানুষটা সামনে দাঁড়িয়ে। এটা কী আমার দেখার ভুল? না কি বিপদে পড়েছি বলেই তাকে কল্পনা করছি? আমি কোন কিছু বলার পূর্বে সামনের ব্যক্তি বলল- “রিমশা তুমি এখানে আসলে কি করে?”
আমি আর কোন কথা না বলে সোজা তার বুকের উপর কিল দিতে শুরু করি। তারপর বলি,’ আপনি না মারা গেছেন?
তাহলে এখানে জীবন্ত আমার সামনে কীভাবে?’
আহীদ আমার হাত দুটো তার বলিষ্ঠ হাতের বন্ধনে আবদ্ধ করে বলল- “আমি মারা গেছি একথা কে বলেছে? এই জলজ্যান্ত মানুষটা কে মৃত বানিয়ে দিলে? ”
রিমশা বলে,”আমি নিজের কানে শুনেছি! মামা বলেছে পাশের বাড়ির ছেলেটা মারা গেছে। এরপরে মামা আমাকে একা যাতায়াত করতেও বলেছেন।”
আহীদ বলে,”আমি কি কোনদিন বলেছি ঐ বাড়ির ছেলে আমি? ঐ বাড়িটা আমার বন্ধুর বাড়ি ছিলো। দুজনে একসাথে লেখাপড়া করতাম। আমি ব্যারিস্টারি পড়ছিলাম আর ও ইঞ্জিনিয়ারিং। দুজনের যাত্রা পথও আলাদা হয়ে যায়। তবুও ওর পরিবার আমাকে ভালোবেসে তাদের বাড়ির ঐ রুমটা আমার জন্য বরাদ্দ করে দিয়েছিল। তবে তুমি যেদিন চলে যাও সেদিন রাতে আমার বন্ধু এক্সিডেন্টে মারা যায়। ওহ মারা যাবার পর আর আমার পক্ষে ওর বাড়িতে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না।
আমি একটা ভালো কোর্টে জবের পাশাপাশি প্র্যাকটিস করার সুযোগ পেয়ে যাই। তাই দ্রুত সেখানে সেটেল হই। এরপর তোমার সাথে যোগাযোগ করার বহুত চেষ্টা করেছি। ”
রিমশা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে,”আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছিলো। তা-ই ভাইয়া নতুন ফোন আর সিম কিনে দিয়েছিল। আপনি মারা গেছেন দেখে আপনার নাম্বারে কখনো ট্রাই করি নাই।”
আহীদ বলে,”খুব ভালো কাজ করেছ। আমি তো মারা গেছি, এখন আমার আত্মা তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ”
রিমশা আহীদ কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলে,
“আমি দুঃখীত। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি এখন আর আপনাকে ছাড়া কোথাও যেতে চাই না।”
আহীদ হঠাৎ করে বলে,”তা তুমি এখানে আসলে কি করে?”
রিমশা তখন ইফার সাথে এখানে আসার পুরো কাহিনী ক্লিয়ার করে বলে। তারপর এখানে যারা ছিলো তাদের কথাও বলে।
রিমশা’র কথা শোনার পর আহীদ বলে,”এখানে থাকা যাবে না সমস্যা হতে পারে। চলো তোমাকে তোমার বাড়িরে পৌঁছে দিয়ে আসি।”
রিমশা বাচ্চাদের মতো জিদ করে আহীদ কে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি আপনাকে রেখে কোথাও যাবো না।”
আহীদ বলে,”যেতে কে বলছে? তুমি তোমার বাড়িতে যাবে। নয়তো খুব বড় বিপদে পড়তে পারি আমরা।”
ঠিক সে সময় সেখানে গ্রামের অনেক লোকজন এসে উপস্থিত হয়। তারা রিমশা কে পরপুরুষের এতোটা কাছে দেখে নানারকম খারাপ মন্তব্য করতে শুরু করে।
এতো মানুষকে হঠাৎ করে দেখে ভয়ে লজ্জায় আহীদের পেছনে লুকিয়ে পড়ে।
এতো মানুষকে এভাবে এখানে একসাথে দেখে বুঝতে পারে আজ কপালে খুব খারাপ কিছু আছে। তাদের এখন যা বোঝাতে যাব তার বিপরীত কিছু বুঝবে সবাই।”
সেখানে উপস্থিত কিছু লোকজন বলে ওঠে,”ছিঃ ছিঃ ছিঃ চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের চরিত্র এতো খারাপ আগে জানা ছিলো না। গ্রাম থেকে দূরে নির্জন স্থানে এমন ঘরে তৈরি
করেছিল। এসব আকাম কুকাজ করার জন্য।
আমরা ভাবতাম ছেলেটা বুঝি আমাদের ভালোর জন্য এখানে আসতো। এখন দেখছি না নিজের শারীরিক চাহিদা মেটাতে এখানে আসতো। তোমার থেকে আমরা কেউ এমন কিছু কোনদিন আশা করি নাই।”
একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলে,”এতোই যখন মেয়ে মানুষের দরকার পড়ে তোমার। তাহলে বিয়েটা কেন করো না?'”
আরেকজন কটূক্তির সাথে বলে,”আরে বড়লোকি বেপার বোঝনা? বিয়ে শাদী করলে কি রোজ রোজ এমন নতুন
পাখির দেখা পাবে?”
এভাবে বেশ কিছু সময় ধরে মানুষের বাজে মন্তব্য তারা দু জনে শুনছিল। এদের সামনে প্রতিবাদ করে কোন লাভ হবে না।
কিছু সময় পর সেখানে মেম্বার কাজী সাহেব কে সাথে নিয়ে আসে। আসার পর বলে,”এতো রাতে এখানে বিয়েটা কার?”
উপস্থিত সকলে রুমের ভেতরে ইশারা করে। মেম্বার সাহেবের তাদের দেখে চিন্তিত কন্ঠে বলে,”আরে এতো আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে দাইয়ান। দাইয়ান বাবা তুমি এমন অপকর্ম করতে যেয়ে হাতে নাতে ধরা পড়বে তা কখনোই ভাবতে পারি নাই।”
মেম্বর সাহেব দ্রুত চেয়ারম্যান সাহবের সাথে যোগাযোগ করে তাকে সবকিছু বলে।
এর কিছুসময় পর চেয়ারম্যান সাহেব এবং তার বড় ছেলে দিরহাম সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তখন দাইয়ানের পাশে মাথা নিচু করে রিমশা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি চমকে ওঠেন।
চেয়ারম্যান সাহেব একটু নিরব থেকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আপনাদের সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে ঐ মেয়েটার সাথে আমার ছেলের বিয়ে বহুপূর্বে ঠিকঠাক।
হয়তো কিছুদিন পর আপনাদের সবাইকে জানিয়ে ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতাম। যেহেতু আপনারা সকলে না জেনে বুঝে একটা খারাপ পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। সেই জন্য আমার ছেলের কিছুদিন পর হওয়া বিয়েটা আজকে সম্পন্ন করে দিচ্ছি। ”
এরপর রিমশা আর দাইয়ানের বিবাহের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। তবে বিয়েটা দাইয়ান করতে নারাজ ছিলো। তার বাবা একপ্রকার মানসম্মানের দোহাই দিয়ে বিয়ে করতে রাজী করে।
(কালকে বাসায় মেহমান আসবে। তা-ই দয়া করে কেউ গল্পের অপেক্ষা করবেন না। ইন শা আল্লাহ শুক্রবার সময়মত গল্প পোষ্ট করবো।)
”
”
”
চলবে…..