হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 2

0
460

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০২
#Nishi_khatun
পরেরদিন সকালে চেয়ারম্যান বাড়ির সকলের ঘুম ভাঙ্গে বাড়ির বাহিরে লোকজনের শোরগোল শুনে।
বাড়ির সদস্যরা বাহিরে এসে জানতে পারে তাদের গ্রামের শেষে যে রুপসী খালটা আছে! সে খালের পাড়ে আজও একজনের লাশ পড়ে আছে।
সকালে গ্রামের জেলেরা খালে মাছ ধরতে যেয়ে দেখে পানির ভেতরে মাথা আর শরীরটা উপরে। তাদের বুঝতে বাকি থাকে না এটা লাশ। আর মৃত মানুষের লাশের গায়ে হাত দিলে পুলিশের ফ্যাসাদে পড়তে হবে। এর আগেও এমন লাশ পড়েছিল এই খালের পাড়ে। গ্রামের লোকজন সে লাশ ডাঙ্গাতে এনেছিল বলে কতোশত কাহিনী। গ্রামের নিরিহ বেচারা মানুষদের পুলিশ কম হয়রানি করে নি। তারপর থেকে সবাই কান ধরেছে!
যে কাজে পুলিশ আছে সে কাজের মধ্যে আমরা নাই। তা-ই তারা সকাল সকাল চেয়ারম্যান বাড়িতে এসেছে।
যা কিছু করার গ্রামের চেয়ারম্যান,
মেম্বার করবে। গ্রামের সহজসরল মানুষেরা নাই এই ভেজালের মধ্যে।
বদুরুদ্দিন সাহেব বাহিরে এসে এতো লোকের জামায়াত দেখে জানতে চাই কি হয়েছে এতো শোরগোল কিসের?
গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টারমশাই বলেন,
-“চেয়ারম্যান সাহেব আজকেও খালের পাড়ে একটা লাশ পাওয়া গেছে।”
বদুরুদ্দিন সাহেব চিন্তিত হয়ে সাথে সাথে বলেন,
– “ইন্না লিল্লাহ! আজকে আবার কে মরেছে আল্লাহ জানে। তোমরা লাশটা উল্টেপাল্টে দেখো নাই কার লাশ?”
পাশের এক যুবক বলে,”হ্যা! আর তো কাজ কাম নাই আমাদের ঐ লাশের গায়ে হাত দিয়ে হাজতে যাওয়ার ব্যবস্থা করি তা-ই না? এসব খুন- খারাপির বেপার সেপার পুলিশ কেস হবে। আপনি পুলিশের কাছে খবর দেন। যা করার পুলিশ এসে করবে।”
চেয়ারম্যান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
-“আল্লাহ জানে আমাদের এই সুন্দর গ্রামটি যে কার নজরের পড়েছে আল্লাহ জানে!” তারপর সে দ্রুত তার মুঠোফোন হাতে নিয়ে পুলিশকে লাশের কথা সম্পর্কে অবগত করেন।”
এদিকে বদুরুদ্দিনের বড় ছেলে দিরহাম এসে বলে,
-“আব্বা আগেই বলেছিলাম আপনার ছোট ছেলের বউটা অপয়া। না হলে দেখেন সে যেদিন থেকে এবাড়ির বউ হয়ে এসেছে সেদিন থেকেই যতো অশান্তি। এমন কি রহস্য জনক ভাবে লোকজন মরতে শুরু করেছে।”
তখন চেয়ারম্যানের একমাত্র মেয়ে ইলমা এসে বলে,
-“বড় ভাইয়া অযথা ছোট ভাবীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে চেষ্টা করবে না। পুরো গ্রামের লোকেরা জানে ঐ খালাটা এমনিতে ভয়ানক অভিশপ্ত। দিনের বেলায় সেখানে কেউ একলা যায় না। জানো সেখানে কেউ রাতের বেলা যাবার সাহস করে না। ঐ রুপসী খাল নিয়ে লোকমুখে কাহিনীর অভাব নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ছোট রিমশা ভাবীকে দোষী বলছো?”
তখন দাইয়ানের বড় ভাবী তার স্বামীর হাত ধরে আড়ালে সরিয়ে নিয়ে বলে,
-“এই আপনার ঘটে বুদ্ধি শুদ্ধি কবে হবে? এক মেয়ের বাপ হয়ে গেছেন। একঘর লোকের সামনে রিমশা কে অপমান করার চেষ্টা না করে নিজের পজিশনটা তো সুন্দর করে ফুঁটিয়ে তুলতে পারতেন। তাছাড়া কাল আপনার ভাই কি কেচ্ছা করেছে তা সম্পর্কে গ্রামের সকলে অবগত। তা-ই রিমশা এখন অবলা নারী। তাকে সাহারা দিন, অপমান নয়! তাহলেই তো সবার চোখে আপনার স্থান উঁচু হবে।”
দিরহাম বউয়ের কথার যুক্তি শুনে একটু দমে যায়।
এদিকে দাইয়ান রুম থেকে বেড়িয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বাহিরের দিকে আসছিল।
ঠিক সে সময় দিরহামের চোখ পড়ে তার ছোট ভাইয়ের উপর। দ্রুত দাইয়ান কে পথিমধ্যে আটকে দিয়ে বলে,
-“নাউজুবিল্লা ! বাড়ির মান-সম্মান সাত সকালে এইভাবে নষ্ট করার দরকার নেই, তুই দ্রুত নিজের রুমে যা। ”
দাইয়ান বিরক্তিবোধ করে বলে,
-“আমি কি এমন করেছি যার জন্য আপনার নাউজুবিল্লা পড়া লাগছে?”
দিরহাম বলে,
-“কাল যে দ্বিতীয় বিয়ে করে বাসরঘর করেছেন তার প্রমাণ বুঝি বাহিরে উপস্থিত জনগণ কে দেখাতে চাইছিস? ”
দাইয়ান আর বড় ভাইয়ের সাথে তর্ক না করে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে সোজা দরজা বন্ধ করে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।
যা গেলাম না বাহিরে, তোরা থাক তোদের মান- সম্মান নিয়ে।
এদিকে গ্রামের উৎসুক জনগণ মরা দেখার জন্য দলবেঁধে সেই রুপসী খালের পাড়ে যাচ্ছে।
রিমশা তখন তার ননদ ইলমা আর বাড়ির কাজের মেয়ে ঝর্ণা কে বলে,”চলো আমরাও রুপসী খালে পাওয়া লাশটা দেখে আসি!”
রিমশা’র মুখে এমন কথা শুনে ইলমা আর ঝর্ণার চোখ কোঠর থেকে বাহিরে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।
ঝর্ণা বলে,”ভাবী আপনে ঠিক আছেন? কালকের শোক বুঝি এখনো সামলাইয়া উঠতে পারেন নাই তা-ই না?”
রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”কালকের শোকটা আমাকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। তা-ই তা থাক না অন্তরের ভেতরে কয়লার জ্বলন্তআগুন হয়ে। বাহিরে না হয় ঠাণ্ডা ছাই হয়ে প্রকাশ্যে থাকি।”
ইলমা বলে,”দাইয়ান ভাই- কোনদিন সঠিক জিনিষের কদর বুঝলো না। তা-ই তো আপনার মতো হিরা ফেলে রেখে ঐ ভাঙ্গা আয়নার কাঁচ নিয়ে আসছে বাড়িতে।”
ঝর্ণা – আফায় ঠিক কথা বলছেন! ভাইজান বুঝবে একদিন! সে দ্বিতীয় বিয়ে করে মস্ত বড় ভুল করেছে।
রিমশা এবার একটু জোড়ে বিরক্তির সাথে বলে,
-“তোমরা কি যাবে আমার সাথে মরা দেখতে না কি আমি একাই চলে যাবো?”
ইলমা বলে,”আপনি এই বাড়ির বউ হয়ে আসার পর একদিন ও একা কোথাও গেছেন? আমি আপনার সাথে সব সময় ছায়ার মতো থেকেছি! আর আমার ছায়া ঝর্ণা। তাহলে আজ আপনার এই দুঃখের দিন একলা ছাড়ি কেমনে?”
রিমশা বলে,”হ্যা! এবাড়িতে আশার পর থেকে তোমাদের দু জনের জন্য আমি এতোগুলা দিন এখানে টিকে আছি। নয়তো বিয়েরপর দিন হয়তো আত্মহত্যা করতে হতো আমাকে।”
ইলমা রিমশা কে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আরে ভাবী ঐ সব বাজে কথা বাদ দাও বলো মরা দেখতে সত্যি যাবে?”
রিমশা হাস্যমুখ করে বলে,”হ্যা! আমার মরা মানুষ দেখতে খুব ভালো লাগে। আহা দুনিয়ার সকল মোহ-মায়া ত্যাগ করে তারা নিজের আসল দুনিয়ার পথে পাড়ি দেয়।”
ইলমা বলে,”ভাবীর মাথা সত্যি গেছে। বাদ সে সব ঝর্ণা চলে রওনা দেই মরা দেখতে।”
এদিকে ঝর্ণা যাবার সময় তার মা’কে বলে,”আম্মা সকালে সব কাজ তুমি দেখো আমি একটু বেড়িয়ে এসে বাকিটা সামলে নিবো।”
ঝর্ণার মা কিছুই বলে না! এই চেয়ারম্যান বাড়িতে ঝর্ণার মা কাজ করে। তা-ই মায়ের সাথে মেয়েও মাঝেমধ্যে কাজ করে। তবে কেউ তাদের কাজের লোক মনে করে না। তাদের বাড়ির একজন সদস্য মনে করে। এবাড়ির মেয়ে ইলমার সাথে ঝর্ণা ছোট থেকে বড় হয়েছে । ইলমা কখনো ঝর্ণা কে বুঝতেই দেয়নি সে বাড়ির কাজের মেয়ে। তা-ই কাজ করতে কষ্ট হলেও ঝর্ণার মা এই তিনজনের মাঝেমধ্যের লুকোচুরি গুলো সবার আড়ালে রাখে।
কখনো প্রকাশ্যে আনে না।
এদিকে ইফা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে শাশুড়ি কে সাহায্য করতে আসে। রেহেনা বেগম (দাইয়ানের মা) তাকে জব্দ করতে রান্নার সকল দায়িত্ব তাকে দিয়ে দেয়।সকাল থেকে শুরু করে দুপুরবেলার সব রান্না ইফাকে মাটির চুলায় করতে হবে তাও আবার একা কেউ কোন সাহায্য করবে না।
ইফা এবার নিজের ফাঁদে নিজেই পড়েছে। সাজগোজ করে পাটরানি সেজে এসেছিল শাশুড়ি কে পাটাইতে। কিন্তু শাশুড়ি তাকে চাকরানি বানিয়ে রাখল।
ইফার কত শখ ছিলো চেয়ারম্যান বাড়ির ছোট বউ হয়ে রাজরানির মতো থাকবে তবে তার সে সকল আশায় শাশুড়ি জান পানি ঢেলে দিল।
রেহেনা বেগম নিজের রুমের দিকে প্রস্থান করার পূর্বের ঝর্ণা’র মা’কে সাহায্য করতে নিষেধ করে। বলে,
-“নতুন বউ সব কাজ একা করবে! কেউ জেনো ভুলেও তাকে সাহায্য না করে এদিকে পূর্ণ দৃষ্টি রাখবে।”
ঝর্ণার মা বলে,”জি ভাবী সাহেবা আপনি চিন্তা করবে না আমার দৃষ্টি থাকবে তার উপর। আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘরে যেয়ে আরাম করেন।”
রেহেনা বেগম রান্না ঘর থেকে প্রস্থান করে।
ইফা ঝর্ণার মা’কে সাহায্য করতে বললে সে রেহেনা ভাবীকে ডাকার হুমকি দিতে শুরু করে।
ইফা আর কিছু বলার সাহস করে না।
ঝর্ণার মা মনে বলে,”আমার বয়ে গেছে এই ডায়নী কে সাহায্য করতে! হুহ। এই শাঁকচুন্নির জন্য আমাদের রিমশা আম্মা কতো কষ্টটা না পাচ্ছে মনে। তবুও মেয়েটা চুপচাপ। আর এই ডায়নীর মনে কেন চেহারাতে কোন অনুতাপের লেশ মাত্র নেই।”
(গল্পটা কোনদিকে যাচ্ছে আমি নিজেও জানি না।
সবাই ধৈর্যশীল হয়ে গল্পটা পরে মন্তব্য করবেন এই আশা করছি। আপনাদের মন্তব্য আমাকে কে গল্প লিখতে উৎসাহ দান করে।)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here