হৃদয়ের সুখ আপনি – পর্ব 3

0
395

#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-০৩
#Nishi_khatun
লাশ দেখতে এসে বিপদের পড়েছে রিমশা! কারণ সে যতোটা উৎসাহ নিয়ে লাশ দেখতে এসেছিল সে উৎসাহ সামনের উপস্থিত মানুষটা কে দেখে চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেছে।
তাদের সামনে দাইয়ান দাঁড়িয়ে আছে। এমন ভীরের মধ্যেও নিজের বাড়ির মহিলাদের চিনতে তার একটু দেড়ি হয়নি।
দাইয়ান কে দেখে ঝর্ণা ইলমা কে উদ্দেশ্য করে বলে,”ইলমা আফা! আপনার ভাই না তার নতুন বউ কোলে নিয়ে ঘুমেকাতুর ছিলো। তাহলে আমাদের আগে হেতি এইহানে আইলো কেমনে?”
ইলমা বিরক্তির সাথে বলে,
-“বেশি ডং করে কথা বলতে যাবি না। তাছাড়া ঝর্ণা তুই হয়তো ভুলে গেছিস ভাইয়ার বাইক আছে। তার বাইকে আসতে সময় লাগে না। যে হাওয়ার গতিতে বাইক চালিয়ে বেড়ায়। কেন যে রাস্তায় ঐ বাইকটা উল্টায় পড়ে না একদিন। তাহলে বুঝবে স্টাইলিশ বাইক চালানোর সাজা।”
ঝর্না বলে,
-“আফা আর এমন কথা বলেন না! আগে ভাইয়ের এক বউ ছিলো, এখন তার দুই বৌ! তার কিছু হলে বউ দুইটার কি হবে? তাছাড়া নতুন বউটার সাথে তার রোমান্স করা হইলো না ঠিকমত। ”
ইলমা বলে,”ঐ ইফা ডায়নীর কি হবে জানি না। ওদের রোমান্সের মুখেছাই! তবে হ্যা আমার কলিজার টুকরো ভাবীর জন্য আমি আছি। দরকার হয় আমি বিয়ে করে আমার জামাই এর সাথে রিমশা ভাবীর বিয়ে দিয়ে আমার সতীন বানায় রাখবো।”
ঝর্ণা দ্রুত ইলমার মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,
-“আফা ভুলেও এমন কথা বলেন না আর। এক সতীনের জ্বালায় ভাবী সারারাত ঘুমাই না! তার উপর আপনার মনের এমন কূচিন্তা সম্পর্কে জানলে তো খবর আছে।”
ইলমা ঝর্ণা কে ফুসফুসিয়ে বলে,
-“ঝর্ণা রে! ভাবী আর ভাই সামনাসামনি এখন এখানে কী হবে তোর মনে হয়?”
ঝর্ণা বলে,”ঝড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করতে নেই। নয়তো সে ঝড়ে আমরা হারিয়ে যেতে পারি। তা-ই যতোটা সম্ভব নিজেদের আড়ালে রাখি।”
এরপর দু জনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আসলে ওরা তিন জন বাড়ি থেকে হাঁটতে হাঁটতে আসছিল। রিমশা ওদের দু জনের সামনে ছিল। আর ওরা দুজন রিমশা’র থেকে একটু দূরত্ব রেখে পেছনে হাটছিল।
তা-ই রিমশা ওদের দু জনের ভেতরের আলোচনা সম্পর্কে অবগত নয়।
দাইয়ান রিমশা কে দেখে কঠোর আওয়াজে বলে,
-“তুমি এতো ভিরের মধ্যে এখানে কেন এসেছো? এখানে আসার অনুমিত দিয়েছে কে তোমাকে?”
রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
-“এখানে উৎসুক জনতার মতো আমিও মরা দেখতে এসেছি। আর বাকিরাও হয়তো কারো থেকে লাশ দেখার অনুমিত নিয়ে আসে নাই? তা-ই না!”
দাইয়ান গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“আমি বাকিদের কথা জানতে চাইনি।
তুমি চেয়ারম্যান বাড়ির বউ হয়ে এখানে আশার সাহস কর কী করে?”
রিমশা বিরক্তির সাথে বলে,
-“আমার উপর অধিকার বোধ দেখাতে আসবেন না। আপনার যত খেজুরে আলাপ আছে সেসব না হয় আপনি আপনার বউ ইফার সাথে করবেন। আমার সাথে কোনরকমের কথাবার্তা না বললে খুশি হব।কারণ দ্বিতীয় বিয়ে করে আপনি স্বামীর অধিকার হারিয়ে ফেলেছেন।”
দাইয়ান বলে,”ছেলেদের চারটা বিয়ের অনুমিত আছে। আমি তো মাত্র দুইটা করেছি।”
রিমশা তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”ইসলামে চার বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। তবে সেগুলো কিছু শর্তের সাথে। আপনি সে শর্তভঙ্গ করেছেন। আমার বিনা অনুমতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আমাকে স্ত্রীর অধিকার না দিয়ে দ্বিতীয় জনকে ভালোবাসর পরম সুখ অনুভব করাচ্ছেন। সেখানে আপনার সাথে কথা বলতেও ঘৃণায় আমার গা গুলিয়ে আসছে।
তারপর এক্সকিউজ মি বলে কঠোর অ্যাটিটিউডের সাথে দাইয়ান কে এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যায় রিমশা। লাশের পাশে উপস্থিত পুলিশ কে সে প্রশ্ন করে,
-“স্যার লোকটা কিভাবে মারা গেছে সে সম্পর্কে কিছু জানতে পারলেন?”
লাশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কেস ইনভেস্টিগেশন অফিসার রিমশা’র দিকে তৃক্ষণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জবাব দেয়,
-“পুরুষাঙ্গ কেটে খুন করা হয়েছে।”
রিমশা উদ্বিগ্নচিত্তের সহিত বলে,
-“এর আগেও আমাদের গ্রামের খালপাড় থেকে এমন পুরুষাঙ্গ কাটা দুইটা লাশ পাওয়া গেছিলো। তাহলে এই লোকটাও তাদের মতো খুন হল। এই তিনটা খুন কি কোনভাবে একজনের করা?”
ঠিক সে সময় দাইয়ান রিমশা’র হাত ধরে বলে,
“মেয়েমানুষের এতো গোয়েন্দাগিরি করার দরকার নেই। খুনের তদন্ত করার জন্য পুলিশ আছে। তুমি দ্রুত স্থান ত্যাগ করো।”
রিমশা দাইয়ানের হাত থেকে নিজের হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“আমিও গ্রামের একজন সদস্য।
তা-ই আমারও সব কিছু জানার পূর্ণ অধিকার আছে।”
রিমশা আবারো পুলিশ কে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা অফিসার লাশটা কার সে সম্পর্কে কিছু জানতে পারলেন? ”
অফিসার বলে,
-“হ্যা! লোকটার নাম রতন শেখ! আপনাদের পাশের গ্রামের গার্লস স্কুলের টিচার উনি।”
এমন সময় ঝর্ণা এসে বলে,
-“যে রতন শেখ রে খুন করছে ভালোই করেছে। বেডা এক নাম্বারের লুইচ্চা ছিলো। মেয়েদের শরীরে স্পর্শ কাতর স্থানে স্পর্শ করতে একটু লজ্জা পেত না। জানো ভাবী আমি কিন্তু এইবার পরিক্ষা দেয়নি এই স্যারের জন্য। তোমাকে যে স্যারের কথা বলেছিলাম এইটা সেই স্যার! ”
পুলিশ তখন বলে,”আমাদের মনে হচ্ছে কোন ঠাণ্ডা মাথার সিরিয়াল কিলারের কাজ এগুলো। সে বেছে বেছে মেয়েদের সাথে অন্যায় করা লোকদের শাস্তি দিচ্ছে।”
রিমশা বলে,”যে এসব কাজ করছে ভালোই করছে। এদের লাশ দেখে বাকিদের উচিৎ নিজেদের চরিত্র ঠিক করে নেওয়া। নয়তো বলা যায় না চতুর্থ লাশটা আবার কার পড়ে থাকে এখানে।”
দাইয়ান তখন ইলমা আর ঝর্ণার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তা দেখে ইলমা আমতাআমতা করে বলে,
-“ভাবী চলো আমাদের রতন স্যারের বাড়িতে যেতে হবে। তার বাড়ির সদস্যদের শান্তনা দিতে হবে।”
রিমশা বলে,”শান্তনা দিতে যেতে হবে সে কথা কে বলেছে?”
ইলমা – একটু আগে বড় ভাবী কল করেছিল। সে বলেছে আমরা যেখানে-ই থাকি দ্রুত যেনো বাড়িতে ফিরে যায়। কারণ বাড়ির সবাই রতন শেখের বাড়িতে যাবে। আব্বা আমাদের কেও সঙ্গে যেতে বলেছে।
রিমশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”আচ্ছা আব্বা যখন বলেছে তখন তো যেতেই হবে।
কি আর করার খালপাড়ে রতন শেখের লাশের তামাশা মন ভরে দেখা আর হলো না এই আরকি।”
এরপর তিনজন সেখান থেকে দ্রুত প্রস্থান করে।
তখন কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার বলে,
-“কি জানেন তো মিস্টার দাইয়ান। আপনাদের গ্রামে এটা দিয়ে তৃতীয় খুন হলো। তিনজনের পুরুষাঙ্গ কেটেছে। আর একই স্থান একিভাবে লাশ ফেলে রেখেছে। খোঁজ খবর নিতে গেলেই জানা যায়!
তাদের চরিত্রের সমস্যা ছিলো। আচ্ছা আপনার কি মনে হয়? কেউ একজন ইচ্ছা করে বেছে বেছে এই খারাপ লোকদের খুন করছে? দেখুন না। আজ আপনাদের পাশের গ্রামের রতন শেখ খুন হলো। তার আগের দু জন আপনাদের গ্রামের মানুষ ছিলো। আর সেই লাশ দেখতে আর কেউ না আসলেও আপনার পরিবারের মেয়েরা ঠিকি আসে। আচ্ছা কোন ভাবে আপনার পরিবারের কেউ জড়িত নেই তো এঘটনার পিছনে? বলাত যায়না তাদের কেউ একজন হয়তো সিরিয়াল কিলারের সাথে সম্পর্কিত!”
দাইয়ান এবার রাগী দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-“দেখুন অফিসার! অযথা মিথ্যাচার করে আমার পরিবারের মানসম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে আপনাদের জন্য এটা খুব ভালো হবে না। নিজেদের কাজ ঠিকমতো করতে পারেন না, আবার এসেছেন আমার পরিবারের দিকে আঙ্গুল তুলতে। আপনাদের আগের দুইটা কেস এখনো অমীমাংসিত সেগুলোর আসামি কে ধরুন। আমার পরিবারের সদস্যদের মিথ্যাচার করে আসামি বানাতে আসবেন না।”
অফিসার মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-“কি যে বলেন মিস্টার দাইয়ান সাহেব। আপনি নিজে একজন ল’য়ার হয়েও এভাবে আইনের লোকদের সাথে কথা বলছেন? আমাদের কাজ সবাইকে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে দেখা আমরা সে কাজ করছি। এখানে আপনার মোটেই এভাবে রাগারাগি করাটা উচিৎ নয়।”
দাইয়ান ক্ষুদ্ধ কন্ঠে বলে,
“হ্যা! আপনাদের নিজেদের কাজ ভালোমতো করলেই খুশি হব। আর আমার পরিবারের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিপাত না করলেই খুশি হব।”
অফিসার বলে,
”কী করব বলেন, খুনের তদস্থলে সবাইকে সন্দেহের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা আমাদের একমাত্র কাজ। তা-ই আমাদের কাজটা কে কটূক্তি না করলেই ভাল।”
দাইয়ান বলে,
“আপনারা আপনাদের কাজ করেন।
কোন সমস্যা হলে বলবেন সাহায্য করতে এগিয়ে আসব। তাছাড়া গ্রামের লোকজনদের সাহায্য করার জন্য আমি গ্রামে বসবাস করছি।”
তখন লোকজনের ভিরের মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠে,
-“ভাইজান দুই বিয়ে করেছেন গ্রামের লোকদের কোন সাহায্যদানের জন্য জানতে পারি!”
দাইয়ান ভ্রু কুঁচকে আশেপাশে একবার দৃষ্টিপাত করে দেখে নেই। তারপর দাইয়ান মনে মনে বলতে থাকে,
-“কার কলিজায় এতো সাহস, সে ভীরের মধ্যে লুকিয়ে থেকে দাইয়ান কর পারসোনাল প্রশ্ন করে? হাতের কাছে পেলে বেডারে কেটে কুঁচিকুচি করে এই খালের পাড়ে পুঁতে রেখে দিব। শয়তান বেডা একবার খালি সামনে এসে দাইয়ানের মুখোমুখি হও।”
যে এই উক্তি করেছে, সে খুব ভালো করে জানে। এই দাইয়ান যদি জানতে পারে কে এমন মন্তব্য করেছে তাহলে তাকে আস্তা গিলে খাবে। কি দরকার যেচে বাঘের সামনে যেয়ে বলার,
–“নাও আমাকে তোমার দুপুরবেলার লাঞ্চ বানাও? ”
অফিসারের থেকে বিদায় নিয়ে দাইয়ান ফিরে আসে। আসার পথে তার বাড়ির তিন রমণীর সাথে দেখা হয়।
(গঠনমূলক মন্তব্য আশা করবো)



চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here