#হৃদয়ের_সুখ_আপনি
#পর্ব-২৫
#Nishi_khatun
পরেরদিন সকালে দাইয়ান রিমশা কে সঙ্গে করে তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। সকলে রিমশা কে দেখে খুশি হয়। যাই হোক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক নষ্ট না হলেই হলো। একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে অনেক সময় লাগে। তবে সম্পর্ক ভাঙ্গতে দু মিনিট সময় লাগে না।
রিমশা কে দেখে বাড়ির সকলে খুশি হলেও আড়ালে কেউ একজন অখুশি থেকে যায়।
আজ ইলমা নিজে ভাইয়ের পুরো রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। সে জানতো তার ভাই কখনো এতো ভালো বউকে হেলাফেলায় হারাবে না।
দাইয়ান নিজে হাত ধরে রিমশা কে নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। দাইয়ান বলে,”বউ আজ থেকে এই ঘরে সাজাবো আমরা আমাদের সারাজীবনের স্বপ্ন। নিজেদের একসাথে দেখা স্বপ্ন গুলোকে বাস্তবিক রুপ এখান থেকে না হয় পরিণাম পাবে?”
রিমশা লজ্জায় দাইয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে রাখে।
এরপর বেশ দুজনে দিন গুলো স্বপ্নের মতো কাটতে থাকে। রাতে দুজনে একসাথে কাউকে কিছু না বলে গ্রামের মেঠোপথে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ে। কখনো পুকুরপাড়ে বসে জ্যোৎস্না বিলাশে মগ্ন থাকে।
এভাবে দুই পাখির জোড়ার দিন যাচ্ছে।
এভাবে কিছুদিন পার হবার পর একদিন হঠাৎ রাইসার প্রসববেদনা শুরু হয়। দ্রুত তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাইসা অনেক বছর পর বাচ্চা নেওয়াতে তার নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছিল না।
তাই ডাক্তার তার সিজারিয়ান ডেলিভারি করে। দিরহামের ঘর আলো করে দুই কন্যা সন্তানের আগমন ঘটে। হ্যা রাইসা দুই যমজ কন্যার জননী হয়েছে।
দুই কন্যার কথা শুনে বাড়ির সকলে খুব খুশি।
রাইসা যখন তার বাচ্চাকে প্রথম দেখে তখন খুশিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
দিরহাম তখন রাইসা কে উদ্দেশ করে বলে,
“দেখো রাইসা আমারা এক রিদিকে হারিয়ে দুইটা রিদি পেয়েছি। ”
রাইসা কান্নারত অবস্থায় বলে,”আলহামদুলিল্লাহ্!
আমি আজকের পর কখনো রিদির জন্য মন খারাপ করবো না। আমি সব সময় মেয়ের জন্য দোয়া করবো। আমার মেয়েটা জেনো ঐ পারে ভালো থাকে।”
এদিকে চেয়ারম্যান সাহবে একসাথে দুই নাতনীর খুশিতে গ্রামের সকলের বাড়িতে মিষ্টি পাঠিয়ে দেয়।
কয়েকদিন রাইসা কে হাসপাতালে থাকতে হয়। হাসপাতাল বাড়ি থেকে বহু দূরে হওয়াতে রাইসা’র সাথে হাসপাতালে দিরহাম, রিমশা আর ইলমা ছিলো।
দাইয়ান প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে তাদের জন্য খাবার নিয়ে আসতো।
সকলে যখন সকালের নাস্তা খেতে ব্যস্ত তখন দাইয়ান রিমশা’র হাত ধরে তাকে টেনে করিডোরে নিয়ে আসে। পেছনে থেকে রিমশা কে জড়িয়ে ধরে কাঁধের উপর থুতনি রেখে ফিসফিস করে বলে,”ও বউ আমি বাবা কবে হবো? বড় ভাই দুই বারে তিন কন্যার বাপ হয়েছে। আর আমি বাচ্চা মেয়ের সাথে এতবছর প্রেম করেও এক বাচ্চার বাপ হতে পারলাম না। ও সখিনার মা! তুমি আমার মনের দুঃখ বুঝলে না।”
রিমশা’র এখন লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে।
এই লোকটা যখনতখন তাকে লজ্জায় লাল করে ছেড়ে দেয়। হাসপাতালে এসে এভাবে এমন কথা বলার মানে কি? নাহ উনি কোন দিন ও ঠিক হবার মানুষ না।
রিমশা আস্তে করে বলে,” ইন শা আল্লাহ!
আল্লাহ যেদিন চাইবে আপনি সেদিন বাবা হবেন।”
দাইয়ান বলে,
“আমার কেনো জানি মনে হয়, আমি বাচ্চার বাবা হতে পারবো না। হতো ভাইয়ার মতো বাচ্চাকে কোলে করে আদর করার ভাগ্য আমার হবে না।”
রিমশা দাইয়ানের উপর রেগে বলে,
“কী সব খারাপ কথা বলেন। এমন উল্টা পাল্টা কথা বলতে নাই। আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন।”
এরপর সকলে রাইসা আর বাবুদের নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাবুদের সাত দিন বয়সে তার দাদাভাই খুব ধুমধাম করে তাদের আকিকার অনুষ্ঠান করে।
আকিকার অনুষ্ঠানের দিন বাড়িতে অনেক মেহমান এসেছে। বড় ভাবীর বাবার বাড়ির লোকদের আপ্যায়ন করার দায়িত্ব রিমশা’র কাঁধে। বেচারি সেই সকাল থেকে না খেয়ে কাজ করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে একটা সময় সে অতিথিদের জন্য পানির জগ কলপার থেকে ভরে নিয়ে যাবার সময় মাথা ঘুরেপড়ে যেতে লাগে।
রেহেনা বেগম চিৎকার দিয়ে ওঠে,”এই ইলমা তোর ভাবীকে ধর।”
ইলমা ভাবীর সাথে ছিলো বলে সে সাথে সাথে রিমশা কে জড়িয়ে ধরে।
রেহেনা বেগম এসে রিমশা’র উপর রাগারাগি করে। কাজ করতে বলেছে তবে নিজের জানের উপর জুলুম করে না। নিজের প্রতি খেয়াল রাখবে আগে তারপর অন্যদের চিন্তা করবে।
তখন রিমশা বলে,”আসলে মা! কিছুদিন ধরে শরীরটা দুর্বল লাগছে। হয়তো পেশার লো হয়ে গেছে। একটু বেশি বেশি শরবত আর ডিম দুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে।”
রিমশা’র মুখে এমন কথা শুনে রেহেনা বেগম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। তিনি কিছু একটা সন্দেহ করে। দাইয়ান কে ডেকে কিছু একটা আনতে পাঠিয়ে দেয়।
কিছু সময়পর দাইয়ান একটা ছোট প্যাকেট এনে রিমশা’র হাতে ধরিয়ে দেয়। রিমশা প্যাকেট থাকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
তা দেখে রেহেনা বেগম রিমশা কে একপ্রকার ঠেলে বাথরুমে পাঠিয়ে দেয়। কিছু সময়পর বাথরুম থেকে বেড়িয়ে রিমশা সোজা তার শাশুড়ি মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
রেহেনা বেগম রিমশা’র কপালে চুমা দিয়ে বলে,
“এখন কোন কাজ করার দরকার নেই তোমার।
তুমি ঘরে যেয়ে বিশ্রাম করবে। আমি দাইয়ান কে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ”
রেহেনা বেগম ছেলেকে রিমশা’র কাছে পাঠিয়ে দেয়।
দাইয়ান সামনে আসতেই রিমশা হাতের মুঠো খুলে দেখায় কাঠিতে রেজাল্ট পজিটিভ।
দাইয়ান খুশিতে কি করবে বুঝতে না পেরে রিমশা কে জড়িয়ে ধরে রাখে অনেক সময়। দাইয়ান তার অনুভূতি ভাষাতে প্রকাশ করতে পারছে না। সত্যি সে কয়েকমাস পর কন্যা অথবা পুত্র সন্তানের বাবা হবে। ছোট পিচ্চি হাত তাকে স্পর্শ করবে। দাইয়ান এতোবড় খুশির খবর শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়েগেছে।
এদিকে রেহেনা বেগম বাড়ির সকল কে এই খুশির খবর সম্পর্কে অবগত করেছে।
ঝর্ণা আর ইলমা রিমশা’র কাছে যেতে চাইলে রেহেনা বেগম তাদের নিষেধ করে দেয়। সে বলে,”ওদের দু জনকে একটু এখন একা থাকতে দাও। পরে অনেক সময় পাবে রিমশা’র সাথে গল্প করার।”
রুমে এসে দাইয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে রিমশা। আজকে সত্যি তার বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগছে। হয়তো কাজের চাপ বেশি পড়েছে। তবে দাইয়ানের কাছে থাকলে সে এতোটা মানুষিক শান্তি অনুভব করে তার কাছে এই শরীরের দুর্বলতা কিছুই না। দাইয়ান রিমশা’র মাথায় হাত বু্লিয়ে দিতে থাকে। রিমশা কিছু সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। রিমশা কে সুন্দর করে শোয়াই দিয়ে দাইয়ান বাহিরের কাজে মনোনিবেশ করে।
বাড়ির অনুষ্ঠানের পাঠ চুকে গেলে। সব কিছু ঠিকঠাক করতে বেশ সময় লাগছে দাইয়ানের।
দাইয়ান ব্যস্ত দেখে বিকালের দিকে ঝর্ণা আর ইলমা ভাবীর কাছে এসে তাদের অনাগত ভাগ্নেভাগ্নি কে নিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছে।
রিমশার খুশি লাগছে আবার প্রচুর পরিমাণে লজ্জা লাগছে। বাহিরে গেলে সবাই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকছে। অনুষ্ঠানের বাড়ি ছিলো বলে এমন পরিস্থিতিতে তাকে পড়তে হয়েছে। সবাই চলে গেলে তখন নিজেরা।
এদিকে রাইসা দিরহাম কে বলে,”রিমশা কে ডেকে পাঠাও! মেয়েটাকে অভিনন্দন জানানো দরকার!”
দিরহাম বলে,”দেখো বাচ্চাদের কোলে নিতে রিমশা আসবে।তখন অভিনন্দন জানাবে। অযথা অসুস্থ মেয়েটাকে তলব করলে কি না কি হয়েছে ভেবে ছুটে চলে আসবে। এসব মোটেই ভালো দেখাবে না। তখন ওর কিছু হয়ে গেলে কার কি হবে?”
রাইসা মন খারাপ করে চুপচাপ বসে ছিলো। সন্ধ্যায় রিমশা বাবুদের দেখতে আসে তখন রাইসা রিমশা কে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানায়। রিমশা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
রাইসা বলে,”ওরে আমার লজ্জাবতী লাজুকলতা রে। এতো লজ্জা পেয়ে আর কাজ নেই। যাও এবার থেকে নিজের প্রতি যত্নবান হও।”
রিমশা লজ্জায় মাথা নিচু করে সম্মতি প্রকাশ করে।
রাতে যখন দাইয়ানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে ছিলো! তখন দাইয়ান বলে,”রিমশা এতো সুখ আমাদের সহ্য হবে তো? কারো খারাপনজর পড়বে না তো আমাদের খুশিতে?”
রিমশা বলে,”আপনি আপনার এই ফালতু চিন্তা কবে বাদ দিবেন? এসব কথা বাদ দিয়ে অনাগত সন্তান কে স্বপ্ন দেখুন। তাকে কিভাবে মানুষের মত মানুষ রুপে গড়ে তুলবেন।”
দাইয়ান রিমশা কে আলিঙ্গন করে বলে,” কেনো জানি না।এসব খারাপ চিন্তা একাই চলে আসে। তবে সমস্যা নেই। এখন থেকে আমরা তিনজন। আমার।দায়িত্ব তোমার থেকেও দ্বিগুণ। এক তোমাকে দেখে রাখা আরেক অনাগত বাবুর মা কে সুস্ত ভাবে সন্তান জন্মদানের মানুষিকতা রাখতে সহায়তা করা।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন)
”
”
”
চলবে……