#অবুঝ_প্রেম
পর্ব ২৮
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno
তুর্জ দরজায় কড়া নেড়ে বারবার সারা সারা বলে ডাকতে থাকে। কিন্তু ভিতর থেকে কোন শব্দ না, তুর্জ দরজা ভাঙার জন্য বারবার ধাক্কা দিচ্ছিলো,,তবুও যখন দরজা খুলছিলো না তখন তুর্জ দূরে থেকে দৌড়ে এসে দরজায় ধাক্কা দেওয়া কথা ভাবে। তুর্জ বেশ কিছুটা দূরে গিয়ে দৌড়ে এসে যেই না দরজায় ধাক্কা দিবে আর অমনি আপনাআপনি দরজা খুলে যায়। তুর্জের এতো বড় জিম করা সিক্স প্যাক বডি গিয়ে সোজা সারার উপর পরে।
ওওমায়া ওওবাবাহ বাবা গো আমি মরে গেলাম গো,,,আমার হারগুলো ভেঙে ধুলাবালিতে পরিনত হয়ে গেছে গোও,, আয়াল্ললাহ গো এটা রক্তে মাংসে গড়া মানুষের শরীর নাকি ইট পাথরে তৈরি ইলেক্ট্রিক খাম্বা,,,,
তুর্জের উতলা মন কে শান্তনা দিচ্ছে সারা এইসব আহ্লাদী বকবকানি শুনে। সে তো বারবার চাইছে যেন সারা জীবন সে এমন বকবকানি শুনতে চাই।, সারার ঠোঁট নাড়িয়ে বকবক করার দৃশ্য দেখছিলো।
আচ্ছা আপনার এই ৮০ কেজির বস্তা কি আমার উপর থেকে নামাবেন নাকি আমাকে সোজা কবরে পাঠাবেন?
সারার মুখে এমন ফালতু কথা শুনে তুর্জ রেগে গিয়ে সারাকে বলে, আর কখনো এমন কথা বললে এমন থাপ্পড় মারবো যে, থাপ্পড়ের সাথে দাঁত গুলো পড়ে ৮০ বছরের বুড়ি বানিয়ে দেবো। এতোক্ষণ কই ছিলে তুমি?? এতো করে ডাকছি তবুও সারা দিচ্ছো না কেন??
ওহ আমি তো ওয়াশরুমে ছিলাম,, চোখে মুখে রক্ত লেগেছিল, ফোনের গ্লাসে নিজেকে দেখে আমার পিলে চমকে উঠেছে,, তারউপর রক্ত গুলো শুকিয়ে ফেসক্যাপের মতো টান টান হয়ে গেছিল। তাই এগুলো ধুয়ে ফ্রেশ হতে গেছিলাম।
তুর্জ উঠে দেখে এখনো রাকিব জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে আর চারিদিকে রক্তে ছোপ ছোপ দাগ। তুর্জ তার টিম কে বলে,, খুব দ্রুত যেন এদেরকে তার সিক্রেট হাউজে নিয়ে যায়। তারপর তুর্জ সারা তার বাবার কাছে গিয়ে তার বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। তুর্জের মা সেই সন্ধ্যা থেকে কান্না করে করে প্রেশার হাই করে দিয়েছে। ময়না উনার পাশে বসে নানা রকম কথা বলে বোঝাতে চেষ্টা করছিলো।
সারার সারা শরীরে এবং জামাকাপড়ে রক্ত দেখে তুর্জের মা আতঙ্কিত হয়ে যায়। নিজের মা কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য তুর্জ বলে,,
মা তুমি অযথা টেনশন করে নিজের শরীর খারাপ করো না প্লিজ,, সারা একদম ঠিক আছে,, রাস্তায় একজন লোক সামান্য এক্সিডেন্ট করেছিলো আর সারা তাকে বাঁচাতে গিয়ে এমন রক্তের দাগ লেগেছে।
মা দেখো আমি সত্যিই ঠিক আছি,, কিচ্ছু হয়নি আমার!
তুর্জের মা সারাকে কিছুক্ষণ বুকে জরিয়ে নিয়ে থেকে তারপর উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বলেন। সারা আর তুর্জ উপরে উঠে আসে। সারা কাবার্ড থেকে নিজের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে যেতেই তুর্জ সারার হাত ধরে আস্তে আস্তে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসছে আর বলছে,,,,
আমি ৮০ কেজির বস্তা তাইনা? আর আমার বডি ইট পাথরের খাম্বা?? কিইই হুম এখন এমন ভীতু ভীতু এ্যাক্টিং করছো কেন,, তোমার নাকি খুব জেলাস ফিল হয় আমাকে অন্য কারো সাথে দেখলেই,,,, তাহলে এতো দূরে কেন?
দেএএখুন, দূরে থাকুন, নয়তো খুউন করে দিবো,, ভালো হবে না,,,
সারার খুন শব্দ টা বলার পরে মনে হয় যদি রাকিব মারা যায় তাহলে কি হবে? তাই সারা তুর্জকে বলে,,
আচ্ছা ওই ভিলেন টা কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে? যদি মরে যায় তাহলে তো শব্বনাশ হয়ে যাবে,, আমার ফাঁসি হয়ে যাবে,, আমার নাতিপু,,,,,,,,
জ্বীভে কামড় কেটে সারা থেমে যায়, কারণ তুর্জ কটমট চোখে তাকিয়ে আছে সারার দিকে। তুর্জ সারাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের ফোন বের করে কাউকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে,,
ডক্টর কি বলেছে? কি অবস্থা এখন??
,,,,,,,
যেভাবেই হোক ওই শয়তান টা কে জীবিত চাই আমি!! আমার অনেক হিসাব বাকি আছে ওর সাথে। দিক পড়লে শহরে সব চেয়ে বড় ডক্টর কে তুলে নিয়ে আসো,,
,,,,,,,,,,
প্রতি ঘন্টায় আপডেট চাই ওকে??
তুর্জ ফোন কেটে দিয়েছে , তারমানে এখনো রাকিব বেঁচে আছে,, যাক বাবা বাচা গেলো।
কি ভুতের মন্ত্র পড়ছো??
ইয়েএ না কিছু না,, কাল আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান আছে,, যায় তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি,, এমন রক্ত মাখা পোশাকে নিজেকে রাক্ষসী রাক্ষসী মনে হচ্ছে।
এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় সারা।তুর্জ নিজের ল্যাপটপে কি কি সব করে সারা বের হওয়ার পরে সে নিজেও ফ্রেশ হয়ে ডিনার সেরে ঘুমিয়ে পড়ে।
প্রতিদিনের চেয়ে আজ আরো অনেক সকালে সারার ঘুম ভেঙে গেছে। কিভাবে ঘুম থাকে বলুন,, আজ জীবনের 1স্ট কলেজ যাওয়া শুরু তারউপর এতো বিশাল অনুষ্ঠান,, কত কি জল্পনা কল্পনা,, ঘুম কি আসে??
হালকা বেগুনি রং ও সুতি কাপড়ের লং সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে জিন্স রঙের গ্যাবার্ডিন পড়ে নেয়,,পায়ে ফ্যাশনেবল কনভার্স জুতা পড়ার পরে ভাবতে থাকে উপরে হিজাব পড়লে ভালো লাগবে নাকি ওড়না?? এই মুহুর্তে কেউ যদি তার এই প্রব্লেম সলভ করে দিতো তাহলে কত ভালো হতো,,, কিন্তু দুঃখের কপাল কেউ নাই। সারার এমন হুটপিট করার শব্দে তুর্জের ঘুম তুঙ্গে উঠে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু তুর্জ ঘাপটি মেরে আছে সেই সক্কাল থেকে। সারা এবার বাধ্য হয়ে তুর্জকে ডাকা আরম্ভ করে,,
এইযে হ্যালো ,, ওহে মিস্টার শুনছেন,, একটু উঠুন না প্লিজ,, একটা হ্যাল্প লাগবে।
এতো করে ডাকার পরে ও উঠা না দেখে সারা তুর্জকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে ডাকতে থাকে। বাধ্য হয়ে এবার তুর্জের ভান ভাঙতে হলো। চোখ বন্ধ রেখেই বলে,,
এই সাত সকালে এমন ঘোড়ার মতো চিল্লাচ্ছো কেন??
সারার ভিষণ রাগ হলো তাকে ঘোড়া বলার জন্য কিন্তু এই মুহুর্তে তার রাগ কে প্রাণ হজম ক্যান্ডির মতো হজম করে নিয়ে বলে,,
আচ্ছা বলুন না!! এই ড্রেসের সাথে ওড়না বেশি ভালো লাগবে নাকি হিজাব??
উউউ,,আমার একটা ফ্রেন্ডকে হিজাব বেশ সুন্দর দেখায়,,চাইলে তুমিও হিজাব পড়তে পারো কিন্তু ওর মতো এতো সুন্দর লাগবে নাকি জানি না।
এবার টেস্টি হজমি দিয়েও রাগ হজম করা সম্ভব হলো না সারার। নিজের হাতে থাকা চিরুনি ছুড়ে মারে তুর্জের দিকে তারপর হাতে সামনে যা পাচ্ছে সব কিছু যাচ্ছে তুর্জের দিকে।
আর কত ফ্রেন্ড আছে আপনার হ্যাঁ?? কতগুলো লাগে আপনার?? নিজেকে হিরো ভাবেন? জীবনের সব চেয়ে বড় ভুল সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলের উপর ক্র্যাশ খেয়ে দুর্ঘটনা বশত বিয়ে করা। বুঝে গেছি আপনার চরিত্র, আপনি গাছের ও খাবেন, তলারও কুড়াবেন।
আচ্ছা!!! আমি কি সত্যিই গাছের টা খেয়েছি?? কিন্তু কবে খেলাম, কিভাবে খেলাম মনে হচ্ছে না কেন? তোমার কি মনে আছে কবে কিভাবে গাছের টা খেয়েছি??
সারা নিজের কথায় নিজেই ফেসে গেছে,, এখন কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তুর্জ সারার এমন লজ্জা মাখা মুখে দেখে অন্য রকম আবেশে হারিয়ে যায়। হঠতে তুর্জের ফোনের রিংটোনে আবেশের মায়া ত্যাগ করে ফোন পিক করে।
হ্যাঁ বলো,,,
,,,,,,
যতদিন সুস্থ না হবে ততদিন ডক্টর কে যেতে দিও না,,
আমি ইভিনিংয়ে আসবো। আর তনিমার হ্যাল্প করা সবার নামের লিস্ট বের করে তাদের স্ব-শরীরে দেখতে চাই।
চলবে,,,