ক্রাশ যখন বড় আপু-Part 10

0
171

★★★ক্রাশ যখন বড় আপু★★★
#লেখক_আসিফ
~~~পর্ব_১০~~~
.
.
— আব্বু আমি,,নিধিকে ভালোবাসি আর নিধিকে বিয়ে করতে চাই?(ভালোবাসার মানুষ ত এভাবে হারিয়ে যেতে পারে না।)
— ঠাস,,,,,, (আব্বু আমার গালটা লাল করে দিয়েছে)
নিধিও অনেকটা অবাক হয়ে গেছে আমার,,, কথা সুনে।।আম্মু হয়তো বুজতে পারে নিধিকে আমি ভালোবাসি।।।চাচ্চু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না।কারন আব্বুর মুখের উপর কারো কথা চলে না?
— (আমি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছি)
— কি বললি তুই,,,আবার বলতো?(আব্বু)
— আব্বু আমি সত্যিই নিধিকে খুব ভালোবাসি,,,আমি জানি নিধিও আমাকে ভালোবাসে?(আমি একটু কাদো কাদো ভাব নিয়ে বললাম)
— নিধিকে তুই ভালোবাসিস,,,আমার মান সম্মান ডুবাতে চাচ্ছিস,। নিধি তর বড় আপু।(বাবা কেন এই কথা টা বার বার টেনে আনে আমি বুজি না)
— আব্বু নিধি আমার এক বছরের ছোট,,,লেখাপড়ায় অনেক এগিয়ে গেছে?(আমি)
— চুপ কর বেয়াদব,,,, আমার মুখে মুখে কথা বলতাছিস।।(আব্বু খুব রেগে)
— আব্বু নিধি আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে না।আর আমিও।(আমার কথা সুনে বাবা যেন আরো রেগে গেলেন)
— দাড়া আমি তর পাগলামি বার করছি,,,(বলেই মারতে শুরু করলো,,,,নিধি আর আম্মু আমাকে,,,,রুমে নিয়ে গেলো।।আব্বুকে চাচ্চু বাহিরে নিয়ে গেছে।।।)
— নিধি তুই আমাকে ভালোবাসিস না?(নিধির হাত টা ধরে বললাম)
–(নিধি কি বলবে বুঝতে পারছে না।।।।চুপ করে আছে)
— নিধি আমি তোকে ছাড়া বাচবো না দেখিস।। যখন আমি বার বার পরিক্ষায় ফেল করতাম আব্বু আমাকে খুব মারতো।অনেক বার ঠিক করেছি মরে যাবো।কিন্তু নিধি তোর দেওয়া সাহস আর ভালোবাসা আমাকে বাচিয়ে রেখেছে!।।(আমি)
আমার কথা সুনে আম্মু কান্না করছে।। নিধির চোখের কোনেও মনে হয় পানি ছল ছল করছে কিন্তু নিধি মনে হয় কোথাও বাধা পাচ্ছে।।কিছুই বলছে না নিধি!
— আসিফ,,,বাবা,,আমি জানি নিধিকে তুই অনেক ভালোবাসিস,,,,,নিধির সাথে তুই ভালো থাকবি।।কিন্তু তর আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস ত আমাদের কারো নেই।।(আম্মু বললো)
— আম্মু সত্যি বলছি,,,,আমি নিধিকে খুব ভালোবাসি শুধু লেখাপড়ায় পিছিয়ে গেছি বলে আমাকে এমন শাস্তি দিও না প্লিজ।।।(আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছি)
আম্মুও কিছু বলছে না,,,কেদে যাচ্ছে।।নিধিও তার নিজের রুমে চলে গেছে।।।
— তুই ফ্রেশ হয়ে কিছু খেতে নে বাবা আমি তর আব্বুকে বুঝিয়ে বলবো।?(আম্মু আমাকে আশা দিয়ে আব্বুকে হয়তো বুঝানোর জন্য গেছে)
নিধি কেন কিছু বলছে না।।আমি ত নিধির চোখে ভালোবাসা দেখতে পাই।।নিধি কেন তা বলতে চায় না মুখ খুলে।। যদি নিধি আমাকে ভালো না বাসতো প্রতিবার যখন আব্বুর হাতে মাইর খাই, বাচাতে আসতো কেন।।অসুস্থ হলে যত্ন করতো কেন? নিজের হাতে খাইয়ে দিতো কেন??
নিধি চোখের পানি লোকানোর চেস্টাই বা করবে কেন???
আমি নিধির রুমে গেলাম,,,নিধির রুম থেকে কান্নার আওয়াজ সুনতে পারছিলাম।।দরজা লক করা ছিল,,,।
নিধিকে ডাকতে শুরু করলাম,,,নিধি কিছুক্ষন পর দরজা খুললো।
— কেন এসেছো?(নিধি এমন ভাবে কেন বলছে)
— নিধি,, তুই এটা কি বলিস আমি আসতে পারি না?(মনের মধ্যে নিধির কথায় কষ্ট অনুভব করে বললাম)
— নাহ মানে কিছু বলবে নাকি?(নিধি মনে হয় অভিনয় করতে গিয়েও করতে পারছে)
— নিধি,,,তুই আমাকে ভালোবাসিস না?(নিধির হাত ধরে)
— ভাইয়া এভাবে হাত ধরা ঠিক না আমি এখন বড় হয়েছি???(কি বলছে নিধি।তাহলে কি নিধিও আমাকে ভালোবাসে না)
— কি বলিস নিধি তোর হাত ধরাটা আমার অপরাধ হয়ে গেলো।।।তুই এই হাত গুলো দিয়ে আমাকে কত খাইয়ে দিয়েছিস।।আব্বু যখন অনেক মারতো।।তুই ত তর এই হাত গুলো দিয়ে আমার শরিরে ব্যাথার মলম,,,তেল মালিশ করে দিতি।।।(ছেলেরা খুব কষ্ট না পেলে কাদে না।।মনে করেন আমিও নিধির কথা সুনে কান্না ধরে রাখতে পারলাম না)
— (নিধির চোখেও পানি,,,কিন্তু লোকানোর চেস্টা করছে)
— নিধি তুই কি আসলেই আমাকে ভালোবাসিস না?(অভিমান করে)
— না করি না,,,তুমি রুম থেকে বের হও?( নিধির মুখে এই কথা সুনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।।মনে হচ্ছে কলিজা পুরে যাচ্ছে)
— নিধি তাহলে কি এত দিন তুই ভুল ছিলি।।কেন এত খবর রাখতি আমার,,,। কেন প্রতিবার বেচে যাওয়ার কারন তুই ছিলি।।।(কেদে কেদে বললাম)
— হুম ভুল ছিলাম,,,এখন যাও প্লিজ,,,বড় আব্বু দেখলে তোমাকে আবার মারবে???(নিধি ত এখনো আমার কথা ভাবে।।তাহলে ভালোবাসে না কেন?>)
— মেরে ফেলুক নিধি,,,,আমি এমনে তেই তোকে না পেলে আর বাচবো না।?(রুম থেকে বের হয়ে এসেছি)
নিধি আবার রুম বন্ধ করে দিয়েছে।,,,আমি নিজের মধ্যে কোনো শক্তি খুজে পাচ্ছি না।।।আসলেই কি নিধি আমাকে ভালোবাসে না।।নাকি ভাই হিসেবে আমার প্রতি তার মায়া ছিল।তাই এত খবর রাখতো,,,,।আমি কি এগুলোকে ভালোবাসা ভেবেছি।।আমি ত সত্যি নিধিকে ভালোবাসি।।।নিধি যদি একবার বলতো আমিও তোমাকে ভালোবাসি।।তাহলে ত মরে গিয়েও শান্তি পেতাম।।।নিজেকে আর বাচিয়ে রাখার বিন্দু ইচ্ছে খুজে পাচ্ছি না।
সারাদিন না খেয়ে রুমে সুয়ে ছিলাম। আর কান্না করছি।।।নিধিও কি আমাকে কথা গুলো বলে কান্না করছে? নাকি খুব ভালো আছে।কে জানে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
আম্মু খাবার নিয়ে এসেছিল কিন্তু খাইনি?আব্বু আমার সামনে আসে নাই।।।নিধি আমার রুম পাশাপাশি তাই।।বুজতে পারছি যে নিধির রুমে আব্বু গেছে।।।আমার থেকে নিধিকেই আব্বু ভালোবাসে।।।
নিধির বিয়ের পাকা কথা এখনো হয় নি,,,একবার ভেবেছিলাম আব্বুর পা ধরে নিধিকে চেয়ে নিবো।।কিন্তু নিধি ত আমাকে ভালোবাসে না বলে দিলো,,,তাহলে বলেই বা কি হবে???
বাহিরে গিয়ে,,,,এক বক্স সিগেরেট নিয়ে আসলাম,,।।
যখন আব্বু আমাকে ফেল করার জন্য মারতো তখন,,,সিগেরেট খেতাম কিন্তু খুব গোপনে।।একদিন ছাদে উঠে সিগেরেট খাচ্ছি।তখন রাত এগারো টা বাজে।।।নিধি আমার পিছয়ে দাড়িতে রাগী একটা লুক নিয়ে তাকিয়ে ছিল।।।আমি পিছনে ফিরতেই ভুত দেখার মত ভয়ে লাফিয়ে উঠলাম।এত রাতে নিধি ছাদে আসে না কখনো।।
নিধি আমার হাতে সিগেরেট দেখে,,, সিগেরেট টা মাটিতে ফেলে দেয়।।।আর মাথা ছুইয়ে কথা রাখে,,যেন আর কোনো দিন কোনো কারনে সিগেরেট না খাই।।।
কথা দিয়ে ছিলাম।নিধির কাছে আর সিগেরেট হাতে নিবো না।।কিন্তু আজ ত নিধি নেই নিধি অন্যকারো হয়ে যাবে।
নিধি আমাকে ভালোবাসে না বলেছে।।।
বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগেরেট হুকছি।।আর নিধির কথা গুলো ভেবে চোখের পানি ফেলছি।।নিধির প্রতি অভিমান বেড়ে গেছে খুব।
হঠাৎ পিছনে কারো কান্নার আওয়াজ সুনতে পেলাম।।
পিছনে তাকিয়ে দেখি নিধি কান্না করছে,,,।
— নিধি কাদছিস কেন তুই? (নিধিকে বললাম)
— তুমি নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো?(নিধি কান্না সুরে বললো)
— নিধি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি না রে,,,নিজের কষ্ট গুলো দুর করার চেস্টা করছি।।।(আবার সিগেরেট টানছি)
— তুমি না প্রমিজ করেছিলে আর সিগেরেট খাবে না?(কান্না সুরে)
— যার কাছে প্রমিজ করিছিলাম।সেই ত আমাকে ভালোবাসে না।। আমাকে রুম থেকে বের করে দেয়।।।তার হাত ধরাটা অপরাধ মনে করে।।।(অভিমান করে)
নিধি হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথে মুখ গুজে কান্না করতে থাকে।।।নিধির এমন কান্ডে আমি অবাক।। আমার টি -শার্ট ভিজে গেছে নিধির চোখের পানিতে।।।
— নিধি আমাকে জড়িয়ে ধরিস না।তুই অনেক বড় হয়েছিস?(অভিনাম মাখা কন্ঠে বললাম)
— ভাইয়া আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,,,কিন্তু বড় আব্বুর মুখের উপর কিছু বলতে পারবো না।।তুমি নিজেকে এভাবে কষ্ট দিও না।।তুই আসার পর থেকে কিছু খাওনি,,,,প্লিজ কিছু খেয়ে নাও।আমি তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।(নিধি এখনো জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বলে যাচ্ছে!)
— আমি জানতাম নিধি,,তুই আমাকে খুব ভালোবাসিস।।অই সময় তর কথা গুলো কেমন মিথ্যা মিথ্যা মনে হচ্ছিল।।চল আব্বুর কাছে যাই,,,আমরা দুজন দুজনকে ভিক্ষা চেয়ে নিবো।।(নিধিকে টান দিলাম আব্বুর কাছে যাবার জন্য)
— না,,ভাইয়া?আমি পারবো না। বড় আব্বু আমাকে কসম দিয়েছে।।।(নিধি আমাকে টেনে ধরলো)
— কি কসম করিয়েছে?
— বলেছে,,আমি যদি তোমাকে ভালোও বাসি তার পর যেন ভুলে যাই।।।কারন ছেলে পক্ষকে কথা দিয়ে ফেলেছে। যেন সম্মান না নষ্ট করি।।আর যদি আমার মুখে তোমাকে ভালোবাসার কথা সুনে তাহলে চির দিনের জন্য বড় আব্বুর সাথে সম্পর্ক শেষ।।(নিধি কেদে কেদে বলছে)
— কি বলিস নিধি,,,আচ্ছা আমি একাই যাবো।।।(আব্বু খাবার টেবিলে বসে আছে।।হয়ত নিধিকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঠিয়েছে)
নিধি আমার পিছন পিছন আসছে,,,চোখে কান্নার ছাপ থাকলেও লুকিয়ে ফেলেছে পাক্কা অভিনেত্রীর মত করে।
আমি আব্বুর সামনে বসে,,,পা ধরে আব্বুর কাছে নিধিকে চাইতে লাগলাম।।আব্বু রাগে আমাকে,,,এত মাইর মারে মনে হয় তার পর অ স্বাদ মিটে নাই আব্বুর।।আম্মু,, নিধি,, চাচা ধরে রাখতে পারে নাই।।আব্বু আবার বলেছে আমার মুখে যদি ভালোবাসার কথা সুনে তাহলে নাকি আব্বুর মরা মুখ দেখবো।।এই কথা সুনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।।,, আব্বুর দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের পানি ফেলছি।।।নিধি,,, আম্মু,, চাচ্চুও চোখের পানি ফেলছে।।।
আমি আর কিছু বললাম না।মুখের আওয়াজ বন্ধ করে দিলাম।।কান্নার আওয়াজ অ করছি না।।।আম্মু আমাকে রুমি দিয়ে আসলো,,,,খাবার এনে ছিল খাইনি।।নিধি আসতে চেয়েছিল আটকিয়ে দিয়েছে নিধিকে।।।
আমি ঠিক করে ফেলছি,,,আজ রাতেই মরে যাবো।।আমি বেচে থাকতে নিধিকে কারো হতে দেখতে পারবো না।।পারবো না আব্বুর লাস দেখতে তাই মরে গিয়ে আব্বুর কথা রাখতে সাহায্য করবো।।
আম্মু আবার আমার রুমে আসলো।।।এসে কান্না কাটি শুরু করে দিছে।।।
–আম্মু তুমি কান্না করছো কেন?(আমি)
— তর আব্বুকে বুজাতে গিয়েছিলাম,,,তর আব্বু,,আমাকে মরা মুখ দেখার ভয় দেখিয়ে দিল।।আর যেন এই কথা মুখে না আনি।।।(আম্মু)
— আনবো না।।। আম্মু তুমিও আনবে না।।আমরা আব্বুকে যে খুব ভালোবাসি।নিজের জিবন থেকেও। (আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম।।আর হয়ত এভাবে জড়িয়ে ধরা হবে না।)
.
,
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here