–” ইয়াহ! কাল সকালের ফ্লাইটে আমরা আসছি! হ্যা ফুল ফ্যামিলি আসবো। ইয়াহ দোস্ত দীর্ঘ ৩ বছর পর আবার দেখা হবে।আমেরিকাতে ভালো লাগে না।বাংলাদেশটাই আমার কাছে সেরা।”
বলতে বলতে নিজের উপর ধরাম করে কেউ পড়তেই আৎকে উঠে এক চিৎকার দিলো ব্যাক্তিটি,,
–“, আল্লাহ রেএএএএএএএ! এই জলহস্তি উঠ আমার উপর থেকে মাগো মা।”
ব্যাক্তিটির চিৎকার শুনে ফোনের ওপাশের মানুষটাও বলে চলেছে,
–“, হ্যালো হ্যালো আফরান ঠিক আছিস তুই?কিরে কি হয়েছে?”
আফরান কি বলবে সেই কখন আফরান এর হাত থেকে ফোন পড়ে গেছে।সে এখনো জোড়ে জোড়ে বলছে,
–“ওরে জলহস্তি উঠ নাহলে আমি কিন্তু তোকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।সাদু উঠ বলছিইইইইইই।”
আফরান এর কথা শুনে সাদু ধুম করে একটা কিল দিয়ে দিলো আফরান এর পিঠে।
–“, উফফ! মা গোওওও। আর মারিস না।উঠ আমার উপর থেকে।”
–“,বেশ হয়েছে আর বলবি আমাকে জলহস্তি।
–“নাহ!! বোন আমার উঠ এইবার আমার উপর থেকে।”
আফরান এর কথা শুনে সাদু খিলখিল করে হেসে দিলো বললো,,
–” ভালো হয়েছে আমার জন্য তাহলে তুই আসার সময় আইস্ক্রিম আনিস নাই কেন?ইউ নো না হাউ মাচ আই লাভ আইসক্রিম।”
–“হ্যারে খাদকনি আমি জানি তুই কতো ভুক্কার এইবার উঠ আমার উপর থেকে আইসক্রিম এনেছি দেখ আমার রুমের ফ্রিজে।”
–“,সত্যিইইইইইইইইইই!” এক চিল্লান দিয়ে দৌড়ে ফ্রিজ খুলে আইসক্রিম খেতে খেতে সাদু চলে গেলো।”
আফরান সস্তির নিশ্বাস ফেললো বোনটা তার ভীষন পাজি। তাকে দিন রাত জ্বালিয়ে মারে।কিন্তু তবুও সে বোনকে অনেক ভালোবাসে। তার সব আবদার পূরন করে।আফরান এইবার বিছানার উপর ফোনটা কানে তুলে নিয়ে বললো,
–” হ্যালো মনির আছিস।”,
ওপাশ থেকে মনির বলে উঠলো,
–“হ্যা আছি!আগে তুই বল এমন চিল্লানি দিলি কেন?”
–” তুই জানিস না আমাদের ঘরে যে সবসময় একটা ঘর্নিঝড় ১৮০ কি.মি বেগে সদা ঘুরপাক খেতে থাকে।”
আফরান এর কথায় মনির হু হা করে হেসে দিলো।আফরান মনির এর হাসির আওয়াজ শুনতে পেরে বলে,
–“, হ্যা এখন তো নিজের বউয়ের কির্তীকালাপ শুনে হাসি পাচ্ছে যখন এইসব কিছু নিজের উপর এপ্লাই হবে তখন দেখবো কিভাবে সজ্য করিস।”
মনির মুচকি হাসলো বললো,
–“, আমি তো আমার এই পিচ্চি বউয়ের সকল আবদার মাথা পেতে নিতে রাজী।”
–” যেহেতু এতো ভালোবাসিস বরং আজ থেকে না সেই ছোট থেকে।আশা করি এইবার তুই ওকে নিজের মনের কথাটা বলে দিবি।”
মনির কিছু বললো না।আফরান আবারো বলে,
–” হ্রামী আমি ভাই হয়ে তোকে নিজের বোনকে পটানোর জন্য অনুমতি দিয়ে দিয়েছে আর তুই বেক্কল এর মতো খালি হাসিস।”
মনির বলে উঠলো,
–“, কুল ওকে কুল।আচ্ছা আমি এইবার ওকে বলে দিবো হ্যাপি।”,
–” হ্যা হ্যাপি।আচ্ছা শুন? ”
–” হ্যা বল!”
–” গেছ সামথিং।”
–“গেছ ওয়াট?”
–“গাধা একটা নিবির ও আসছে আমাদের সাথে।”
মনির এক লাফে উঠে বসে বলে,
–” সত্যি সালা সেই আরো কবে চলে গিয়েছে। তোদের আগে গিয়েছে নিবির।বছরে শুধু দু একবার এসে দেখা করে আমাদের সাথে। আমাদের ৩ জন এর তোদের ২ জন ছাড়া কতো কষ্ট হচ্ছে বুজতে পারছিস তোরা।”
আফরান হেসে বলে,
–“,হ্যা বুজেছি।আমরা আসছি ব্রো গেট রেডি।”
–” কাম ফাস্ট উই আর ওয়েটিং।”
বলেই ফোন কেটে দিলো।
____________
সাদু অনবরত টানছে একজনের হাত ধরে সে আপাতত সাদুর আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত।
–” নিবির ভাইয়ায়ায়ায়ায়া! তুই আমার আইসক্রিম সব খেয়ে নিলি রাক্ষস একটা।তোরা আমার ভাই না-কি শত্রু।”
সাদুর কথা শুনে নিবির দাত কেলিয়ে বলে,
–“, তো পিকু তুই আমার সামনে আইসক্রিম নিয়ে আসলি কেন?”
–” তাই বলে খেয়ে নিবি পুরো।আফরান ভাইয়াকে দিয়ে আমি কতো বলে আনিয়েছি আইসক্রিম।আর তুই সব খেয়ে নিলি।”
নিবির আইসক্রিম খেতে খেতে বলে,
–“, যা তোর রুমের ফ্রিজ খুলে দেখ। ”
সাদু চোখ বড় বড় করে এক দৌড়ে গিয়ে ফ্রিজ খুলে দেখে ভ্যানিলা ফ্লেভার এর কেক।তা দেখে খুশিতে আবার দৌড়ে নিবির এর কাছে এসে ওকে ঝাপটে ধরলো।
–“,থাংক্স ভাইয়া! তোরা দুইজন আমার বেস্ট ভাই।আই লাভ ইউ ভাই।”
–” হ্যা পছন্দের খাবার পেয়ে লাভ ইউ তাই না।নাহলে ভাই রা পচা।”
সাদু মাথা চুলকে বললো,
–“, এহেহেহেহে!! ওইটা তো এমনি বলি।বাট সত্যি আমি তোদের অনেক লাভ করি তোরা জানিস তো।”
–” হ্যা হ্যা জানি পিকু।আর উই ওলসো লাভ ইউ।”,
সাদু কিছুক্ষন ভেবে বলে,
–“, হেই ভাইয়া আমার না ড্যান্স করতে ইচ্ছে করছে।”
নিবির ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আবার বলে,
–” হ্যা তো কর না ড্যান্স।”
–” লাইক রেয়েলি ভাইয়া তুই ড্যান্স করবি না।হাউ ফানি ড্যান্স এর কথা শুনলে তুই সবার থেকে বেশি লাফাস।”
–” চল পার্টি করবো।”নিবির এর কথা শুনে সাদু এক দৌড়ে মিউজিক বক্স সাথে ডিস্কো লাইট এরেঞ্জ করে আবার নিবিরকে টানতে টানতে সেখানে নিয়ে আসলো।নিবির মিউজিক বক্স চালু করে গান দিলো,
সাদুর প্রিয় মিউজিক ব্যান্ড bts এর “,Dynamite”,গানটা দুই ভাই বোন উরা ধুরা নাচ শুরু করে দিলো।
এদিকে আফরান বাহিরে যাচ্ছিলো মিউজিক এর আওয়াজ শুনে সেদিকে যায়।সাদুর রুমে সামনে গিয়ে দেখে তার ভাই আর বোন উরাধুরা ড্যান্স করছে।আফরান কিছু একটা ভেবে বলে,
–” যার বউ এরকম পাগলামি করে তাকে এইসব না দেখালে কি হয় না-কি!”
আফরান মনিরকে কল দিলো।
এদিকে মনির আড্ডা দিচ্ছে,
–” ওরা কাল আসছে আমি ভাবতে পারছি না।আবার ৩ বছর পর ওদের দেখবো।”
আরিফ পিঞ্চ করে বলে,
–“,হ্যা ওদের দেখার জন্য না-কি আমাদের পুচকি ভাবীর জন্য।”
মেরাজ হেসে বলে,
–” আচ্ছা মনির আমরা কি সাদুই ডাকবো না-কি ভাবী।সেই ছোট বেলা থেকে তো সাদুই ডাকি।আর আফরান এবং নিবির পিকু ডাকে।তুই ডাকিস উম্মি।”
মনির মুচকি হেসে বলে,
–“আগে যা ডাকতি তাই ডাকবি।”
আরিফ বলে,
–“হ্যা রে! সাদু কি বড় হয়েছে না-কি বাচ্চাই।আফরান আর নিবির এর সাথে কথা হলেও সাদুর সাথে কথা বলতে পারি না।”
ওদের কথা মাজেই হঠাৎ মনির এর ফোন বেজে উঠলো।মনির ভ্রু-কুচকে বললো,
–” আফরান তো একটু আগে কল দিয়েছে। তাহলে আবার কল করছে কেন?”
মেরাজ বলে উঠলো,
–“তাড়াতাড়ি রিসিভ কর হয়তো জরুরি।
মনির হ্যা বলে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই চোখ-মুখ কুচকে ফেললো।বললো,
–“আব্বে ওই সালা এতো আওয়াজ এর মধ্যে কেন কল দিয়েছিস আমাকে কি অকালে বয়রা বানাতে চাস।”
আফরান হেসে উঠে বললো,
–“আজ্ঞে আমি না আপনার গুনোধারি বউ এইসব করছে নিজের চোখে দেখে নেন।আর হ্যা সাথে আপনার আরেক সালাও আছে।”
বলতে বলতে আফরান মনির কে ভিডিও কল দিলো।মনির ভিডিও কল রিসিত করতেই আফরান ক্যামেরা সাদু আর নিবির এর দিকে ঘুরিয়ে দিলো।আরিফ আর মেরাজ ও দেখতে এগিয়ে গেলো।মনির,আরিফ,মেরাজ চোখ বড়বড় করে দেখে সাদু আর নিবির “dynamite” গানে উরাধুরা লাফালাফি করছে যাকে সাদুর ভাষায় ড্যান্স বলে।
আরিফ দেখতেই দেখতেই বলে,
–” আব্বে এ মনির আগে জানতাম তোর বউ মানে সাদু মেন্টাল এখন দেখি সাথে এই নিবির গরুটাও মেন্টাল হয়ে গেছে।”
মেরাজ ভ্রু-জোড়া উচু করে বলে,
–“নিবির শান্ত ছিলো কবে।ওতো আমাদের ৫ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুষ্টুমি করতো।”
এদিকে সাদু আর নিবির লাফাতে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় ধপ করে সুয়ে পড়লো।সাদু কিছুক্ষন জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিবির কে বলে,
–“, এই ভাইয়া উঠ!যা আমার রুম থেকে এখন আমি আমার কলিজাদের সাথে কথা বলবো।”
নিবির মুখ বাকিয়ে বিরবির করে বলে,
–“হ্যা যাচ্ছি যাচ্ছি। এহহহ কলিজাদের সাথে কথা বলবো[ব্যঙ্গ করে]”
সাদু রেগে দিলো এক চিৎকার,
–“, ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া! তুই যাবি না-কি তোকে আমি এখন এই ঠান্ডায় সুইমিংপুলে চুবাবো।”
এদিকে সাদুর চিৎকার শুনে আফরান, মনির,মেরাজ,আরিফ কানে হাত দিয়ে নাক-মুখ কুচকে রেখেছে।
আফরান কাদো কাদো হয়ে বলে,
–“মনির দুলাভাই আমার এইবার আসলে এই ঝঞ্জালটাকে একেবারে তোর কাছে নিয়ে যাইস।আমাদের জীবনটা তেজপাতা মাক্স প্রো করে দিয়েছে।”
মনির হালকা হেসে বলে,
–” সে আমি আমার বউকে সামলে নিবো।কিন্তু তুমি কি করবা সোনা। তোমারটা যে রেগে আলুরদম হয়ে আছে।”
আফরান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
–“, জানি না কপালে কি আছে?এই তিনবছেরে প্রতিদিন ওকে নাহলেও ১০০+ কল দিয়েছে বাট একটা কল রিসিভ করেনি।মেসেজ তো দূরে থাক।শুধু তুই প্রথম প্রথম ভিডিও কলে ওকে দেখাতি। এবং সেয়াটাও ও বুজতে পেরে যায়।ফলে তোকেও সাফ বারন করে দেয় যে ওর রুমে ফোন চালানো যাবে না।তাই আর দেখা হয়ে উঠেনি।পিকুর সাথে কথা বলতে নিলে আগেই পিকুকে বলে দরজা লক করে নিতে।এখনো কথা বলছে পিকুর সাথে আমি জানি তাই তো দরজা লক করা।ইয়ার আমি কিভাবে ওকে মানাবো।”
আরিফ শান্তনা দিতে বলে,
–“আরিফ ইয়ার টেনসন করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে আমরা আছি তো।”
–হুম তাই যেন হয়।”
চলবে,,,,,,,,,,
#পঞ্চভুজ_তারা
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ০১