পঞ্চভুজ তারা – Part 21

0
210

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২১
🌿মেরাজ বসে বসে চ্যাট করছে জুইয়ের সাথে আর মুচকি মুচকি হাসছে।এইদিকে মিমের রাগ যেন আর গুনে গুনে বেড়েই চলেছে।সে বিরবির করে বললো,
—–” মনডায় চাইতাছে এই খোচ্চরডারে এক উষ্টা মাইরা চান্দে পাঠাইয়া দেই। ও মোর আল্লাহ প্লিজ গিভ মি সাম উপায় টু উষ্টা দিছ খাটাস।”
ওর ভাবনার মাজেই মেরাজের ফোন বেজে উঠলো আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখে জুই কল করেছে।ধপ করে মনে ময় মিমের মাথায় রাগের বিস্ফোরন ঘটলো। মেরাজ বলছে,
—–” এই কেমন আছো বেবি?”হ্যা আমি ভালো আছি! বাবু খায়েছো? হ্যা হ্যা আজকেই আসছি আমরা।”
মেরাজের কথাগুলো শুনে মিম আবার বিরবির করে বলে,
—–” এ্যাহহহ বাবু খাইছো( ব্যঙ করে) বাবু বলছ তাইলে তোর বাবুরে ফিডার খাওয়া৷ যত্তসব!কিযে করি? কি করি?কি করি? আইডিয়া!(মেরাজের দিকে তাকিয়ে)আব তেড়া ক্যায় হোগা রে কালিয়া থুক্কু মেরাইজ্জা।”
মিম একটা শয়তানি হাসি দিয়েই চিল্লানো শুরু করলো,
—–” যেতে যেত পথে পূর্ণমি রাতে চাদঁ উঠেছিলো গগনে হৈহৈ।”
এদিকে ওর হঠাৎ এমন বেসুরা গলায় গান শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মেরাজের হাত থেকে সেই কখন ফোন পড়ে গেছে।সে হা করে তাকিয়ে মিমের দিকে।এই মেয়ে এইসব গাইছে কি? তবে কি আজ উল্টা পুল্টা গান গাওয়ার দিবস যে সবাই এমন উল্টা পালটা গান গাইছে।
আফরান নূরকে বলে,
—–” তোমরা সব কয়টা ফ্রেন্ড কি মেন্টাল হোস্পিটাল এর রোগী।”
নূর রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
—–” আমাকে দেখে আপনার মেন্টাল মনে হয়।”
—–” এহেহেহ না মানে মেন্টাল না একটু পাগল টাইপ।”
নূর কিছুক্ষন চুপ থেকে গানের সুরে বললো,
—–” হাম পাগাল নেহি হ্যায় ভাইয়া হামারা দিমাগ খারাপ হ্যায়।”
আফরান হাসতে লাগলো,
—–” হ্যা দিমাগ খারাপ মানে ব্রেনে সমস্যা।
হঠাৎ আবার বিস্ফোরিত নয়ণে তাকিয়ে জোড়ে বললো,
—–” ওয়েট এ্যাহ মিনিট তুমি আমাকে ভাইয়া বললা!”
নূর একটা ভেটকিমাছের হাসি দিয়ে বলে,
—–” হ্যা আপনি তো আমার ভাইয়াই আফরান ভাইয়া।”
—–” ওয়াট দ্যা..”
আফরানের কথা কেড়ে নিয়ে নূর আবারো বলে,
—–” আফরান ভাইয়া।কিউট ভাইয়া।😍।”
আফরান অবাক হয়ে বলে,
—–” আমি তোমার কোন জন্মের ভাই?”
—–” এই ধরেন”
নূর বলতে আফরান জরিয়ে ধরলো তাকে।নূর রেগে আফরান কে সরিয়ে বলে,
—–” আপনি এমন ওলওয়েজ জোড়াজোড়ি করেন কেন?”
আফরান বেকুবের মতো বলে,
—–” তুমিই তো বললে জড়িয়ে ধরতে।”
—–” বলদ কোথার আমি বলছি আমার কথা শুনতে।”
আফরান মাথা চুলকে বললো,
—–” ওহ! আচ্ছা বলো আমি শুনছি।”
—–” এইযে মনির ভাইয়া আমার ভাইয়া।
—–” হ্যা।”
—–” আপনি আমার ভাইয়ের বন্ধু!”
—–” হ্যা!”
—–” তো ভাইয়ের বন্ধু কি হয়?”
আফরান সোজা উত্তর,
—–” ভাইয়ের বন্ধু ভাই লাগে।”
—–” আবার শুনেন?”
—–” হ্যা বলো?”
—–” সাদু আপনার বোন।”
—–” হ্যা!”
—–” আর আমি সাদুর বান্ধবি।”
—–” হ্যা।”
—–” তাহলে বোনের বান্ধবী আপনার কি হবে?”
—–” বোন!”
—–” সে যদি আপনার বোন হয় তো আপনি তা কি হবেন?”
আফরান কন্ফিউজড,
—–” ভাই হবে।”
নূর চিল্লিয়ে বললো,
—–” তো আপনি আমার ভাইয়া।আই লাভ টু কল ইউ ভাইয়া।”
আফরানের এতোক্ষন খেয়াল হলো নূর কি বলে যাচ্ছিলো আর ও কন্ফিউজড হয়ে ওর সাথে তাল মেলাচ্ছিলো।আফরান রেগে বলে উঠে,
—–” সাট আপ! আর একবার আমাকে ভাই বললে আমি তোমাকে এখন এই বাস থেকে ফিক্কা মারবো।”
নূর কিছু বলতে নিলেই আফরান আবার বলে,
—–” আই সেইড সাট আপ।”
নূর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে রইলো।মনেমনে বলে,
—–” যা বাবা এই আফু দেখি চেতি গেছে আর কিছু বলা যাবেনা। আজকে অনেক রাগাইছি।”
🌺এইদিকে মিমের এই গান শুনে সবাই মিটিমিটি হাসছে শুধু মেরাজ বাদে।কারন সবাই জানে মিম ইচ্ছে করে মেরাজ কে ডিস্টার্ব করার জন্য এইসব করছে।
—–” যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাদঁ উঠেছিলো গগনে।
সবাই তাল মিলিয়ে বললো,
—–” হেই হেই।”
মিম আবারো গাইছে।,
—–” দেখা হয়েছিলো তোমাতে আমাতে কোন এক শুভ লগনে সালা চাদঁ উঠেছিলো গগনে…”
মিম আর বেশি কিছু গাওয়ার আগেই মেরাজ ওর মুখ চেপে ধরলো।ধমকে বললো,
—–” স্টোপ দেয়ের ইউ ইডিয়ট! কখন থেকে এইসব উল্টা পুল্টা গান গাইছো তোমার মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে।মেন্টাল পেসেন্টরাও তোমার থেকে ভালো। ”
মিম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।যেন এক্ষুনি পারলে সে মেরাজ কে গিলে খেয়ে ফেলে।মেরাজ ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললো,
—–” কি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আমি কি তোমাকে ভয় পাই।”
মিমের চোখের ইশারা দিয়ে বুজালো ওর মুখ আর হাত ছেরে দিতে।কিন্তু তাও মেরাজ যখন ছাড়লো না।মিম জোড়েসোড়ে এক কামড় বসিয়ে দিলো মেরাজ এর হাতে।
——” আউউউউচ্চচ্চ।ইউউউউ! এইটা তুমি কি করলে?”
মিম ভাব নিয়ে বলে,
—–” বেশ করেছি আরো জোড়ে কামড় দেওয়া উচিত ছিলো হুহ্।”
মেরাজ হাত ধরে কাদো কাদো হয়ে বসে রইলো।মিম আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে।
—–” বেশ হয়েছে আবার আমার সামনে ওই জুইয়ের সাথে কথা বললে ভালো মতো শায়েস্তা করে দিবো।” মনে মনে বললো মিম।”
🍀এইদিকে মনির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বেজে গেছে। তাই সে বাস ড্র্বাইভার কে বাসের লাইট ওফ করে দিতে বললো আর সবাইকে ঘুমিয়ে যেতে বলে নিজেও চোখ বুজে রইলো।
সাদু তাকালো মনিরের দিকে দেখে সে চুপ করে সুয়ে আছে।চাদের আলো কতোক্ষন পর পর জানালা দিয়ে আসছে।আর তার আলো এসে পড়ছে মনিরের মুখে এতে যেনো আরো স্নিগ্ধ লাগছে।সিল্কি চুলগুলো কতোক্ষন পর পর সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় উড়ে চলেছে।সাদু চোখ সরিয়ে নিলো জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।
সে কি আদৌ মনিরকে ভালোবাসতে পারবে? কিন্তু ও ওর সর্বশ্ব দিয়ে চেষ্টা করবে মনিরকে ভালোবাসার।তবু ভালোবাসতে নাও পারলে সে কখনো মনিরকে ছেড়ে যাবে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদু চোখ বুজে গুনগুনিয়ে উঠলো,,
—–” 🎶🎶 Every time I close my eyes
Oh, I always see those eyes
So I wanted to forget
All the pain since we first met
If this isn’t real, someone wake me from this dream, please
Is this destiny, are we really meant to be
Fall, falling you..🎶🎶
হঠাৎ এমন গুনগুনিয়ে এতো সুন্দর গান শুনে মনির তাকালো।দেখে তার বউ গান গাচ্ছে।সে মুচকি হেসে আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো। তারপর বলে,
—–” গাইছো যখন একটু জোরে গাও আমিও শুনি।”
মনিরের কথা শুনে সাদু তাকালো সেদিক। তারপর মৃদু হেসে গান গাইতে লাগলো। আর মনির চোখ বুজে ভালোবাসার মানুষের কন্ঠের গান উপভোগ করতে লাগলো।
আরিফের কাধে মাথা দিয়ে সুয়ে আছে আলিফা।আর আরিফ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরিফের কেনো যেন পরিপূর্ণ লাগছে আজ।এই মেয়েটাকে এইযে বুকে জরিয়ে রেখেছে এতে যেন অমৃত্বের ন্যায় সুখ অনুভূত হচ্ছে তার।হঠাৎ আলিফার প্রশ্ন শুনে তাকায় আরিফ।,
—–” আচ্ছা আমাকে আপনি কিভাবে ভালোবাসলেন?”
আলিফা’ প্রশ্নে আরিফ হাসে।
—–” জানা জরুরি।”
—–” উফফ বলুন না।”
আরিফ গালে হাত দিয়ে ভাবনাময় ভান ধরে বলে,
—–” এইযে তোমাকে আলুর মতো লাগে দেখতে। এটা দেখেই প্রেমে পড়েছি।”
আলিফা রেগে আরিফের কাধ থেকে উঠে একটা ঘুশি দিলো ওর কাধে।
—–” অসভ্য আপনি আর আমার সাথে কথা বলবেন না।”
আরিফ হেসে উঠলো আলিফার বাচ্চাদের মতো স্বভাব দেখে।আলিফা মুখ গুমড়ো করে জানালার দিক মুখ করে বসে ছিলো।আরিফ ওকে টেনে নিজের বুকে জরিয়ে নিলো।তারপর আলিফা’র চুলে একটা চুমু খেয়ে বলতে লাগলো।
—–” ভালোতো বেসেছি সেই ছোট্ট তুমিটাকে।যখন হেলতে দুলতে আমার সাথে ঝগড়া করতে।যখন আমার সাথে তর্ক করতে।আমাকে বিভিন্নভাবে শায়েস্তা করতে চাইতে।সেই ছোট্ট আলুটাকেই আমি ভালোবেসেছিলাম।কিন্তু আমার বুঝতে দেরি হয়ে গেছে এইটাই।জানো তুমি যখন সাদু আমেরিকা চলে যাওয়ার পর আমার সাথে ঝগরা করা বা কথা বলা পুরো বন্ধ করে দিয়েছিলে।তখন খুব মিস করতাম তোমায়।কেন তুমি আসোন?কেন আমার সাথে ঝগড়া করো না? আসলে ভালোবাসতাম বলেই তোমর শূন্যতা আমার প্রতিটি মুহূর্তে অনূভব হতো।আফসোস তখনো বুজিনি।আসলে আমার বয়সটাও ছিলো না ভালোবাসা বুজার।কিন্তু সাদু আসার পর থেকেই যখন তুমি আবার আমার সাথে ঝগড়া করতে কথা বলতে কেমন যেন ভালোলাগতো আমার।আগে যেই শূন্যতা অনূভব হতো তুমি আমার সাথে কথা বলায় সেটা আর হতো না।সেদিকি বুজতে পেরেছিলাম যে আমি এই ঝগরুটে আলুটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। ভীষনভাবে ভালোবাসেছি।জানো হুমায়ুন আহমেদ স্যার কি বলেছেন?”
আলিফা জিজ্ঞাসুসূচক চোখে তাকাতে আরিফ আবার বললো।
—–” তিনি বলেছেন ‘ প্রেম হয় শুধু দেখা ও চোখের ভাল লাগা থেকে, রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, প্রেম হয় অপমান থেকে, এমনকি প্রেম হয় লজ্জা থেকেও। প্রেম আসলে লুকিয়ে আছে মানবসম্প্রদায়ের প্রতিটি ক্রোমসমে। একটু সুযোগ পেলেই সে জেগে উঠে।’ বুজেছো তারমানে আমাদের রাগ, ঘৃনা,ঝগড়া থেকেই আমরা প্রেমে পড়েছি।”
আলিফা একটা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে আস্তে করে বললো,
—–” ভালোবাসি।”
—–” আমিও ভালোবাসি আমার এই আলুটাকে।” বলেই আরিফ আরো নিবিরভাবে আলিফাকে জরিয়ে ধরলো।
চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here