পঞ্চভুজ তারা – Part 24

0
222

#পঞ্চভূজ_তারা!
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পার্টঃ২৪
—–” আমার ওকে চাই যেকোন মূল্যে চাই।ও রাজি হলে ভালো আর না হলে আমাকে অন্য পথ দেখতে হবে।” কথাগুলো বলে সাদু’র একটা ছবির দিক তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো তানিম।
সেদিন মনির আর সাদুকে হাসিখুশি দেখে রাগে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছিলো তানিম।তারপরেই সিদ্ধান্ত নিলো যে করেই হোক ওর সাদু’কে চাই চাই।
তানিম কিছু একটা ভেবে কাউকে ফোন লাগালো।কিছুক্ষন পর কল রিসিভ হতেই তানিম বলে,,
—–” ভাই তোকে কিছু একটা করতে হবে।তোকে যে মেগয়েটার ছবি পাঠিয়েছি ওকে আমার চাই চাই
এট এনি কস্ট।আই নিড হার মেডলি। ওকে আমায় এনে দে বাই হুক ওর বাই কুক।আই জাস্ট ওয়ান্ট হার।”
বলেই আর এক মিনিট অপেক্ষা না করে ফোনটা কেটে দিয়ে একটা একটা ওয়াইনের বোতল খুলে ড্রিংক করা শুরু করে দিলো।
🌺
নূরকে অনেকক্ষন ধরে আফরান কল দিচ্ছিলো।কিন্তু নূর কল ধরছিলো না।শেষে আফরান বিরক্ত হয়ে নূরের ব্যালকনি দিয়ে পাইপ বেয়ে উঠে আসে।আর নূরের রুমে এসেই নূরকে হেচকা টানে বিছানা থেকে উঠুয়ে বসিয়ে দেয়।আর নূর বেচারি অবাক হয়ে আছে হলো কি ওর সাথে।
——” নূর তুমি কি আমাকে আর মেনে নিবে না?আর কতো নূর।”আফরানের কথায় নূর তাচ্ছিল্যে হাসি দিয়ে বললো,,
—–” কি মেনে নিবো আপনাকে? কেন মানবো?”
—–” তুমি কি কিছু বুঝো না নূর?”
—–” আমি কি বুঝবো?আপনি কি আমাকে কিছু বুঝিয়েছেন?যে আমি বুঝবো!”
—–” নূর তুমি কি কিছুই জানো না।না-কি না জানার অভিনয় করছো?”
—–” আপনি আমার সাথে ফাইযলামি করেন।এখান থেকে যান আপনার সাথে আমি আর একমিনিট ও একসাথে থাকতে চাইছি না।জাস্ট লিভ মি এলোন।” চিৎকার করে বললো নূর।
নূরের চিৎকার করে কথা বলায় আফরানের এতো পরিমানে রাগ উঠে গেলো যে।আফরান নূরকে এক ধাক্কা মেরে বেডে ফেলে দিয়ে নূরের দু হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলো।আকস্মিক ঘটনায় নূর হতভম্ব হয়ে তাকায় আফরানের দিকে।কিন্তু নূর তাকাতে দেরি আফরানের নূরের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবাতে দেরি করলো না।নূরের প্রতি যতো রাগ খোপ আছে সব একসাথে মিটাচ্ছে।এইভাবে অনেকক্ষন থাকার পর আফরান নূরকে ছেরে দিলো।নূর এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।আফরান নূরের চোখের পাতার উপর চুমু খেলো।নূর কেপে উঠলো আফরানের ছোঁয়ায়।আফরানের নূরের কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
—–” কেন এতো রাগাও আমাকে।জানোই তো আমি তোমাকে ভালোবাসি আজ থেকে নয় সেই ছোট বেলা থেকে।তাহলে কেন এতো ভণিতা করো নূর।”
নূরের আগের অভীমানগুলো আবারো জেগে উঠলো।নূর শক্ত কন্ঠে বললো,
—–” ছাড়ুন আগে আমাকে।”
আফরান আর জোড়াজোড়ি না করে নূরকে ছেরে উঠে দারালো।নূর উঠে চলে যেতে নিতেই আফরান আবার নূরের হাত টেনে ধরলো।
—–” চলে যাচ্ছো?”
নূর আফরানের দিকে না তাকিয়েই বললো,,
—–” থেকে যাবো কেন?কিসের জন্যে থাকবো?”
—–” ভালোবাসি তাই!”
—–” ভালোবাসেন?তা কবে থেকে ভালোবাসেন?”
আফরান উঠে নূরকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।নূর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু আফরানের কথায় থেমে যায়।
—–” তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি কিভাবে জানিনা? যখন বুজতে পারি ভালোবাসি তোমাকে বলতে চাইতাম।কিন্তু সাহসে কুলাতে পারতাম না।কারন তখন তুমি অনেক ছোট ছিলো।তবুও চেষ্টা করতাম বলতে তোমাকে।কিন্তু যতোবার তোমার সামনে যেতাম, আমার মনের সব কথা যেন হারিয়ে যাতো, কখনো তোমায় সাহস করে বলতে পারি না, তোমায় অনেক ভালোবাসি। তোমার চোখগুলো দেখলে আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। আর সেই সঙ্গে আমাকে মুগ্ধ করেছে তোমার মুচকি হাসিটি। তোমার সামনে যেতে আমার মন চায়। মন চায় বলি, ‘নূর তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’ তোমার হাতে হাত রেখে সারাটি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই। তোমাকে এক দিন না দেখলে মনে হয় যেন এক যুগ ধরে তোমাকে দেখি না। আমেরিকা গিয়ে কতো কষ্টে থেকেছি আমি জানি।সত্যি তোমাকে ভালোবাসি নূর। তোমাকে না দেখে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারি না। পাগলি তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি।”
নূরের আফরানের প্রতিটি কথায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।কতো ভালোবাসে তাকে অথচ এতোদিন সব কথাগুলো লুকিয়ে রেখেছে।নূরের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে তবে এ যে সুখের অস্রু।নূরের আফরানকে জরিয়ে ধরে।মুহূর্তেই আফরানের চোখে মুখে হাসি ঝিলিক ফুটে উঠে।নূর আফরানকে আকড়ে ধরেই বললো,,
—–” এতোই যখন ভালোবাসেন তখন বলেন নি কেন? আপনি কি জানেন আপনার মুখে এই ভালোবাসি কথা শুনার জন্যে আমি কতো অপেক্ষা করেছি।আমার অভিমান আপনি আমেরিকা চলে যাওয়ার জন্যে না।আমার অভিমান আপনি যাওয়ার আগেও কেন আমাকে ভালোবাসি বললেন না।আমি কতো আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম আপনার মুখপানে।এই বুঝি আপনি আমাকে বলবেন ‘নূর ভালোবাসি’ কিন্তু সেদিন আপনি বলেননি। এই জন্যেই প্রচন্ড অভিমান জন্মেছিলো।কেন সেদিন আমার চোখের ভাষা বুজেন নি।আমিও যে আপনাকে ভালোবাসি কেন বুজেননি।এই জন্যেই আপনি আমেরিকা যাওয়ার পর আপনার সাথে আমি কথা বলিনি।”
—–” সরি নূর সরি আমাকে ক্ষমা করো।আমি আমার মনের কথা বলতে দেরি করেছি সরি।আর কষ্ট দিবো না তোমাকে নূর।এইবার তোমাকে আমার ভালোবাসার চাদরে জরিয়ে রাখবো।”
নূর আর কিছু বললো না।আরো গভীরভাবে জরিয়ে ধরলো আফরানকে। আফরানও বুঝে গেছে তার ভালোবাসার মানুষটি কি বলতে চায়।দুজনই চুপচাপ দুজনকে আকড়ে ধরে শুধু এই ভালোবাসাময় সময়টুকু উপভোগ করছে।যেন তারা আকড়ে ধরতে চাইছে এই ভালোবাসাময় সময়টুকু।

নিবির উশখুশ করছে আর পায়চারি করছে নিজের রুমে।আজ কতোদিন হলো আলিশা ওর সাথে কথা বলেনা।ওর অনেক অস্থিরতা নিয়ে কেটেছে প্রতিটা দিন।আলিশা’র সাথে কথা না বললে মনে হয় ওর দিনটাই ভালো কাটে না।ওর এই অস্থিরতা’র মাজেই সাদু’র আওয়াজ,
—–” ভাইয়া ডিনারে আয়।”
নিবির চুপসানো মুখ নিয়েই চললো ডায়নিংএ।
টেবিলে বসে আফরান না দেখে নিবির জিজ্ঞেস করলো,
—–” আফরান কোথায়?”
সাদু বসতে বসতে বললো,
—–” ভাইয়া বোধহয় নূরের কাছে গিয়েছে।আমি দেখেছি ভাইয়া নূরের ব্যালকনি’র ওখানে পাইপ বেয়ে ওর রুমে যেতে।”
সাদু’র কথায় সাদু’র বাবা,মা, নিবির সবাই হো হো করে হেসে দিলো।
নিবির হাসির মাঝেই তাকায় সিরির দিকে।দেখে আলিশা আসছে আকাশি কালারে লং টপ্স, আর সাদা ট্রাউজার পরে,গলায় স্কার্ফ পেচানো।নিবির তাকিয়েই রইলো আলিশা’র দিকে। সাদু ব্যাপারটা খেয়াল করে নিবিরকে কুনোই দিয়ে গুতো দিয়ে বললো,
—–” কি ভাইয়া! কি দেখছিস?আমার বান্ধবিকে কি চোখ দিয়েই গিলে খাবি?”
নিবির থতমত খেয়ে গেছে।ভাবেনি এইভাবে সাদু ওকে ধরে ফেলবে। নিবির আমতা আমতা করে বললো,
—–” তুই বেশি বুঝিস পিকু। মনিরকে বলে তোকে জলদি এই বাড়ি থেকে বিদায় করতে হবে।”
সাদু রেগে মেগে ডাল নেওয়ার চামচ দিয়ে ধরাম করে একটা বারি দিয়ে বসে। সাদু’র আম্মু দেখে সাদুকে ধমকে বলে,
—–” এইসব কি উম্মি?নিবির তোর বড় তুই ওকে এইভাবে কেন মারলি?”
—–” তোমার ছেলে আমাকে কেন বললো আমাকে জলদি বাড়ি থেকে ভাগাতে চায়।”
—–” তাই বলে তুই তোর বড় ভাইয়ের গায়ে হাত উঠাবি?” জোরে বললো সাদু’র আম্মু।
এতো জোরে ধমকে কথা বলায় সাদু’র চোখে পানি এসে পড়েছে।এতোগুলো মানুষের সামনে ওকে এইভাবে ধমকাবে। কি করেছে ও শুধু একটু দুষ্টুমিই তো করেছে বড় ভাইয়ের সাথে।তাই বলে এইভাবে বলবে।সাদু উঠে দাড়িয়ে ঠাস করে চেয়ার ফেলে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
নিবির বেক্কলের মতো তাকিয়ে আছে।সামান্য দুষ্টুমি করতে গিয়ে যেয়ে এমনটা হয়ে যাবে ভাবেনি ও।আলিশাও সিরি কোঠায় হা করে তাকিয়ে আছে।
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here