ভালবেসে রাখব কাছে – Part 12

0
260

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১২
কাব্য মাথায় ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে,আর তার সামনেই তার মা আর মেঘ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে।কাব্য মাথা নিচু করে রেখেছে,তখন হিয়া কাব্যর হাতে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“ভাইয়া তুমি সাবিহার সাথে কী করেছো?সাবিহার সাথে আবার কোন অন্যায় করে থাকলে বলো ভাইয়া।এভাবে চুপ করে থেকো না,এভাবে চুপ করে থাকলে কোন সমস্যা সমাধান হবে না।”
“কাব্য হিয়ার কথার উওর দে,কী করেছিস তুই সাবিহার সাথে!”
ধমকে বলে উঠে কাব্যর মা,কাব্য মাথা নিচু করেই রেখেছে।কারো কথার কোন উওর দিচ্ছে না,আর কী উওরই বা দিবে কাব্য!সে যা করেছে তা ত বুক ফুলিয়ে বলার মত কোন মহান কাজ করে নি।
“কাব্য রাগ উঠাস না আমার বলে দে কী করেছিস তুই?”
“মেঘ তোমরা মা,ছেলে কী শুরু করেছো!দেখছো কাব্যর মাথায় আঘাত পেয়েছে তার মধ্যে তোমরা এমন গোয়েন্দা গিরি শুরু করেছো!এখন এসব জিজ্ঞেস করার উপযুক্ত সময় নয়,কাব্য সুস্থ হোক তারপর এসব নিয়ে কথা হবে।এখন এসব বাদ দিয়ে ছেলেটাকে একটু রেস্ট নিতে দাও।”
কাব্যর বাবা দরজা দিয়ে ডুকতে ডুকতে কথাগুলো বলে সেটা দেখে কাব্যর মা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
“তোমার জন্য তোমার ছেলের আজ এই অবস্থা,তুমি ছেলেকে আস্কারা দিয়ে এমন অমানুষ তৈরি করেছো।না তুমি ছেলেকে শাসন করো না আমাদের করতে দাও।সময় মত যদি ছেলেকে একটু শাসন করতে তবে তোমার ছেলে এত,,,
আর কিছু বলার আগেই কাব্যর কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ডুকে সাদাফ।সাদাফ কাব্যকে দেখেই কাব্যর দিকে তেড়ে যায় আর কলার চেপে ধরে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলে উঠে,,,
“তোর সাহস কী করে হল সাবিহার গায়ে হাত তোলার!সাবিহাকে আটকে রেখে কষ্ট দেয়ার?”
সাদাফের হঠাৎ এমন আক্রমনে উপস্থিত সবাই অবাক,কাব্য থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে সাদাফের দিকে তাকায়।কাব্য খুব রেগে যায়,যা তার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে,কাব্যর চোখ অসম্ভব রকম লাল হয়ে আছে রাগে।সাদাফ আবার কাব্যকে আঘাত করতে নেয় কিন্তু মেঘ গিয়ে আটকায় সাদাফকে।আর বলে উঠে,,,
“সাদাফ কী করছো এসব,শান্ত হও তুমি!”
সাদাফ মেঘের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আবার কাব্যকে মারতে যায়,তখন নিলয় আর সাদাফের বাবা আসে আর তারা দুজন মিলে সাদাফকে আটকায়।তারপরও সাদাফ শান্ত হয় না,সাদাফ ছুটার চেষ্টা করতে করতে রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,
“ছেড়ে দাও আমাকে,আজ আমি ওকে মেরে ফেলব।অর জন্য সাবিহা এতটা কষ্ট পাচ্ছে,আমি ওকে ছাড়ব না।সাবিহা যতটা কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে দ্বিগুন কষ্ট আমি ওকে দিব,তোমরা ছাড়ো আমাকে।”
কাব্যর বাবা এবার রেগে বলে উঠে,,,
“তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি,তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুলছো আমারই সামনে?তোমার সাহস ত কম নয়,তুমি কী জানো এর জন্য আমি তোমার বিরুদ্ধে কেস করতে পারি!”
“আপনি কী কেস করবেন?কেস অলরেডি হয়ে গেছে।আর আপনি ত নিজের বুঝটা ভালোই বুঝেন দেখছি।নিজের ছেলে এত অন্যায় করছে পিচ্চি একটা মেয়ের সাথে তার বেলা নিজের ছেলেকে শাসন করতে পারছেন না।আজ আপনার সামনে আপনার ছেলেকে দুইটা থাপ্পড় দেয়াতে আপনার এত কষ্ট হচ্ছে,আর ভাবুন ত আপনার বোনের কথা যার মেয়েকে আপনার ছেলে পশুর মত অমানবিক নির্যাতন করেছে।আবার আজও আপনার ছেলে ছোট্ট মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে।মেয়েটা কথা বলতে পারছে না,এতটা অত্যাচার করেছে আপনার ছেলে।আপনি তার জন্য নিজের ছেলেকে শাসন না করে উল্টো আপনি আপনার ছেলেকে আস্কারা দিচ্ছেন?আপনার মত বাবা থাকলে মানুষ পশু হতে বেশি সময় লাগবে না।”
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে চলেছে সাদাফের বাবা। সাদাফের বাবার কথা শুনে কাব্যর বাবা খুব বেশি রেগে যায়।আর রেগে বলে উঠে,,,
“মুখ সামলে কথা বলুন,নয়ত খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে,কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে যেকোন সময়।তাই নিলয় আর মেঘ ঠেলে ঠুলে সাদাফ আর সাদাফের বাবাকে কেবিন থেকে বের করে নিয়ে যায়।কাব্য আর তার বাবা রাগে ফুঁসছে,কাব্যর মা চোখে জল নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।সাদাফের বাবা যা বলেছে তা একটা কথাও মিথ্যা নয়,কাব্য আজ এতটা অমানুষে পরিনত হয়েছে তাতে তার বাবার গুরুত্ব অনেক।হিয়া তার মাকে বেরিয়ে যেতে দেখে সে ও পিছন পিছন যায়।
_____________________________________
নিলয় আর মেঘের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে সাদাফ কোথাও যেতে নিলে মেঘ আর নিলয় বাঁধা দেয়।সেটা দেখে সাদাফ রেগে ওদের বলে উঠে,,,
“আমার পথ ছাড়ো,আমি ঐ কাব্যকে ছাড়ব না।জানে মেরে দিব,যে হাত দিয়ে আমার সাবিহাকে কষ্ট দিয়েছে সেই হাত আমি রাখব না।কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিব,তোমরা সরো,আমাকে যেতে দাও।”
“সাদাফ আইন নিজের হাতে তুলে নিস না,তাতে করে তোর জেল হবে।আর তুই সাবিহার থেকে দূরে থাকবি তাতে করে তুই ই বেশি কষ্ট পাবি।তাই তুই আমার উপর বিশ্বাস রাখ আমি কাব্যকে শাস্তি দিয়েই ছাড়ব।”
“সাদাফ তুমি শান্ত হও,আর মাথা ঠান্ডা করো।আমার ভাই তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।নিজের ভাই যে এতটা অমানুষে পরিনত হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিল।কিন্তু নিজের ভাই বলেও ছেড়ে দিব না তার উপযুক্ত শাস্তি পাইয়েই ছাড়ব,তুমি শান্ত হও।”
সাদাফ ওদের কথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়,আর মনে মনে বাঁকা হাসে।যেটা মেঘ আর নিলয় দেখতে পায় না।সাদাফের এমন শান্ত হওয়া দেখে মেঘ আর নিলয় যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।কিন্তু তারা ত আর জানে না সাদাফ মনে মনে কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছে!
★আমি একবার বেডে শুয়ে পড়ি আবার একটু পরেই বসে পড়ি।খুব অস্থির লাগছে ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!বাবা ত যেতেও দিচ্ছে না আমাকে।বেড থেকে নামতে গেলেই আঙুল তুলে চোখ রাখিয়ে বলে শুয়ে পরতে।না তারা যাচ্ছে খবর নিতে না আমাকে যেতে দিচ্ছে।আমি বারবার এমন অস্থির হয়ে উঠছি আর শুয়ে পড়ছি সেটা দেখে মা,বাবা আর আপু বারবার জিজ্ঞেস করছে খারাপ লাগছে কী না?কিছু খাব কী না,এমন নানা প্রশ্ন করে চলেছে আমাকে।কিন্তু আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই আর বারবার ইশারায় বুঝাচ্ছি যে খবর নিতে ঐদিকে কী হচ্ছে?কিন্তু তারা আমার কোন কথাই বুঝতে পারছে না,ঐদিকে কী হচ্ছে কে জানে!
এসব ভাবছিলাম তখন কেবিনে প্রবেশ করে সাদাফ ভাইয়া,নিলয় ভাইয়া আর মেঘ ভাইয়া।তাদের দেখে আমার অস্থিরতা কিছুটা কমে,সাদাফ ভাইয়া আমার সামনে এসে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“খারাপ লাগছে!”
আমি মাথা নেড়ে না বুঝাই যার অর্থ খারাপ লাগছে না।সাদাফ ভাইয়া মুচকি হেসে বাবার উদ্দেশ্য বলে উঠে,,,
“আঙ্কেল সাবিহার সাথে আমার একটু কথা আছে যদি একটু,,,
“হ্যাঁ কথা বলো তোমরা আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি,চলো সবাই।”
বাবা এক কথায় রাজি হয়ে যায়,সেটা দেখে আমি আর আপু দুজনেই খুব অবাক হই।আপু বাবাকে বলে উঠে,,,
“বাবা সাদা,,,
” শীলা কোন কথা না বলে চুপচাপ বাইরে আসো।”
কিছুটা রাগেই সাথেই কথাটা বলে বাবা কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর পিছন পিছন মাও বেরিয়ে যায়।আর আপু গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে থাকে সেটা দেখে মেঘ ভাইয়া আপুর কানে কানে বলে উঠে,,,
“ঘটনা কী গো,শ্বশুর মশাই এক কথায় এভাবে নিজের মেয়েকে একটা ছেলের সাথে একা ছেড়ে দিল!ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় রহস্যময় লাগছে।”
এমনিতেই আপুর মেজাজ খারাপ বাবার এমন আচরনে।তার উপর মেঘ ভাইয়ার এমন কথা,বেচারি নিজেই যার কারন জানে না।কারন জানতে গিয়ে বাবার কাছে ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়।তার কাছেই কী না কারন জানতে চাইছে!আপু আর পারল না হাতে থাকা ফোনটা মেঘ ভাইয়ার উপর ছুড়ে মেরে গাল ফুলিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।মেঘ ভাইয়া ফোনটা ক্যাচ করে আপুকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে যায়।
এখন কেবিনে আছে নিলয় ভাইয়া,সাদাফ ভাইয়া আর আমি।সাদাফ ভাইয়া নিলয় ভাইয়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে,,,
“তকে কী বাইরে যাওয়ার জন্য দাওয়াত করতে হবে?”
নিলয় ভাইয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় আর কোন দিকে না তাকিয়ে তিনিও বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।আমি এতক্ষণ সবটাই নীরব দর্শকের মত দেখে গেলাম,অবশ্য এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই আমার আপাতত।আমি এবার আগ্রহ নিয়ে সাদাফ ভাইয়ার দিকে তাকাই,তিনিও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমিও আগ্রহ নিয়ে উনার দিকে তাকাই কী বলবে সে আশায়।কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে অবাক করে দিয়ে কপালে একটা চুমু একে দেয়।আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকাই,এটা কী হল!
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here