ভালবেসে রাখব কাছে – Part 13

0
240

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৩
“বাবা আমি বিয়ে করব”
সাদাফ হসপিটাল থেকে এসেই তার বাবাকে ড্রয়িং রুমে বসে থাকতে দেখে কথাটা বলে উঠে।হঠাৎ এমন কথাশুনে সাদাফের বাবা অবাক চোখে তাকায়।কোন ছেলে যে তার বাবাকে এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলতে পারে সেটা উনার ছেলেকে দেখে জানলেন।মনে মনে তার ছেলেকে কয়টা বকা দিয়ে দিলেন বাবার সামনে এমন নির্লজ্জের পরিচয় দেয়ার জন্য।সাদাফ তার বাবার কোন উওর না পেয়ে আবারও জোড়ে চিৎকার করে বলে উঠল,,,
“বাবা আমি বিয়ে করব,তুমি কী শুনতে পাচ্ছো?”
সাদাফের বাবার এবার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।উনি কী কালা নাকি যে শুনতে পায় নি,এভাবে জোড়ে বলার কী আছে!তাই তিনি এবার রেগে বলে উঠল,,,
“আমার কানে কোন সমস্যা আছে?”
সাদাফ তার বাবার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সাদাফের কথার প্রতিত্তোরে যে তার বাবা এমন একটা কথা বলবে সেটা সাদাফ ভাবতে পারে নি।তাই সাদাফ ভ্রু কুঁচকে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করল,,,
“মানে?”
“মানে আমাকে কী তোর কালা মনে হয় যে কানের কাছে এসে এভাবে চিৎকার করে উঠলি!”
“ত কী করব!তুমি ত কিছু বলছিলেই না তাই ত চিৎকার করতে হল।তুমি যদি প্রথম বার সারা দিতে তবে ২য় বার কথাটা বলে তোমাকে কালার খাতায় তুলতাম না,আর না আমি নিজের হায়াত কমাইতাম বেশি কথা বলে!”
“তুই আমার চোখের সামনে থেকে যা ত মেজাজ খারাপ করিস না।”
“বিয়েটা করিয়ে দিবা বলো তবে তোমার চোখের সামনে,পিছনে,ডান দিকে,বাম দিক সব দিক থেকেই সরে যাব।তুমি শুধু আমার বিয়েটা করিয়ে দাও বাবা প্লিজ।”
সাদাফের বাবা পারছে না মাটি ফাঁক করে ভিতরে ডুকে যেতে।কোথায় উনি তার ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য পাগল হবে তা না ছেলে বিয়ের জন্য পাগল হয়েছে।আর সেটা ড্যাং ড্যাং করতে করতে চলে এসেছে বাবাকে বলতে।আজকালের যুগের ছেলেমেয়েরা যে কী করে!তাদের সময়ে ত বিয়ের কথা শুনলেই লজ্জায় লাল,নীল,সবুজ হয়ে যেত।আর তার ছেলেকেই দেখো পুরো নির্লজ্জর ডিব্বা।
“পাবনায় একটু যোগাযোগ করে দেখো ত তারা বিয়ে পাগল ছেলেকে একটু চিকিৎসা দিতে পারবে কী না!”
হাতে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে কথাটা বলে উঠল সাদাফের মা।সাদাফ তার মায়ের কথায় খুব বিরক্ত,আর তার বাবা যেন এতক্ষণে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।এতক্ষণ ছেলে ত বিয়ে করব বলে পাগল করে দিচ্ছিল তাকে এখন তার বউ এসেছে, নিশ্চিন্ত এখন!যে সাদাফের মা বিষয়টা সামলে নিবে। তাই তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন আর সাদাফ গাল ফুলিয়ে বলে উঠল,,,
“মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাচ্ছো তাই এমন মজা করছো ত তোমরা!”
“আমরা ত মেঘও চাই নি বৃষ্টিও চাই নি,তবে তুই যেচে বৃষ্টি দিচ্ছিস কেন?”
“মা প্লিজ মজা করো না,ভালো লাগছে না এসব।তোমরা একটু বুঝার চেষ্টা করো,আমি এমনি এমনি কিছু করছি না।এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে নয়ত আমি এমন কেন করব?”
“গলা ঝেড়ে কাশ,আর ফটাফট বলে ফেল কী কারনে বিয়ের জন্য এত পাগল হয়েছিস?”
“সাবিহা এসএসসি পরীক্ষার পর Abroad চলে যাবে পড়াশোনা করতে।”
“এটা ত ভালো খবর,মেয়েটা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই ত যাবে।এতে কী সমস্যা আছে যার জন্য বিয়ের জন্য পাগল হয়েছিস!”
“মা তুমি কী বুঝতে পারছো না,এখন কী সবটা খুলে বলতে হবে তোমাকে!লজ্জা সরমেরও ত একটা ব্যাপার আছে তাই না!”
“এহহহে আসছে রে আমার লজ্জাবতী লতা,বিয়ের কথা নিজের বাপের কাছে বলার সময় লজ্জা পাস নি ত এখন এত লজ্জা আসে কোথা থেকে?”
সাদাফ তার মাকে কীভাবে বলবে যে সাবিহার জীবন বিপদের মুখে।আর সাবিহাকে রক্ষা করার জন্যই সাদাফ সবসময় সাবিহার কাছেকাছে থাকতে চাইছে।আর সেটা সম্ভব একমাত্র বিয়ে হলেই,নয়ত সাবিহার কাছাকাছি থাকার সার্টিফিকেট আর সবাই দিলেও সাবিহা তাকে দিবে না।তাই সাদাফ ঠিক করল যা করার সে নিজেই করবে, কারন তার বাবা,মা এত সহজে তাকে এখন বিয়ে দিবে না।কারন সাবিহার এখনও বিয়ের বয়স হয় নি,তাই তারা ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিচ্ছে না।সাদাফ তার মাকে আর কিছু না বলে দাপদুপ পা ফেলে চলে গেলো।সেটা দেখে সাদাফের মা আর বাবা দুজনেই হেঁসে ফেলল।
______________________________________
বেডে পা ঝুলিয়ে বসে উর্না দিয়ে গাল,কপাল,ঠোঁট মুছে চলেছি,আর রাগে ফুঁসছি।সাদাফ ভাই যে এতটা শয়তান সেটা আগে বুঝি নি।বজ্জাত বেডায় আমার কথা না বলার সুযোগ নিয়ে কী কী করে গেলো।এক ঘন্টা ধরে গাল,ঠোঁট আর কপাল মুছে চলেছি।আর এক ঘন্টা আগের কথা মনে হলেই শিউরে উঠছে সারা শরীর।
★ফ্লাসব্যাক★
সাদাফ ভাই আমার কপালে চুমু দিয়ে মুচকি হেঁসে আমার দিকে তাকায়,আমি চোখ বড়বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি সেটা দেখে চোখ টিপ দিয়ে আমার গালে আরেকটা চুমু বসিয়ে দেয়।আমি এতটাই অবাক যে কী রিয়েকশন দিব বুঝে উঠতে পারছি না।কিন্তু অসম্ভব রকম রাগ লাগছে এভাবে একটা মেয়েকে চুমু দেয়ার কী মানে!কথা বলবি মুখে বল এভাবে চুমু দেয়ার কোন মানে হয় না।তাই রেগে উনার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত তুলতেই উনি আমার হাতটা ধরে আটকে বলে উঠে,,,
“এই হাত দিয়ে অন্য কাউকে মেরো আমাকে নয়,এই হাতটা আমাকে আদর করার জন্য তুলে রাখো।
আমি উনার কথাশুনে রাগ ভুলে অবাক হই,কী বলছে উনি এসব!
“এখনই এত অবাক হয়ো না প্রিয়,মাত্র যাত্রা শুরু তোমার অবাক হওয়ার।প্রতিটা মুহুর্তে অবাক হবে তুমি,তার জন্য কিছু বাঁচিয়ে রাখো নয়ত আরো কয়টা চুমু দিয়ে দিব কিন্তু।”
উনার কথার সঠিক মানে আমি বুঝতে পারি নি,যে উনি আমাকে কী বুঝাতে চাইছে!কিন্তু আজ উনার হাবভাব,কথা বার্তায় বেশি সুবিধা লাগছে না আমার কাছে।উনার হাবভাবে ত মনে হচ্ছে ভালবাসে আমাকে,কিন্তু সন্দেহর বশে কী এতটা গভীরে ভাবা ঠিক হবে?আর আমি এটা সন্দেহর তালিকায় কেন ফেলছি!উনি আজ যতটা পাগলামি করলো আমার জন্য তাতে ত কোন অন্ধ ব্যাক্তিও বলে দিতে পারবে উনার মনে আমার জন্য আলাদা ফিলিংস কাজ করে।তবে আমি এত বোকাবোকা কথা কেন ভাবছি বুঝি না আমি।কথাগুলো ভেবেই নিজেকে বোকাদের তালিকায় ফেলে দিলাম ঠুস করে।
পরক্ষণেই মনে হল উনি যদি কখনও স্বীকার করে আমাকে ভালবাসে তখন আমি কী করব!ভালবাসা কথাটার প্রতিই ত আমার ঘৃণা জন্মে গেছে,তখন আমি কী করব!উনাকে কী ফিরিয়ে দিব,নাকি মেনে নিব?ভালবাসার মানুষটা যদি খালি হাতে কাউকে ফিরিয়ে দেয় তাতে কতটা কষ্ট হয় সেটা আমি জানি।কাব্য ভাই আমাকে সে কষ্টটা দিয়েছে,আমিও কী সাদাফ ভাইকে তখন এভাবেই কষ্ট দিব?না এভাবে কষ্ট দিলে কাব্য ভাই আর আমার মধ্যে কোন পার্থক্য থাকবে না।কিন্তু উনাকে কষ্ট দিতে না চাইলে যদি অনিচ্ছা স্বত্বেও উনাকে মেনে নেই,তবে কী কখনও ভালবাসা শব্দটার থেকে ঘৃনার পর্দা সরিয়ে ভালবাসতে পারব?আর নাকি উনাকে ভালবাসতে পারব নতুন করে?এসব ভেবে মাথা পুরো হ্যাং হয়ে আছে আমার,আমি চুপচাপ এসব ভেবে চলেছি তখন সাদাফ ভাইয়া হুট করে বলে উঠল,,,
“বিয়ে করবে আমাকে?”
উনার কথা শুনে পুরা ৪৪০ ভোল্টেজের শক খাইলাম।আমি এতক্ষণ উনার ভালবাসা নিয়ে এত গবেষণা করে গেলাম ফিরিয়ে দিব নাকি মেনে নিব!আর উনি ছক্কা মেরে বিয়ে অবধি চলে গেলো।ভাবা যায় এসব,ভালবাসে স্বীকার না করে পুরো বিয়েতে চলে গেছে।মাথা ঘুরছে আমার,যেকোন সময় জ্ঞান হারাতে পারি।আমার ভাবনার মাঝে সাদাফ ভাই আবারও বলে উঠল,,,
“এত ভেবে কাজ নেই,তুমি চাইলেও আমার কাছে রাখব তোমাকে।আর না চাইলেও ভালবেসে রাখব কাছে আমারই পাশে।তুমি ভালো মত মেনে নিলে ভালো কিন্তু ঝামেলা করলেও সমস্যা নাই।ঝামেলা হলে ব্যাপারটা সমাধান করার ঔষধ আমার কাছে আছে।তাই নো চিন্তা,এতদিন তোমার প্রতি ভালবাসাটা মনের কোনে লুকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু আর নয়।সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় যেমনটা হয়ে যাচ্ছিল প্রায়।আমার অনুভূতি গুলো যদি তোমার কাছে আগেই প্রকাশ করতাম তবে হয়ত তোমার মনে কাব্যর প্রতি ফিলিংস জাগত না।সেই ফিলিংস হয়ত আমার জন্য জাগত তোমার মনে।তবে আজকের দিনটা অন্য রকম হত।কিন্তু আর নয়,আজ তোমাকে হারানোর ভয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।বুঝতে পেরেছি আমার কী করা উচিত,তাই আজ তোমাকে নিজের মনের অনুভূতি জানিয়ে দিলাম।এবার তুমি তৈরি হও আমার বউ হওয়ার জন্য।”
এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে সাদাফ ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলাম,কিন্তু উনার কার্যকলাপে সব কিছুতে পানি ডেলে এক বস্তা রাগ ভর করল মাথায়।উনি কথাগুলো বলেই টুপ করে আমার ঠোঁটে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
★বর্তমান★
তখন থেকে এভাবে বসে রাগে ফুঁসছি আর মুছে চলেছি।কিন্তু ঘুরেফিরে উনার বলা কথাগুলো মনে পড়ছে।আর আমি পড়েছি আরেক চিন্তায়,কী করব ভেবে পাচ্ছি না।উনার কথা মেনে নিব নাকি ফিরিয়ে দিব?
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here