ভালবেসে রাখব কাছে – Part 14

0
228

#ভালবেসে রাখব কাছে
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৪
কাব্য তার কেবিনে বসে আছে তখন তার কেবিনে হাতে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে তার মা।কাব্য তার মাকে দেখে নড়েচড়ে বসে,কাব্যর মা কাব্যকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,,
“খাবারটা রেখে গেলাম খেয়ে নিও!”
“মা তুমি আমার সাথে এভাবে কেন কথা বলছো!”
কাব্যর মা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,
“কীভাবে কথা বলছি!”
“তুমি কী আমার উপর রেগে আছো!”
“তোমার এমন মনে হল কেন?”
“তুমি যখন রেগে থাকো তখনই ত এভাবে তুমি করে ডাকো আমায় তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“তোমার উপর রেগে থাকার কী যথেষ্ট কারন নেই!”
“মা তুমি প্লিজ এখন সবার মত আমাকে দোষী করো না,আমি কিছু ভুল করি নি।তুমি তোমার ছেলেকে বিশ্বাস কেন করছো না?”
মিসেস লতা তার ছেলের কথা শুনে রেগে কাব্যর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য গালে হাত দিয়ে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কাব্যর চোখে না আছে কোন অভিযোগ না আছে কোন অনুতাপ।কাব্যর চোখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠছে,সেটা দেখে কাব্যর মা কাব্যর গালে আবারও থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।কাব্য এবার রেগে কিছু বলবে তার আগেই মিসেস লতা রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,,,
“চোখ নামা একদম চোখ রাঙাবি না আমাকে।”
কাব্য তার মাকে আবারও কিছু বলতে চাইলে তিনি তার আগেই বলে উঠে,,,
“চুপ একদম চুপ,একটা কথাও বলবি না তুই।নিজের মাকে চোখ রাঙাচ্ছিস তুই ছিঃ।আমার ঘৃনা হচ্ছে তোর প্রতি,তুই যে আমার ছেলে সেটা ভাবতেই ঘৃনা লাগছে,থু।তোর থেকে এর বেশি কিছু আশা করা যায় না।
ছোট মেয়েটার সাথে এতকিছু করেও তুই বলছিস ভুল কিছু করিস নি!আর আমাকে চোখ রাঙানো ত তোর কাছে কিছুই না।সেদিন ছোট একটা কারনে মেয়েটাকে পশুর মত মেরেছিস,আর আজ মেয়েটার সাথেও নিশ্চয়ই ভালো কিছু করিস নি।তারপরও বলছিস তুই ভুল কিছু করিস নি,আরে মেয়েরা মায়ের জাত,আর তুই তোর নিজের মাকে চোখ রাঙাস।আবার তুই সে মেয়েকেই পশুর মত অত্যাচার করিস,ছোট মেয়েটাকে অপমান করিস কোন কারন না থাকা স্বত্বেও।তুই নিজেকে এতটাই প্রাধান্য দিচ্ছিস যে এত অন্যায় করার পরও মনে করিস তুই ভুল কিছু করিস না,করতে পারিস না যা করিস একদম ঠিক।কিন্তু মনে রাখিস নিজের কাছে ভালো থাকা মানে ভালো তুই নস।এতগুলো মানুষ তকে তোর অন্যায়টা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তুই ত চোখ থাকতেও অন্ধ।নিজের ভুলটা দেখতেই পারছিস না,এতদিন ভালবাসায় অন্ধ ছিল আর এখন রাগে,সাথে তোর বাপও যোগ হয়েছে।তকে আর তোর বাপকে ত একটা মানুষও ভালো বলে না।নিজের রাগ কমা,আর মানুষের মত ভাব যে তুই ঠিক কতটা জঘন্যতম কাজ করেছিস।তোর সাথে কথা বলতেও বাঁধছে আমার।”
কথাটা বলেই মিসেস লতা রেগে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়,আর কাব্য তার মায়ের কথাগুলো এতক্ষণ খুব মনযোগ দিয়ে শুনেছে।কাব্য তার মায়ের কথায় ভাবতে থাকে,,,
“আসলেই কী আমি ভুল করেছি?আমি কী সত্যিই সাবিহার সাথে অন্যায় করেছি?কিন্তু আমি ত অকারণে কিছু করে নি,সাবিহার সাথে আজ এমনটা হওয়ার পিছনে সাবিহা দায়ী তাই আজ এসব হয়েছে।সাবিহার জন্য আমার ভালবাসা আমার থেকে দূরে,আমার থেকে আমার বন্ধুরা দূরে আর আজ আমার মাও আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছে।সবকিছুর জন্য সাবিহা দায়ী।”
কথাগুলো কাব্য নিজ মনে আওড়ে আবারও নিজের মনকে প্রশ্ন করল,,,
“সত্যিই কী এসবের পিছনে শুধু সাবিহা দায়ী?তাতে কী আমার কোন হাত নেই!সাবিহা দোষ করত কিন্তু তার দোষের ক্ষেত্রে আমি ত সাবিহাকে তিনগুন বেশিই শাস্তি দিয়েছি।বাচ্চা মেয়েটার বয়সই বা কত?এই বয়সে ভুল হলে সেটা সুধরে দেয়ার দায়িত্ব ত বড়দেরই।সাবিহা অবুঝ কিন্তু আমি ত অবুঝ ছিলাম না,আমি ত ইচ্ছে করলেই ঠান্ডা মাথায় সাবিহাকে বুঝিয়ে সবটা ঠিক করতে পারতাম।কিন্তু আমি ত সেটা করি নি উল্টো মেয়েটাকে আঘাত করেছি।”
কাব্য আর ভাবতে পারছে না,এসব ভেবে কাব্যর মাথাটা ব্যাথা করে উঠল।কাব্য তার মাথা চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
______________________________________
ছাঁদে পা ঝুলিয়ে বসে আছি,দৃষ্টি আমার সুদূর আকাশপানে।আকাশে আজ তারা নেই,চাদটাও মেঘের আড়ালে,চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার।আমার মনের আকাশে যেমন আজ মেঘ জমেছে তেমনি এই আকাশেও মেঘ জমেছে।তাতে মনটা যেনো আরো বিষন্নতায় ঘিরে ধরেছে,হসপিটাল থেকে আজ বিকালেই বাড়ি ফিরেছি।
আর রাতে ডিনার করতে গিয়েই জানতে পারি আপুর বিয়েটা বাবা ভেঙ্গে দিয়েছে।কথাটা ভাবতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল।সব কিছু আমার জন্য হয়েছে,আমি কেন কাব্য নামের অমানুষকে ভালবাসলাম?কেন আমি তার কাছে ভালবাসার দাবী নিয়ে গিয়েছি?আমি তাকে ভাল না বাসলে ত আজ এত কিছু হত না।সবকিছুর জন্য আমি দায়ী,আমার জন্য আজ দুইজন ভালবাসার মানুষ আলাদা হওয়ার পথে।মেঘ ভাইয়া আর আপু ত দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে।কীভাবে থাকবে একে অপরকে ছেড়ে,আপু ত কথাটা শোনার পর থেকে এক নাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।আমার মাথায় শুধু একটাই চিন্তা ঘুরছে কীভাবে আপু আর মেঘ ভাইয়ার বিয়েটা দেয়া যায়!কিন্তু মাথাতে কিছুই আসছে না।
হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকাই আর দেখি সাদাফ ভাই।উনাকে দেখে কোন রিয়েক্ট করলাম না,হাতটা সরিয়ে নিয়ে আবারও আকাশের দিকে তাকালাম।সাদাফ ভাই আমার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিলো।আমি আবারও ছাড়াতে গেলে উনি ছাড়লেন না।উনি আমার গালে এক হাত দিয়ে তার দিকে ঘুরিয়ে নরম গলায় বলে উঠে,,,
“শীলার বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে বলে মন খারাপ?”
আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইলাম, ছাড়লেন না উনি আরো শক্ত করে ধরলেন।উনি মুচকি হেঁসে বলে উঠলেন,,,
“চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলব।”
বাবার সাথে কথা বলবে শুনেই হঠাৎ আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।উনিই পারবে বাবাকে রাজি করাতে,উনি ম্যাজিক জানে কী না সেটা জানা নেই কিন্তু এর আগে উনি বাবাকে কীভাবে যেন মেনেজ করেছিল হিয়াকে আমার সাথে নতুন স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য।তাই আমি খুশিতে গদগদ হয়ে নিজের গলার কাটা জায়গার কথা বেমালুম ভুলে কিছু বলব তার আগেই উনি আমার ঠোঁটে তার আঙুল বসিয়ে বলে উঠে,,,
“কথা বলার চেষ্টা করো না ব্যাথা পাবে।”
উনার কথা শুনে হাসিমুখটা নিমিষেই চুপসে গেলো।কথা না বলতে পারার কষ্টটা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি আমি।সাদাফ ভাই এবার বাঁকা হেসে আমাকে আবারও বলে উঠল,,,
“আমি কিন্তু এমনি এমনি কোন কাজ করি না বুঝেছো!তোমার বাবাকে মেঘ ভাইয়া আর শীলার বিয়েতে রাজি করানের জন্য কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।রাজি থাকলে বলো চুটকি মেরে আঙ্কেলকে রাজি করিয়ে ফেলব।”
উনার কথাটা শুনে এবার রাগ হল,ঐদিনও এমন করেছে আর আজও।এভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নেয়া ঠিক না,লাগবে না উনার সাহায্য।দরকার পড়লে দুজনকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে দিব নয়ত মেঘ ভাইয়া আর আপুকে কিডন্যাপ করে বিয়ে দিব তারপরও উনার সাহায্য নিব না।কথাগুলো মনে মনে বলে হঠাৎ করেই চুপ করে গেলাম তারপর কিছু একটা ভেবে বাকাঁ হেসে সাদাফ ভাইয়ার নাকে আস্তে একটা ঘুসি দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমার কান্ডে সাদাফ ভাইয়া চোখ বড়বড় করে তাকায় আমার দিকে।আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে নিলে সাদাফ ভাইয়া উঠে দাঁড়ায় আর বলে উঠে,,,
“তোমার মতিগতি ত আমার ঠিক লাগছে না,নিশ্চয়ই কোন শয়তানি বুদ্ধি করছো তাই না?তুমি কী জগাখিচুরি পাকাচ্ছো বলো ত আমাকে?কী চলছে তোমার মনে!কোন শয়তানি বুদ্ধি থাকলে ফটাফট বলে ফেলো নয়ত ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”
আমি উনার কথা শুনে একবার নিচের দিকে উঁকি দিলাম।তারপর সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে উনাকে ধাক্কা দিলাম,উনি জোড়ে একটা চিৎকার করে ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।আমি হাত দুইটা ঝাড়া দিয়ে হাসতে হাসতে নিচে চলে এলাম।
______________________________________
শীলা তার রুমে বসে থেকে মেঘের দেয়া সবগুলো গিফট দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে।মেঘের দেয়া প্রতিটা উপহার খুব যত্ন সহকারে তুলে রেখেছে শীলা।শীলার ফোনে সেই কখন থেকে মেঘ কল দিয়ে চলেছে তাতে শীলার কোন হুসই নেই।কিন্তু হঠাৎ জোড়ে কিছু পড়ার শব্দ শুনে শীলা ভয় পেয়ে যায়।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে সে দরজা খুলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।বাইরে এসে দেখে তার বাবা,মা দৌড়ে বাইরে যাচ্ছে।সেটা দেখে শীলার মনে কেমন একটা ভয় হল,শীলাও তাদের পিছন পিছন গেলো।অরা গিয়ে যা দেখল তার জন্য তারা কেউই প্রস্তুত ছিল না।সবাই এমনভাবে দেখছে যে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here