তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 3

0
358

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৩
সিয়া, তার মা & নানুমনি সবাই রওনা দিয়ে দেয় সিয়ার চাচার বাসায় যাওয়ার জন্য। সিয়ার চাচার বাসা থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা মূলত তা দিয়েই যাচ্ছে। গাড়ি তে করে যেতে যেতেই সিয়ার সেই কি বকবকানি। এটা করবে, ওটা করবে আরো কত্তো কি। তবে তখনই ঘটে আরেক বিপত্তি। হঠাৎ করেই তাদের গাড়ি বেশ জোরে সোরে ব্রেক কষে। এতে গাড়ির ভেতরে সবাই কিছুটা ধাক্কা খায়। আসলে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে তাই এমন দশা।
সিয়া;; ড্রাইভার আংকেল কি হয়েছে?
ড্রাইভার;; মামনি হয়তো গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে।
সিয়া;; কি? এই সময়ে টায়ার পাঞ্চার এখন কি হবে?
ড্রাইভার;; বুঝতে পারছি না। এখন তো বেশ রাত আর কোন মেকানিকও এখন পাওয়া যাবে না।
গাড়ির ড্রাইভার বাইরে নেমে পরে আর সাথে সিয়াও। সিয়ার মা আর নানু গাড়ির ভেতরেই বসে আছে। কিন্তু এতো রাতে এখন কি করবে। অপেক্ষা করলে সকালই না হয়ে যায়,, বেশ দেরি হয়ে যাবে তখন। আর এই রাস্তা টাও কেমন যেনো নীরব। চিন্তা ধরে গেলো।


অন্যদিকে অর্নীল এতো রাতে আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। রাগ যেনো তুঙ্গে উঠে আছে। আসলে অর্নীল আর তার বন্ধুরা মিলে যেই ক্লাবে আড্ডা দিতো সেখানে নাকি কি ঝামেলা হয়েছে তাও কোন এক মেয়ে কে নিয়ে। অর্নীল বারবার রাকিব আর জুনায়েদ কে বলে এসেছে যে যেনো কোন রকম কোন গোন্ডগোল না পাকে কিন্তু সেটাই হলো। অর্নীল গিয়ে এখন কাকে যে কি করে বসবে ধুলাই অন্ধকার। সে নিজের গাড়ি তে দ্রুত গিয়ে বসে স্টার্ট দেয়। অর্নীলের গাড়িতে সবসময় বিয়ার মজুদই থাকে,, তাই সে এক হাতে বিয়ার খাচ্ছে আরেক হাতে ড্রাইভ করে যাচ্ছে।
আর ওদিকে সিয়াদের গাড়ি ঠিক হবার নাম নেই।
দোলা;; সিয়া
সিয়া;; হ্যাঁ মা!
দোলা;; কিরে প্রায় এক ঘন্টা হলো আর কতোক্ষন?
সিয়া;; মা ঠিক হচ্ছে না। এখন কি করবো ভেবেও পাচ্ছি না। দেখি কি করা যায় তুমি চিন্তা করো না। নানু কে নিয়ে বসে থাকো।
সিয়া এসে আবার ড্রাইভারের কাছে যায়। তারপরেও কেটে যায় বেশ সময়। সিয়া বুঝলো যে এভাবে আর হবে না কিছু করতে হবে। তখনই সিয়া রাস্তার এদিক ওদিকে তাকাতাকি করতে লাগলো। লিফট নিতে হবে। যদি কোন গাড়ি আসে তাহলে তার কাছেই লিফট চাইবে,, এছাড়া আর কোন উপায় নেই বর্তমানে। সিয়া কোন গাড়ি পাবার আশায় রাস্তায় পায়চারি করছে। তারও ঠিক ১৫-২০ মিনিট পর দেখে একটা এশ কালারের গাড়ি এদিকেই আসছে। তা দেখে যেনো সিয়ার মাঝে কিছুটা আশা জাগে। সিয়া দ্রুত হাত নাড়াতে থাকে তার দিকে।
অর্নীল তো একমনে ড্রাইভ করে যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ নিজের গাড়ি থেকে কিছুটা দূর কাউকে হাত নাড়াতে দেখে অর্নীল গাড়ি থামায়। গাড়ি থামতেই সিয়া গাড়ির পাশে গিয়ে উইন্ড তে নক করে। উইন্ড এর গ্লাস টা নিচে নেমে পরে। তবে গাড়ির ভেতরে অন্ধকার অর্থাৎ কোন লাইট জ্বালায় নি। ওভাবেই সিয়া কিছুটা তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে….
সিয়া;; Excuse me..! আপনি কি একটু আমাদের সাহায্য করতে পারবেন প্লিজ। আসলে আমাদের গাড়ি টা পাঞ্চার হয়ে গেছে আর এতো রাতে তেমন কিছু পাচ্ছিও না তো ওদি আপনি একটু হেল্প করতেন!!
সিয়ার কথা গুলো শেষ হতে না হতেই গাড়ির ভেতরে ধুপ করে সাদা কালারের লাইট জ্বলে ওঠে। আর তখনই সিয়া অর্নীল কে দেখে। আর অর্নীল তো আগে থেকেই সিয়া কে দেখেছিলো। তবে এবার অর্নীল কে দেখে সিয়ার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। সিয়া ভাবেও নি যে সে এখন এই মূহুর্তে অর্নীলের দেখা পাবে। যাই হোক সিয়া দ্রুত এসে পরতে নিবে সেখান থেকে তখনই অর্নীল বলে ওঠে….
অর্নীল;; ওয়েট,,
অর্নীল গাড়ি থেকে নেমে পরে,, আর সিয়াও অর্নীলের কথায় থেমে যায়।
অর্নীল;; সমস্যা কি তোমার আমাকে দেখলেই এতো পালাই পালাই করো কেনো। আমি বাঘ না ভাল্লুক? কি হয়েছে বলো।
সিয়া;; না মানে আসলে আমি আমার চাচ্চুর বাসায় যাচ্ছিলাম তো পথিমধ্যে গাড়ির টায়ার ফুস।
অর্নীল;; Come, i”ll drop you…
সিয়া;; সিওর!
অর্নীল;; এখন কি তুমি আসবে!
সিয়া;; আমার মা আর নানু আছেন।
অর্নীল;; আচ্ছা চলো দেখি।
অর্নীল সিয়া কে নিজের গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পরে। তারপর স্টার্ট দেয়। তার থেকে কিছুদূর যেতেই সিয়া গাড়ি থামাতে বলে৷ তারপর অর্নীল দেখে গাড়ির ড্রাইভার আর সিয়ার মা & নানু বসে আছে। অর্নীল তাদের সব জিনিসগুলো ড্রাইভার কে দিয়ে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। সিয়া তার মা কে সব বুঝিয়ে বলে৷ তারপর অর্নীল নিজেই একজন কে ফোন করে সিয়াদের গাড়িটা রিপ্যার করার জন্য বলে দেয়। অতঃপর সিয়া সামনের সীটে বসে অর্নীলের পাশে আর পেছনে সিয়ার মা আর নানু বসে। তবে অর্নীল এবার মাস্ক পরে নিয়েছে। সিয়া বাইরের দিকে তাকিয়ে এক মনে যাচ্ছিলো তখনই সিয়ার মা দোলা বলে ওঠে…
দোলা;; তা বাবা তুমি এতো রাতে এই রাস্তায় কীভাবে?
অর্নীল;; আসলে আন্টি আমি একটু কাজে যাচ্ছিলাম তো তাই। তখন সিয়া এসে হেল্প চাইলো।
দোলা;; তুমি সিয়ার নাম জানো? চেনো নাকি ওকে?
সিয়া;; না না আব… চেনে না।
দোলা;; ওহহ আচ্ছা। তা বাবা কাজে যাচ্ছো আমাদের জন্য তোমার সমস্যা হবে না তো আবার?
অর্নীল;; আরে না না আন্টি। আমার কোন সমস্যা নেই। আপনারা নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।
দোলা;; আচ্ছা।
অর্নীল ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে সিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। তখনই হঠাৎ অর্নীলের ফোনে ফোন আসে। অর্নীলের কানে ব্লুটুথ ছিলো তা দিয়েই কথা বলতে থাকে।
অর্নীল;; হ্যালো..
জুনায়েদ;; ভাই কোথায় তুই?
অর্নীল;; এক ইম্পর্ট্যান্ট কাজে আছি। আমি যেতে পারবো না।
জুনায়েদ;; কিহ? আমরা যে বসে আছি।
অর্নীল;; সেই বসেই থাক তোরা। ছোট একটা ব্যাপার হ্যান্ডেল করতে পারিস না জীবনে কি করে খাবি। ফোন রাখ আর তোরাই ব্যাপার টা মিটমাট করে নে তো, বায়।
জুনায়েদ;; আরে কিন্তু….
ততক্ষনে অর্নীল ফোন ডিসকানেক্ট করে দেয়। সিয়া একবার অর্নীলের দিকে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকায়। অর্নীল ড্রাইভ করছে আর সিয়ার মার সাথে এটা ওটা কথা বলছে। প্রায় দুই ঘন্টা টানা ড্রাইভ করার পর অবশেষে সিয়া তার চাচার বাসার সামনে এসে পরে। বাসার সামনে আসতেই সিয়ার মা গাড়ি থমাতে বলে,, অর্নীলও থামায়। অর্নীল খেয়াল করলো যে বাড়ি টা বেশ সাজানো টাইপ, হয়তো বিয়ে বাড়ি।
সিয়ার মা আর নানু গাড়ি থেকে নেমে পরে। সিয়া নামতে ধরবে তখন অর্নীল কিছুটা গলা খাকাড়ি দেয়। সিয়া এক নজর অর্নীলের দিকে তাকিয়ে আবার নেমে পরে। আর সিয়া দের নামতেই আদিবা অর্থাৎ সিয়ার বোন সহ বাড়ির আরো বেশ কিছু লোক এগিয়ে আসে। সিয়ার মা আর নানু তো সিয়ার চাচার সাথে কথা বলতেই ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। লোকজন এসে তাদের সব জিনিসপত্র নিয়ে যেতে থাকে। সিয়ার মা অর্নীল কে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানায় তারপর এসে পরে৷ সিয়া নিজেও চলে আসতো তবে আবার থেমে যায়। অর্নীলের দিকে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে বলে ওঠে……
সিয়া;; আব… আসলে। অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে হয়তো আজ আর আসতেই পারতাম না এখানে।
অর্নীল;; মাই প্লেসার।
সিয়া;; আল্লাহ হাফেজ।
অর্নীল;; আল্লাহ হাফেজ।
এই বলেই সিয়া চলে আসে। সিয়ার দিকে অর্নীল তাকিয়ে থাকে। তার একদম ভেতরে চলে গেলে অর্নীল তার গাড়ি ঘুড়িয়ে আবার এসে পরে। যেই কাজের জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো তা তো মিটেই গেছে৷ এখন তো আর ক্লাবে যাওয়া তাহলে হবে না তাই অর্নীল তার বাড়ির দিকে যেতে ধরলো। বেশ সময় পর বাড়ি চলে গেলো। বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানাতে গা এলিয়ে দেয়।
আর ওদিকে তো জমজমাট অবস্থা। আরে বিয়ে বলে কথা। সিয়া আদিবা আর বাকি বন্ধুদের নিয়ে কি আড্ডা।
সিয়া;; হুম হুম এই বাড়িতে আর মাত্র দুইদিনের মেহমান আপনি মিস আদিবা। ওহহ সরি মিসেস।
আদিবা;; খুব জ্বালাচ্ছিস আমাকে তাই না। দাড়া জেঠিমা কে বলে তোকেও বিদায় করার ব্যাবস্থা করছি।
সিয়া;; আমি বিয়ে করবো না এতো জলদি।
আদিবা;; হুম হয়েছে। আচ্ছা শোন কাল তো হলুদ কি পরবি?
সিয়া;; আরে আমার কথা ছাড় তুই কি পরবি আগে তা বল, তুই বউ।
আদিবা;; আরে আমার জন্য সিলেক্ট করাই আছে। আমার কোন চিন্তা নেই। তাই তো তোকে বলছি যে কি পরবি!!
সিয়া;; লেহেঙ্গা।
আদিবা;; শোন হলুদ যেহেতু আর দাগের কথা তো জানিসই তাই আমি ভেবেছি যে হালকার মাঝে লেহেঙ্গা পরবো আর বিয়ের তো ভারি পরতেই হবে।
সিয়া;; আচ্ছা, তাহলে তো হলোই।
এই সেই আরো কতো কথা। এভাবেই কথায় কথায় রাত টুকু কেটে যায়। প্রায় ভোরের দিকেই সিয়া ঘুমাতে গিয়েছে।


পরেরদিন সকালে~~
অর্নীল;; দেখ জানিসই তো আমার বাবা কেমন। এখন তার নাকি অনেক কাজ হেল্প করার মতো তেমন কেউ নেই। কিন্তু আমার তো অফিস ভর্তি লোকজন আছে তাই এখন বিয়েতে আমাকে পাঠাচ্ছে।
রাকিব;; আরে চিন্তা করিস না তুই বেফিকার হয়ে যা।
অর্নীল;; হ্যাঁ এখন রেডি হচ্ছি খানিক সময়ের মাঝেই রওনা দিবো। আর জানিস আমি চিনিও না যে বিয়ে বাড়ি কোনটা। ড্রাইভার যাবে আমার সাথে। হয়তো ২-৩ দিন থাকতে হবে।
রাকিব;; হুম যা ডু ফুর্তি। দেখিস আবার কারো প্রেমে ডুবে আসিস না।
অর্নীল;; এই চুপ কর তো। আচ্ছা শোন থাক তাহলে আমি রাখি।
রাকিব;; ওকে বায়।
অর্নীল ফোন কেটে দেয়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বডিতে থাকা শার্টের ওপর পারফিউম দিচ্ছে তখনই একজন স্টাফ এসে অর্নীল কে নিচে যেতে বলে। অর্নীল নিজের ওপরে ব্রাউন কালারের জেকেট টা জড়িয়ে নিচে নেমে পরে।
সাগর;; রেডি?
অর্নীল;; ইয়াপ।
সাগর;; ড্রাইভার কে সবকিছু বলা আছে তুমি যাও।
অর্নীল;; গুড বায়
সাগর;; টেক কেয়ার।
এই বলেই অর্নীল বের হয়ে পরে বাড়ি থেকে। ড্রাইভার সামনে অর্নীল পেছনে বসে বসে ফোন ঘাটছে।
অর্নীল;; ড্রাইভার!!
ড্রাইভার;; জ্বি স্যার!
অর্নীল;; যেতে কতোক্ষন সময় লাগবে?
ড্রাইভার;; বেশি না স্যার ১ঃ৩০ মিনিট বা ২ ঘন্টা।
অর্নীল;; ওকে।
অর্নীল বসে থাকে। দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়। গাড়ি চলতে আপন গতিতে। একটা সময় গাড়ি থেমে যায়।
ড্রাইভার;; স্যার এসে পরেছি আমরা।
অর্নীল এতোক্ষন নিজের ফোন আর ল্যাপটপের মাঝেই ডুবে ছিলো ড্রাইভারের কথা শুনে অর্নীল বাইরে তাকায়। তবে বাইরে তাকাতেই অর্নীল বেশ অবাক হয়। কেননা অর্নীল গতকাল রাতে যেই জায়গায় এসেছিলো এইটা সেই জায়গা টাই। আর অর্নীল এতোক্ষন তা খেয়ালই করে নি। সে গাড়ি থেকে নেমে পরে। হ্যাঁ, একদম ঠিক। সেই বাড়ি, সেই জায়গায়। তাহলে কি অর্নীল আর সিয়া একই বিয়ে বাড়িতে এসে থামলো। অর্নীল এটাই ভাবছিলো তখনই ড্রাইভার অর্নীলের জিনিসপত্র গুলো এনে তার পাশে দাঁড়ায়। আর অর্নীল কে দেখেই সিয়ার চাচা বিল্লাল হোসেন এগিয়ে আসে।
বিল্লাল;; আরে আরে এ আমি কাকে দেখছি। অর্নীল স্যার যে। আপনি কেমন আছেন?
অর্নীল;; জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
বিল্লাল;; জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। তবে বড়ো স্যার কোথায় উনি আসেন নি?
অর্নীল;; জানেনই তো উনার কথা। খুব ব্যাস্ত মানুষ এর জন্য আসেন নি।
বিল্লাল;; সমস্যা নেই আমার কারণ উনার থেকেও বড়ো একজন উনার ছেলে এসেছে। আসুন স্যার ভেতরে আসুন।
অর্নীল ভেতরে চলে যায় বিল্লালের সাথে। বিল্লাল অর্নীল কে তার রুম আর বাকি সবকিছু বুঝিয়ে দেয়। বাড়ির সব স্টাফ দের খুব কেয়ার ফুল থাকতে বলে। অর্নীল নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই জালানা থেকে পর্দা গুলো সরিয়ে দেয়। সূর্যের মিষ্টি রোদ এসে পুরো ঘরে ছেয়ে যায়। অর্নীল জালানা তে হাত রেখে বাইরের দিকে তকায়। বাইরে অনেক ছেলে মেয়েরা বসে আছে। আড্ডা দিচ্ছে, কাজ করছে। কেনো জেনো অর্নীল বেশ সময় সেদিকে তাকিয়ে থাকে। হয়তো সিয়া কে খুঁজে চলেছে। কেনো যে খুঁজছে তার সঠিক উত্তর সে নিজেও জানে না। তখনই কারো কথায় অর্নীল পেছনে তাকায়। দেখে একজন হাতে এত্তো গুল জিনিস পত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্নীল তাকে ভেতরে আসতে বলে। সে জিনিস গুলো রেখেই চলে যায়। বিকেলের দিকে নাকি গায়ে হলুদ৷ তাই সেই অনুযায়ী ই সব ডেকোরেট করা হয়েছে। বাড়িটা বেশ ভালোই সাজানো হয়েছে। বিকেলে অর্নীল একটা সাদা আর হলুদ কালারের কম্বিনেশনে পাঞ্জাবি পরে নিচে চলে যায়। অর্নীলের যেতেই সব মেয়েরা কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিতে থাকে। অনেক মেয়েরা অর্নীলের সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু সুযোগ টা পেয়ে ওঠে না৷ অর্নীলের বেশ কিছু চেনা জানা মানুষ রয়েছে এখানেই। অর্নীল তাদের সাথে কথা বলতে লাগে। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো এটা যে সিয়া যদি এই বাড়িতেই থেকে থাকে তাহলে সকাল থেকে শুরু করে এখনো অব্দি অর্নীল সিয়া কে একটাবারও দেখলো না কেনো!!

আদিবা;; সিয়া, সিয়া রে তোর কি হলো?
সিয়া;; আর ২ মিনিট।
আদিবা;; আরে জলদি কর, নিচে সবাই বসে আছে। যেতে হবে তো।
সিয়া;; এসে গেছি।
আদিবার কথা বলতে বলতেই সিয়া চেঞ্জিং রুম থেকে এসে পরে। সিয়াকে বেশ সুন্দর লাগছে৷ সেও কিছুটা হলদেটে লেহেঙ্গা পরেছে। চুল গুলো হাল্কা কার্লি করে নিয়েছে, কানে বেশ বড় বড় ঝুমকা, হাতে চুড়ি, হাল্কা সাজ এইতো শেষ৷
আদিবা;; আরে বাহ বউ আমি নাকি তুই। এত্তো কিউট লাগছে!
সিয়া;; পাম দেওয়া শেষ হলে নিচে যাই।
আদিবা;; হারামি চল।
সিয়া আর আদিবা নিচে চলে যায়। অর্নীল হাতে ড্রিংক্স নিয়ে খাচ্ছিলো আর কথা বলছিলো সবার সাথেই তখন সিয়া আর আদিবা নিচে নেমে আসে। আদিবা কে ডেকে হলুদ দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সিয়া একাই আসতে থাকে। আর তখনই অর্নীলের নজর সিয়ার ওপর পরে। সেই হাসিমাখা সিয়ার ওপর। অর্নীলের সিয়াকে দেখে তো আক্কেলগুড়ুম হওয়ার মতো অবস্থা। অর্নীল বারবার এই মেয়ে কে দেখে। বারবার কোন না কোন ভাবে এই মেয়েটার সাথে অর্নীলের দেখা হয়েই যায়। এটা কি ভাগ্যের ব্যাপার নাকি শুধুই একটা কাকতালীয় ব্যাপার কোনটা?! অর্নীল সিয়ার দিকে তাকিয়েই ছিলো কিন্তু সিয়া এর ওর সাথে কথা বলছে। হঠাৎ সিয়ার মা এসে সিয়াকে নিয়ে যায় আদিবার কাছে। সিয়া আদিবাকে হলুদ দিয়ে দেয় আর আদিবাও দুষ্টুমি করে কিছুটা হলুদ সিয়ার মুখে লাগিয়ে দেয়। বাকিরাও হলুদ দেয়। এভাবেই বেশ আনন্দের মাঝেই আদিবার হলুদ সন্ধ্যা টা কেটে যায়। সিয়া সেখান থেকে এসে পরে। হাতে আর গালে বেশ কিছু হলুদ লেগে গেছে সেগুলো ধুয়ে নিতে হবে। তাই সিয়া একাই ভেতরের দিকে যেতে লাগে। সিয়া বারবার তার হাতের দিকে তাকাচ্ছে আর সামনে যাচ্ছে কিন্তু তখনই পেছন থেকে বেশ চেনা জানা একটা কন্ঠস্বর সিয়ার কানে আসে….
অর্নীল;; হলুদে তোমায় বেশ মানিয়েছে হলুদিয়া পাখি!!
এমন কথা শুনেই সিয়া পেছন ঘুড়ে তাকায় দেখে অর্নীল, মুচকি হেসে দুইহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। সিয়া তো এখন অবাকের চরম পর্যায়ে। অর্নীল এখানে? কি করে? কীভাবে? এগুলোই ভাবছে এখন সিয়া। তবে সিয়ার ভাবনাতে ছেদ ঘটায় অর্নীল। সে সিয়ার সামনে এগিয়ে গিয়ে তুরি বাজায়। সিয়ার ধ্যান ভেঙে যায়। অর্নীলের দিকে তাকালে অর্নীল তার ভ্রুজোড়া খানিক নাচায়। আর সিয়া এখনো অবাক হয়ে তাকিয়েই আছে তার দিকে।




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here