তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 4

0
277

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৪
সিয়া অবাক হয়ে তাকিয়েই ছিলো কিন্তু তখন অর্নীল দুইহাত ভাজরত অবস্থাতেই সিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকে যায়। সিয়া পিটপিট করে তাকায়।
অর্নীল;; হলুদিয়া পাখি!
সিয়া;; আমার নাম সিয়া 😒
অর্নীল;; আহারে সিয়া! এককাজ করো তুমি তোমার নাম টা কপালে লিখে নাও।
সিয়া;; দরকার নেই।
সিয়া এই বলেই উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলে অর্নীল আবার থামিয়ে দেয়।
অর্নীল;; এই দাড়াও।
তবে এবার সিয়ার মাথায় আরেক কথা এসে বারি খায়। সিয়া ঘুড়ে গিয়ে কপাল বেশ কুচকে সোজা অর্নীলের দিকে আঙুল তুলে বলে ওঠে….
সিয়া;; ওয়েট! আপনি এখানে কি করছেন?
অর্নীল;; কে আমি? না মানে ভাবলাম যেহেতু বিয়ে বাড়ি তাই বিন বুলায় মেহমান হয়ে এসে পরি। তাই এসে পরলাম।
সিয়া;; ফাজলামো করবেন না, সত্যি সত্যি বলুন। আচ্ছা কোন না কোন ভাবে আপনি আবার আমায় ফলো টলো করছেন না তো??
অর্নীল;; আব….যদি বলি হ্যাঁ তো!
সিয়া;; না মানে গতকাল থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার আপনার সাথে দেখা হয়েছে আমার।
অর্নীল;; It’s just a coincidence….
সিয়া;; হুম তাই যেনো হয়।
অর্নীল হঠাৎ করেই সিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে লাগে। এমন ভাবে এগোচ্ছে যেনো দেখে মনে হচ্ছে কিছু তো একটা করেই বসবে এখন। সিয়া পেছাচ্ছে আর অর্নীল এগোচ্ছে। পেছাতে পেছাতে সিয়ার পিঠ একটা দেওয়ালের সাথে লেগে যায়। আর অর্নীল সিয়ার একদম কাছে এসে সিয়ার মুখের বেশ কাছে ঝুকে পরে। সিয়া খিচে চোখ বন্ধ করে ফেলে। বেশ সময় পার হয়ে যায় কিন্তু তবুও কিছু হচ্ছে না দেখে সিয়া চোখ মেলে তাকায়। সামনে তাকিয়ে দেখে অর্নীল এক ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে। সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্নীল হুট করেই সিয়ার গালে তার আঙুল দিয়ে খানিক স্লাইড করে। এতে বেশ টুকু হলুদ অর্নীলের আঙুলের ডগায় এসে পরে। অর্নীল সেই হলুদ টুকু নিজের গালে লাগিয়ে দেয়। সিয়া কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে আসে। অর্নীল তাকিয়ে থাকে কতোক্ষন তারপর নিজেই নিজেকে বলে যে সে আসলে এটা কি করলো। সে সিয়ার গাল থেকে হলুদ নিয়ে নিজের গালে কেনো দিলো। একচুয়ালি হলুদ থেকে তো তার এলার্জি তাই না অর্থাৎ ভালো লাগে না তাহলে এখন এমন করলো কেনো। অর্নীল নিজের করা কাজে নিজেই বোকা বনে গেলো। সে নিজেও এসে পরে সেখান থেকে। আর সিয়া নিজের গাল আর হাত থেকে হলুদ ধুয়ে রুমে চলে যায়। রুমে যেতেই দেখে আদিবা সেখানে বসে আছে।
সিয়া;; কিরে তুই রুমে কখন এলি?
আদিবা;; এসেছি একটু আগেই।
সিয়া;; হুম।
সিয়া গিয়ে ধুপ করে বিছানাতে বসে পরে। আদিবা নিজের কানের দুল গুলো খুলতে খুলতে বলে ওঠে….
আদিবা;; কিরে কি হয়েছে?
সিয়া;; জানিস একটা ব্যাপার খুব করে লক্ষ্য করলাম৷ একটা ছেলে আছে তার সাথে বারবার প্রায় সব জায়গাতেই আমার সাথে দেখা হচ্ছে। আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানেই। বুঝতে পারছি না এটা শুধুই এক কাকতালীয় ব্যাপার নাকি অন্য কোন কিছু।
আদিবা;; আয় হায়। দিল মে লাড্ডু ফুটা!
সিয়া;; আরে ধুর হারামি, তেমন না।
আদিবা;; হাহাহাহা।
সিয়া;; ছেলে টা এখানেও এসেছে।
আদিবা;; কি? সত্যি! তাহলে তো ছেলেকে দেখতেই হবে। আমিও তো দেখি কে এই।
সিয়া;; এটাই বুঝতে পারছি না এখানে ও কি করে এলো? মানে এখানে কেনো। তুই আমার বোন, ও তোর বিয়েতে কি করে?
আদিবা;; আচ্ছা ছেলে দেখতে কেমন রে?
সিয়া;; বেশ লম্বাচওড়া, ফর্সা, হালকা দাড়ি আছে, ফিট বডি।
আদিবা;; হুমমম।
সিয়া;; ওয়েট, আমি শুনেছি ওর বাবা পলিটিক্স করে।
আদিবা;; এই তুই কি সাগর চৌধুরীর ছেলের কথা বলছিস?
সিয়া;; সাগর চৌধুরী কে?
আদিবা;; আরে আছে, ওনার ছেলে অর্নীল। আবরার চৌধুরী অর্নীল।
সিয়া;; এই রে 😬😬
আদিবা;; কি?
সিয়া;; ওই ই তো। অর্নীল।
আদিবা;; ওহহ আসলে ওর বাবার সাথে আমার বাবার কাজের সম্পর্ক আছে তো সেই সুবাধে এসেছে। মানে উনার ছেলে, উনিও বেশ নামি দানি কোম্পানির ওনার। উনিই চিফ গেস্ট।
সিয়া;; হায়রে,, আমি আরো কি না কি বলে এসেছি যে আমাকে নাকি উনি ফলো করছেন 🤦‍♀️?
আদিবা;; আচ্ছা ছাড় তুই তো আর বুঝিস নি, বাদ দে।
সিয়া;; হুমম। কাল তো বিয়ে তোমার এখন খুশিতে নাচো।
আদিবা;; আর নাচানাচি,, মিস করবো ইয়ার। (দিয়াকে এক সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে)
সিয়া;; মিস ইউ টু। কিন্তু আছি তো নাকি। দেখা তো হবেই। তুই বেড়াতে আসবি আবার আমরা যাবো।
আদিবা;; হুমম।
বাড়িতে বেশ কাজ চলছে। সবাই অনেক আনন্দ ফুর্তি করছে। পটাকা জ্বালাচ্ছে অনেকে নিচে বাগানের সাইডে। আর সিয়ার কাছে এই পটাকার আওয়াজ টা নিতান্তই বিরক্তিকর লাগে। তাই সে ছাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে এক কাপ গরম কফি নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছে। ছাদের পরিবেশ টা আরো সুন্দর। জোৎসার আলো পরেছে, মৃদু ঠান্ডা বাতাস। এক কথায় মনোমুগ্ধকর। নিচ থেকেই সিয়া সবার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে। কিন্তু একটা সময় সবাই বেশ ব্যাস্ত হয়ে পরে যার যার কাজে। সিয়া নিজের মতো করে দাঁড়িয়েই ছিলো কিন্তু নিজের পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফট করে পেছনে তাকায়। আর পেছনে তাকাতেই অর্নীল কে দেখে চমকে পরে যেতে ধরে তবে অর্নীল সিয়ার কোমড় পেচিয়ে ধরে। এমন আচমকা কান্ডে সিয়া ভেবাচেকা খেয়ে যায়। অর্নীল সিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেনো যেনো সিয়ার এই ভয়ার্ত মুখ টা অর্নীলের বেশ প্রিয় হয়ে ওঠেছে। অর্নীল সিয়ার কোমড় ধরে নিজের দিকে দেয় এক টান। ফলে সিয়া হুমড়ি খেয়ে অর্নীলের বুকের ওপর এসে পরে। অর্নীলের বুকে সিয়ার চুল গুলো লেপ্টে ধরেছে। সিয়ার কাপাকাপির বেগ বুঝিয়ে দিচ্ছে যে সিয়া কিছুটা হলেও ভয় তো পেয়েছেই। সিয়া অর্নীলের থেকে মাথা তুলে ওপরে তাকায়। অর্নীল মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে…..
অর্নীল;; ভয় পেয়েছো?
সিয়া;; এভাবে রাত-বিরাতে ভূতের মতো করে এলে তো অবশ্যই ভয় পাবো।
অর্নীল;; আমি ভূত?
সিয়া;; না, সেউড়া গাছের পেত্নীর জামাই।
এই কথা বলেই সিয়া একটা ভেংচি কেটে এসে পরতে ধরবে তখনই অর্নীল সিয়ার হাত খপ করে ধরে ফেলে। সিয়াকে টেনে নিজের সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়।
অর্নীল;; আচ্ছা সমস্যা কি তোমার বলতো?
সিয়া;; কোন সমস্যা নেই তো!
অর্নীল;; না মানে এইযে আমাকে দেখলেই এতো পালাই পালাই করো কেনো। কি হয় আমাকে দেখলেই?
সিয়া;; আপনার থেকে আমার এলার্জি।
অর্নীল;; কিন্তু আমার তো কোন এলার্জি নেই।
সিয়া;; এবার আমি যাই?
অর্নীল;; না। আমি যেতে বলেছি তোমাকে। আগেই যাবে কেনো। থাকা যায় না একটু আমার কাছে।
সিয়া;; কেনো থাকবো আমি?
অর্নীল;; আমার ভালো লাগে তাই।
সিয়া;; ফ্লার্ট করছেন?
অর্নীল;; এই জিনিস টা আমার সাথে যায় না।
সিয়া;; হ্যাঁ তা বুঝতে পারছি। সরুন সামনে থেকে।
সিয়া যা বললো অর্নীল ঠিক তার উলটো টা করলো। সে সিয়ার হাত ধরে একটু ঘুড়িয়ে দিলো। এতে সিয়ার পিঠ অর্নীলের বুকে এসে ঠেকে যায়। অর্নীল সিয়ার হাত দুটো নিজের এক হাত দিয়ে আটকে দেয়।
সিয়া;; অর……
অর্নীল;; হুশশশশ!! পরিবেশ টা সুন্দর তাই না।
সিয়া;; _______________
অর্নীল সিয়ার মাথার সাইডে নিজের নাথা টা কিছুটা লাগিয়ে দেয়। আর সিয়া এমন কান্ডে অবাক।
অর্নীল;; যদি সময় টা এখানে এভাবেই থেমে যেতো কত্তো ভালো হতো বলো।
সিয়া;; এ এ একদম ভাভালো হহতো ন না।
অর্নীল সিয়াকে এভাবে বেশ সময় ধরে রাখে,, সিয়া এর মাঝে ছুটে আসতে চেয়েছে বহুবার কিন্তু অর্নীল ছাড়ে নি। হঠাৎ নিচ থেকে সিয়ার ডাক পরে। আর সিয়া তখন মাথা ঘুড়িয়ে দেখে সিয়ার নানু তাকে ডাকছে। সিয়া চলে আসতে চায় কিন্তু এইবারও অর্নীল সিয়াকে থামিয়ে দেয়।
অর্নীল;; কোথায় যাচ্ছো?
সিয়া;; আরে কোথায় যাচ্ছি মানে? ডাকছে তো।
অর্নীল;; যেও না। এখানেই থাকো আমার কাছে।
সিয়া;; পাগল আপনি। ছাড়ুন। আর আমাকে সেই প্রথম দিন বলেছিলেন যে আমি নাকি কোন ম্যানার্স জানি না তাহলে আপনিও তো জানেন না। এভাবে হুট করেই অজানা অচেনা একটা মেয়েকে কেউ এভাবে ধরে।
অর্নীল;; তুমি মোটেও আমার অজানা অচেনা নও।
সিয়া;; তাই না,, তা কবে থেকে চেনেন আপনি আমাকে!!
অর্নীল;; ২৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ৬ ৭ ৮ ৯ সেকেন্ড আর কি।
সিয়া;; এতো হিসেব?
অর্নীল;; করতে হয়।
সিয়া;; আমি চলে যাবো।
অর্নীল;; না গেলে হয় না।
সিয়া;; না।
এই বলেই সিয়া অর্নীলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে নিচে চলে আসে। অর্নীল কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে তারপর ছাদের রেলিং এর কাছে চলে যায়। গিয়েই দেখে সিয়া যে কফি টা খাচ্ছিলো তা এখনো রয়েছেই। একদম গরম ধোঁয়া বেড়ুচ্ছে। সিয়া যেই দিক টা দিয়ে কফি খেয়েছে সেখানে কিছুটা লিপস্টিক লেগে আছে। ব্যাস, অর্নীল আর কিছু না ভেবেই সোজা কফির মগ টা হাতে তুলে সিয়ার ঠোঁট লাগানো অংশে নিজের নিজের ঠোঁট লাগিয়ে কফি খেতে থাকে। এই প্রথম অর্নীল অন্য কারো মুখের জিনিস খাচ্ছে৷ ওদিকে দিয়া নিচে নেমে পরেছে।
সিয়া;; হ্যাঁ বুড়ি বলো, ডেকেছো কেনো।
শিউলি;; সবাই হাতে মেহেদি পরছে তুই কোথায়। সবাই তোকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে।
সিয়া;; আরে আমার পরতে হবে না।
আদিবা;; কিসের পরতে হবেনা। এক উশঠা খাবি। এদিকে আয়।
আদিবা সিয়াকে নিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর দুইহাত ভরে একদম মেহেদি পরে নেয়। কিন্তু সিয়ার এই একটা স্বভাব সে কোন মতেই একটা জায়গায় চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। তার হয়তো সারা বাড়িতে টইটই করে ঘুড়তে হবে নয়তো কিছু একটা করতে হবে। তাই সিয়া এখনো উঠেই পরে। দুই হাতে মেহেদি লাগিয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। সিয়া হেটে হেটে যাচ্ছিলো কিন্তু কারো ডাক শুনে আবার থেমে পরে।
অর্নীল;; সিয়া জান!!
সিয়া পেছনে ফিরে দেখে অর্নীল।
সিয়া;; হায় আল্লাহ! আপনি আবার? আচ্ছা আপনি এমন হুট হাট করেই টপকে পরেন কেনো বলুন তো?
অর্নীল;; কারণ তোমাকে ছাড়া ভালোই লাগেনা। জানি না কি করে দিয়েছো আমার ওপর৷ সারাদিন তোমার কথাই ভাবতে থাকি।
সিয়া;; ঘোড়ার ডিম।
অর্নীল;; হাতে কার নাম লিখেছো?
সিয়া;; মানে?
অর্নীল;; মানে হাতে তো মেহেদি দিয়ে নাম লিখা হয় তাই না। তুমি কার নাম লিখেছো?
সিয়া;; আপনার দাদার নাম।
অর্নীল;; হুয়াট! আমার দাদা কে আমিই দেখিনি কখনো।
সিয়া;; হুমম। আর এই কি নাম বললেন। আমার নাম সিয়া নট সিয়া জান।
অর্নীল;; আমি এখন থেকে এটাই বলবো বুঝলে সিয়াজান। নামটা মিলেছে তাই না।
সিয়া;; না।
অর্নীল;; আচ্ছা শুনো না সিয়াজান।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; লিসেন এতোক্ষন ফাজলামি করছি বাট এবার আসি সিরিয়াস কথায়।
সিয়া;; এভাবে কেনো বলছেন। আস্তে বলুন প্লিজ সিরিয়াস শব্দ থেকেই আমার ভয় লাগে আর আপনার মুখ থেকে তো আরো। এতো সিরিয়াস আমি আমার এক্সামের টাইমেও হই না। যতটা এখন আপনাকে দেখে হচ্ছি।
অর্নীল;; আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
সিয়া;; হ্যাঁ বলুন না।
অর্নীল;; এখন না। সময় হলে বলে দিবো।
দিয়া;; তাহলে এখন আমি যাই।
সিয়া যেনো এখন অর্নীলের সামনে থেকে কেটে পরলেই বাচে। তাই সে দ্রুত পা চালিয়ে এসে পরে।


রাতে~~
অর্নীল বসে বসে নিজের রুমে ল্যাপটপ চালাচ্ছিলো। কিন্তু কোনকিছুতেই মন বসাতে পারছে না। সিয়ার কথা মনে পরছে। অর্নীল যা বুঝলো সে সিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছে। নয়তো এমন কখনোই হতো না। আচ্ছা ভালোবাসা কি প্রথম দেখাতেই বা প্রথম দিনেই হয়? এটা কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব কি সম্ভব না তা অর্নীল জানে না। সে শুধু এখন এটা জানে যে সিয়াকে তার চাই। ব্যাপার কিছুটা এখন এমন যে সিয়া যদি অর্নীলের আশে পাশে না থাকে তাহলে অর্নীলের কেমন যেনো সবকিছু ফাকা ফাকা লাগে। আরে মেয়েটার সাথে সবে কালকেই তো দেখা হলো। আর আজ একদিনেই এতোটা ইমোশনাল এটাচমেন্ট!! ভালোবাসায় পাগলামি শুনেছে এখন মনে হয় অর্নীল নিজেই পাগল হয়ে যাবে। সিয়াকে লাগবে তার। অর্নীল এগুলো বসে বসেই ভাবছিলো তখন তার ফোনে সাগর চৌধুরীর ফোন আসে।
অর্নীল;; হ্যালো।
সাগর;; হ্যাঁ অর্নীল কি করছো?
অর্নীল;; কিছু না এইতো বসে আছি, তুমি?
সাগর;; আমিও, সবকিছু ঠিক আছে তো?
অর্নীল;; হ্যাঁ।
সাগর;; গলা এমন শোনা যাচ্ছে কেনো?
অর্নীল;; বাবা, তুমি মা কে কতো টুকু ভালোবাসতে?
অর্নীলের কথায় যেনো সাগর চৌধুরীর মুখ টা কিছুটা কালোই হয়ে এলো।
অর্নীল;; চুপ কেনো বলো।
সাগর;; অর্নীল!!
অর্নীল;; রাখি বাবা, বায়।
অর্নীল যেনো তার উত্তর টা পেয়ে গেছে, সে ফোন কেটে দেয়।
অর্নীল;; আমার সিয়া কে লাগবে। যে করেই হোক।
আর ওদিকে সিয়ারও একই দশা ঘুম নেই। তবে এখনো অনেকেই জেগে আছে। বাইরে চিল্লাপাল্লা করছে। আবার আতশবাজি ফুটাচ্ছে।
সিয়া;; আদি এই আদি, আদি। আরে ওই
আদিবা;; হুমম (ঘুমের ঘোরে)
সিয়া;; এই গরুর মতো ঘুমাচ্ছিস কেনো, কাল না তোর বিয়ে। সরি বারো টার ওপরে তো বেজেই গেছে তাহলে তো আজ। আজ না তোর বিয়ে ঘুমাস কেনো। উঠ।
আদিবা;; আরে সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে রে। মেরি মা প্লিজ একটু ঘুমা তুই। আর আমাকেও ঘুমাতে দে।
সিয়া;; কুম্ভকর্ণ।
সিয়ার তো ঘুম নেই। তাই সে বসে ছিলো কিন্তু তখনই টুং শব্দ করে তার ফোনে মেসেজ আসে। সিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ।
“” সিয়াজান ছাদে এসো জলদি””?
“সিয়াজান” শব্দ টা শুনেই সিয়া বুঝে গেলো যে এই অর্নীল ছাড়া আর কেউই না। সিয়া আবার পালটা মেসেজ দেয়।
“” আপনি আমার নাম্বার কি করে পেলেন””?
কিছুক্ষন পর অর্নীলের আবার মেসেজ…
“” নাম্বার কোথায় পেয়েছি, কীভাবে পেলাম তা ছাড়ো,, তুমি শুধু ছাদে এসো “”।
সিয়া আবার মেসেজ দেয়…
“” যাবো না ছাদে, এতো রাতে ছাদে যাওয়ার কোন মানেই হয় না!””
অর্নীলের মেসেজ…
“” ওকে ফাইন তোমার ইচ্ছা না আসলে। তো যেহেতু তুমি ছাদে আসলে না তাই এখন আমি তোমার রুমে যাবো। ভেবে দেখো তুমি আসবে নাকি আমি যাবো। আমি যদি আসি তাহলে তা অবশ্যই তোমার জন্য ভালো হবে না সিয়াজান””।
অর্নীলের এই মেসেজ টা দেখেই তো সিয়ার ঘাম ঝরে যাওয়ার মতো অবস্থা। এখানে অনেক মানুষ আছে আর অর্নীল যদি এতো রাতে তার রুমে আসে তাহলে শেষ। সিয়া আর কোন উপায় না পেয়ে নিজের ওরনা টা গলায় ঝুলিয়ে আস্তে করে রুম থেকে বের হয়ে পরে। ছাদে গিয়ে দেখে কেউ নেই। পুরো ফাকা। হঠাৎ সিয়ার চোখ যায় ছাদের রেলিং এ থাকা একটা ধবধবে সারা বিড়ালের ওপর৷ রাতের বেলায় বিড়ালের চোখ গুলো যেনো গাড়ির হ্যাডলাইটের মতো জ্বলজ্বল করছে। তা দেখে সিয়া কিছুটা ভয় ই পায়। কেউ যেহেতু নেই তাহলে এখানে থেকে আর কি লাভ। অর্নীল নির্ঘাত তাকে মিথ্যা বলেছে। এই ভেবেই সিয়া চলে যেতে ধরে কিন্তু তখনই তার কানে আসে সিটি বাজানোর শব্দ। কেউ সিটি বাজিয়ে একটা গানের ছন্দ তুলেছে। বেশ সুন্দর লাগছে। রাতের বেলা পরিবেশ টা নীরব এই অবস্থায় শব্দ টা যেনো একদম কানে এসে বেধেছে। সিয়া এগিয়ে গিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে থাকে। আর কিছুদূর এগোতে পেয়েও যায়। অর্নীল রেলিং এ খানিক হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিটি বাজিয়ে যাচ্ছে। কারো উপস্থিতি টের পায় অর্নীল। সে জানে যে এটা সিয়া ছাড়া আর কেউ না। সে সিয়ার দিকে না তাকিয়েই বলে ওঠে…..
অর্নীল;; এসেছো সিয়াজান!
সিয়া;; আব..এতো রাতে এখানে। মানে কিছু সমস্যা হয়েছে কি?
অর্নীল;; হ্যাঁ অনেক বড় সমস্যা হয়েছে আমার, অনেক বড়।
অর্নীল এবার সিয়ার দিকে তাকায়। দেখে সিয়া ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সিয়ার মুখ টা একদম স্নিগ্ধ লাগছে।
সিয়া;; কি সমস্যা??
অর্নীল;; তুমি নিজে।
সিয়া অর্নীলের কথার মানে বুঝে না।
সিয়া;; মানে?
অর্নীল এবার সিয়ার একদম কাছে চলে যায়। হঠাৎ সিয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মাঝে এনে বেশ ইমোশন নিয়ে বলে ওঠে….
অর্নীল;; সিয়া আমি ছোট থেকেই এক আলাদা পরিবেশে বড় হয়েছি। একা থেকেছি। কাউকে নিজের মন খুলে কথাও বলতে পারি নি। ছোট বেলা এইসব খারাপ লাগলেও সময় আর বয়সের সাথে সাথে সব পালটে ফেলেছি আমি। নিজের সাথে খাপ খাইয়ে মানিয়ে নিয়েছি। হয়তো বা এখন তুমি ভাবতে পারো যে এতো বড় একজনের ছেলে আমি। এই ভালোবাসা-প্রেম খুব ঠুনকো আমার কাছে,, কিন্তু না। জানি না তুমি বিশ্বাস করবেও কি করবে না। তবে আমি এতো টুকু বুঝে গেছি যে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। জানি না তোমাকে দেখার পর থেকে কি হয়েছে আমার। আই রেলি ডোন্ট নো। তবে আমার জীবনে যদি কেউ আসে তাহলে সেটা তুমি। থাকলে তুমিই থাকবে নয়তো কেউ না। তবে আমি এখন, আজ যা বলছি তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য সিয়া। সিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি, বেসে ফেলেছি। কীভাবে বাসলাম জানি না। এখন তুমি বলতে পারো এতো কম সময়ে ভালোবাসা না ভালোলাগা হয়। কিন্তু না আমি ভালোবাসা আর ভালোলাগার মাঝে পার্থক্য বুঝি। সিয়া আমি তোমাকে ভালোবাস ❤️।
অর্নীল নিজের হাত দিয়ে সিয়ার হাত গুলো আবদ্ধ করে কথা গুলো বলছিলো। আর সিয়া যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে এখন। সে ভাবতেও পারে নি যে অর্নীল এখন তাকে এই কথাগুলো বলবে। অর্নীলের কথা গুলো সে খুব মনোযোগ দিয়েই শুনেছে। এমনকি একটা বারের জন্যও নিজের পলক অব্দি ফেলে নি। আর অর্নীলের কথা গুলো শেষ হতেই ওই দূর আকাশে একটা বড় আকারের আতশবাজি গিয়ে ফুটে ওঠে। আতশবাজির আলো একদম আকাশে ছেয়ে যায়। চারিদিক কে মূহুর্তেই আলোকিত করে দেয়। আতশবাজি ফুটে ছড়িয়ে পরার তীব্র শব্দ গুলো কানে আসছে। অর্নীল আর সিয়া একমনে একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে।




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here