তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম -Part 6

0
262

#তোর_প্রেমেতে_অন্ধ_হলাম
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ০৬
সেই অবয়ব টা সিয়ার মুখে হাত দিয়ে ধরে তাকেও নিয়ে দেওয়ালের সাথে একদম চেপে ধরে। এদিকে সিয়ার শ্বাস যেনো আটকে আসছে। সে নিজের হাত দিয়ে সেই মানুষ টার হাত ধরে আছে। ট্রাই করছে ছাড়ানোর। সিয়ার এমন কান্ডে অর্নীল এবার তার মুখ থেকে মাস্ক টা খুলেই ফেলে।
অর্নীল;; হুশশশ, এই চুপ চুপ চুপ।
সিয়া;; উমম উম্ম উম্ম….
অর্নীল;; সিয়াজান! আমি, আমি অর্নীল।
অর্নীল সিয়ার মুখ থেকে নিজের হাত টা সরিয়ে ফেলে৷ আর সিয়া জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে হাপাতে লাগে৷
অর্নীল;; সিয়াজান!
সিয়া;; এই আপনি কি বলুন তো! এভাবে রাতের বেলা কেউ কারো রুমে আসে। আমি সত্যি অনেক ভয় পেয়ে গেছি। অল্পের জন্য আত্না টা ভেতর থেকে বের হয়ে যায় নি আমার।
অর্নীল;; তুমি আসলেই অনেক ভীতু রকমের একটা মেয়ে।
সিয়া;; সবাই বলে 😒
অর্নীল;; তো বলবে না,, এইটুকু তেই কেউ ভয় পায় পাগল মেয়ে।
সিয়া;; আপনি এখানে কি করছেন। যান এখান থেকে।
অর্নীল;; আর যদি না যাই তো!
সিয়া;; না আপনি যাবেন। বাজে না বকে যান এখান থেকে নয়তো….!
অর্নীল;; কি নয়তো কি,, নয়তো কি হ্যাঁ! 🤨। (সিয়ার দিকে এগোতে এগোতে)
সিয়া;; নয়তো আমি আরো রিকুয়েষ্ট করবো যে প্লিজ যান এখান থেকে প্লিজ।
সিয়ার কথায় অর্নীল এবার ফিক করে হেসেই দেয়। তবে সিয়ার ভোলা ভালা ফেইস দেখে অর্নীলের ভীষণ মায়া লাগলো তাই অর্নীল “সিয়াজান” বলে একটা ডাক দিয়েই সোজা সিয়াকে জড়িয়ে ধরে। আর সিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড এভাবে থেকেই সিয়া অর্নীল কে ঠেলে কিছুটা দূর দাড় করিয়ে দেয়।
সিয়া;; হচ্ছে কি এগুলো?
অর্নীল;; কিছুই না, তোমাকে মিস করছিলাম তো তাই চলে এলাম।
সিয়া;;
অর্নীল;; বাই দি ওয়ে আন্টিকে কি বলছিলে তুমি?
সিয়া;; কই, কিছুই না তো।
অর্নীল;; হ্যাঁ হ্যাঁ হয়েছে সবই শুনেছি আমি।
সিয়া;; তো কি হয়েছে?
অর্নীল;; আসলে কি জানো মেয়েকে নিজের করে পাওয়ার সর্বপ্রথম শর্ত হচ্ছে মেয়ের মাকে পটিয়ে ফেলা। আর আমি তো আন্টিকে অলরেডি নিজের সাইডে এনেই পরেছি।
সিয়া;; এহহহহহ বললেই হলো। ঘোড়ার ডিম টা করেছেন আপনি।
অর্নীল সিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে এক টান দেয় ফলে সিয়া অর্নীলের ওপরে এসে পরে। অর্নীল নিজের হাত দুটো দিয়ে সিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে…..
অর্নীল;; সিয়া!
সিয়া;; হুম।
অর্নীল;; আমি তোমাকে ভালোবাসি।
অর্নীলের কথায় সিয়া মাথা তুলে অর্নীলের দিকে তাকায়। সিয়া খেয়াল করে দেখে অর্নীলের চোখ গুলো হুট করে লাল আকার ধারণ করেছে। কেনো হলো তা বুঝতে পেলো না। সিয়া তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনই অর্নীল আবার বলে ওঠে…..
অর্নীল;; সিয়া আমি মিথ্যা বলি না,, আমি সত্যি ভালোবাসি তোমাকে।
সিয়া;; দেখুন আমি জানি না কিছুই, আমার কিছু সময় দরকার।
অর্নীল;; হুম নাও। নিয়ে নাও যতো সময় দরকার। কিন্তু পরিশেষে যেনো উত্তর হ্যাঁ ই হয়।
সিয়া;; আর,, আর যদি না হয় তো?
অর্নীল সোজা সিয়ার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়। সিয়ার কথার বদলে একটা মুচকি হাসি দেয়। সিয়া ভাবে হয়তো অর্নীল কিছুই বলবে না। তাই সে সরে আসতে ধরে আর তখনই অর্নীল খপ করে সিয়ার হাত ধরে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়। দাতের চোয়াল বেশ শক্ত করেই বলে ওঠে…..
অর্নীল;; সিয়া তুমি তো হবে আমারই অযথা আমাকে উলটা-পাল্টা কোন কাজ করতে বাধ্য করো না।
অর্নীল সিয়া কে ছেড়ে দেয়। দুজনেই চুপ তবে সিয়া এবার বলে ওঠে….
সিয়া;; পরশু এখান থেকে চলে যাচ্ছি।
অর্নীল;; এতো দ্রুত?
সিয়া;; যাচ্ছি, হয়তো সময় শেষ তাই।
অর্নীল;; কিন্তু তোমার সাথে আমার প্রেম তো সবে শুরু হলো।
সিয়া;; প্রেম?
অর্নীল;; হ্যাঁ
সিয়া;; আমি এখনো আমার উত্তর জানায় নি।
অর্নীল;; তুমি বললেও হ্যাঁ আর না বললেও হ্যাঁ সিয়াজান।
“সিয়া” বলে হঠাৎ কেউ দরজাতে কড়া নাড়ে। ডাক শুনেই তো সিয়া দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
সিয়া;; এইরে মা এসেছে অর্নীল ভাগেন এখান থেকে, জলদি যান।
অর্নীল;; এতো ভয় পাও কেনো তুমি। আরে দরজা খুলো কিছু হবে না। আচ্ছা, আমিই খুলে দিচ্ছি দাড়াও।
সিয়া;; কিইই? না একদম না। অর্নীল প্লিজ যান এখান থেকে।
অর্নীল কে সিয়া এক প্রকার ঠেলেই রুমের বাইরে পাঠিয়ে দেয়। রুমের জানালার সাথে করিডর লাগানো আছে। অর্নীল সেইদিক দিয়েই যেভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে যায়। তবে চলে যাওয়ার আগে অর্নীল সিয়ার গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে যায়। সিয়া রাগে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়। অর্নীলের চলে যেতেই সিয়া নিজে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে দরজা খুলে দেয়।
দোলা;; ওই শোন।
সিয়া;; তুমি ঘুমাও নাই।
দোলা;; না কিছু বলতে আসলাম তোকে, শোন কাল রেসিপশন, তোর আপুর শশুড় বাড়ি থেকে অনেক মানুষ জন আসবে বুঝলি। প্লিজ ভালোভাবে থাকবি।
সিয়া;; আরে ধুরু এই কথা টা বলার জন্য এসেছো তুমি। আরে মেরি মা যাও ঘুমাও গিয়ে।
দোলা চলে যায়। আর সিয়া ধপ করে বিছানাতে বসে পরে। একদিকে এই অর্নীল আরেকদিকে সিয়ার মা। সিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পরে।


পরের দিন সকালে নিজের ফোনের বিকট শব্দে সিয়া ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে পরে। ফোনের দিকে না তাকিয়েই কল রিসভ করে।
সিয়া;; হ্যালো।
অর্নীল;; ঘুম ভেঙেছে সিয়াজান?
সিয়া;; আহহ, এই সকাল সকাল আপনি।
অর্নীল;; সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত সবসময় শুধু আমি আর আমিই থাকবো সিয়াজান।
সিয়া;; হুমম। আচ্ছা আমার কাজ আছে অনেক আমি রাখি।
সিয়া এই বলেই অর্নীল কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয়। সিয়া সময় দেখে অনেক হয়ে গেছে। সে দ্রুত ওয়াসরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। বেশ সময় পর ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে পরে। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আর গুনগুন করে গান গেয়ে বের হলো। তবে সামনে তাকাতেই চমকে গিয়ে পিছলে পরে যেতে যেতে বেঁচে যায় সিয়া। কারণ সামনে অর্নীল দুই হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে।
সিয়া;; আপনি এখানে কীভাবে এলেন?
অর্নীল;; কাল রাতে যেভাবে এসেছিলাম ঠিক সেভাবেই।
সিয়া;; অর্নীল যান না প্লিজ এখান থেকে।
অর্নীল;; এই চুপ,, যে কাজ করতে এসেছি আগে তা তো করে নেই।
সিয়া;; মানে?
অর্নীল সিয়ার হাত ধরে নিয়ে বিছানাতে বসিয়ে দেয়। আর অর্নীল নিজে সিয়ার সামনে এক পা ভাজ করে বসে পরে।
অর্নীল;; ডান পা টা এগিয়ে দাও।
সিয়া;; কিহ?
অর্নীল;; হ্যাঁ আগাও।
সিয়া;; এই আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
অর্নীল;; বেশি কথা বলো।
এই বলেই অর্নীল নিজেই সিয়ার পা ধরে হালকা ভাবে টান দেয়। সিয়া এতে কিছুটা ভরকে যায়। অর্নীল সিয়ার পা টা নিজের হাটুর ওপরে রেখে একটা গোল্ডেন কালারের ভারি পায়েল পায়ে পরিয়ে দেয়। অর্নীল যখন সিয়ার পায়ে পায়েল পরিয়ে দিচ্ছিলো সিয়া সেই সময় এক চোখে অর্নীলের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। কিছুক্ষন পর অর্নীল সিয়ার পা সোজা করে দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে পরে।
সিয়া;; এটা কি ছিলো?
অর্নীল;; খেয়াল করে দেখো!
সিয়া তার পায়ে থাকা পায়েল টা খেয়াল করে দেখে। এটা তারই। আদিবার বিয়ের দিন হারিয়ে গিয়েছিলো। এটাকে কত্তো জায়গায় না খুঁজেছে কিন্তু পায় নি। অবশেষে ভেবেই নিয়েছিলো যে এটা হারিয়ে গেছে কিন্তু অর্নীল এটা আজ ফিরিয়ে দিলো।
অর্নীল;; আমি কিন্তু এটা দেই নি, জিনিস টা তোমারই। বিয়ের দিন যখন আদিবা চলে যায় তারপর রাতে হয়তো তুমি বাগানের সাইডে গিয়েছিলে। আমি দেখেছিলাম তোমাকে কিন্তু যখন আমি সেখানে যাই ততক্ষণে তুমি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলে,, সেখানে এই পায়েল টা পরেছিলো। এটা তোমারই ছিলো।
সিয়া;; আমার ১৬ তম বার্থডে তে এটা আম্মু আমায় গিফট করেছিলো। অনেক পছন্দের জিনিস টা আমার। আমি তো ভেবেই নিয়েছিলাম যে এটা হারিয়েই গেলো আমার কাছ থেকে। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
অর্নীল;; এই সব থ্যাংক ইউ ট্যাংক ইউ দিয়ে কাজ হবে না। অন্য কিছু লাগবে আমার।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; আমি নিজেই নিয়ে নেই।
এই বলেই অর্নীল সিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। এতোই দ্রুত সিয়ার দিকে এগিয়েছে যে সিয়া বিছানাতে বসা অবস্থাতেই বেশ খানিক পেছনের দিকে ঝুকে পরে। আর অর্নীল তার এক হাত সিয়ার বাম পাশে রেখে তাতে ভর দিয়ে সিয়ার দিকে বেশ খানিক ঝুকে পরে। সিয়া ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে অর্নীলের দিকে। আর অর্নীলের নজর সিয়ার দুই লালচে ঠোঁটের দিকে। অর্নীল সিয়ার দিকে ক্রমশ এগিয়ে গেলে সিয়া খিচে চোখ বন্ধ করে ফেলে। অর্নীল সিয়ার এমন ফেইস দেখে মুচকি হেসে ফেলে। পরমূহুর্তেই অর্নীল সিয়ার কপালে এক গভীর চুমু একে দেয়। সিয়া চোখ মেলে তাকায়। অর্নীল এই মূহুর্তে সিয়ার বেশ কাছে। দুজনেরই চোখ যেনো এক হয়ে গেছে। সিয়ার মূহুর্ত টা খেয়াল হতেই সে ফট করে চোখ নামিয়ে ফেলে। অর্নীল সরে আসে। অর্নীল চলে যেতে ধরে তবে আবার থেমে গিয়ে সিয়ার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…..
অর্নীল;; ভেজা চুলে তোমাকে বেশ মুগ্ধময় লাগে সিয়াজান।
সিয়া অর্নীলের দিকে তাকায়। অর্নীল চলে যায়। সিয়া উঠে গিয়ে তার জানালার কাছে যায়। বেশ হাসি পাচ্ছে তার। অর্নীল কাল রাত থেকে শুরু করে সিয়ার রুমে এই করিডর দিয়েই আসছে। সিয়া সিম্পল ভাবেই রেডি হয়ে নিচে চলে যায়। নিচে যেতেই দেখে সবাই কাজে ব্যাস্ত। সিয়া নিচেই ছিলো তখন সিয়ার নানু এসে টপ করেই সিয়ার মুখে এক চামচ পায়েস তুলে দেয়। যদিও সিয়া পায়েস বেশি একটা খায় না। সিয়া কোন রকমে খেয়ে নেয় তা।
শিউলি;; ঠিক আছে সব?
সিয়া;; হুমম। তুমি বানিয়েছো?
শিউলি;; হ্যাঁ।
সিয়া;; এর জন্যই তো বলি এতো মজা হয়েছে কেনো। (গাল টেনে) আচ্ছা আদিবা আপুরা কখন আসবে?
শিউলি;; এইতো ঘন্টা খানিকের মাঝেই এসে পরবে।
সিয়া চলে আসে সেখান থেকে। বাইরে থেকে বেশ শোরগোলের কিছুটা আওয়াজ পেয়ে সিয়া সেদিকেই যায়। গিয়ে দেখে একজন লোক এসেছে। দেখেই বুঝা যায় বেশ ভিআইপি একজন। উনার সাথে সিয়ার চাচা বিল্লালও রয়েছে,, দেখে মনে হচ্ছে বেশ ক্লোজ তারা। সিয়া তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো তখনই সিয়ার পেছনে থেকে অর্নীল আসে। অর্নীল এসে সিয়ার বাম পাশের কাধে টোকা দিয়ে আবার ডান পাশে এসে পরে৷ সিয়া একবার এদিক আরেক বার ওদিকে তাকায়।
অর্নীল;; হেই জান এখানে কি করো?
সিয়া;; কে যেনো এসেছে,, আগে কখনো দেখি নি। তাই আর কি…!
অর্নীল সামনে তাকায়।
অর্নীল;; বাবা হয় আমার।
সিয়া অবাক হয়ে অর্নীলের দিকে তাকায়।
সিয়া;; কি?
অর্নীল;; হ্যাঁ আমার বাবা এসেছে। বিয়েতে ব্যাস্ততার জন্য উনি আসতে পারেন নি,, তাই আজ এসেছেন।
সিয়া;; ইনি ই তাহলে…
অর্নীল;; সাগর চৌধুরী।
সিয়া;; ওহহ আচ্ছা।
এই বলেই সিয়া সেখান থেকে চলে আসে। অর্নীল নিজেও এসে পরতো তবে সাগর অর্নীল কে ডাক দেয়। অর্নীল তবুও ইগ্নোর করে এসেই পরে। সিয়া তার মায়ের কাছে এসে পরে টুকিটাকি কাজে হেল্প করতে৷
দোলা;; সিয়া তোর চাচ্চু কোথায় রে?
সিয়া;; ওইতো বাইরে কে যেনো একজন এসেছে তার কাছেই আছে।
দোলা;; কে এসেছে?
সিয়া;; আমি ঠিক চিনি না।
দোলা;; যাজ্ঞে বাদ দে। আচ্ছা শোন অর্নীলের সাথে তোর দেখা হয়েছে?
সিয়া দ্রুত বলে ওঠে…
সিয়া;; হ্যাঁ হ্যাঁ, হয়েছে তো অনেক বার।
দোলা;; কিরে অর্নীলের নাম শুনতেই এভাবে হকচকিয়ে গেলি কেনো। খুশি খুশি লাগছে!
সিয়া;; আব…ন না। কোথায় আরে না কিছুই না৷ তুমিও না হুদ্দাই। আরে দেখা হয়েছে শুধু এটাই বললাম।
দোলা;; হুমম।
তাদের কথা বলা মাঝেই বাইরে থেকে বেশ মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলো। সিয়ার এক কাজিন এসে বলে যে আদিবা রা নাকি এসে পরেছে। এটা বলতে না বলতেই আদিবা ছুটে ঘরের ভেতরে এসে পরে।
আদিবা;; সিয়া!!
সিয়া তাকিয়ে দেখে আদিবা তার বর কে বাইরে রেখেই গাড়ি থেকে নেমে সোজা ভেতরে এসে পরেছে। সিয়া একগাল হেসে দেয়৷ আদিবা দৌড়ে এসে আগে সিয়া কে জড়িয়ে ধরে৷ সিয়া ঠিক ঠাক থাকলেও আদিবা যেনো প্রায় কেদেই দিয়েছে। আদিবা গিয়ে নিজের জেঠিমা কেও জড়িয়ে ধরে৷ পরে আস্তে আস্তে আদিবার শশুড় বাড়ির সবাই আসে। সবাই অনেক কথা বলে। অর্নীল কে দেখে আদিবা তার দিকে এগিয়ে যায়।।
আদিবা;; অর্নীল ভাই কেমন আছেন?
অর্নীল;; এইতো আছি ভালোই। তুমি কেমন আছো? আর শশুড় বাড়ির সবাই কে কেমন লাগলো?
আদিবা;; হ্যাঁ সবাই বেশ ভালো ছিলো৷ শুনেছি আংকেল নাকি এসেছে?
অর্নীল;; হ্যাঁ এসেছে। আমি এখনো দেখাই করি নি।
আদিবা;; ভাই প্লিজ এবার তো একটু আংকেলের সাথে রেশারেশি টা কমান।
অর্নীল;; হুমম। আচ্ছা শুনো এসেছো সবার সাথে কথা বলো। সিয়ার কাছে যাও, ও তোমায় অনেক মিস করে। তোমার বর জাবেদ কোথায়?
আদিবা;; ওইতো আসছে।
অর্নীলের সেদিকে তাকাতেই জাবেদ অর্নীলের দিকে এগিয়ে আসে৷
জাবেদ;; হেই ড্যাশিং মুন্ডা কেমন আছো?
অর্নীল;; আরে রাখো মিয়া বিয়ে করছো, তুমি কেমন আছো তাই বলো আগে?
জাবেদ;; এখন থেকে মনে হয় আরামের দিন শেষ রে ভাই।
জাবেদের কথা শুনেই আদিবা চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়। অর্নীল হেসে দেয়। এভাবেই পরিবারের সবাই মিলে সময় কাটাতে থাকে। এদিকে আদিবার এক দেবর আছে তো সেই হিসেবে সিয়ার বেয়াই হলো৷ সে একদম সিয়ার ওপির লাইন মারার জন্য উঠে পরে লেগেছে। যা অর্নীল ক্ষণে ক্ষণে লক্ষ্য করছে। আর রাগে ফুসছে৷ সিয়া শুধু ভদ্রতার খাতিরে টুক টাক কথা বলছে হেসে হেসে। এছাড়া কিছুই না। সিয়া একা একা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তখনই অর্নীল হুট করেই গিয়ে সিয়াকে একদম নিজের সাথে লাগিয়ে নিয়ে তার হাত দুটো পেছনে মুচড়ে ধরে। সিয়া কিছুটা ব্যাথায় কপাল ভাজ করে ফেলে।
সিয়া;; অর…..
অর্নীল;; এই এতো কথা কিসের হ্যাঁ,, ওই ছেলের সাথে হেসে হেসে এতো কিসের কথা। ওই ছেলের মতিগতি একদম ভালো না। খুব বুঝি আমি, তোমাকে পটানোর চেষ্টা করছে ও। দূরে থাকতে বলছি না।
সিয়া;; আপনার জ্বলছে?
অর্নীল;; অবশ্যই জ্বলছে, জ্বলবে না। নিজের জিনিসের দিকে কেউ নজর দিলে জ্বলবে না, এটা আবার কেমন কথা?
সিয়া;; হয়েছে, এবার ছাড়ুন।
অর্নীল আরো চেপে ধরে৷ আর সিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলে ব্যাথায়।
সিয়া;; অর্নীল আমার হাতে লাগছে।
অর্নীল;; আমারও লাগে, লেগেছে এখানে (বুকে হাত দিয়ে);
সিয়া;; আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর কারো সাথে কথা বলবো না। সরি সরি।
অর্নীল;; মনে থাকবে?
সিয়া;; একদম। এবার তো ছাড়ুন আমায়!
অর্নীল সিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সোজা চলে আসে সেখানে থেকে৷ আর সিয়া নিজের হাত গুলো ডলতে ডলতে একশ একটা গালি দিচ্ছে অর্নীল কে।
অন্যদিকে, সিয়ার মা দোলা হাসিমুখে সবার সাথেই কথা বলছিলেন। তার মাঝেই বিল্লাল আসে।
বিল্লাল;; ভাবি! ভাবি!
দোলা;; হ্যাঁ বলো।
বিল্লাল;; ভাবি ওইতো যার কথা বলেছিলাম উনি এসেছেন আমি ওইদিক টা দেখছি, তুমি প্লিজ এইদিকটা দেখে নাও না!
দোলা;; ওমা এটা আবার বলতে হয় নাকি। আরে তুমি যাও। আদিবা দের দিক টা আমি দেখছি।
বিল্লাল;; আচ্ছা।
এই বলেই বিল্লাল চলে যায়। সবকিছু ঠিক ভাবেই চলছিলো তবে এবার দোলার চোখ পরে সাগর চৌধুরীর ওপর। যাকে দেখেই দোলার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরার উপক্রম। হাত যেনো থরথর করে কাপছে তার। দোলা মাথায় এখন শুধু একটা কথাই আসছে যে এই সাগর চৌধুরী এখানে কি করছে। দোলা দ্রুত করে সেই স্থান ত্যাগ করে। কোন ভাবেই সাগর চৌধুরীর সামনে পরা যাবে না তাকে। নয়তো, নিয়তো সবকিছু বিগড়ে যবে। দোলা সেখান থেকে চলে গিয়ে সিয়াকে খুঁজতে লাগে। আর খুঁজতে খুঁজতে একসময় পেয়েও যায়।
দোলা;; সিয়া, সিয়া!
সিয়া;; হ্যাঁ বলো। আর কি হয়েছে হাপাচ্ছো কেনো?
দোলা;; শোন আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।
সিয়া;; কিহ? কিন্তু কেনো? আরে মা আদিবা আপুরা ঘন্টা খানেক আগেই তো এলো। এখনই চলে যাবো কেনো? আর আমাদের না আগামীকাল যাওয়ার কথা ছিলো?
দোলা;; সিয়া আমি এতোসব কিছু জানি না। তোকে যা বলছি শুধু তাই কর৷ আমাদের এখান থেকে আজ আর এখনই যেতে হবে। জলদি যা সব প্যাকিং কর৷
সিয়া;; কিন্তু মা…!
দোলা;; সিয়া যা বলছি।
সিয়া;; যাচ্ছি 😔
সিয়া মন টা একেবারেই খারাপ করে দিয়ে রুমে এসে পরে৷ মনমরা হয়ে এক এক করে সব গোছাতে লাগে। তার প্রায় আধা ঘন্টা পর সব রেডি করে নেয়।
বিল্লাল;; ভাবি কাজটা মোটেও ঠিক করছো না। এটা কোন কথা বলো? আদিবারা ওর শশুর বাড়ির লোকেরা মাত্র আসলো। এদের রেখেই চলে যাচ্ছো। আরে আরো ৪-৫ দিন থাকবে এখনই কই যাও। ভাবি এমন করো না তো।
দোলা;; ভাই প্লিজ মন খারাপ বা রাগ করো না,, কিন্তু আমার এখন এখান থেকে যেতেই হবে। এখন এখানে থাকা কোন মূল্যেই সম্ভব না আমার পক্ষে। একটু বুঝো৷ আমি আজ যাই, আরেক দিন আসা যাবে।
বিল্লাল;; কিন্তু ভাবি।
দোলা;; বিল্লাল প্লিজ,, আমিও চাই নি এভাবে সবাইকে রেখে যেতে কিন্তুআমি বাধ্য। আর থাকলামই তো, রিসেপশন পর্যন্ত তো থেকেই গেলাম। দুইদিন পর হলেও যেতেই হবে আর আগে হলেও যেতেই হবে। তাই আজ যাই। আবার একদিন আসবো।
বিল্লাল;; আচ্ছা।
দোলা সিয়া আর তার মা কে নিয়ে এসে পরে। বিল্লাল, আদিবা আর তার শশুড় বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে হাসি মুখে বিদায় নিয়ে দোলা এসে পরে। কিন্তু সিয়া! সিয়া হন্ন হয়ে অর্নীল কে খুঁজে গেছে কিন্তু পায় নি। ইন ফ্যাক্ট বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও সিয়ার চোখ দুটো যেনো শুধু একমাত্র অর্নীল কেই খুঁজে যাচ্ছিলো কিন্তু তবুও সে অর্নীলের দেখা পায় নি। অবশেষে সিয়াও আদিবা, তার চাচ্চু আর বাকিদের বলে গাড়িতে উঠে পরে। আদিবা বেশ বুঝলো যে সিয়ার মন টা ভার হয়ে আছে, আর হয়তো সিয়া কাউকে খুঁজছিলো। যাই হোক সিয়া তার মা আর নানুকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে পরে৷ ড্রাইভার তাদের নিয়ে যাচ্ছে। সিয়া তার মাথা বের করে দিয়ে সবাই কে বিদায় জানায়। আর গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পরও সিয়া বাড়ির ভেতরের দিকে তাকিয়ে থাকে এই ভেবে যে যদি অর্নীল আসে কিন্তু অর্নীল এবারও আসে না। সিয়া রা চলে যায় বিয়ে বাড়ি থেকে।
অর্নীল তার রুমে ছিলো এতোক্ষন। আসলে তার অফিস থেকে একটা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কল এসেছিলো তাই কথা বলছিলো৷ যার দরুন নিচেও নামা হয় নি। সিয়ার চলে যাওয়ার প্রায় বেশ সময় পর অর্নীল নিচে নেমে আসে৷ আর নিচে নামতেই ফর্মালিটি মেইন্টেইন করতে হয় তাকে। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছে অর্থাৎ তার বাবার সাথে যারা যারা কাজ করে তাদের সাথে। কিন্তু ভেতরে ভেতরেই অর্নীল এগুলোতে বেশ বিরক্তি বোধ করছে। অর্নীল সবার সাথেই কথা বলছে আর শুধু বাড়ির চারিদিকে তাকাচ্ছে। শুধুই সিয়া কে দেখতে চাইছে যেন তার দুই নয়ন। আর সিয়া তো সারা বাড়ি চক্কর দেয় তাহলে মেয়েটা গেলো কই,, দেখতে কেনো পারছে না?! এটাই যেনো অর্নীলের মনে কড়া নাড়ছে বারবার। ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায় কিন্তু অর্নীল আর সিয়ার দেখা পায় না। অবশেষে অর্নীল আদিবাকে নিজের সামনে দিয়ে যেতে দেখে দ্রুত ডাক দেয়।
অর্নীল;; এই আদিবা..!
আদিবা;; জ্বি ভাইয়া।
অর্নীল;; সিয়া কোথায়? দেখছি না কেনো?
আদিবা;; এমা আপনি জানেন না! সিয়া তো চলে গেছে এখান থেকে। বেশ ঘন্টা কয়েক হবে৷ সিয়া তার মা আর নানু কে নিয়ে চলে গেছে এখান থেকে।
অর্নীল;; কি? চলে গেছে? ওদের না কাল যাওয়ার কথা, তাহলে আজ কেনো গেলো আর কখনই বা গেলো?
আদিবা;; না মানে কি যেনো দরকারি কাজ পরে গেছে নাকি তার জন্যই যেতে হয়েছে। সিয়া সবাইকে বলেই গিয়েছে। আপনাকে বলে নি?
অর্নীল;; না, আমি জানিই না যে ও চলে গেছে।
আদিবা;; ওহহ আচ্ছা।
অর্নীল সেখান থেকে এসে পরে। সিয়া তাকে না বলেই চলে কীভাবে গেলো। অর্নীল সিয়াকে ফোন করে কিন্তু ফোনও সুইচ অফ বলছে। অর্নীলের রাগ লাগছে সাথে মন টাও যেনো খারাপ হয়ে গেলো। অর্নীল ঠিক করলো যে আজ তো এখান থেকে আর যেতে পারবে না, তাই কাল ভোরে উঠেই এখান থেকে একদম চলে যাবে। আর ওদিকে সিয়া এটাই বুঝতে পারছে না যে দোলা তাকে নিয়ে এভাবে বিয়ে বাড়ি থেকে হুরহুর করে চলেই বা কেনো আসলো?!




চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here