লাভ গেম -Part 13+14

0
225

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
13+14
রুশা ল্যাপটপ খুলে বসেছে। গভীর মনোযোগ দিয়ে কিছু করছে। আদ্রিশের অফিস থেকে আসার সময় হয়ে গেছে। রুশা এতটাই ব্যস্ত যে অন্যদিকে খেয়াল নেই। আদ্রিশ ঘরের বাইরে থেকে রুশাকে ডাকতে ডাকতে ভেতরে আসছে। রুশা থতমত খেয়ে দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে মোবাইল হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। আদ্রিশকে দেখে বলল,
“হ্যা, বলো।”
আদ্রিশ কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। রুশা আদ্রিশের মুখের দিকে চেয়ে আছে। আদ্রিশ কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে কেন গেল সেটা বুঝতে পারছে না। ও কি তরি ঘটি করতে গিয়ে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। গোপন কিছু? কিন্তু আদ্রিশের মুখ দেখে তো তেমন মনে হচ্ছে না।
যদি ভুল কিছু বলতো ওর চোখ মুখ এত কোমল থাকতো না।
রুশা দৃষ্টি নামাচ্ছে আর উঠাচ্ছে।
“কিছু বলছেন না কেন? আমি কি ভুল কিছু বলেছি? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।”
আদ্রিশ ওর দু’হাত ধরে হেঁচকা টান দিল। রুশা ওর বুকে গিয়ে পড়ল। আদ্রিশ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরতেই রুশা সোজা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আদ্রিশ আরো শক্ত করে ধরতেই রুশার দুহাত ওর বুকে গিয়ে পড়ল। আদ্রিশের চোখে মুখে কিছু খেলা করছে। রুশা দৃষ্টি নামিয়ে নিল। রুশার আজকাল অন্য রকম অনুভূতি হয়। আদ্রিশ ওর কাছে এলে নিজেকে সামলাতে পারে না। আদ্রিশ ওকে ছুয়ে দিলে কি যেন হয়ে যায়। নিজেকে পাগল পাগল লাগে।
“তোমার মুখে তুমিটা বেশ মিষ্টি লাগে।”
রুশা চমকে ওর দিকে তাকায়। তুমি করে কখন বলল?
“আমি তুমি কখন বললাম?”
“মাত্রই। বললে না হ্যা,বলো।”
রুশা চোখ বড়বড় করে তাকাল। বেখেয়ালি ভাবে হয়তো বলে ফেলেছে। আদ্রিশ নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছে না।
“জানি না। হয়তো কোনো ভাবে বলে ফেলেছি।”
“তুমি আমাকে এখন থেকে তুমি করেই বলবে।”
“আমি পারব না।”
“কেন পারবে না?”
“জানি না। তবে পারব না।”
আদ্রিশ রুশার চুলের ভেতরে হাত দিয়ে ওর একদম কাছে চলে গেল। রুশার দম আঁটকে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
আদ্রিশ রুশার নাকের সাথে নাক ঠেকিয়ে বলল,
“তুমি বলবে না?”
রুশা আদ্রিশের নিশ্বাসের উষ্ণতায় হারিয়ে যাচ্ছে। ঢোক গিলে বলল,
“বলব, একটু সময় দিন।”
আদ্রিশ রুশার ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিল। রুশা দ্রুত অন্যদিকে ঘুরে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর ঘন ঘন ঢোক গিলছে। রুশা বেশ বুঝতে পারছে আদ্রিশ দিন দিন ওকে কাবু করে ফেলছে। রুশা আদ্রিশের দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। আদ্রিশ ওকে দৌড়ে পালাতে দেখে মুচকি হাসল। রুশা নিচে গিয়ে লনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। নিজের ঠোঁটে হাত বুলিয়ে মনে মনে বলছে,
“এ-সব কি হচ্ছে? উনি আমার এত কাছে এলো আমার রাগ হচ্ছে না কেন? কেন আমি স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি? না স্বাভাবিক না, আমি ভালোভাবে নিচ্ছি, ভালোলাগায় নিচ্ছি। কি হচ্ছে আমার? উফফ, আদ্রিশের থেকে দূরত্ব বজায় থাকতে হবে। আমি কি কাজে এসেছি ভুলে গেলে চলবে না।”

মাগরিবের আজান পড়ছে। হালকা অন্ধকার নেমে এসেছে ধরণীর বুকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝুম অন্ধকার নেমে আসবে। আঁধারে ছেয়ে যাবে পৃথিবী। কথা ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। যখন নিজেকে খুব একা লাগে, মন খারাপ হয় তখনই এখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। মাথার উপর খোলা আকাশ, পায়ের নিচে পানি আর পানি, বেপরোয়া হাওয়া, এলোমেলো চুল সব মিলিয়ে নিজেকে মুক্ত লাগে। সব দুঃখ,কষ্ট থেকে মুক্ত লাগে।
প্রাণভরে নিশ্বাস নেয়।
সেজান ড্রাইভে এসেছে। মাঝেমধ্যেই ড্রাইভে বের হয়। এ সময়টা ওর ভীষণ ভালো লাগে। কথার মতো একটা মেয়েকে দেখে সেজান গাড়ি থামায়। গাড়ি থেকে নেমে সানগ্লাস খুলে বোঝার চেষ্টা করছে কথা কি-না। ওকে দেখে কথাই মনে হচ্ছে। সেজান ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। কথা পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে ভয় পেয়ে যায়। দ্রুত ঘুরে চমকে উঠে। চোখ বড়বড় করে বলল,
“আপনি! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
“এখানে একা একা কি করছো?”
“যখন হাঁপিয়ে যাই এখানে এসে প্রাণভরে নিশ্বাস নেই।”
“হাঁপিয়ে যাও? জবটা কি খুব পরিশ্রমের? আমাকে বলতে পারো আমি তোমার জন্য ভালো একটা জব ম্যানেজ করে দিতে পারি।”
কথা মৃদু হেসে বলল,
“জবের পরিশ্রমের কথা বলছি না, জীবনের সাথে চলতে চলতে যখন হাঁপিয়ে যাই। এছাড়া আমি এখানে ভালোই আছি। আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা জানেন? এই যোগ্যতায় আপনি আমাকে এর চেয়ে ভালো জব দিতে পারবেন না।”
“পড়াশোনা কতদূর তোমার?”
“এইচএসসি পাশ।”
“তারপর আর পড়োনি কেন?”
“ছোট থেকেই অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি। আঠারো বছর পর্যন্ত ওরা আমার দায়িত্ব নিয়েছে। এইচএসসি পাশ করেছি। তারপর এখানে থাকা,খাওয়া ফ্রি সমেত একটা জব পেয়ে গেলাম।”
“তবুও আমি তোমার জন্য একটা জব খুঁজে দিতে পারি।”
“অন্য কোনো জব করলে যে আমি একা হয়ে পড়ব। এখানে এতগুলো মানুষের সাথে থাকছি পরিবারের মতো। অন্য জায়গায় জব করলে কি সে পরিবার পাব? দম বন্ধ হয়ে মরে যাব। একা আমি থাকতে পারি না। পরিবারের সাথে থাকতে ভালোবাসি।”
“তাহলে বিয়ে করে নিলেই পারো। একটা পরিবার পাবে।”
কথা আবারও মৃদু হাসল। সে হাসিতে সেজান ব্যথা খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু পরিমাপ করতে পারছে না।
“কোন পরিবার তার ছেলের জন্য বাবা-মা ছাড়া, সামাজিক পরিচয়হীন একটা মেয়েকে বউ করবে? মেয়ের কি অভাব?”
সেজান মাথা চুলকে বলল,
“তাহলে অনাথ কোনো ছেলেকে বিয়ে করে নেও। তার সাথে পরিবার গড়বে।”
“তাহলে তো চাকরি ছেড়ে ছেলের সন্ধানে সন্ধানে ঘুরতে হবে।”
বলেই খিলখিল করে হেসে উঠল। তারপর আবার বলল,
“আমার তো আর আপনার মতো সোর্স নেই। অতি সাধারণ মানুষ আমি।”
“তাহলে আমি খুঁজি। আমার ভালো সোর্স আছে।”
কথা হেসে ফেলল। তারপর বলল,
“দূরর! মজা করছিলাম। আমি যাই রাত হয়ে যাচ্ছে।”
“চলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দেই।”
“না, দরকার নেই। রিকশা ঠিক করে রেখেছি। আমি যেতে পারব। ভালো থাকবেন।”
কথা চুল, ওড়না জামা হাওয়ায় উড়িয়ে হেঁটে যাচ্ছে রিকশার কাছে। সেজান নিজের চুল এলোমেলো করে মুচকি হেসে ব্রিজের নিচে তাকাল।
.
রুশা আদ্রিশের জন্য ঘরে যেতে পারছে না।
অস্বস্তি লাগছে। আজকাল আদ্রিশ উদ্ভট ব্যবহার করে। আর রুশারও কেমন লাগে। রুশা দরজার দিকে বারবার উঁকি দিচ্ছে। আদ্রিশ এখনো ঘুমায়নি। ল্যাপটপে কাজ করছে। রুশা বিরক্তি নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। দরজার দিকে আরেকবার উঁকি দিতেই আদ্রিশ ওর হাত ধরে এক টানে ভেতরে নিয়ে এল। রুশা নির্বাক ও ভীত হয়ে গেল।
“কি বারবার উঁকি দিচ্ছো কেন?”
“দেখছিলাম ঘুমিয়েছেন কি-না।”
“ঘুমালে কি করতে?”
“কি আর করতাম? ঘুমিয়ে পড়তাম।”
“এখন তো জেগে আছি। তাহলে কি করবে?”
রুশা আদ্রিশের দিকে চেয়ে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ওর দৃষ্টিতে দুষ্টুমি।
“না, মানে, ঘুমাবো।”
রুশা বিছানার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আদ্রিশ ওকে দরজার সাথে চেপে ধরল।
“সত্যি করে বলো তো কেন উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছিলে?”
আদ্রিশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে।
“এমনি, আসলে,,।”
আদ্রিশ মুচকি হেসে ওর ঠোঁটে আঙুল রাখতেই রুশা মুখটা পেছনে নিয়ে গেল। তারপর নিজের হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল,
“এইজন্যই! এইজন্যই আমি ঘরে আসছি না। আমার সত্যিই খুব ঘুম পেয়েছে।”
আদ্রিশ বাকা হেসে ওর হাতের উপর ঠোঁট ছুয়ালো। ওকে ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল। রুশা লাইট অফ করে আদ্রিশের পাশে শুয়ে পড়ল অন্যদিকে ঘুরে। রুশা চোখ বন্ধ করে ভাবছে,
“এ-সব কি হচ্ছে আমার সাথে? ও আমার কাছে এলেই হার্টবিট এত ফার্স্ট হয়ে যায় কেন? মুখে যতই বলি দূরে যেতে মন কেন কাছে চায়? কেন চায়?”
রুশা চোখ খিঁচে বন্ধ করল। আর এসব ভাবতে চায় না।
.
দুপুর বেলা। রুশা বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। ওর মাথায় কোনো প্লান আসছে না। মনে হচ্ছে মাথাটা হ্যাং হয়ে গেছে। কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে হাত-পা গুটিয়ে তো বসে থাকলে চলবে না। কিছু একটা ভাবতে হবে। রুশার মোবাইল বাজছে। রকি ফোন করেছে। রুশা কল রিসিভ করে বলল,
“কি খবর?”
“তোমার কি সেটা বলো।”
“ভালো। আপাতত রিলেক্সে আছি।”
“পিউ! আর কতদিন?”
“ভাইয়ার কথায় আমাকে কল করেছো তাই না? সব বুঝতে পারছি।”
“না তেমন নয়। এতদিন আমি তোমাকে সাপোর্ট করেছি। কিন্তু এখন আমি তোমাকে এসব বলছি তার নিশ্চয়ই একটা কারণ আছে। পিউ, তুমি বিপদে আছো। তুমি ওখানে আছো আদ্রিশকে বরবাদ করতে আর ওদিকে আদ্রিশের শত্রু জারিফ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমার পেছনে পরে আছে। একদিকে জারিফ আরেকদিকে আদ্রিশ। না জানি কবে কার ট্রাপে ফেঁসে যাও।”
“আমাকে ফাঁসানো এত সহজ না। আর জারিফের সম্পর্কে তুমি কিছু জানো? ওর ব্যাপারে আমি জানতে ইচ্ছুক।”
“ও আদ্রিশের চেয়ে বিপদজনক লোক।”
“আমার তা মনে হয় না। যদি তাই হত তবে বিদেশে লুকিয়ে থাকতো না। বিদেশে বসে বসে আদ্রিশের উপর মানে আমার উপর হামলা করত না।”
“ওহ! পিউ। ও ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া। সাধারণ লোক নয়। বাংলাদেশে বসে থেকে কি করবে?”
“বাহ! তাহলে তো ডেঞ্জারাস।”
“পিউ, তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হয়।”
“চিন্তা কর‍তে হবে না।”
“কেন করব না? আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
রুশা শোয়া থেকে উঠে বসে রাগান্বিত হয়ে বলল,
“রকি, প্রেম ভালোবাসার কথা বলো না। তোমার মুখে প্রেম ভালোবাসার কথা শুনলে আমার রাগ উঠে যায়। জেনেও কেন বলো? বন্ধু হয়ে কথা বলার হলে বলো নয়তো আমাকে আর কল করো না।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে সরি। সরি।”
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ। নীরবতা ভেঙে রকি বলল,
“তাহলে তুমি আসবে না?”
“না, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি ফিরছি না।”
রকি জানে ও বড্ড জেদি তাই ওকে বুঝিয়ে লাভ নেই।
.
সকাল সকাল আদ্রিশ বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। রুশা ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে বাড়ির চেহারা পালটে গেছে। বাড়িতে তোরজোর আয়োজন চলছে। কিন্তু কিসের? এত মানুষ কেন এসেছে? রুশা মিজান চাচার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি হচ্ছে চাচা?”
“আদ্রিশ বাবা কিছু বলেনি?”
“না তো বলেনি।”
“আজকে ওর বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। তারই আয়োজন চলছে।”
রুশা মনে মনে ভাবছে আদ্রিশ ওকে একটা বারের জন্য কিছু জানালো না কেন?
এরই মধ্যে মিজান চাচা ইতস্তত করে বলল,
“একটা কথা বলি। তুমি আজকে আদ্রিশ বাবার থেকে একটু দূরে দূরে থেকো।”
রুশা অবাকের সাথে চমকে গিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেন?”
“প্রতি বছর আজকের দিনে আদ্রিশ অস্থির হয়ে পড়ে। নিজের মধ্যে থাকে না। নিজের কন্ট্রোল রাখতে পারেনা। পাগলের মতো উদ্ভট আচরণ করে। গম্ভীর হয়ে থাকে। তাই তোমাকে জানিয়ে দিলাম।”
“কিন্তু এমন করে কেন?”
“আস্তে আস্তে সব জানবে।”
মিজান চাচা চলে গেলেও রুশা দাঁড়িয়ে রইল। ওর মাথায় ভাবনারা পাক খাচ্ছে।
.
সারাদিন ব্যস্ততার মাঝে রুশা আদ্রিশকে একবারো দেখেনি। আদ্রিশ রাতে ফিরে ওর ঘরেও যায়নি। নিজের ঘরে চলে গেছে। রুশার বেশ কৌতূহল লাগছে। আদ্রিশ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করলেই রুশাও ঘরে গিয়ে দরজা লক করে ল্যাপটপ নিয়ে বসল। আদ্রিশের ঘরের সামনে সিসি ক্যামেরা ফিট করা তাই রুশা সেদিন রাতে হুডি পরে আদ্রিশের ঘরে গিয়ে একটা হিডেন ক্যামেরা লাগিয়ে আসে। আর সেদিনই আদ্রিশের সামনাসামনি পড়ে। লুকিয়ে পরবর্তীতে নিজের ঘরে গিয়ে হুডি খুলে লুকিয়ে রেখে ঘুমের ভান ধরে থাকে। আদ্রিশ ভাবে রুশা ঘুমাচ্ছে। পরের দিন সকালে ওই হুডি বাগানে রাখে আর ও নিজেই হুডি নিয়ে আদ্রিশের কাছে এসে দেখিয়ে বলে বাগানে পেয়েছে। এ-সব রুশার প্লান ছিল।
রুশা ল্যাপটপের স্কিনে আদ্রিশকে দেখতে পাচ্ছে। ও ড্রিংক করছে আর টি টেবিলের উপরে একটা ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। বিরবির করে কিছু বলছে। কি বলছে আর কেনই বা আঘাত করছে রুশার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
চলবে…..
#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন
১৪.
আদ্রিশ অফিসে যাওয়ার পর রুশা মিজান চাচার কাছে গেল। মিজান চাচা ওকে দেখেই বুঝে গেল রুশা কেন এসেছে, কি জিজ্ঞেস করতে এসেছে।
তবুও বলল,
“মা, কিছু বলবে?”
রুশা ইতস্তত করে বলল,
“হ্যা, চাচা আমি আদ্রিশের ব্যাপারে জানতে চাই।”
“কি জানতে চাও?”
“ওর ফ্যামিলি, ছোট বেলা সম্পর্কে জানতে চাই।”
মিজান চাচা দৃষ্টি নামিয়ে অন্যদিকে চেয়ে বলল,
“আমি ওর অতীত, ছেলেবেলা, বাবা-মা সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।”
“আদ্রিশ আমার স্বামী, আমার অধিকার আছে।”
“আদ্রিশের‍ যেদিন উচিত মনে করবে সেদিন নিজেই বলবে। তুমি ধৈর্য ধরো।”
“না, আমি পারছি না। আদ্রিশের অদ্ভুত ব্যবহারগুলো আমাকে পীড়িত করছে। আপনি যদি না বলেন আমি নিজেই আদ্রিশকে জিজ্ঞেস করব। ও হয়তো রেগে যাবে, রিয়েক্ট করবে অথবা আমার গায়ে হাত তুলবে। তবুও আমি জিজ্ঞেস করব।”
রুশা মিজান চাচার দিকে আড়চোখে তাকালেন। তার দৃষ্টিতে ভয় আর শংকা।
“না মা, তুমি জিজ্ঞেস করতে যেও না। ও রেগে যাবে।”
“তাহলে আপনি বলুন। আমি প্রমিস করছি ওকে আমি এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করব না যতক্ষণ পর্যন্ত ও নিজে না বলে। আমি না জানলে কি করে ওকে সাহায্য করব, ওর সমস্যা বুঝব?”
মিজান চাচা কিছুক্ষন ভাবল। রুশা মনে মনে ভাবছে কাজ হয়তো হয়েছে।
মিজান চাচা রুশাকে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। তারপর বলতে শুরু করল,
“আদ্রিশ ছোট বেলায় খুব হাসিখুশি, শান্তশিষ্ট, বিনয়ী ছিল। ওর বাবা ওকে বিনয়ী হতে শিক্ষা দিয়েছে। আদ্রিশের বাবা বড় সাহেব নিজেও খুব বিনয়ী ছিল, খুব ভালো মানুষ ছিলেন। স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতেন কিন্তু হঠাৎ তিনি মারা গেলেন। তারপর আর বিয়ে করেন নি। আদ্রিশকে নিজেই লালন-পালন করেছেন। আদ্রিশকে নিয়েই থাকতেন। বড় সাহেব ব্যবসায়ীক কাজে বিদেশে গেলে ওকে নিয়ে যেত, অফিসেও নিয়ে যেত। কিন্তু স্কুলে ভর্তির পর সমস্যা বাড়ল। ওর স্কুলে গার্জিয়ান মিটিং থাকলে দেখা যেত বড় সাহেবের সেদিন মিটিং থাকত, আদ্রিশের পরীক্ষা থাকলে বড় সাহেবের বিদেশে যেতে হতো। তিনি আদ্রিশকে রেখে যেতেন না এতে করে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হতে শুরু করে। দুদিক এক সাথে তাল মেলাতে পারতেন না। তিনি অনুভব করেন আদ্রিশের একজন মা প্রয়োজন। কিন্তু তিনি বিয়ে করতে চাইতেন না। উনার বন্ধু লতিফ সাহেব অনেক বুঝানোর পরে তিনি বিয়ে করতে রাজি হোন।লতিফ সাহেবের মামাতো বোনকে বিয়ে করে ঘরে আনেন। তখন আদ্রিশের আট বছর। প্রথম কিছুক্ষণ আদ্রিশকে ভালোবাসলেও পরবর্তীতে ওকে আর দেখতেই পারত না। এছাড়াও বড় সাহেব আর মেডামের মধ্যে সারাক্ষণ ঝগড়া লেগেই থাকত। কি নিয়ে ঝগড়া হতো জানি না। তবে বড় সাহেব কেমন চুপচাপ হয়ে গেলেন। সারাক্ষণ এক ধ্যানে কিছু ভাবত। জিজ্ঞেস করলে বলতো কিছু না। আদ্রিশের দিকেও নজর দিতে পারত না। হঠাৎ একদিন আদ্রিশ বাবা হাঁপাতে হাঁপাতে আমার কাছে এসে চোখ বড়বড় করে ঘামতে লাগল। কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। আমি ডাক্তার ডেকে আনি। ততক্ষণে জ্বর চলে এসেছে। ডাক্তার বলল কিছু দেখে ভয় পেয়েছে। ডাক্তার যাওয়ার জন্য পা বাড়ালেই চিৎকারের শব্দ শুনি। সবাই দৌড়ে বড় সাহেবের ঘরে যাই দেখি তিনি ফাঁসিতে ঝুলে আছেন। পুলিশ এলো, মেডাম পুলিশকে বললেন বড় সাহেব অনেকদিন ধরে চুপচাপ থাকতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন না, জোর করলে ঝগড়া শুরু করে দিতেন। তারপর দাফন হয়ে যায় পুলিশ আর আসেনি। আদ্রিশের জ্বর কমার নাম নেই। জ্বরে জ্ঞান নেই। বিছানায় সাতদিন পড়ে রইল। বাবার মৃত্যু, দাফন কিছু জানতে পারল না। মেডামও তেমন খবর নিল না। সাতদিন পরে এক সকালে চোখ মেলে বলল,
“বাবা!”
আমি শান্তনা দিয়ে বললাম সাহেব অফিসে গেছেন। রাতে চলে আসবে। তুমি ঘুমাও। ঘুমিয়ে পড়ল। বিকেলের দিকে জ্বর ছেড়ে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ওরা আমার বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি বললাম বড় সাহেব গলায় দড়ি দিয়েছেন। আত্মহত্যা করেছে। ও বলল না, ওরা ওর বাবাকে মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে, ও নিজের চোখে দেখেছে। আমাকে সেটাই বলতে এসেছিল। সব শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। ওর মুখ চেপে ধরলাম। এর মানে লতিফ সাহেব আর মেডাম বড় স্যারকে মেরে সব আত্মহত্যার নামে ধামাচাপা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই পুলিশকে টাকা খাইয়ে কেস বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আদ্রিশ বাবা যদি মুখ খুলে লাভ হবে না। পুলিশ বিক্রি হয়ে গেছে। ওরা আদ্রিশকেও মেরে ফেলবে। তাই আমি ভয় দেখালাম, বলতে নিষেধ করলাম। আদ্রিশ বাবা চুপ করে গেল। কেমন পালটে গেল। সব সময় গম্ভীর হয়ে বসে থাকত। রাগে ফোঁসফোঁস করত। মেডামকে দেখলে ক্ষেপে যেত, চোখ মুখ কেমন করত। আমি সামলে নিতাম। ওর উপর মেডামের অত্যাচার দিন দিন বাড়তে লাগল। নিজের বাড়িতে চাকরবাকরের মতো ব্যবহার পেত। অযথা মারত, খেতে দিতো না, শারিরীক, মানসিক অত্যাচার করত। পিঠে এখনো সে দাগ আছে। তুমি হয়তো দেখেছো। মেডাম একদিন অসুস্থতার নাম করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে কি সব ওষুধ পত্র নিয়ে আসে। আদ্রিশ বাবা খেতে চাইতো না জোর করে খাওয়াতো। ওষুধ খাওয়ার পরে অস্বাভাবিক আচরণ করত, হিংস্র হয়ে উঠত। ও মেডামকে মারার জন্য উতলা হয়ে পড়ল। প্রতিবার আমি সামলে নিয়েছি তাই মেডামের চোখে পড়েনি। আমি শিখিয়ে দিলাম ওষুধ দিলে মুখে যেন রেখে দেয় তারপর ফেলে দেয়। আমি গরিব, অশিক্ষিত মানুষ। এক মাথা খারাপের ডাক্তারের কাছে আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে গেলে বলল, ও সুস্থ নয়। ওকে পাগল বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া ওর ব্রেইন দূর্বল। বাবার মৃত্যুতে শকড পেয়েছে। কি করব আমি বুঝতে পারছিলাম না। অনেক
গুলো দামী ওষুধ দিল। কিন্তু টাকার অভাবে কিনতে পারলাম না। এভাবে চলতে লাগল। লতিফ সাহেব আর মেডাম বিয়ে করে নিলেন। বুঝলাম ওরা আগেই থেকেই প্রেমিক প্রেমিকা। সম্পত্তির লোভে বন্ধুকে ফাঁদে ফেলে মেরে ফেলেছে। আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ও দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছিল। একদিন চা দিতে গিয়ে শুনতে পেলাম আদ্রিশ বাবাকে মারার প্লান করছে ওরা। আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। আদ্রিশ বাবাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু আদ্রিশ নাছোড়বান্দা যাবে না৷ তখন দশ বছর, ফাইভে পড়ে। কিছুটা বড় হয়েছে। পরিস্থিতি আরো বড় করে দিয়েছে। আদ্রিশ মনে মনে কিছু ভাবছিল। আমি ভয় পেতে লাগলাম। একদিন বিকেলে মেডাম আর লতিফ সাহেব ছাদে ছিল। দুজন দুজনের মতো মোবাইলে ব্যস্ত ছিল। আদ্রিশ বাবা মেডামকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। মরে গেল মেডাম। আমি ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু বাচ্চা ছেলে আদ্রিশের মনে ভয় দেখতে পেলাম না। ও তৃপ্তি আর পৈশাচিক হাসি দিল। দশ বছর বয়সে প্রথম খুনটা করল।”
মিজান চাচা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। রুশার চোখে পানি। কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তারপর?”
“তারপর আদ্রিশের চিৎকার শুনে সবাই ছাদে যাই। আদ্রিশ চিৎকার করে বলছে,লতিফ আংকেল আমার মামনিকে ফেলে দিয়েছে। লতিফ সাহেব অস্বীকার করলেন। পুলিশ এলো। সব চাকরবাকর সাক্ষী দেওয়াতে লতিফকে নিয়ে গেল। আদ্রিশকে বাঁচাতে আমিও মিথ্যা সাক্ষী দিলাম। আদ্রিশ এও বলল ওর বাবাকে লতিফ খুন করেছে সম্পত্তির লোভে। লতিফের জেল হয়ে গেল। আদ্রিশ বাবা নিজের রাজত্ব ফিরে পেল। সেদিন পাগলের মতো হেসেছিল। কিন্তু মাথাটা ঠিক হলো না।”
“ডাক্তার দেখাননি?”
“দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছিল ওর মাথায় গুরুতর সমস্যা। কি জানো একটা নাম বলল। চিকিৎসা করতে হবে। আদ্রিশ রাজী হলো না। অনেক চেষ্টা করেছি। ততদিনে ও আর বাধ্য ছেলে নেই। লতিফ সাহেব ওর বাবাকে ধোঁকা দেয় সম্পত্তির লোভে আর ওর সৎ মা চরিত্রহীন ছিল। নিজের স্বামীকে মেরে ফেলে প্রেমিকের জন্য। তখন থেকেই ও ধোঁকাবাজ, লোভী, চরিত্রহীন মানুষ সহ্য করতে পারে না। ও আরেকটু বড় হলো, যখন পনেরো বছর তখন আবারও বললাম কিন্তু ও রেগে গিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। চিৎকার চেঁচামেচি করে। বলে আমি কি পাগল? আর আর দশজন মানুষের সাথে মিশছি কি করে? পড়াশোনায় এত ভালো রেজাল্ট করছি কি করে? আমাকে আমার মতো থাকতে দেও। সেদিন অনেক ক্ষেপে গিয়েছিল তাই আর কিছু বলিনি। তারপর যখন সেজান এলো তখনও চেষ্টা করেছিলাম তাও কাজ হয়নি। বাচ্চা বয়সে চোখের সামনে বাবার মৃত্যু, ভয়ানক শকড, শারীরিক,মানসিক নির্যাতন, রাগ-ক্ষোভ, পাগল বানানোর ওষুধ এসব মিলিয়ে ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ল। পাগল হয়ে গেল। একটা শান্তশিষ্ট ছেলে কিসে পরিণত হয়ে গেল। পুরো ছেলেবেলাটাই নষ্ট হয়ে গেল ওর। বাবা-মা ছাড়া একটা ছেলে কি করে বড় হয়? কি করে মানুষ হয়?”
মিজান চাচা কাঁদতে লাগল। রুশা আর দাঁড়াতে পারল না। উঠে চলে গেল।
.
আদ্রিশ পাশে বেঘোরে ঘুম যাচ্ছে। রুশার চোখে ঘুম নেই। আদ্রিশের দিকে একবার তাকাল। ওর কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে খুব। চোখের সামনে বাবা-মায়ের মৃতদেহ ভেসে উঠল। রুশার ছেলেবেলাও সুখের ছিল না। এইদিক দিয়ে আদ্রিশের কষ্টটা বুঝতে পারছে। রুশার তখন দশ বছর। ওর বাবা একজন রাজনীতিবিদ ছিল। ব্যস্ততার কারণে স্ত্রী, সন্তানদের সময় দিতে পারতেন না। একদিন স্ত্রীকে বললেন তৈরি হয়ে নিতে। দুজন মিলে ঘুরতে যাবে। রুশাও যেতে চাইল। ওর বড় ভাই ওকে ঘুরতে নেওয়ার লোভ দেখিয়ে ওকে আটকায়। বাবা-মায়ের মাঝে ওকে পাঠাতে চায়নি। কিন্তু মাঝ রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়ে স্পট ডেট হলো তাদের। লাশ যখন বাড়িতে আনে রক্তাক্ত দেহ দেখে রুশা ভাইয়ের পেছনে লুকিয়ে পড়ে। ভাই ওকে আগলে নেয়। তারপর তিনি নিজ হাতে রুশাকে সাহসী, শক্তভাবে গড়ে তুলেন। রুশা আজ সাহসী, শক্ত মনের হলেও ওই দৃশ্য চোখের সামনে ভাসলে নিজেকে শক্ত রাখতে পারে না। ভয়ে কুঁকড়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে। আজও তাই করছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেল। আদ্রিশের মুখের দিকে চেয়ে কাঁদছে। আদ্রিশ তো তখন আরো ছোট ছিল। চোখের সামনে বাবাকে মারতে দেখে ওর কেমন লেগেছে সেটা অনুভব করার চেষ্টা করছে। ওর তো ভাইয়েরা ছিল কিন্তু আদ্রিশের কেউ ছিল না। রুশা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। শব্দ করে কাঁদছে। আদ্রিশ ওর কান্নার শব্দ পেতেই জেগে যায়। রুশাকে বসে বসে কাঁদতে দেখে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে। বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কাঁদছো কেন? ভয় পেয়েছো? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো?”
রুশা কিছু না বলে আদ্রিশকে ঝাপটে ধরে। আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। আদ্রিশ কেন জানি ভয় পাচ্ছে, নিজের জন্য কখনো ভয় পায়নি কিন্তু রুশার জন্য ভয় পাচ্ছে।
“রুশা, তুমি না বললে আমি কি করে বুঝব? বলো প্লিজ।”
রুশা কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই বলল বাবা-মার কথা মনে পড়ছে। অনেক মিস করছি তাদের। আদ্রিশের বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল।
“জানো, আমার মাকে তেমন মনে পড়ে না। বুঝ হওয়ার আগেই তিনি মারা গেছেন। কিন্তু বাবাকে খুব মনে পড়ে। চোখের সামনে কুকুরের বাচ্চাগুলো সম্পত্তির লোভে বাবাকে মেরে ফেলল। আমি কিছু করতে পারিনি। ছোট ছিলাম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে ছাড় দেইনি। লতিফ আংকেলকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছি। লতিফ আংকেল আর তার প্রেমিকা মিলে প্লান করে আমার বাবার সম্পত্তির জন্য বাবাকে খুন করে। ওই মহিলা বাবাকে বিয়ে পর্যন্ত করেছিল সম্পত্তির জন্য। যখন জানতে পারল সব আমার নামে বাবা আগেই লিখে দিয়েছেন তখন আর সহ্য হলো না বাবাকেই মেরে দিল।”
“আর আপনার সৎ মা এখন কোথায়?”
আদ্রিশ চুপ করে গেল।
“এসব বাদ দেও। পুরনো কথা মনে করতে চাই না।”
রুশা আদ্রিশকে চুপটি করে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। ভালো লাগছে ওর৷ আদ্রিশ আবারও বলতে লাগল,
“তোমাকে বিয়ে করার কয়েকটা কারণ আছে। এক, তোমাকে দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। দুই, তুমি খুব সৎ ছিলে আর তিন, তুমি এতিম তাই। আমিও এতিম, তুমিও এতিম। একে অপরের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারব। একে অপরকে পরিবার দিতে পারব, সঙ্গ দিতে পারব তাই তোমাকেই বেছে নিলাম। আমি সব সময় তোমার পাশে আছি। বাবা-মায়ের জন্য কেঁদো না। কখনো মন খারাপ করবে না। আমি আছি তো। আমি কখনো তাদের অভাব বুঝতে দেব না। সব সময় তোমার ছায়া হয়ে থাকব। দুঃখ কষ্ট কখনো তোমাকে ছুতে পারবে না। এখন ঘুমাও। তোমাকে অনেক ক্লান্ত লাগছে।”
রুশা আদ্রিশকে ছাড়ছে না। আদ্রিশ মুচকি হাসল। তারপর ওকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। রুশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রুশা চোখ বন্ধ করে আছে। ওর এই মুহুর্তে কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না। আদ্রিশের কেয়ারগুলো অনুভব করছে।
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here