#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১১+বোনাস+12+13)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
সময় নদীর স্রোতের মতো প্রবাহমান।দেখতে দেখতে কেটে গেছে একটা মাস।এই একটা মাসে বদলেছে অনেক কিছু।প্রাহি পুরো চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।আগের মতো আর হাসি খুশি থাকে না।শুধু আনমনা হয়ে থাকে।কি নিয়ে এতো ভাবে যে পিচ্চিটা কেউ তা আন্দাজ করতে পারে না।স্কুলে যায় আবার ফিরে এসে রুমে ডুকলে সহজে বের হয় না রুম থেকে।রুম অন্ধকার করে রাখে সবসময়।বাড়ির প্রতিটি লোকও সেদিনের পর থেকে অনেক চিন্তিত হয়ে থাকে।প্রাহিকে নিয়ে অনেক ভয় হয় তাদের।ছোট্ট মেয়েটা মনে ভীষন আঘাত পেয়েছে। তাই তো কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না।হেনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো কবে যে সব ঠিক হবে জানা নেই তার।শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে সবকিছু ঠিক হওয়ার আশায় আছেন তিনি।হেনা রান্না ঘরে চলে গেলেন।গিয়ে দেখে রায়হানা বেগম আনমনা হয়ে রান্না করছেন।তিনি গিয়ে রায়হানা বেগমের কাধে হাত রাখেন।কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই রায়হানা বেগম তাকান।হেনা দেখে মলিন হাসে।তা দেখে হেনা বলে,
-” কেন নিজেকে আর অর্থকে কষ্ট দিচ্ছো?ছেলেটা তো কষ্ট করলো এই একটা মাস যাবত।এইবার ক্ষমা করে দেও ভাবি।”
রায়হানা বেগম আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না।আচঁলে মুখ চেপে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।কান্না করতে করতে বলে,
-” আমারও তো কষ্ট হও তাই না?আমার ছেলেটাকে আমি একটা মাস যাবত চোখের দেখা দেখতে পারিনা।ছেলেটাও অভিমান করে আমার কাছে একটা ফোনও করে না।আমি ফোন করলে বলে,তোমাদের কথা মতো তো সবটাই হচ্ছে তাহলে বার বার ফোন দিয়ে জ্বালাচ্ছো কেন? আমার ছেলে বলে আমি না-কি ওকে জ্বালাই।বল তো ছোট আমি কিভাবে ওকে জ্বালাই একটু ওর খোঁজ খবর নিতে চাই।আমি তো মা একটামাস যাবত নিজের সন্তানকে দেখি না।আমার কলিজাটা যে পুরে ছাড়খার হয়ে যায় ও কি সেটা বুজেন না।”
হেনারও চোখ ছলছল করছে।তিনি বলেন,
-” ভাইজান যে কেন শুধু এরকম করলো?অর্থকে একটু ভালোভাবে বুজালেই হতো।ওতো আর ছোট না বুজতো।”
রায়হানা বেগম চোখ মুছলেন।তারপর হঠাৎ শক্ত কন্ঠে বলে,
-” নাহ! এতোটুকু শাস্তি ওর প্রাপ্য ছিলো।ধমকা ধমকি বকা ঝকা মেনে নেওয়া যায়।কিন্তু গায়ে হাত তোলা এটা অন্যায়।আর আমি অন্যায়কে প্রসয় দেই না।হিয়াজ যা করেছে আমি ওর সাথে একমত।”
-” কিন্তু ভাবি এইবার থামো।বাড়িটা একেবারে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে।হিয়া আর হেমন্তও রাগ করে অর্থের কাছে চলে গেছে।তাদের একটাই কথা তার ভাই যেখানে থাকবে না তারাও সেখানে থাকবে না।”
রায়হানা বেগম মাথা ঝাকালেন।অনেক হয়েছে শাস্তি।আর না। হিয়াজ সিকদারকে তিনি এইবার বলবেন অর্থকে বাড়িতে ফিরে আসতে।
একটা মাস আগে হিয়াজ সিকদার সেদিন অর্থকে জানায় তাকে এক মাস প্রাহি থেকে দূরে থাকতে হবে।এবং রাগ নিয়ন্ত্রন করার জন্যে হালকা পাতলা কিছু ট্রিটমেন্ট নিতে হবে।এক মাস পর অর্থ এই বাড়িতে ফিরতে পারবে তার আগে না।সন শুনে অর্থ রেগে গিয়ে ভাংচুর করে সবকিছু।প্রাহি সেদিন হুশে ছিলো না।সেদিন মেয়েটার ভীষন জ্বর এসেছিলো তাই ঘুমের ঔষুধ দেওয়া হয়েছিলো ওকে।তাই ও এসবের কিছুই টের পাইনি।অর্থ চিৎকার চেঁচামেচি, ভাংচুর করেও কাউকে মানাতে পারেনি।শুধু হিয়াজ সিকদারের একটা কথা অর্থকে থামিয়ে দেয়।অর্থ যদি এখন তার কথা না শুনে তাহলে তার একটা বন্ধুর ছেলে আছে তার সাথে প্রাহির এংগেজমেন্ট করিয়ে দিবে।আর প্রাহির বড় হলে বিয়েটাও দিয়ে দিবেন।অর্থ ভয় পায় ভীষন ভাবে।প্রাহিকে হারাবার ভয় ওর মনে ঝেকে বসে।অবশেষে অর্থ সেদিন সব ব্যাগপত্র গুছিয়ে গুলশানে তাদের যেই ফ্লাট আছে সেখানে চলে যায়।হিয়াজ সিকদার জানতেন তার ছেলেকে এই একটা কথা দ্বারাই রাজি করানো যাবে।অবশ্য তিনি এমন কিছুই করতেন না শুধু অর্থকে ভয় দেখানোর জন্যে এমনটা বলেন।সেদিন রায়হানা বেগমও বুকে পাথর চেপে স্বামি যা বলেন তা মেনে নিয়েছিলেন।হেমন্ত হিয়াও রাগ করে অর্থ’র সাথে চলে যায়।তাদের একটাই কথা তার ভাই যেখানে থাকতে পারবে না তারাও সেখানে থাকবে না।
——
বর্তমান,,,,
রাত দশটা বড়রা যখন সোফায় বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলো অর্থকে এখন এসে পরতে বলবেন এই বাড়িতে তার জন্যে হিয়াজ সিকদারকে বুজাচ্ছিলেন।ঠিক তখনি সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করে অর্থ।আর পিছু পিছু হেমন্ত আর হিয়া।অর্থকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।রায়হানা বেগম কান্না করে দিয়ে ছুটে চলে যায় ছেলের কাছে।অর্থকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।তবে আজ আর অর্থ তার মাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিচ্ছে না।অভীমান জমেছে যে অনেক অভিমান। নিজের বাবা মার প্রতি। এই একটা মাস সে সে তার জীবনের সবচেয়ে কঠোর দিনগুলো পালন করেছিলো।দিনরাত ছটফট করেছিলো একপলক প্রাহিকে দেখার জন্যে প্রাহির আওয়াজ শুনার জন্যে।কিন্তু কেউ সেই সুযোগ দেই নি।ফোন দিয়ে প্রাহির সাথে কথা বলতে চাইলেও কেউ দিতো না।
অর্থ রায়হানা বেগমের বাহু ধরে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর শক্ত কন্ঠে বলে,
-” তোমার স্বামিকে জিজ্ঞেস কর এক মাস পূরন হয়েছে।আরও কোন কিছু করার বাকি আছে?নাকি তিনি চান আমি একেবারে মরে যাই।”
হিয়াজ সিকদার শুকনো মুখে ছেলের কথা শুনলেন।রায়হানা বেগম বললেন,
-” এসব কেন বলছিস বাবা?আমরা কেউ তোর খারাপ চাই না।”
অর্থ রাগি গলায় বললো,
-” সেটা আমার থেকে অন্তত কেউ ভালো জানে না।তোমরা কি চাও।”
বলেই হনহন করে উপরে নিজের রুমে চলে গেলেন রায়হানা বেগম শতোবার ডাকলেও একটাবার তার দিকে ফিরেও তাকালো না অর্থ।হেমন্ত আর হিয়া সবার দিকে তাকালো।হেমন্ত রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
-” এই একমাস এই শাস্তি না দিয়ে একেবারে ভাউকে মেরে ফেলতে তাই ভালো ছিলো।”
হেমন্তও চলে গেলো।হিয়া ছলছল চোখে তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” এই একটা মাস ভাইকে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেখেছি।মরন যন্ত্রনার মতো কাতরেছে সে।তাও তোমাদের মন গললো না বাবা, মা।যা করেছো ভালো করেছো খুব ভালো।ভাইয়ের রাগ তো কমানো গেলেও না।উলটো আমার মনে হয় তার রাগের মাত্রা তোমরা আরো বাড়িয়ে দিলে।”
হিয়াও চলে গেলো।এদিকে বাকিরা ভাবছেন ছেলেকে এতোদূরে রেখে ঠিক করেননি বোধ হয়।অর্থ যে রাগ। না জানি রাগের মাথায় ছেলেটা কি করে বসে।
——-
ব্যালকনির ফ্লোরে আনমনা হয়ে বসে আছে প্রাহি।এই একটা মাস এই ব্যালকনিটাই তার সাথি হয়ে গিয়েছে।সে পারেনা ভালো মতন একটা ঘুম দিতে।চোখ বন্ধ করলেই অর্থ’র মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠে।অবশ্য জেগে থাকলেও অর্থ’র কথা ওর মাথাতে ঘুরতেই থাকে।মামনি থেকে শুনেছে অর্থকে নাকি এই বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়েছে।তাই জন্যে হেমন্ত আর হিয়াও চলে গেছে তার সাথে।প্রাহির এখন নিজেকে ছোট লাগছে নিজের কাছে।তার কারনেই অর্থ কি অর্থ চলে গিয়েছে।আসলেই ও অলক্ষি না।তার কারনে সবাই কষ্ট পায়। প্রাহির নিজেকে নিজের পাগল পাগল লাগে।এই একটা মাস শুধু অর্থকে একপলক দেখার জন্যে ওর পরান পাখিটা ছটফট করেছে।কেন করেছে?অর্থ’র কথা চিন্তা করলেও এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে বুকটা ভরে যায়।আবার অর্থকে একপলক দেখতে না পাওয়ার কষ্টতে কাঁদতে কাঁদতে দিনদুনিয়া ভুলে যায়। অদ্ভুত অনুভুতিতে আজ প্রাহি তিক্ত।কিসের জন্যে সে অর্থকে এতোটা মিস করে।কেন অর্থ’র আশায় দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।এ কেমন অনুভূতি ওকে ঝেকে ধরেছে।অর্থ’র অনুপুস্থিতি ওকে দিনরাত কুরে কুরে খাচ্ছে।কেন এমন লাগে?ও নিজেই তো চেয়েছিলো অর্থ যেন ওর কাছ থেকে দূরে থাকে।তাহলে আজ ও নিজেই কেন ভালো নেই।কেন নেই? প্রাহি দু হাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো।ভালো লাগছে না কিছুই কিছুই ভালো লাগছে না।অর্থকে এখন দেখতে পাওয়ার জন্যে ওপর ভীতরটা পুরে যাচ্ছে।
প্রাহি যখন এসব ভাবতে ব্যস্ত। হঠাৎ নিস্তব্ধ পরিবেশে কারো শান্ত কিন্তু ভয়ানক কন্ঠস্বরে কেঁপে উঠে প্রাহি।কেউ বলেছে,
-” মিস মি প্রাহি?ডিড ইউ মিস মি?”
#চলবে______
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।মনের মতো সুন্দর কমেন্ট পেলে বোনাস দিবো।#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (বোনাস পার্ট)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
নিস্তব্ধ পরিবেশ।বারান্দার গ্রিলের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি।বাতাসে হাসহেনা ফুলের সুভাষে মাখামাখি।ঘরের ফেইরিলাইট্স গুলো আর সাদা পর্দা গুলো যেন সব কিছুর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।চারদিকে কেমন যেন একটা প্রেম প্রেম ভাব।
চাদনি রাতের মােহনীয় রূপ-সৌন্দর্য প্রতিটি মানুষের মনেই রং ধরায়। সুখ-শয্যায় ঘুম আসে না, অথচ ঘুম না আসার কোনাে গ্লানিও অনুভূত হয় না। কেমন যেন বুকের তলে জমা হয়, অথচ সেই ভাব প্রকাশের ভাষা নেই । মূলত জ্যোৎস্নার মায়াবী রূপ মানুষের মন দেয়, রাঙিয়ে তােলে মানুষকে। সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ মাতাল হয়ে পড়ে এমন জ্যোৎস্নায়। কিন্তু আজ প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখার মন কারো নেই।
দুটি মানুষ শুধু তাকিয়ে দেখছে একে অপরকে।একজন দেখছে চোখে প্রেম,ভালোবাসা,আকাঙ্খা, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। আরেকজন কি কারনে দেখছে সেটা সে নিজেও উপলব্ধি করতে পারছে না।মনের মাজে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত অনুভুতিগুলো নিয়ে সে এলোমেলো এক মানবী।যে নিজেকেই নিজে বুজতে পারে না।তবুও কিসের যেন একটা টানে সে কাতর চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে বিপরীত মানুষটার দিকে।
অর্থ তাকিয়ে আছে প্রিয়তমার মুখশ্রীর দিকে।এলোমেলো চুল বাতাসের কারনে মৃদ্যু দুলছে,হরণী চোখজোড়া দিয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।কি যে নেশা সেই চাহনী।অর্থ প্রাহির চোখের একসমুদ্র মায়া খুজে পায় যেই সমুদ্র সে হাজার বার ডুবে যেতে রাজি।ফর্সা গাল গুলো চাঁদের আলোয় আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। অর্থ’র মন চায় গালগুলো একটু টেনে দিতে।গোলাপি ঠোঁট জোড়া দেখলেই অর্থ’র সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।বুকের ভীতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।মলিন হয়ে আছে প্রাহির মুখশ্রীটা তবুও সেকি মায়া এই চেহারাটায়।
অর্থ একপা দু’পা করে এগিয়ে যায় প্রাহির দিকে। তবুও প্রাহি ঠায় দাড়িয়ে আছে।আজ কেন যেন অর্থকে একটুও ভয় পাচ্ছে না প্রাহি।কেন পাচ্ছে না?অন্যসব সময় হলে তো ভয়ে ওর হুশজ্ঞান হারিয়ে যায়।তবে আজ কেন অর্থ’র উপর থেকে নিজের চোখজোড়া সরাতে পারছে না ও?লোকটাকে পাগলাটে দেখাচ্ছে,চোখে মুখে কিছু পাওয়ার আকুলতা ভেসে উঠছে,উষ্কখুষ্ক চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে পরে আছে এবং হাওয়ায় দুলছে,লোকটার এই গভীর চোখজোড়া যেন প্রাহিকে চিৎকার করে বলছে,’ শুনছো?আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।তুমি কি শুনবে মেয়ে?’
কিন্তু কি বলতে চায়? কিসের এতো আকুলতা ওই চোখে।লোকটার সব কিছু আজ হঠাৎ করেই প্রাহির কাছে অনেক সুন্দর লাগছে।লোকটার চুল,কপাল,ভ্রু,গাল,চোখ,নাক,ঠোঁট সব,সব কিছু ভীষনরকম সুন্দর দেখাচ্ছে এটা প্রাহির কাছে মনে হচ্ছে।লোকটার অবাধ্য চুলগুলো একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।কেন এমন পাগলাটে অনুভুতি হচ্ছে ওর মনে?কেন?কেন?কেন?এই কেন’র উত্তর প্রাহির জানা নেই।আর ও জানতেও চায়না আজ কিছু।শুধু অর্থকে মনভরে দেখতে চায় ও।
প্রাহির এইসব ভাবনার মাজে কখন যে অর্থ ওর এতো কাছাকাছি চলে এসেছে টেরই পায়নি।লোকটার উষ্ম নিশ্বাসগুলো প্রাহির মুখে আছড়ে পরায় হালকা কেঁপে উঠে ও।সাথে সাথে চোখজোড়া নামিয়ে ফেলে প্রাহি।লোকটা ভয়ানক ভাবে তাকিয়ে থাকে প্রাহির দিকে।কেন এইভাবে তাকায়?বুকটা দুরু দুরু করছে প্রাহির।এটা কেমন অনুভুতি?
-” ভালোবাসার অনুভুতি!”
হঠাৎ অর্থ’র ফিসফিস করা বলা কথাটা ওর আত্মা শুদ্ধ কাপিয়ে তুললো।লোকটা ওর মনের কথা জানলো কিভাবে?কিভাবে বুজতে পারলো? কেঁপে উঠে দু কদম পিছিয়ে যেতে নিলেই অর্থ প্রাহির বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। তারপর আলতো করে একহাত প্রাহির কোমড়ে আরেক হাত প্রাহির গালে ছোঁয়াতেই চোখ বন্ধ করে মাথাটা একপাশে ঘুরিয়ে নেয় প্রাহি।অজানা অনুভুতি ওর হৃদয় চাপা পরে যাচ্ছে ক্রমশ।
অর্থ প্রাহির দিকে তাকিয়ে থেকেই শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
-” টেল মি প্রাহি ডিড ইউ মিস্ড মি?”
প্রশ্নটা শুনে প্রাহি চোখজোড়া আরো জোড়ে খিচে বন্ধ করে নেয়।হঠাৎ চমকে উঠে প্রাহি।কারন অর্থ ওকে কোলে তুলে নিয়েছে।প্রাহি হকচকিয়ে গিয়ে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।প্রাহি কাঁপা কন্ঠে বলে,
-” কি ক..করছেন আ…আপনি?”
অর্থ জবাব দিলো।প্রাহিকে কোলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।তারপর আলতো হাতে প্রাহির চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিলো।অর্থ’র শীতল হাতের স্পর্শে প্রাহির কেপে উঠে অর্থ’র ঘাড় খামছে ধরে।ওর সারা শরীর মৃদ্যু কাঁপছে।অর্থ আস্তে করে নিজের মাথাটা প্রাহির কাধে রাখলো।এতে যেন ভুমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠলো প্রাহির।
অর্থ বললো,
-” প্রাহি?তোমার জন্যে আমি পুরো পাগল হয়ে গিয়েছি।এই আমিটা নাহ পুরো অগোছালো হয়ে গিয়েছি।জানো, এই একমাস আমি ঠিকমতো ঘুনোতে পারিনি,খেতে পারিনি,কাজে মন বসাতে পারিনি।তোমার জন্যে দিনরাত একটা অসুস্থ পাখির ছানার মতো ছটফট করেছি।অথচ আমি তুমি আসার আগেও সিংহের ন্যায় বুক ফুলিয়ে চলতাম।বলোতো কেন আমি এমন হয়ে গেলাম?আমার আগের আমিটা কোথাও হারিয়ে গেছে জানো প্রাহি?”
প্রাহি বাচ্চাদের মতো করে ডানেবামে মাথা নাড়ালো।অর্থ বললো,
-” এই আমি পুরোটাই তোমার মাজে হারিয়ে গিয়েছে প্রাহি।আমি আর আমার নিজের মাজে নেই।এই আমিটা সম্পূর্ণ প্রাহি নামক মেয়েটার হাতে বন্ধি হয়ে গিয়েছে।কেন হয়েছে জানো?”
প্রাহি আবার মাথা নাড়ালো।অর্থ হালকা হাসলো।তারপর প্রাহির কানে হালকা স্বরে ফিসফিসিয়ে বলে,
-” কারন এই আমিটা তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে প্রাহি।আই লাভ ইউ।”
ব্যস প্রাহি কি হলো কে জানে?সে এই বাক্যটুকু শুনে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না।দুহাতে অর্থকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হু্ঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো।অর্থ’ও প্রাহিকে নিজের সাথে আরো প্রগাঢ়ভাবে মিশিয়ে নিলো।যেন ছেড়ে দিলেই প্রাহি কোথাও হারিয়ে যাবে।
#চলবে______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করে আপনারা আমাকে খুশি করুন।আমি খুশি হয়ে আপনাদের বোনাস দিয়ে খুশি করবো।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে (১২)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
সকাল হতেই রায়হানা বেগম ছেলের জন্যে রান্নার তোরজোড় শুরু করে দিয়েছেন।ছেলের পছন্দের হরেক রকম খাবার রান্না করে টেবিলে পরিবেশন করছেন তিনি।কাজের মাজেই সবাই এসে উপস্থিত হলেন।কিছুক্ষন পর অর্থও আসলো।ব্রেকফাস্ট করতে সবাই টেবিলে বসতেই।রায়হানা বেগম যখন অর্থকে পছন্দের খাবার আলু পরোটা দিতে নিলেন।অর্থ প্লেট সরিয়ে দিলো।মাত্রই প্লেটে ডিমটা তুলেছিলো প্রাহি। তাকে রাগি গলায় ডেকে উঠে অর্থ।
-” প্রাহি।”
হঠাৎ এমনভাবে ডাক দেওয়াতে ভয় পেয়ে যায় প্রাহি।ও হুরমুরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।অর্থ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না।দীর্ঘ একটা মাস যে যন্ত্রনাগুলো ভোগ করেছে তা যেন রাগের মাধ্যমে ঠেলে বেড়িয়ে আসতে চাইছে।অর্থ প্রাহিকে প্রায় ধমকে বললো,
-” যাও আমার জন্যে এককাপ কফি আর ব্রেড টোস্ট নিয়ে আসো।”
রায়হানা বেগমের চোখ ভরে আসতে চায়।তিনি বলেন,
-” পরোটাটা খা বাবা এটাতো তোর অনেক পছন্দ।”
অর্থ তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
-” সবচেয়ে বেশি যা ভালোবেসেছি তার থেকেই দূরে সরিয়ে দিতে চাইছিলে।আর এই সামান্য পছন্দ করা খাবার আর কি হবে?এইগুলোও সরিয়ে নেও।আমার আজ থেকে কোন পছন্দ নেই।”
টেবিলের প্রতিটা মানুষ আজ উপলব্ধি করতে পারছে অর্থ ঠিক কতোটা কষ্ট পেয়েছে।নাহলে নিজের মায়ের সাথে এরকম করতো না।প্রাহির নিজেকে অপরাধি লাগছে ওর জন্যেই তো এতো কিছু হয়েছে।অর্থ ভ্রু-কুচকে প্রাহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” ডোন্ট ব্লেম ইউরসেল্ফ।এখন আমি যা বলেছি তা করো গিয়ে জলদি যাও।”
প্রাহি তাড়াতাড়ি করে কিচেনে চলে গেলো।কফি বানাতে বানাতে বিরবির করে অর্থকে বকা দিচ্ছে।হুহ্, রাক্ষস একটা সারাক্ষন শুধু ধমকাধমকি করে।কাল সে আই লাভ ইউ বলেছিলো সেই পরিপেক্ষিতে আমাকেও আই লাভ ইউ বলতে বলেছিলো।আমি কিভাবে বলবো?আমি এখনো ভালোবাসার আসল মানে ভালোভাবে বুজতে পারি না।তবে লোকটাকে আমার ভালোলাগে এটা জানি।কিন্তু উনার সামনে ওটা কিভাবে বলি?আমার তো লজ্জা করে তাই না?আই লাভ ইউ বলি নাই তাই আমাকে এমন ধমক দিলো।আমার এটোমেটিকলি কান্না করতে করতে মনে হয় ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।ব্যাটা বজ্জাত।
এভাবে বকে কফি আর ব্রেড টোস্ট নিয়ে অর্থকে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় যেতে নিলে অর্থ ওকে হাত টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিলো।প্রাহি অসহায় দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকালো।হিয়া এমন একটা ভান করলো যেন সে কিছুই জানে না।প্রাহি এইবার অর্থকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-” আমার প্লেট তো ওইসাইডে।আমি ওইখানে গিয়ে খাই?”
অর্থ প্রাহির কথা জবাব দিলো না।হেমন্তকে বললো,
-” হেমন্ত ওর প্লেটটা এদিকে দে না।”
হেমন্ত তাই করলো।অর্থ ঠাস করে প্লেটটা প্রাহির সামনে রাখলো।তারপর রাগি চোখে প্রাহির দিকে তাকালো। প্রাহি ভয় পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।আস্তে আস্তে খেতে লাগলো।
সবাই অর্থ আর প্রাহিকে দেখছে।এখন সবাই বুজতে পারছে অর্থ প্রাহিকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। ব্রেকফাস্ট শেষে অর্থ প্রাহির হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো বাড়ির থেকে।প্রাহি মুখ ফুলালো।
অর্থ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। তারপর ভ্রু-কুচকে প্রাহির দিকে তাকিয়ে বলে,
-” কি সমস্যা?”
প্রাহি মিনমিনিয়ে বলে,
-” কিসের সমস্যা?”
অর্থ দাঁতেদাঁত চিপে বললো,
-” সেটাই তো আমি জিজ্ঞেস করছি।”
প্রাহি বলে উঠে,
-” আসার সময় ওইভাবে টেনে আনলেন কেন?সবাইকে একবার বলে তারপর তো বের হতে পারতাম।সবাই কি ভাবছে?”
অর্থ রাগি স্বরে বললো,
-” সবার কথা এতো চিন্তা করে কি হবে?আমাকে নিয়ে তো দু মিনিটও চিন্তা করো না?”
প্রাহি অন্যমনস্ক হয়ে মুখ ফুসকে বলে উঠলো,
-” কে বলেছে চিন্তা করিনা?জানেন গত একমাস আমি আপনাকে কতো মিস করেছি?কতো চিন্তা করেছি?”
সাথে সাথে অর্থ গাড়িতে ব্রেক কষলো।অবাক হয়ে তাকালো প্রাহির দিকে।এদিকে প্রাহি হঠাৎ ব্রেক লাগানোতে হালকা ভয় পেয়েছে।তারপর ওর খেয়াল হলো ও কি বলে ফেলেছে।ইসস,কি লজ্জা কি লজ্জা।কাল থেকে এমনিতেও ওর কি যে কি পরিমান লজ্জা লাগছিলো।এখন তো তা আরও দ্বিগুন বেরে যাবে।প্রাহি মুখে হাত দিয়ে ভীতু চোখে অর্থ’র দিকে তাকালো।
অর্থ’র ঠোঁটের কোনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু প্রাপ্তির হাসি দেখা যাচ্ছে।অর্থ সরাসরি প্রাহিকে জড়িয়ে ধরলো।অনেকক্ষন ওইভাবেই থাকলো।অর্থ শীতল কন্ঠে বলে,
-” আই মিস ইউ টু প্রাহি।”
তারপর প্রাহিকে ছেড়ে দিয়ে ওর দুগালে হাত দিয়ে বলে উঠে,
-” প্রাহি?আমি অনেক খারাপ?তোমাকে কথায় কথায় ধমক আর বকা দেই তাই বলে কি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে বলো?আমার এই শাষকের পিছনে তোমার জন্যে যে অফুরন্ত ভালোবাসা আছে তা তুমি কি দেখতে পাওনা বলো?তবে আমি প্রমিস করছি আমি তোমাকে আমার সবটা দিয়ে আগলে রাখবো।তুমি থাকবে তো আমার সাথে?”
প্রাহি মায়াভরা চোখে অর্থের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রাহি নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরলো।তারপর আলতো করে অর্থ’র কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।অর্থ’র হৃদয়টা প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো। এই মেয়েটা নিশ্চিত ওকে পাগল বানিয়ে দিবে।প্রাহি নিজেও অবাক ও এতো সাহস কোথাথেকে পাচ্ছে।এতোকিছু কিভাবে করতে পারলো?তবে এই মুহূর্তে অর্থকে এতো খুশি দেখে ওর নিজেরও অনেক ভালো লাগছে।প্রাহি হালকা আওয়াজে বলে,
-” যাবো নাহ।আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না।আপনার সাথেই থাকবো সারাজীবন।এখন আমাকে ছাড়ুন স্কুলে দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
অর্থকে প্রাহিকে ছেড়ে দিয়ে প্রাহির কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।প্রাহি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
তারপর অর্থ সোজা হয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
প্রাহি আঁড়চোখে বারবার দেখছে অর্থকে।লোকটা অনেকটা পাগলাটে।রাগিও বটে।তবে প্রাহি এতোটুকু বুজতে পারছে অর্থ ওকে ছাড়া মরে যাবে।বাচঁতে পারবে না।আর প্রাহি বুজতে পেরেছে ওর মনেও অর্থের জন্যে কিছু আছে।হোক সেটা ভালোলাগা।একদিন এই ভালোলাগা থেকেই ভালোবাসা হতে কতোক্ষন।একদিন না একদিন তো প্রাহিকে কারো স্ত্রী হতে হবে।তাহলে সেটা অর্থ’র স্ত্রী হলে সমস্যা কোথায়?লোকটা ওকে ভালোবাসে।প্রাহি তো এটাই চেয়েছিলো সবসময় সৃষ্টিকর্তার কাছে যে ওর জীবনে এমন কাউকে সে পাঠাক যে ওকে অনেক ভালোবাসবে।আর প্রাহি এখন এটা বুজতেও পারছে যে সেই লোকটা আর কেউ না অর্থ।হ্যা অর্থ রাগি বেশি।কিন্তু তার এই রাগের পিছনে প্রাহি নিজের জন্যে অসীম ভালোবাসা খুজে পায়।প্রাহি এতোটাও অবুঝ না যে এতোটুকু সে বুজবে না।
হিয়া বলেছে ওকে গত একমাস অর্থ কতোটা পাগলামি করেছে ওর জন্যে।এই লোকটা যে ওকে ভালোবাসে এটা তো ওর জন্যে সৌভাগ্য।আর তার এই ভালোবাসেকেই প্রাহি সারাজীবন আগলে রাখবে।
অর্থ ড্রাইভিং এর ফাকে ফাকে প্রাহিকে দেখা মিস করছে না। স্কুল ড্রেসে মেয়েটাকে এতো কিউট লাগে, বলে বুজানো যাবে না।ইসস,এই পিচ্চি মেয়েটাকে এতোটা ভালোবাসলো কিভাবে অর্থ?এই পিচ্চিটা ওর পুরো অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে।কবে যে তার পিচ্চিটা বড় হবে।আর কবে যে সে ওকে একেবারে নিজের করে পাবে।সেই অপেক্ষাতেই আছে অর্থ।তবে অর্থ নিজেকে দিয়ে গ্যারান্টি দিতে পারছে।বেশি দিন অপেক্ষা ওর পক্ষে সম্ভব না।যখন বেশি বেতাল দেখবে প্রাহি উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করে আনবে।
প্রাহি আবারও আঁড়চোখে অর্থ’র দিকে তাকাতে নিলে চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।অর্থ চোখ টিপে দেয় প্রাহিকে।প্রাহি সাথে সাথে লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।ইসস এই লোকটা ওকে এইভাবে লজ্জা না দিয়ে পারে না।প্রাহি মাথানিচু করে বসে রইলো।আর একবারও তাকালো না অর্থ’র দিকে।
কিছুক্ষনের মাজেই ওরা প্রাহির স্কুলের সামনে চলে আসলো।অর্থ প্রাহির কপালে চুমু খেয়ে ওকে সাবধানে থাকতে বললো।আর কোন সমস্যা হলে সেটাও যেন ওকে জানায়।এই স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে অর্থ কথা বলেছে এটাও জানিয়েছে।তারা প্রাহির খেয়াল রাখবে। প্রাহি মাথা নাড়িয়ে সব কথা শুনলো।তারপর স্কুলের ভীতরে চলে গেলো।অর্থও চলে গেলো নিজের কাজে।
#চলবে_______
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন। আর বোনাস বোনাস বলে এতো কমেন্ট করা লাগবে না।আমার মন ভালো থাকলে আমি এমনিতেই বোনাস দিবো।আর ছোট ছোট হয়েছে করলে আমি একদিন পর পর গল্প দিবো।লিখতে সময় লাগে অনেক।আপনারা ঘটনমূলক মন্তব্য খুব কম করেন।এই জন্য আমার মন অনেক খারাপ।তাও আমি সবাইকে ভালোবাসা দিলাম।
#প্রেম_এসেছিলো_নীরবে(১৩)
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
জল ধারার ন্যায় সময় গড়িয়েছে অনেক দূর।কেটে গেছে প্রায় মাসের পর মাস।অর্থ আর প্রাহির প্রেম চলছে ভালোই।তবে এতো ভালোবাসার মাজে অর্থের ধমকানোটাও কমেনি।এ কয়দিনে প্রাহির অনেক বুজানোর ফলে অর্থের অভিমান কমেছে পরিবারের প্রতি।
আজ শুক্রবার। ছুটির দিন।তবে সিকদার বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশ।কারন হিয়ার এক্সাম শেষ হয়েছে অনেকদিন।রেজাল্টও এসেছে অনেক ভালো।তাই সবার সিদ্ধান্তে এখন বিয়ের সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত করা হবে আজ।আরাফদের বাড়ি থেকে আজ সবাই আসবে এ বাড়িতে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে, তারই আয়োজন চলছে।অর্থ সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।কাজ করার কথা বললে ভুল হবে।সেতো এসেছে প্রাহিকে দেখার জন্যে।কিন্তু নিষ্ঠুর প্রাহি একবারও আসলো না অর্থ’র কাছে।কফি বানিয়ে দিতে বলেছিলো এই সুযোগে যদি একটু কথা বলা যায়।কিন্তু বেয়াদপ মেয়েটা কি করলো সেলিমা খালাকে দিয়ে কফি বানিয়ে পাঠিয়েছে।সবার জন্যে তার সময় আছে শুধু অর্থ’র জন্যে তার সময় নেই।একদম নেই।নিষ্ঠুর, পাষান এক রমনীকে অর্থ ভালোবেসেছে।
প্রাহি রায়হানা বেগম আর হেনার সাথে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে।রান্না করবে বাবুর্চিই কিন্তু বাকি নাস্তার জন্যে খাবার তো তাদেরই বানাতে হবে।প্রায়ই সব শেষের দিকে।রায়হানা বেগম প্রাহিকে এই নিয়ে কপালে একশো চুমু খেয়ে ফেলেছে।মেয়েটা সব কাজে এতো পটু।কতো পদের নাস্তা বানিয়েছে হিসাব ছাড়া।তারা কখনই পারতো না এতোগুলো বানাতে।রায়হানা বেগমের এতো আদরে যেন প্রাহি গলে গিয়ে ওর মন চাইছে পৃথিবীর সবকিছু রান্না করে ফেলতে।তাহলে আরো আদর পাবে সে।কিন্তু শুধু গুমরোমুখো অর্থ কোনদিন ওর খাবারের প্রশংসা করে না।শুধু হুটহাট ওর কাছে আসে আর গিফ্ট দিয়ে চলে যায়।কেন রে?একটু মুখে প্রসংশা করলে কি হয়?
এইতো সেদিন অর্থ থ্যাই স্যুপ পছন্দ করে।প্রাহি সেটা রান্না করতে জানে না।ইউটিউব দেখে রেসিপি ফলো করে রান্না করেছে।প্রথমবারেই দারুন হয়েছে।অথচ অর্থ এইযে ভ্রু-জোড়া কুচকে খেয়ে খেলো।মুখে একটুও হু হা না করে সোজা উপরে চলে গেলো।এতে প্রাহি যখন মুখ ফুলিয়ে নিজের রুমে বসেছিলো।অর্থ ওকে একটা বিশাল বড় সাইজের টেডিবিয়ার গিফ্ট করেছিলো সাথে প্রাহির হাতে অসংখ্য চুমু খেয়েছিলো। প্রাহির অভিমান গলে তখন পানি পানি হয়ে গিয়েছিলো। প্রাহি ভালোভাবেই বুজে যে ওর হাতের রান্না অর্থ’র ঠিক কতোটা পছন্দ।তাই তো প্রতিদিন রাতের খাবারে তার রান্না করা একপদ খাবার থাকবেই।দুপুরে তো আর পারেনা তখন তার স্কুল থাকে।তাই রাতের জন্যে রান্না করে।
প্রানি রান্নাঘর থেকে আঁড়চোখে তাকায় অর্থ’র দিকে।এই ভয়ংকর রাগি লোকটা নাকি তাকে ভালোবাসে।ইসস,কথাটা যতোবার প্রাহিভাবে ততোবার লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়।এইটুকুনে এই অবস্থা সে যে অর্থকে ভালোবাসে এটা বলবে কিভাবে?হ্যা,এই কয়েকটা মাসে অর্থ’র ভালোবাসায় হেরে যায় প্রাহি।নিজেও অর্থকে ভালোবেসে ফেলে সে।কিভাবে যে কি হলো বুজলই না।হিয়াকে বলাতেই সে বুজতে পেরেছে হিয়ার কথায়।যে সে সত্যি ভালোবাসে।
প্রাহির গাল লজ্জায় লাল হয়।এইযে লোকটা সোফায় বসে আছে। কেন বসে আছে তা প্রাহি ভালোভাবেই জানে।এতো এতো কাজের মাজে সে শুধু শুধু বসে আছে তাকে দেখার জন্যে।কি এক মুসিবত।এখন কি কাজ ফেলে তাকে অর্থ’র সামনে স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকতে হবে না-কি আজব?
সে বসে আছে তাই কাজে হেলাফেলা হবে এইজন্যে কাজের লোক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।যাতে ডেকোরেশন সুন্দর করে হয়।এই পাগল লোকটাকে নিয়ে প্রাহি যে কি করবে?
এরই মাজে রান্নাঘরে আসলো হিয়া।এসেই প্রাহিকে সাইডে টেনে নিয়ে গেলো।বললো,
-” ভাই কিন্তু আর একটু হলে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।যা রেগে আছে না।”
প্রাহি মুক বাকালো।বললো,
-” তোমার ভাইয়ের যতো আদিখ্যেতা। এখন কি আমি তার সামনে মূর্তির মতো বসে থাকবো নাকি আজব।কাজ থাকে না?”
-” সে আমি কি জানি?তোমার জনকে তুমি বুজাও।আর হ্যা,এর জন্যে আমায় যেন কোন ধমকাধমকি না করে।নাহলে তোর চুল সব আমি ছিড়ে ফেলবো।”
বলেই হিয়া চলে গেলো। প্রাহি হা করে তাকিয়ে আছে।কি বজ্জাত মেয়ে হিয়া।বলে কিনা তার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবে।যেমন ভাই তেমন তার বোন।বদের হাড্ডি দুটো।অবশ্য এই কথাগুলো প্রাহি মুখ ফুটে অর্থের সামনে জীবনেও বলতে পারবে না।দেখা যাবে এইগুলো বলায় অর্থ তাকে সুইমিংপুলে চুবিয়ে চুবিয়ে আধমরা বানিয়ে দিবে।রায়হানা বেগমের কথায় প্রাহি সেদিকে যায়।তিনি বলছেন,
-” প্রাহি তুই গোসলে চলে যা।সোমুচা আর শরবত বানানো বাকি। এইগুলো আমরা করে নিবো।তুই যা। তুই যথেষ্ট করছিস।যার বিয়ে সে তো এর এক কানাকরিও পারে না।একে বিয়ে দিয়ে কিযে হবে আমার।কেমনে থাকবে শশুড়বাড়ি।একটা কাজও পারে না ঠিকভাবে। আর বড়জন। উনার কথা আর কি বলবো।নিজে তো একটা জামাও এদিক থেকে ওদিক নেয় না।কিন্তু কোন কিছু একটু অগোছালো করলেও রাগ যেন তার টগবগিয়ে উঠে। এই ছেলে নিয়ে আবার ভয়ের শেষ নেই।বিয়ে করলে দেখা যাবে প্রাহি ওর অত্যাচারে মরে যাবে।ছেলে মেয়ে দুটোকে নিয়ে যে আমি কি করবো।”
প্রাহি লাস্ট কথাটা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো।রায়হানা বেগম জলদি পানি এসে প্রাহিকে পান করালো।প্রাহি জোড়পূর্বক হাসি টেনে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে। যাওয়ার পথে আঁড়চোখে অর্থ’র দিকে একপলক তাকিয়ে ছিলো।লোকটা তীক্ষ্ণ চোখে তার দিকেই তাকিয়ে।শরীরটা শিরশির করে উঠলো।লোকটা এতো ভয়ানকভাবে তাকায় কেন তার দিকে।এই চাহনী যে প্রাহির সহ্য ক্ষমতার বাহিরে তা কি সে জানে না।প্রাহি দ্রুত পায়ে ছুটলো নিজের রুমের দিকে।এখানে আর থাকা যাবে না।
রুমে গিয়ে আলমারি খুলে অর্থ’র দেওয়া সবুজ রাউন্ড সাদা সুতোর গর্জিয়াস কাজ করা সবুজ রঙের গাউনটা নিলো। সাথে সাদা লেগিন্স আর সাদা উড়না নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সুন্দরমতো গোসল সেরে টাওয়ালে পেচানো লম্বা ঘন চুলগুলো ছেড়ে দিতেই তা ঝরঝর করে কোমড় অব্দি ছড়িয়ে গেলো।টাওয়ালটা বারান্দায় মেলে দেওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই বিছানায় বসা অর্থকে দেখে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো।লোকটা এখানে কখন এলো।হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে প্রাহির।লোকটা সামনে আসলেই ওর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।অর্থ উঠে দাড়ালো।একপা দুপা করে এগিয়ে গেলো প্রাহির দিকে।দৃষ্টিতে অদ্ভুত মুগ্ধতা। তার সামনে দাঁড়ানো যে রমনীটি দাঁড়িয়ে আছে তার রূপের আগুনে যেন সে ঝলসে যাচ্ছে।প্রাহি পেছাতে পেছাতে দেয়ালে লেগে গেলো।অর্থ একেবারে ওর সামনে এসে প্রাহির দুই সাইডে হাত রাখলো।চোখে ঘোর লেগে যাচ্ছে তার।এতো সুন্দর কেন প্রাহি?এটা কি শুধু তার চোখেই।দেখো মেয়েটাকে তার কাছে দেখতে এতো সুন্দর লাগে।তবুও মুখ ফুটে সে কখনো বলেনি প্রাহি আজ তোমাকে সুন্দর লাগছে।
অর্থ এইবার নিচু হয়ে প্রাহির ঘারে মুখ গুজে দিলো। ঘারে লেপ্টে থাকার ভেজা চুলে ঘ্রান নিয়ে মাতাল হচ্ছে সে।এদিকে প্রাহির প্রায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা।অবশ হয়ে আসছে তার শরীর।রক্ত চলাচল যেন বিদ্যুৎ বেগে দৌড়াচ্ছে।প্রাহি কাঁপা কাঁপা হাতটা নিয়ে অর্থের ঘাড়ের পিছনে রাখলো।ভাঙ্গা কন্ঠে বলে,
-” ক..কি ক…করছেন? স..সরুন না প্লিজ।”
প্রাহির কোমল মিষ্টি আওয়াজে এইটুকু কথা যেন পুরো এলোমেলো করে দিলো অর্থকে।করে বসলো এক ভয়ংকর কাজ।অধর ছোয়ালো প্রাহির গলায়।হালকা কামড়ও দিলো।প্রাহি চোখ খিচে বন্ধ করে অর্থ’র ঘাড় খামছে ধরলো।নখ মনে হয় ডেবে গেছে।অর্থ এখনো ঠোঁট ছুইয়ে রেখেছে সেখানেই।প্রাহির নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম।কাঁপতে কাঁপতে সে বোধহয় মারা যাবে আজকে।শরীরটা আর টিকিয়ে রাখতে পারলো না প্রাহির।নিজের শরীরের সমস্ত ভর অর্থ’র উপর ছেড়ে।অর্থ নিজেও সরে এসে প্রাহিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।প্রাহি দুহাতে অর্থ’র গলা জড়িয়ে ধরে জোড়েজোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।আর একটু হলেই যেন প্রান পাখিটা উড়াল দিতো তার।
অর্থ প্রাহিকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।প্রাহি মাথা নিচু করে আছে। অর্থ বাকা হাসলো।তারপর প্রাহির দিকে ঝুকে প্রাহির কানে কানে ভয়ানক এক নিষিদ্ধ বানিগুলো বলে প্রাহির কপালে অধর ছুঁইয়ে দ্রুত চলে গেলো।আর প্রাহি হতভম্ভ হয়ে আছে।এই মাত্র লোকটা কি বলে গেলো?ইয়া খোদা, আজ আর প্রাহি লোকটার সামনেও যাবে না।তাকাবেই না তার দিকে।দেখা যাবে লজ্জায় সে মরেই যাবে।
প্রাহি উঠে দাড়ালো।বেড সাইড টেবিল থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।লজ্জায় গাল,কান,নাক টকটকে লাল হয়ে আছে।
#চলবে______