তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_১২

0
241

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১২
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনিকে এর আগে যতবার সে দেখেছে ততবারই রণচণ্ডী মনে হয়েছিল।তবে এ প্রথমবার ভীতুর ডিম মনে হলো।কেমন যেন মনের ভেতরে চোরাই কারবার লুকিয়ে রেখেছিল এমনটা মনে হলো বাপ্পির কাছে।ড্রেসিং টেবিলের কাছে এসে হাতে ঘড়িটা পরতে পরতে বাপ্পি আয়নায় চোখ রেখে আবারও তটিনিকে দেখে।সে চোখ ঘুরাচ্ছে চারিদিকে।যেন কিছু একটা বলবে আবার বলবেনা এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।
ঘড়িটা পরে চুল গুলাকে হাত দিয়ে ঠিক করে বাপ্পি বললো,’কিছু বলবে আমায়?’

‘না তো!কে বললো কিছু বলবো!’

বাপ্পি আর কিছু বললোনা।সোজা রুমের বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছিল ওমনি তটিনি বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে ওর পথ রোধ করে বলে,’আপনি কোথাও যাবেন না’

‘কেন?’

‘আমি বললাম তাই।বসুন বিছানায়,নাস্তা আছে, নাস্তা করুন’

‘আমি বাবার সাথে বাগানে বসে চা খাই সকালে।এটা আমার অভ্যাস।তাই যাচ্ছি’

তটিনি দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো মুখ কালো করে।বাপ্পি ওর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আবারও জানতে চাইলো কি হয়েছে সে যেন বলে।কিন্ত তটিনি কিছুই বলেনি।বাপ্পির আর কি করার, দরজা খুলে সে চলে গেছে।তটিনি ঘোমটা টানতে টানতে ওর পিছু পিছু বের হলো।মূহুর্তেই বাপ্পি চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে।কোথায় গেলো লোকটা!তটিনি ঘোমটার তলা দিয়ে দেখার চেষ্টা করছিল বাপ্পি কোথায় ওমনি তার ধাক্কা লাগে বকুল আপুর বড় মেয়ে তৃষার সাথে।তৃষা কয়েক মিনিট হলো এসেছে।সে ছিল বকুল আপুর শ্বশুর বাড়িতে।কাল রাতে ওর বাবার সাথে চলে গেছিলো,এখন আবার ফেরত এসেছে।তৃষা তটিনিকে দেখে ওর হাত চেপে ধরে বললো,’মামি কেমন আছো?আমি কিন্তু চকলেট এনেছি তোমার জন্য।নাও আমায় মুখ দেখাও’

তটিনি বুঝে গেছে এটাই সেই তৃষা।ঢোক গিলে সে নিজেও তৃষাকে খপ করে ধরে টেনে রুম অবধি নিয়ে আসলো।তৃষা মনে মনে অনেক খুশি তার মামি তাকে আদর করতে রুমে নিয়ে এসেছে।
তটিনি ঘোমটা সরিয়ে বললো,’তৃষা তুমি ফোন চালাও বুঝি?’

‘হ্যাঁ তো।আব্বুর ফোন থেকে আম্মুর আইডি চালাই।কেন বলো তো?ও হ্যাঁ একটা কথা মনে পড়েছে।মামা বললো উনি নাকি তোমায় নিয়ে কক্সবাজার গেছে।কবে গেলো?দেখলে মামা কত বড় মিথ্যে বললো!আজ মামার খবর আছে’

‘আরেহ না না।তোমার মামা আসলে!!’

তটিনি কিছু বোঝাতে যাবে তার আগেই বাপ্পি এসে হাজির রুমে।এসেই তৃষাকে দেখে ওর গাল টিপে বললো,’তুই এসেছিস শুনে চলে এলাম।খবর কি?কাল বিয়ে কেমন খেলি?’

তৃষা কোমড়ে হাত রেখে বলে,’তুমি নাকি মামিকে নিয়ে কক্সবাজার গেছো!আমায় মিথ্যে কেন বললে?আমি তো ভাবলাম সত্যি সত্যি চলে গেছো’

‘আমি?কবে বললাম?’

তটিনি ঘোমটা টেনে অন্যদিকে ফিরে বসে আছে।তৃষা সব বলে দিচ্ছে এক এক করে।বাপ্পি জানে সে কাল থেকে ফেসবুকে যায়নি, এ কাজ তটিনি ছাড়া আর কারোর হতে পারেনা।কারণ এই বাড়িতে বাপ্পির ফোন ধরার সাহস আর কারোর নাই।বাপ্পি সব বুঝতে পেরে মুচকি হেসে তৃষাকে নিয়ে চলে গেলো।ওরা চলে যাবার পর তটিনি পেছন ফিরে রুমে কাউকে না দেখে গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বের হলো দেখার জন্য তারা আসলে গেলো কোথায়,ওমনি সামনে এসে দাঁড়ায় বকুল আপু।ওনাকে দেখে তটিনি ঘোমটা ভাল করে টেনে দাঁড়িয়ে পড়ে।

‘বুঝতে পারছি তোমার এই রুমে থাকতে দম বন্ধ লাগছে।মেহমান সবাই বিকালের দিকে আসবে।আর এখন আমরা সকলে বাড়ির গাড়ীতে হাসপাতাল যাচ্ছি তোমার বাবাকে দেখতে।তুমি আর বাপ্পি,তৃষা বাসাতেই ঘাকো।আমরা দুপুরের দিকে চলে আসবো’

তটিনি মাথা নাড়ায়।সবাই এক এক করে চলে গেলো।দুটো গাড়ী লেগেছে সবার জন্য।এত লোক তো এক গাড়ীতে হবার কথা না।তটিনি ভয়ে ভয়ে বাগানে এসে দাঁড়ায় বাপ্পি আর তৃষাকে খুঁজতে।কি লজ্জাটাই না সে পাবে বাপ্পির কাছ থেকে আজ।
———-
আসিফ ভেবেছিল দরজা বন্ধ করে রাখলে রিনি এসে দরজা নিয়ে টানাটানি করবে,ওকে বাধ্য করবে দরজা খোলার জন্য কিন্তু রিনি এসব কিছুই করেনি।চারিদিকে ঠাণ্ডা আবহাওয়া বহমান। আসিফ ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে নিজেই দরজা খোলে।দরজার বাহিরেও রিনির আনাগোনা নেই।তবে মেয়েটা গেলো কোথায়?
আসিফ কোনো শব্দ না করে পা টিপে টিপে করিডোর পেরিয়ে সোফার রুমে এসে হাজির হয়।রিনি সেখানেও নেই,টিভিও বন্ধ।তবে কি ছাদে গেলো?
একটু সামনে গিয়ে সে দেখে ছাদে যাবার দরজাটাও ভেতর থেকে বন্ধ।তার মানে রিনি বাসাতেই আছে।তবে কোথায় আছে?
কোমড়ে হাত রেখে আসিফ সেটাই ভাবছিল,ঠিক সেসময় রান্নাঘর থেকে চামচ পড়ে যাবার আওয়াজ ভেসে আসলো তার কানে। তাই এক ছুটে সে ওদিকে যায়।গিয়ে দেখে রিনি নুডুলস বানাচ্ছে।আসিফকে দেখে বলে,’এক্কানাও দিতাম “ন”!এতক্ষণ আইয়েন “ন” কা?আঁই মনে কইচ্ছি আন্নে আর আইতেন “ন”।হেয়াল্লাই আঁই শুধু আঁর লাই নুডুস বানাইছি, দিতাম “ন” হরেন😏!’
[একটুও দিবোনা।এতক্ষণ আসেননি কেন?আমি ভাবছি আপনি আর আসবেন না, তাই আমি শুধু আমার জন্য নুডুলস বানিয়েছি।দিবোনা,সরেন।]

আসিফ ভ্রু কুঁচকে ওখান থেকে চলে এসে সোফায় বসে।রিনি বাটিতে নুডুলস নিয়ে আসিফের পাশে বসে বললো,”শতানি কইচ্চি।ধরেন এক্কানা খান”

‘লাগবেনা, আমার এত শখ নাই। আমি ভরপেট নাস্তা করছি।নাস্তা করার পরেই আমার নুডুলস খাওয়ার শখ জাগেনা’

‘আঁই কি নাস্তা কইচ্ছিনি!তটিনি বইনের মামি কিয়ের হাইয়া দিই আলু দিই ভাজি বানাইছে,এইডা আঁই আর বাইত ও খাইতাম না।ইয়ানে তো খাইতামই না।তার লগে আবার কিয়ের গমের আডার রুডি বানাইছে।আঁই হুদা রুডিই খাইনা আবার গমের আডার রুডি খাইয়াম!!’
[আমি কি নাস্তা করছি?তটিনি বোনের মামি কিসের যেন পেঁপে দিয়ে আলু দিয়ে ভাজি বানিয়েছে,এটা আমি বাড়িতেও খেতাম না,এখানে তো খাবোইনা।তার সাথে আবার কিসের যেন গমের আটার রুটি বানিয়েছে।আমি এমনি রুটিই খাইনা।আবার বুঝি গমের রুটি খাব?]

আসিফ সোফা থেকে উঠে বললো,’এত কথা কিভাবে বলিস?তুই তো এত বাঁচাল ছিলিনা।কাল থেকে আমার কানের পর্দা একেবারে ছিদ্র করে ফেলছিস।একটু চুপ থাকতে পারোস না?’

‘ছিদ্রই তো কইচ্চি,ছিঁড়ি তো হালাই “”ন”😌
[ছিদ্রই তো করেছি।ছিঁড়ে তো ফেলি নাই’
———-
তটিনি বাগানটা চক্কর কেটে বাসায় ফেরার জন্য পিছনে মুড়তেই বাপ্পির সাথে এক ধাক্কা খেলো।বাপ্পির মুখের দুষ্টু হাসি বলে দিচ্ছে সে সব বুঝে গেছে।তটিনি ভয়ে ভয়ে বললো,’তৃষা কই?’

‘সে পাশের বাসায় গেছে।ওর বেস্টফ্রেন্ড কাফির বাসা।কথা বলতে গেছে’

তটিনি ও আচ্ছা বলে চোরের মতন পালিয়ে যাচ্ছিল,ঠিক সেসময় বাপ্পি বলে উঠলো,’শুনলাম আমরা দুজন নাকি কক্সবাজার গিয়েছি??’

‘কে বললো?’

‘বলেছে একজন।সেই ব্যাক্তি আবার ভুলবশত আমার ভাগ্নিকে আপু ডেকে ফেলেছে।’

তটিনি জিভে কামড় দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।বাপ্পি ওর পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো,’মাঝে মাঝে হাসবেন্ডের প্রতি পসেসিভ হওয়া ভাল।আই লাইক ইট’

তটিনি ওর পিছু পিছু আসতে আসতে বলে,’আমি মোটেও আপনার প্রতি পসেসিভ নাহ।যান না!ঐ মেয়েগুলোর সাথেই কক্সবাজার যান।ধরে রেখেছি নাকি?!’

‘যাবো।তার আগে মেয়েগুলোকে সরি বলে এরপর বলতে হবে আমার আইডি হ্যাক হয়েছিল।কারণ আমি কক্সবাজার যাইনি।হ্যাকার কক্সবাজার নিয়ে গেছে’

বাপ্পি এ কথা বলে চলে গেছে।তটিনি শুরুতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকলেও পরে ভাবলো বাপ্পি সত্যি সত্যি মেয়েগুলোকে এই মেসেজ দেবে নাকি!
তাই সে ওর পিছু পিছু রুমে চলে আসে।এসে দেখে বাপ্পি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।
তটিনি মনে মনে চিন্তা করলো বাপ্পি তো তাকে ভীষণ পছন্দ করে,তাহলে সে কোন সাহসে এমন করবে?নিশ্চয় ওকে জেলাস ফিল করার জন্য মিথ্যা নাটক করছে।তাই সে সব বুঝে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ডিভানে বসে পা দোলাতে লাগলো।বাপ্পি ভাবছে তটিনি হয়ত এসে ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দেখবে কিন্তু এ দেখি উল্টা রিয়েকশান!

তটিনি বাপ্পির ল্যাপটপটা অন করে একটা কার্টুনের ভিডিও অন করে প্লে করে ডিভানে পা তুলে বসে আরাম করে দেখছে।
বাপ্পি ওর কোনো পাত্তা নাই দেখে ফোন রেখে বললো,’আমি হাসপাতালে আঙ্কেলকে দেখতে যাবো।যাবা আমার সাথে?’

‘বাসা খালি না?’

‘বুয়া আছে,তৃষা আছে সমস্যা নেই।ওয়েট তার আগে আমি ওয়াশরুম থেকে আসতেছি’

এই বলে বাপ্পি চলে যেতেই তটিনি চট করে উঠে এসে বাপ্পির ফোনটা হাতে নিলো দেখার জন্য যে বাপ্পি এতক্ষণ কি করেছে ফোনে, ওমনি তার হাত চেপে ধরে বাপ্পি।অর্থাৎ সে এখনও ওয়াশরুমে যায়নি

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here