তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_১১

0
237

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১১
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ ভোরে উঠেই বাসার পাশের মসজিদে নামাজ পড়তে চলে গিয়েছিল।এদিকে রিনি তখনও ঘুমাচ্ছে।রাতে যে খুব একটা ভাল ঘুম হয়েছে তা কিন্তু মোটেও নয়।সারারাত হাত পা ছড়িয়ে সে আসিফের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। শেষে বাধ্য হয়ে আসিফ ভোর হতেই ছুট লাগিয়েছে মসজিদে।
রিনির ঘুম ভেঙ্গেছে তটিনির মামির ডাকে।তিনি নাস্তা তৈরি করেছেন সেটা খাওয়ার জন্য ওকে ডেকে চলে গেছেন আবার।সবাই এবার তটিনির বাবাকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন,সাথে কিছু খাবার নিবেন তটিনির মা আর ঐশীর জন্য।তারা হয়ত এখনও না খেয়ে আছে ওখানে।
রিনিকে বাসাতেই রেখে যাবেন।ওদের আর যেয়ে কাজ নেই।আসিফ জানেনা সবাই যে এক এক করে হাসপাতাল চলে যাচ্ছে।সে যখন মসজিদ থেকে বাসায় ফিরলো তখন বাসায় রিনি ছাড়া আর কেউ ছিলনা।
রিনি আচারের বোয়াম নিয়ে পুরো বাসায় ঘুরঘুর করছিল।আসিফ এসেছে দেখে ওর কাছে গিয়ে বললো,’খাইবেন্নি?জলপির আচার’

‘সকাল সকাল পাগল ছাড়া কেউ আচার খায়না’

‘আঁই তো হাগলই!!আন্নেও হাগল অন।দুই হাগলের সংসার সেই অইবো🤘😌!’

আসিফ গাল ফুলিয়ে সোফায় বসে টিভিটা অন করে বললো,’তোকে আর এখানে থাকতে হবেনা।বিয়ের আগে কি কথা হয়েছিল?আমি চাকরি পাওয়া অবধি তোকে আর আমাকে এক সাথে থাকতে দেয়া হবেনা।সে শর্ত ভাঙ্গা হলো কেন?’

রিনি আসিফের পাশে সোফায় পা তুলে বসে ওর দিকে ফিরে বলে,’আঁর মনে কইছে আঁই আঁর জামাইর লগে থাইক্কাম।গুষ্টি কিলাই আন্নের শর্তের!’

‘এসব বলে লাভ নেই।আমার আর তিনদিন পর থেকে ফাইনাল পরীক্ষা। আমি আজই তোকে নোয়াখালীতে রেখে আসবো। এত ঝামেলা পোহাতে পারবোনা’

রিনি রেগে আগুন হয়ে বললো,’কিচ্চি!আন্নেরে আঁই কিচ্চি?খাইতাছি এয়ানে,শুইতাছি এয়ান!!তো আন্নের কোনানদি ঝামেলা লাগে?আঁরে কি কোলে লই আডেন??’
[কি করছি?আপনাকে আমি কি করছি?খাচ্ছি এখানে,শুইতেছি এখানে।তো আপনার কোন দিক দিয়ে ঝামেলা লাগে?আমাকে কি কোলে নিয়ে হাঁটেন?’]

‘আর ওটাই বাকি ছিল।এসন গরম দেখাবিনা আমায়।আমি তোকে আজ দিয়ে আসবো সেটাই ফাইনাল’

‘আঁই যাইতাম “ন”।কিরবেন করেন!যদি আঁরে রাখিও আসেন,আঁই আবার চলি আইয়াম!’

আসিফ বিরক্ত হয়ে তার রুমে চলে গেলো।রুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো যাতে করে রিনি এসে জ্বালাতে না পারে’
———–
বাপ্পি কানে তুলা লাগিয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে।তটিনি একা একা নাস্তা সেরে বাপ্পির ফোন খুঁজে হাসপাতালে ঐশীর কাছে কল করলো।ঐশী রিসিভ করে জানিয়েছে বাবার শরীর এখন মোটামুটি ভাল আছে,বাসার সবাই চলে এসছে তাকে দেখার জন্য।তটিনি জানালো তার শ্বশুর বাড়ির সবাই যাবে বাবাকে দেখতে।এই বলে সে ফোন রাখে।বাপ্পির ফোনে লক করা নেই,তটিনির মন চাইলো একবার ঘেঁটে দেখার।সবার আগে সে গ্যালারিতে গেলো।গিয়ে দেখে বাপ্পির বন্ধুদের সাথে তোলা কিছু ছবি আর তটিনির গায়ে হলুদের কিছু ছবি।তই ছবিগুলো ঐশী মেসেঞ্জারে পাঠিয়েছিল বাপ্পিকে।তটিনি এবার ডাটা অন করে মেসেঞ্জারে ঢুকলো।ওমা!কত গুলো মেয়ের মেসেজ!
তবে একটারও রিপ্লাই করেনি বাপ্পি।এটা দেখে তটিনি খুশি হলো।ফোন রেখে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে ভাবছে সে কেন খুশি হলো!বাপ্পি যদি ঐ মেয়েগুলোর মেসেজের উত্তর দিতো ও তবে তার কি যায় আসে??
কি যেন ভেবে তটিনি আবার ফোনটা হাতে নেয়।সেই মেসেজগুলো আবারও পড়ে তারপর রিপ্লাই করলো,’সরি আমার বউয়ের সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম তাই রিপ্লাই করতে পারিনি।কিছু বলবেন আপু?’

এই মেসেগুলো সে সব কয়টা মেয়েকে পাঠিয়ে ফোনটা আবার আগের জায়গায় রেখে দিয়েছে।মনে এক পৈশাচিক আনন্দ অনুভূত হচ্ছে তার।মিটমিট করে হাসছিল সে।ওমনি দরজা খোলার আওয়াজ শুনে ঘোমটা টেনে বসে গেলো।বাপ্পির মেজো খালা আর খালু ঢুকছেন রুমে।তটিনি ঘোমটা টান দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওনাদের সালাম দিলো।খালা রুমে ঢুকেই বাপ্পিকে ডিভানে শুতে দেখে বললেন,’তওবা তওবা! নতুন বউ!এই সব কি দেখছি!তুমি কি সিনেমার নায়িকাদের মতন বাপ্পিকে রাতে আলাদা শুইয়েছো নাকি!’

তটিনি চোখ কপালে তুলে বাপ্পির দিকে তাকিয়ে আছে।বাপ্পি তখনও ঘুমে ছিল।খালা ওর কাছে এসে বললেন,’কানাঘুষোয় শুনছিলাম তুমি বিয়েতে রাজি ছিলেনা,তাই বলে আমাদের ছেলেটাকে এভাবে কষ্ট দিবা?ডিভানে শোয়া কত কষ্টের জানো তুমি?সামান্য বসলেই কোমড় ব্যাথা ধরে যায়,শোয়া তো দূরের ব্যাপার।
কাল সারারাত ও এভাবে ঘুমিয়েছিল নাকি?শুনছো মেহের আপা!দেখে যাও!!নতুন বউ কি কান্ড ঘটিয়েছে দেখে যাও!’

তটিনি ঢোক গিলে বাপ্পির কাছে এসে ওর হাত ধরে টানছে ওকে ঘুম থেকে তোলার জন্য।এদিকে ওর মা ছুটে চলে এসেছেন নিজের বোনের আওয়াজ শুনে।এসেই শুনলেন তটিনি নাকি বাপ্পিকে সারারাত ডিভানে শুইয়েছে।মা কড়া নজরে তটিনির দিকে তাকালেন তখ।তটিনি থতমত খেয়ে বললো,’না আন্টি।সেটা নয়।উনি তো এমনি অফিসের কাজ করতে করতে এখানে শুয়েছেন।সারারাত ঐ বিছানাতেই শুয়েছিল’

বাপ্পির মা বিশ্বাস করলেন না,মোট কথা বাসার কেউই বিশ্বাস করেনি।তটিনি যে বিয়েতে রাজি ছিল না এ কথা সকলের জানা আছে।তাই এখন বাপ্পির এই হালে সকলেই তটিনির উপর অসন্তুষ্ট।
তটিনি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বাপ্পিকে দেখছিল।কখন সে উঠবে আর কখন ওকে বাঁচাবে, এরা সবাই মিলে তো মনে হয় ওকে কাঁচাই চিবিয়ে খেয়ে নিবে আর কিছু সময় থাকলে।খালা বাপ্পিকে ডেকে তুললেন।রুম ভর্তি মানুষ দেখে বাপ্পি আগে কান থেকে তুলা বের করে নিলো।সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাপ্পি তটিনিকে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকত দেখে এবার মাকে প্রশ্ন করলো ঠিক কি হয়েছে।

‘কি হয়েছে মানে!তুই আগে এটা বল তুই কি কাল সারারাত ডিভানে শুয়েছিলি?’

বাপ্পি বুঝে গেছে কি ঝামেলা হয়েছে।সে ডিভান থেকে চট করে উঠে বিছানায় বসে বললো,’কে বলেছে এ কথা?আমি সকালে ফ্রেশ হয়ে ডিভানে বসে অফিসের কিছু কাজ করতে করতে ওখানেই শুয়ে পড়েছিলাম।তাই বলে কি সারা রাত ডিভানে শুয়েছি নাকি?আমার অভ্যাস নাই তো ডিভানে শোয়ার’

খালা কোমড়ে হাত রেখে এগিয়ে এসে বললেন,’তবে যে বকুল বলছিল তোর নাকি প্রচণ্ড ঘাড় ব্যাঘা!’

‘ওটা তো আমার মাঝে মধ্যেই হয়।কাল কত দখল গেছে সেকারণেই।’

খালা আর কথা বাড়ালেন না।আসল বাপ্পি যখন কোনো অভিযোগ তুলছেনা সেখানে তিনি একা চেঁচামেচি করে কি হবে।সোজা তটিনির কাছে এসে ওর ঘোমটা তুলে মুখ দেখে হাত ধরে আঙ্গুলে একটা মোটা সোনার আংটি পরিয়ে দিয়ে বললেন,’বাপ্পি আমাদের খুব আদরের ছেলে।
আজকের ঘটনা যদি বাপ্পির কথায় সত্যি হয়ে থাকে তবে আলহামদুলিল্লাহ। আর যদি এর পেছনে মিথ্যে লুকিয়ে থাকে তবে তোমায় সাবধান করছি!বাপ্পিকে আমরা যে আদরে বড় করেছি, যে আদরে রাখছি সে মর্যাদা তুমি রাখবে।বুঝলে?’

তটিনি মাথা নাড়ালো।খালা মুখ বাঁকিয়ে খালুকে নিয়ে চলে গেলেন।মিসেস মেহের কাছে এসে তটিনির হাত ধরে আংটিটা ধরে বললেন,’আপা বকুলের বিয়েতে ওকে এর চেয়ে হালকা পাতলা একটা আংটি দিছিলো আর দশ হাজার টাকা দিছিলো জামাইর হাতে।এবার মনে হয় সব টাকা আংটির পিছনে ঢালছে।বেশ মোটাসোটা আংটি’

তটিনি ওমনি আংটিটা খুলে বললো,’আপনি নিয়ে নিন।আমি রেখে কি করবো?’

‘আরেহ না।আমার অভা আছে নাকি?আর আমি সেই শাশুড়ি না যে বিয়ের পরেরদিন বউয়ের সব গয়না নিজের আলমারিতে তুলবো।এই মোটা আংটি তোমার হাতেও মানাচ্ছেনা,তুমি বরং বাপ্পির হাতে পরিয়ে দেও।ওকে বেশ মানাবে।আসো’

এই বলে মিসেস মেহের তটিনিকে টেনো বাপ্পির কাছে নিয়ে এসে বললেন পরিয়ে দিতে।তটিনি গাল ফুলিয়ে বাপ্পির হাত ধরে আংটিটা পরিয়ে দিলো।বাপ্পি তার হাতের দশ আঙ্গুল সামনে ধরে বললো,’এত আংটি কি করবো আমি?একটা পরারও তো অভ্যাস নেই’

‘এঙ্গেজমেন্টের আংটিটা রেখে বাকিগুলো আলমারিতে রেখে দিবি।আচ্ছা আমি যাই আমার অনেক কাজ’

মা দ্রুত চলে গেলেন।তটিনি ওমনি ঘোমটা সরিয়ে বললো,’সকাল হলে বিছানায় এসে শুবেন।ঢং করে ডিভানে শুয়ে থাকতে হবেনা।আপনার এই ঢংয়ের কারণে আমার এত কথা শুনতে হলো।যেন কোন রাজপুত্রকে বিয়ে করেছি।সবাই তাকে মাথায় করে রাখে,এখন আমাকেও মাথায় করে রাখতে হবে।সব ঢং!’

কথাগুলো বলে সে মুখ বাঁকিয়ে বিছানায় উঠে বসে গেলো এবার।।

তটিনি গাল ফুলালে ওকে এত সুন্দর লাগে বাপ্পির কাছে।তাই সে মুচকি হেসে ওকেই দেখছিল।তটিনি চোখ ফেরাতেই দেখে বাপ্পি মিষ্টি করে হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

‘সারাদিন কি উদমই থাকবেন?যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নতুন পাঞ্জাবি পরেন।সেই কখন মালিশের জন্য শেরওয়ানি খুলছিলেন এখনও উদম ঘুরছেন।লজ্জা করেনা আপনার?’

‘ওহ হ্যাঁ!!’

বাপ্পি লজ্জা পেয়ে আলমারি থেকে নতুন পাঞ্জাবি নিয়ে চলে গেলো।তটিনি মেসেজের আওয়াজ শুনে বাপ্পির ফোন আবার ধরলো।যে মেয়েগুলোকে সে মেসেজ দিয়েছিল তাদের মধ্যে একটা মেয়ে লিখেছে’বাপ্পি মামু আপনার না কাল বিয়ে হলো?কক্সবাজার গেলেন কবে?’

তটিনি জিভে কামড় দিয়ে মেয়েটার প্রোফাইল চেক করে বুঝতে পারলো ওটা বকুল আপুর বড় মেয়ে তৃষা।যে ক্লাস সিক্সে পড়ে।আর আইডিটা বকুল আপুর ছিল।প্রোফাইলে ছিল মেহজাবিনের ছবি তাই তটিনি ঠিক বুঝতে পারেনি।নিজের কপালে নিজে চড় দিয়ে সে ফোনটা আবার রেখে দেয়।এখন যদি তৃষা এসে সব বলে দেয় বাপ্পিকে!কি হবে!!
ওদিকে বাপ্পি গোসল করে পাঞ্জাবি পরে বের হয়েও গেছে।তটিনি ভয় ভয় চোখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।কি বলবে,, কি করবে!!
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here