তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_১০

0
248

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_১০
লেখনীতে-আফনান লারা
.
সকাল ৯টার সময় তটিনি চোখ খুললো।এখনও খুলতোনা,কালকের ক্লান্তি তার চোখে আরও ঘুম রেখেছিল।ঘুম ভেঙ্গে যাবার কারণ বাহিরের কোলাহল। এত বেশি চেঁচামেচি চলছে সে উঠতে বাধ্য হলো।মাথায় হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই বাপ্পির মুখ দেখলো সে।ডিভানে গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে আছে সে।কানে তুলা গুজে রেখেছে এটা তটিনি দেখেনি।তার কানে তুলা গুজার কারণ যেহেতু সে দেরি করে ওঠার মানুষ,বাড়ির কোলাহল তো আর ধরে রাখা যায়না,এ কারণে কানে তুলা গুজে ঘুমায় সে যাতে করে সকালে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
তটিনি এবার কানে হাত দিয়ে বিছানা থেকে নামলো।বাপ্পির থেকে নজর হটিয়ে দরজা আটকে দিলো।কাল রাতে বাপ্পি দরজা লাগায়নি।লাগালে আর এত আওয়াজ আসতোনা।
বাপ্পি আসলে কখনওই দরজা লাগায়না।এখন থেকে তাকে দরজা লাগানো শিখতে হবে।
তটিনি দরজাটা আটকে দিয়ে নিজের ব্যাগ খুঁজতে লাগলো।তার সাথে কাল যে দুটো ট্রলি ব্যাগ এসেছে বাড়ি থেকে সেগুলোর একটাও রুমে খুঁজে পেলোনা।তাই আবার দরজা খুলে বাহিরে বের হতেই বকুল আপুর মুখোমুখি হলো সে।বকুল আপু তটিনির পা থেকে মাথা একবার পরোক করে নিয়ে গম্ভীর গলয বললেন,’নতুন বউকে এমন বেশে মানায় না,তোমায় না বলেছি বড় ঘোমটা দিয়ে রাখবে?কেউ এখনও তেমার মুখ দেখেছে?উপহার দিয়েছে?তাহলে ঘোমটা সরালে কেন?আমরা বৌভাতের সে শাড়ীটা পাঠিয়েছি সেটা পরে সেটার সাথের ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে থাকবে,এত বাহিরে ঘুরঘুর করবেনা।ঠিক আছে?’

‘বাবা তো অসুস্থ। মামা বলছিল আজকে বৌভাত হবেনা।আরও কয়েকদিন পরে হবে।’

‘জানি।কিন্তু তাও তুমি আজ সেই শাড়ীটা পরবে।কারণ আজ আমাদের অনেক আত্নীয় স্বজন আসবে বাসায়।তোমার জন্য বৌভাতের আরেকটা শাড়ী আনা হবে।আপাতত ঐ শাড়ীটা পরো।আর তোমার ব্যাগ তো কাল রুমেই ঢুকাও নাই।সোফার রুমে পড়ে আছে,আমি কাজের লোককে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি,সরে দাঁড়াও’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে সরে দাঁড়ালো।এক মিনিটের ভেতর দুজন লোক এসে ব্যাগগুলো রুমে ঢুকিয়ে চলে গেলো।তটিনি চুপচাপ রুমে যাওয়া ধরতেই বকুল আপু ওর হাত ধরে ফেললেন।এরপর মুচকি হেসে বললেন,’বড় বোন হিসেবে দেখবে।আমার কথায় কষ্ট পেও না।বাপ্পিকে আমি যে আদর করি,তোমাকেও সেই আদরটা দিব,তুমি শুধু আমায় বাপ্পির মত করে সম্মান করো’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে আসলো।এসে ট্রলি ব্যাগ খুলে বৌভাতের শাড়ীটা বের করে ওয়াশরুমের দরজায় হাত রেখে আর খুলতে পারছেনা সে।
অনেক চেষ্টা করেও দরজা সে খুলতে পারেনি।ছিটকিনি খোলার পরেও ওয়াশরুমে আরেকটা লক দেয়া।আজব কারবার!ওয়াশরুমে কেউ এমন লক দেয়?অনেক টানাটানি করার পর তটিনি বুঝলো চাবি দিয়ে খুলবে এটা।এবার সে পুরো রুম তদন্ত করলো তাও সেই চাবি পেলোনা যেটা দিয়ে ওয়াশরুম খুলবে।বিড়বিড় করতে করতে বাপ্পির কাছে এসে দাঁড়ায় তটিনি।বাপ্পি আরামসে ঘুমাচ্ছে।ওকে পাঁচবার ডাকার পরেও সে ওঠেনি।এদিকে ওকে ধরে জাগানোর ইচ্ছা আসছিল না তটিনির।বাপ্পি যে কানে তুলা দিয়ে রেখেছে সেটা চোখে পড়তেই কান থেকে তুলা বের করলো সে।এরপর আবারও ডাক দিলো।এবারও কোনো রেসপন্স নাই।বাধ্য হয়ে বাপ্পিকে না ডেকেই শাড়ী নিয়ে হাঁটা ধরলো সে।পরে মনে পড়লো বকুল আপু বলেছে কেউ যাতে মুখ না দেখে।তারপর আবার হাঁটা থামিয়ে বাপ্পির কাছে আসে সে।এবার এই লোকটাকে ধরেই জাগাতে হবে,আর কেনো উপায় নাই।
ডান হাতটা বাড়িয়ে বাপ্পির কাঁধে রাখে তটিনি।তারপর হালকা করে চাপ দিয়ে ওকে ডাকে।কোনো সাড়া নাই।রাতে কম ঘুমালে সকাল বেলা মানুষ এমন মরার মতন ঘুমায় তা জানা ছিল না তটিনির।তাই এবার জোর দিয়েই চাপ দিলো সে।অবশেষে বাপ্পি চোখ খুলে।তটিনিকে চোখের সামনে দেখে মুচকি হেসে বলে’গুড মর্নিং’

‘রাখেন আপনার গুড মর্নিং!ওয়াশরুমে কোন ছাগলে লক করে রাখে??’

‘সেই ছাগল আমার আপু।এভাবে কাউকে না জেনে ছাগল বলবেনা।লক করার কারণ বিয়েবাড়িতে কিছু মেহমান থাকে,তাদের জন্য বারতি ওয়াশরুম থাকার পরেও পার্সোনাল ওয়াশরুমে ঢুকে ইউজ করে বাজে ভাবে রেখে যায়।সেটা থেকে বাঁচতে লক করে রাখা।বুঝেছো?’

‘এখন কি আমাকেও ইউজ করতে দেয়া হবেনা?’

বাপ্পি ডিভান থেকে উঠেই ঘাড়ে হাত রাখলো।ডিভানে শোয়ার কারণে কাঁধ ব্যাথা ধরে গেছে।চোখ ডলতে ডলতে পকেটে হাত দিয়ে চাবি বের করে দরজার লক খুলে দেয় সে।
তটিনি কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেছে।

তার ঠিক দশ মিনিট পর বকুল আপু হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে ওদের রুমে এসে দেখেন বাপ্পি ডিভানে বসে কাঁধে চাপ দিচ্ছে নিজে নিজে আর ব্যাথায় উহঃ উহঃ করছে।
বকুল আপু ট্রেটা টেবিলের উপর রেখে চুপচাপ চলে গেছেন।বাপ্পি ওনার উপস্থিতি টেরও পায়নি।
তটিনির জন্য আনা শাড়ীটা ছিল গাঢ় সবুজ রঙের।ঘোমটাও সবুজ রঙের ছিল।তৈরি হয়ে নিয়ে সে বের হতেই দেখে বাপ্পি ডিভানে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।তটিনি ঘোমটা ঠিক করতে করতে বিছানায় এসে বসতেই বকুল আপুকে দেখে আবার উঠে দাঁড়িয়ে গেলো।বকুল আপু হাতে একটা বাটি নিয়ে এসেছেন।তাতে গরম জলপাইয়ের তেল।বাটিটা তটিনির হাতে ধরিয়ে দিলেন,এরপর তিনি বললেন,’বাপ্পির কাঁধে হয়ত ব্যাথা করছে।সুন্দরভাবে মালিশ করে দেও’

তটিনি মাথা নাড়িয়ে চুপ করে থাকলো।বকুল আপু এবার বললেন,’কি হলো?দাও!আমার সামনে দাও।আমি দেখবো কেমন করে মালিশ করো তুমি।এমনিতেও বাপ্পির কদিন পরপরই গারগতর ব্যাথা করে।সারাজীবন তোমাকেই এমন মালিশ করে দিতে হবে,ঔষুধ খাইয়ে শরীর পঁচানো যাবেনা’

তটিনি মনে মনে বাপ্পিকে বকতে বকতে বাপ্পির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।এরপরও কিছু বলেনা।বকুল আপু বিছানায় বসে বললেন,’বাপ্পি উঠে বস!!তটিনি তোর কাঁধে তেল মালিশ করবে’

এ কথা শুনে বাপ্পি চোখ বড় করে লাফ দিয়ে উঠে বসে তটিনির দিকে তাকায়।তটিনি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাপ্পির দিকে।বাপ্পি ওর চাহনি দেখে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,’আরেহ না না।আমার তো কাঁধে ব্যাথা করছেনা।কে বললো?’

‘আমি দেখেছি নিজের চোখে।চুপ করে গায়ের শেরওয়ানি খোল এখন।তেল ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি বাপু আবার তেল গরম করতে পারবোনা।এমনিতেও দুই চুলায় মাংসের পাতিল বসানো।তেল গরম করার জন্য খালি চুলা নাই
জলদি কর!!”

আপুর ধমকে বাপ্পি বাধ্য হয়ে শেরওয়ানি খুলে নিলো।তটিনির হাত কাঁপছে।জীবনে একবার লুকিয়ে আসিফ ভাইয়ার উদম দেহ দেখছিল,দুই বছর আগে।ভাইয়া গোসল করে তোয়ালে খুঁজতেছিল সেইসময় লুকিয়ে সে ভাইয়ার উদম দেহ দেখছিল।এরপর আর সাহস করেনি দেখার।আর আজ নিজের স্বামীর শরীর!!!”

তটিনির হাত কাঁপতে দেখে বাপ্পি ওর হাত থেকে বাটিটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো,’আপু আমি লাগিয়ে নিব,তটিনিকে করতে হবেনা।তুমি যাও কাজে।এত ব্যস্ত হইওনা তো!’

‘তুই এমন ভয় পাচ্ছিস কেন?তোর মালিশ তোর বউই করতে আসছে,পর নারী আসে নাই।এমন ভাব করছিস যেন আমি কোথাকার কোন মেয়েকে দিয়ে তোর মালিশ করাবো!!তোর নিজের বউকেই দায়িত্ব দিছি।তাছাড়া স্বামীর সেবা তটিনিকে শিখতে হবে।কোনো কিছু শিখা তো অপরাধ না’

তটিনি দাঁতে দাঁত চেপে বাপ্পির হাত থেকে বাটিটা আবার কেড়ে নিলো।তারপর ধপ করে ডিভানে হাঁটু গেড়ে বসে বাপ্পির কাঁধে তেল দিয়ে মালিশ করা শুরু করে দিলো।বকুল আপু কাছে এসে বললেন,’গলার দিকেও দাও,ওর আরাম লাগবে।সুন্দর করে ঘঁষো।দুহাতের জোর লাগাও।এত আস্তে দিলে ওর ব্যাথা আরও বাড়বে’

তটিনি রাগের চোটে জোরে জেরে চাপছে এবার।বাপ্পি জানে তটিনি বাধ্য হয়ে করছে।সেও চায়নি এমনটা হোক।আপু এভাবে এসে সব কিছুতে পানি ঢেলে দিবে কে জানতো?
তটিনির হাত অনেক নরম।বাপ্পির ব্যাথাটা পাঁচ মিনিটেই গায়েব হয়ে গেছে, তার খুব ভাল লাগলো মালিশে।তটিনির হাতের সবুজ রঙের চুড়ি গুলার আওয়াজ আর বাপ্পির খালি পিঠে সেই চুড়ির স্পর্শ বাপ্পিকে তটিনির প্রতি আরও আসক্ত করে তুলছিল।
সে বারবার আয়নার দিকে তাকাচ্ছিল।আয়নাতে তটিনিকে স্পষ্ট দেখা যায়।মুখটা ফুলিয়ে কাজ করছে সে।পাক্কা দশ মিনিট পর বকুল আপু চলে গেলেন।
ওমনি বাপ্পি বললো,’হইছে আর লাগবেনা’

‘না করি।কাঁধের গুষ্টি উদ্ধার করবো আজ’

‘রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। সরি আসলে আমার দোষেই!!’

তটিনি হাত সরিয়ে এবার নিজের হাত টিপতে টিপতে বললো,’আমার নিজেরই হাত ব্যাথা হয়ে গেছে।স্বামী সেবা করতে আসছি আমি এ বাড়িতে??’

‘সরি’

তটিনি রেগেমেগে ডিভান থেকে নেমে দ্রুত হাঁটতে যেয়ে শাড়ীর কুচিতে পা লেগে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেলো বাপ্পির চোখের সামনে।কুচি খুলে তো গেছেই,এর সাথে সে পায়েও ব্যাথা পেলো।বাপ্পি উঠে দাঁড়িয়ে ওকে তুলতে যেতেই তটিনি বললো,’খবরদার! ধরবেন না একদম!’

‘এত রাগের মানে কি?আমি তো হেল্পই করতে চাইতেছি’

‘শাড়ীর কুচি খুলে গেছে।আপনি ওদিকে ফিরে দাঁড়ান।আমি নিজে নিজে উঠতে পারবো।এভাবে ভারী শাড়ী পরার অভ্যাস নেই আমার,তাই পড়ে গেছি নাহয় আমি পড়ার মতন মেয়ে না😏’

বাপ্পি অন্যদিকে ফিরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে।
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here