তোমাতে করিবো বাস💗 #পর্ব_৯

0
262

তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_৯
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফকে খুঁজতে খুঁজতে রিনির সবগুলো রুম দেখা শেষ হয়ে গেছে।সবার শেষে বাসার শেষকোণায় যে রুমটা পেলো সেটাতে আসিফকে পেলো।সে কম্বলের ভেতরে ঢুকে শুয়ে আছে।রিনি ওর কাছে এসে পা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করলো আসিফ জেগে আছে নাকি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেছে।
সে পা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছিল।টাইলসে পা রেখে চলার অভ্যাস তার ছিল না।কারণ ওদের বাড়িতে নিচে পাকা করা মেঝে।
টাইলসে তাই পা পিছলে সে আসিফের গায়ের উপর গিয়ে ধুরুম করে পড়লো।
আসিফ ঘুমাচ্ছিল না,জেগেই ছিল।রিনি ওর গায়ে পড়ায় সে ব্যাথা পায়নি তবে ভয় পেয়ে গেছে।মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে দেখে রিনি চিটপটাং হয়ে ওর গায়ের উপর শুয়ে থেকে এখন ওঠার চেষ্টা করছে।

‘তুই এখানে কেন!’

রিনি উঠতে উঠতে বললো,’ভাইয়া বিশ্বাস করেন আঁই জানিবুঝি এইন্না করি “”ন””।এতাগো টাইলসে হিচলা খাই দুরুম করি হড়ি গেছি’

‘বুঝছি।’

আসিফ উঠে রিনিকে ধরে উঠতে সাহায্য করলো।রিনি পিঠে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে আগেরমতন।আসিফ আবারও কম্বল টান দিয়ে শুয়ে পড়লো কোনো কথা না বলে।রিনি এবার আসিফের পাশে বসে গেছে।
আসিফ সেসময় আবারও মুখের সামনে থেকে কম্বল সরালো।রিনির দিকে চেয়ে থেকে বললো,’তুই আমায় এটা বল,একা একা এতদূর থেকে ঢাকায় আসার সাহস তোকে কে দিলো?’

‘কেউ দেয় “””ন””।
আঁর মোনো কইছে এলদরি আঁর জামাইর কাছে থাইক্কাম, হেয়াল্লাই চলি আইছি'[কেউ দেয়নি,আমার মন বলছে এখন থেকে আমার জামাইর কাছে থাকবো তাই চলে আসছি]

‘এতদিন সেই ইচ্ছা কই ছিল?আর তুই আমার পাশে বসেছিস কেন?তোর লজ্জা লাগছেনা একটুও?’

রিনি মিটমিট করে হেসে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।রিনি ছোটকাল থেকেই অনেক বড় ড্রামাবাজ।ওর এমন রিয়েকশান দেখে আসিফ আবারও কম্বল টান দিয়ে শুয়ে পড়েছে।রিনি আসিফের দিকে ফিরে বললো,’তো আঁই কোনাই ঘুম যাইতাম?বেকে কইছে আন্নের লগে ঘুম যাইতো।আমরা তো জামাই বউ হেয়াল্লাই😌’

আসিফ কম্বলের ভেতরে থেকে বললো,’তোর যা খুশি কর।শুধু রাতের মধ্যে আমার গায়ের সাথে লাগবিনা। নাহলে সেই সময় ঘুম থেকে তুলে এমন পিডা দিমু!!বাপ বাপ বলে আমার নোয়াখালী চলে যাবি’

‘আঁর ইচ্ছাও নাই আন্নের গার লগে লাগি হোতার।মামি কইছে আন্নের এইন্না অভ্যাস আছে রাত অইলে এমন করার’
[আমার ইচ্ছাও নাই আপনার গায়ের সাথে লেগে শোয়ার।মামি বলেছে আপনার অভ্যাস আছে রাত হলে এমন করার’

আসিফ আবার মাথা বের করে বললো,’আর কি বলছে আম্মা?’

রিনি গাল দুটো লাল করে ফেললো আসিফের কথা শুনে তারপর গোল হয়ে বসে বললো,’কইছে আন্নে বলে ঘুমে থাই ধরি চুম্মাও দিছিলেন রাকিব ভাইয়ারে একদিন রাইত🙈’
————-
তটিনি সেই চাচার দোকানের সামনের টুলটায় বসে পা দোলাচ্ছে।বাপ্পি সেই চাচার সাথে কথা বলতে মত্ত।চাচা তটিনির ব্যাপারে সব জানতে চাইছেন বাপ্পির কাছে।বিয়েতে বাপ্পি এই চাচাকে দাওয়াত দিছিলো কিন্তু উনি যান নাই কারণ ওনার দোকান দেখার কেউ নাই।আর দোকান একদিন বন্ধ থাকলে তার অনেক লস হবে।এইসব ভেবে আর যাননি।তাই এখন সব গল্প শুনছেন বাপ্পির কাছে।
তটিনি ডানে বামে দেখতে দেখতে বাপ্পির উপর চোখ গেলো তার।এই একটা মাসে সে একবারও বাপ্পির মুখের দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখেনি। আজ ভাল করে নজরটা পড়ায় দেখছে।
দেখতে শুনতে ভালই,খারাপ না।বাবার পছন্দ বলে কথা, হ্যান্ডসাম উইথ ব্যাংকব্যালেন্স।গালটা লম্বা,চওড়া।বাপ্পির চুল অনেক ঘন।দুটো জুটি করলে সেই লাগবে।তেমন বড় না চুল।টেনেটুনে যে জুটিটা করা যাবে তাতেই সেই লাগবে!

তটিনির গায়ের চাদরটা বাপ্পির।ভারতে ঘুরতে গিয়ে কাশ্মীর থেকে শালটা সে নিয়েছিল।মনে হয় বহুবার পরেছে।তীব্র ঘ্রাণ আসতেছে ওর গায়ের পারফিউমের।
তটিনি চাদরটা ধরে দেখছিল ওমনি বাপ্পি চায়ের কাপ এগিয়ে ধরে ওর সামনে।চাদর থেকে হাত উঠিয়ে তটিনি চায়ের কাপটা নিলো ওর হাত থেকে।বাপ্পি আবার চলে গেছে চাচার কাছে।
তটিনি বাপ্পির কথা ভাবছে।ছেলেটা মোটেও সুবিধার লাগেনা তার কাছে।শুরু থেকে আসিফের কথা বলতে বলতে তটিনির মুখে ফ্যানা ধরে গেছিলো তাও বাপ্পির উপর কোনো রিয়েকশান হচ্ছিলনা।সে একটা কথাতেই অটল ছিল সেটা হলো সে তটিনিকেই বিয়ে করবে।মানে কোন ছেলেটা বউয়ের এই টাইপের কথা শুনে বিয়ে করতে রাজি হবে?ছেলের তো ভেগে যাবার কথা।তা না করে বিয়েটা শেষমেশ হয়েই গেলো।

“হ্যাঁ এটা মানছি যে আমার সম্মতিতে বিয়ে হয়েছে কিন্তু হবার কথা তো ছিল না!যদি এক মাস আগে এই ছেলেটা আমার কথা মেনে বিয়েতে না বলে দিতো তাহলে আজ এই দিনটা আসতোই না।সব দোষ এই লোকটার!!’

বাপ্পি চা শেষ করে তটিনির দিকে তাকাতেই দেখে গাল ফুলিয়ে সে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।বাপ্পি এর মানে না বুঝে চায়ের দামটা দিয়ে হাতের ঘড়ি চেক করে বললো,’চলো ঘুমের সময় হয়ে গেছে,এখন ঘুমাতে হবে’

এই বলে বাপ্পি সোজা হাঁটা ধরে।তটিনিও চুপচাপ ওর পিছু পিছু চলছে।দোকানটা বেশি দূরেনা।টুলে বসে বাপ্পিদের ছাদের উপরের রঙ বেরঙের বড় ছাতাটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল ছাদের উপরের লাইটটার আলোতে।
তটিনি যেতে যেতে বললো,’আচ্ছা আপনার কোনো ভাই বাই?’

‘তুমি হয়ত একমাত্র মেয়ে যে বিয়ে হবার পর ভাসুর দেবর আছে কিনা সেই খবর নিচ্ছে।যাই হোক তারা কেউ নেই।আমি একমাত্র ছেলে’

‘এই জন্যই আদরের দুলাল!’

‘অনেক!আমাকে যে কি পরিমাণ ধুইতেছো সেটা যদি আমার পরিবারের কেউ জানতো, তোমায় আজ রাতে বাইরে ঘুমাতে দিতো’

‘নতুন বউ হিসেবে কি কোনো দাম নাই আমার?’

‘না নাই।আমার বাড়ির সকলের কাছে আমি সবচাইতে বেশি ইম্পরট্যান্ট।এরপর আমার ওয়াইফ যদি আমাকে সমপরিমাণ গুরুত্ব দেয় তবে তাকে মাথায় করে রাখবে সকলে।বুঝছো??’

তটিনি দাঁত কেলিয়ে বললো,’তার মানে আমি যদি আপনার সাথে বাজে ব্যবহার করি তবে আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে সকলে?’

বাপ্পি থেমে গেলো হঠাৎ এ কথা শুনে।তারপর তটিনির দিকে চেয়ে বললো,’খুশি হচ্ছো?এই বাড়ি ছেড়ে যখন বাপের বাড়ি যাবে, সেখানে আসিফকে ওর বউয়ের সাথে দেখে ভাল লাগবে তোমার??’

তটিনির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো কথাটা শুনে।আসলেই তো!!এখন এটাই তার নিজের বাড়ি। বাবার বাড়ি গেলে তো আর শান্তি পাবেনা।আগের পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতির অনেক তফাৎ।
বাড়ি ফিরে তটিনি গায়ের চাদরটা গায়ে রেখেই বিছানয শুয়ে পড়ে।মাথার ভেতর ঘুরছে তার বাবার বাড়ি আর তার নিজের নেই।এখন আর সে চাইলেই দিনের পর দিন সেখানে থাকতে পারবেনা।
বাপ্পি রুমের আলো নিভিয়ে ডিভানে শুয়েছিল।জীবনে কখনও এভাবে ডিভানে শোয়া হয়নি তার।অফিসের কাজের ফাঁকে কোনো কোনোদিন দুপুরবেলা শুয়েছিল কিন্তু রাতের সময় এ প্রথম বার শোয়া।
এমনিতেও তার ঘুম সহজে আসেনা তার উপর জায়গাতে যদি এত আনকম্পোর্টেবল ফিল হয় তাহলে তো ঘুম আসারই কথা না।তটিনি কম্বল টেনে গায়ে দিছে কিনা কে জানে!
এই চিন্তা বাপ্পিকে তখনও ঘুমাতে দিচ্ছিলো না।উঠে বসে আলমারি খুলে নিজের জন্য আরেকটা কম্বল বের করে তটিনির কাছে যায় সে ও কম্বল গায়ে দিছে কিনা দেখার জন্য। ড্রিম লাইটের আলোয় বোঝা গেলো সে গায়ে দেয়নি।শাড়ীর পাথরগুলা চিকচিক করছে।কম্বল মুড়ি দিলে তো পাথর চিকচিক করতোনা।বাপ্পি তাই কম্বলটা টেনে ধরে ওর গায়ে জড়িয়ে দেবে বলে ওমনি তটিনি লাফ দিয়ে উঠে বসে বলে,’কি করতে এসেছেন আমার কাছে?’

‘খেয়ে ফেলতে ‘

এ কথা শুনে তটিনি হালকা পিছিয়ে গিয়ে বললো,’এরকম ঠাট্টা আমার পছন্দ না একদম।বিশেষত রাতের এসময়ে এমন ঠাট্টা বিষের মতন লাগলো’

‘তো যখন আমার এ কথা তোমার মজাই লাগলো তবে কি করে ভাবলে আমি উল্টাপাল্টা কিছু করতে এসেছি এখানে?’

‘হতেও পারে।ছেলেদের মন তো!নতুন বউকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে কি করে রাখে!’

‘বাপরে!!বয়স কত তোমার?এত বড় কত বলছো!’

‘উনিশ’

বাপ্পি হাসলো তারপর কম্বল টেনে দিয়ে আবার ডিভানে গিয়ে শুয়ে পড়েছে নিজের গায়ে কম্বল টেনে।তটিনি তখনও ওমনি বসেছিল বিছানায়।বাপ্পির হাসির কারণ সে জানলোনা।মনে মনে হিসাব করছিল বাপ্পির বয়স কত।দুহাত মিলিয়ে হিসাব করে বের করার চেষ্টা করলো।

বাপ্পি কম্বলের ভেতর থেকে বললো,’তোমার বয়স উনিশ বলে যে আমার বয়স আটাশ ঊনত্রিশ হবে আর তুমি বুড়া বলে সম্ভোধন করবা এটা সিনেমা চলছেনা।আমার বয়সও কম।পঁচিশ বছর।’

তটিনি হিসাব বন্ধ করে দিলো।তারপর নিজেও শুয়ে পড়েছে এবার।বাপ্পি কেমন করে যেন মনের কথা চট করে বুঝে যায়।মনে হয় কাউকে বেশি পছন্দ করলে তার মনের কথা বুঝে ফেলা যায়।
“আমিও বুঝতাম আসিফ ভাইয়ার মনের কথা,শুধু বুঝলাম না ভাইয়ার বউ ছিল!আছেও!
মনে হয় ঐ মেয়ের কথা বেশি ভাবতেননা উনি।’

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here